রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

দারিদ্র্যের কশাঘাতে মীর কাশেমের করুণ মৃত্যু

দারিদ্র্যের কশাঘাতে মীর কাশেমের করুণ মৃত্যু

একসময় ভুল বুঝতে পেরে ইংরেজদের বিরুদ্ধাচরণ করলেও পলাশীর যুদ্ধে মীর কাশেম ছিলেন বিশ্বাসঘাতকদের কাতারে। সম্পর্কের দিক থেকে মীর কাশেম ছিলেন পলাশীর যুদ্ধের মূল বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের কন্যা নবাব ফাতিমা বেগম সীবার স্বামী। তাই পলাশীর যুদ্ধে শ্বশুর এবং শ্যালক মীর মিরনের মতো মীর কাশেমও মেতে ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের খেলায়। তবে তিনি সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেন পলাশীর যুদ্ধের একদিন পর অর্থাৎ ২৪ জুন ১৭৫৭ সালে। পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা বেগম, কন্যা জহুরা এবং একজন বিশ্বস্ত অনুচর নিয়ে নৌকাযোগে পালিয়ে যান। পথে মীর জাফরের পুত্র মীর মিরনের নির্দেশে বিপথগামী সৈন্যরা নবাব এবং তার পরিবারকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসে। লুৎফুন্নেসা ছিলেন রূপে-গুণে অনন্যা। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন হিন্দু। রাজপ্রাসাদে তার প্রবেশ ঘটে নবাবের মা আমেনা বেগমের সেবিকা হিসেবে। রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে নবাব তাকে বিয়ে করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার নতুন নাম হয় লুৎফুন্নেসা। আর তাদের কোলজুড়ে আসে কন্যা জহুরা। সপরিবারে আটক হওয়ার পর মীর মিরন নবাবকে হত্যার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিয়ে যান। আর মীর কাশেম আটক করেন লুৎফুন্নেসাকে। মীর কাশেম ক্রমাগত অত্যাচার করে লুৎফুন্নেসার কাছে নবাব পরিবারের সব সম্পদ বিশেষত গুপ্তধনের সন্ধান জানতে চান। পরবর্তীতে লুৎফুন্নেসাকে তার কন্যাসহ বর্তমান পুরান ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে দীর্ঘদিন আটক করে রাখেন। শেষ জীবনে লুৎফুন্নেসা ১৭৯০ সালে মোটামুটি সম্মানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন এবং নানাশ্বশুর নবাব আলীবর্দী খান এবং স্বামী সিরাজউদ্দৌলার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন। কিন্তু এক সময় ইংরেজদের সমর্থন নিয়ে নবাবের সিংহাসনে আরহণ করলেও সম্মানের সঙ্গে মৃত্যু ঘটেনি মীর কাশেমের। বনিবনা না হওয়ায় জামাতা মীর কাশেমের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সেনারা দেশি অন্য শাসকদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৭৬৪ সালের ২৩ অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হন মীর কাশেম। তার একসময়ের মিত্র সুজা-উদ-দৌলাও তাকে নিজ এলাকা থেকে বহিষ্কার করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিল একটি ঘোড়া, হাতি আর কিছু ধন-রত্ন। এরই মাঝে ডাকাত দল এসে ঘোড়া-হাতির পিঠে থাকা সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। সবকিছু হারিয়ে শেষ বয়সে নিঃস্ব মীর কাশেম এক দুর্বিষহ জীবনে পতিত হন। রহিলখণ্ড, আল্লাহাবাদ, গোহাদ এবং সোধপুরে কিছু দিন পালিয়ে বেড়ান মীর কাশেম। সবশেষে তিনি দিলি্লর কোতোয়াল এলাকায় নিতান্ত দারিদ্র্য জীবনযাপন করতে থাকেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত মীর কাশেমের মৃত্যু হয় ৮ মে ১৭৭৭ সালে। মৃত্যুর পর বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার এককালের নবাব মীর কাশেমের ঘরে মৃতদেহ সৎকার করার মতো যৎসামান্য সম্পদও ছিল না। ঘরে থাকা মাত্র দুটি চাদর বিক্র করে মীর কাশেমের দাফনের ব্যবস্থা হয়ে ছিল।

 

 

সর্বশেষ খবর