মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

'হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন,

তা সবে (অবোধ আমি!) অবহেলা করি ...'

বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান যশোরের কেশবপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী সাগরদাঁড়ি। এখানেই কেটেছিল মধুকবির শৈশব। তার জন্মভিটা, স্মৃতিবিজড়িত সাগরদাঁড়ি গ্রাম, 'দুগ্ধস্রোতরূপী' কপোতাক্ষ নদ দেখার আকাঙ্ক্ষা সবার মাঝে থাকাই স্বাভাবিক। আর তাই তো প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারো দর্শনার্থী ভিড় জমান সাগরদাঁড়িতে। বিশাল দত্তবাড়ির একাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকি অংশটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সংরক্ষণ করছে। বাড়িটিতে মধুসূদনের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের সংগ্রহও আহামরি কিছু নয়। তবে মহাকবির পরিবারের ব্যবহার্য প্রচুর জিনিসপত্র এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এখানে আসা পর্যটকরা মধুকবির জীবন, কর্ম সম্পর্কে যাতে স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারেন, সে রকম ব্যবস্থাও নেই। ২০০১ সালে সাগরদাঁড়িতে 'মধুপল্লী' নির্মাণের জন্য সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। সে প্রকল্পটি আজো সম্পূর্ণ হয়নি। যে কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কবির আতুর ঘরটি আজো পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আতুর ঘরের স্থানে দুটি তুলসী গাছ দেখিয়েই পর্যটকদের সন্তুষ্ট করা হয়। কবির সৃষ্টি সমগ্রের সংগ্রহশালাও হয়নি। জেলা পরিষদের বাংলোয় একটি লাইব্রেরি আছে, যেখানে বই আছে মাত্র এক হাজার দুইশটি। তারপরও অন্য এক আকর্ষণে প্রতিদিন এখানে ছুটে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। মহাকবির আতুর ঘরটি যেখানে ছিল, সেখানকার মাটি সারা গায়ে মেখে একদা নিজেকে ধন্য মনে করেছিলেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন। মাত্র ৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সারা দিন ধরে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন ঐতিহাসিক এ দত্তবাড়ির আনাচ-কানাচ। এখানে আছে কবির একাধিক আবক্ষ মূর্তি। কবির বিখ্যাত সব কবিতা উৎকীর্ণ একাধিক ফলকও আছে এখানে। রয়েছে 'দাঁড়াও পথিকবর জন্ম যদি তব বঙ্গে!' খ্যাত এপিটাফের প্রতিরূপ।

জন্মভিটা দেখা শেষে পশ্চিমে কয়েক কদম হেঁটে গেলেই মধুসূদনের 'দুগ্ধস্রোতরূপী' সেই কপোতাক্ষ নদ। যদিও কপোতাক্ষ আজ শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। এ নদের তীরেই মধুসূদনের সেই বিখ্যাত সনেট 'কপোতাক্ষ নদ' ফলকে উৎকীর্ণ রয়েছে। সাগরদাঁড়িতে মধুসূদনের নামে বেসরকারি উদ্যোগে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এগুলো সবার জন্যই উন্মুক্ত। প্রতিষ্ঠানগুলোতে মধুসূদনের পরিবারের অসংখ্য ছবি রয়েছে। কবির কাব্য, নাটক, প্রহসন আর তাকে নিয়ে রচিত বহু বইও রয়েছে এখানে। সাগরদাঁড়ি পেঁৗছানোর ঠিক এক কিলোমিটার আগে শেখপুরায় রাস্তার পাশেই রয়েছে প্রাচীন একটি মসজিদ। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে নির্মিত এ মসজিদে বসেই মৌলভী লুৎফুল হকের কাছে সেকালের রাজভাষা ফারসি শিখেছিলেন জমিদারপুত্র মধুসূদন। তাই সাগরদাঁড়িতে ঘোরাঘুরির ফাঁকে এ মসজিদটিও দেখতে ভুল করেন না পর্যটকরা। সাধারণত শীতের সময় পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায় বেশি মাত্রায়। প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি কবির জন্মজয়ন্তীতে সাগরদাঁড়িসহ আশপাশের ৫০-৬০টি গ্রাম লাখো মানুষের পদভারে জেগে থাকে ২৪ ঘণ্টা। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ওইদিন থেকে সাত দিনের জন্য শুরু হয় 'মধুমেলা'। *সাইফুল ইসলাম, যশোর

 

 

 

সর্বশেষ খবর