রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

রীমা হত্যার সেই মনির

রীমা হত্যার সেই মনির

১৯৮৯ সালের ৯ এপ্রিল স্ত্রী শারমিন রীমাকে হত্যা করেন মনির হোসেন। ঘটনার পরদিন তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৯০ সালের ২১ মে ঢাকার জেলা ও দায়রা আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তিনি এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হোসনে আরা বেগম খুকু পরে হাইকোর্ট থেকে খালাস পেলেও মনিরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অনুমোদন দেন উচ্চ আদালত। এরপর দীর্ঘদিন মামলা চলার পরে নিম্ন আদালতে অপরাধী মুনির হোসেন এবং হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনাদানকারী তার প্রেমিকা হোসনে আরা খুকু দুজনেরই ফাঁসির রায় হলেও উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায়ে খুকুকে খালাস দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালের ২০ জুন আপিল বিভাগ ওই দণ্ড বহাল রাখে।

নিহত রীমা ছিলেন শহীদ সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদের (১৯৭১-এ ইত্তেফাকে কর্মরত) মেয়ে। অন্যদিকে খ্যাতনামা ডাক্তার বাবা-মায়ের ব্যবসায়ী ছেলে ছিলেন মনির হোসেন।

১৯৮৯ সালে বিয়ের মাত্র তিন মাস পর ৯ এপ্রিল পুলিশ নরসিংদীর কাছাকাছি মিজিমিজি গ্রাম থেকে উদ্ধার করে রীমার লাশ। স্বামীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বেড়াতে গিয়ে খুন হন শারমিন রিমা। ৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে রওনা হয়ে যাওয়ার দুদিন পরে ফেরার পথে স্বামী মনির হোসেন তাকে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের মিজমিজি গ্রামের কাছে ফেলে রেখে আসে। বাড়ি থেকে এত দূরে কোনো মেয়ের লাশ পাওয়া গেলে যে কেউই সবার আগে ধরে নেয় হয় স্বামী নিজেও খুন হয়েছে বা নিজেই খুন করেছে। পুলিশও শুরু করে মনিরের খোঁজ। তাকে চরসসহ এক হোটেলে পাওয়া যায়, সেখানে সে পাগল পাগল অবস্থায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্দহত্যার চেষ্টা করছিল। খুব সহসাই পুলিশ বুঝতে পারে যে আসলে পাগলামির অভিনয় করছে পুলিশকে ধোঁকা দিতে এবং আত্দহত্যারও তার আদৌ কোনো পরিকল্পনা ছিল না। একটু খোঁজখবর নিয়েই পুলিশ পুরো ঘটনা বের করে ফেলে। মনির ছিলেন শিক্ষিত ধনী বাবা-মায়ের বখে যাওয়া সন্তান। তার নামে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ না থাকলেও চারিত্রিকভাবে বাজে ছিলেন তিনি। তার চেয়ে অনেক বেশি বয়সের মেয়েদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতো। বিয়ের আগেই এরকম বেশ ক'টি সম্পর্কে জড়ান। এর মধ্যেই মনিরের সঙ্গে সম্পর্ক হয় ১৫-১৬ বছরের কয়েক বাচ্চার মা চলি্লশোধর্্ব হোসনে আরা খুকুর। খুকুর স্বামী ছিল সম্পূর্ণ পঙ্গু। সংসার চালানোর জন্য স্বল্পশিক্ষিত খুকুর একটাই উপায় ছিল, সে ছিল পেশাদার কলগার্ল। সমাজের উচ্চপর্যায়ে ছিল তার ব্যবসা ক্ষেত্র। অন্তত ১৫ বছরের ছোট মনির গভীর প্রেমে পড়ে এই খুকুর। বিয়ের পরও মনির রীমাকে কোনো দিনই মন থেকে মেনে নেননি। বরং তিনি সম্পর্ক রেখেছেন খুকুর সঙ্গে। খুকু-মুনীরের এ অবাধ সম্পর্কের মধ্যে রীমাকে উটকো ঝামেলা হিসেবে বিবেচনা করে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তবে মূল খুনের ঘটনার ধারে-কাছেও খুকু যায়নি। এ ঘটনাটা সে সময় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সব পত্রিকায় বড় বড় স্টোরি ছাপা হয়। এটাকে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত খুনের মামলা।

 

 

সর্বশেষ খবর