বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

তিতিকাকা হ্রদের অতলে

তিতিকাকা হ্রদের অতলে

পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় সভ্যতার খোঁজ মেলে তিতিকাকা হ্রদের অতলে। তিতিকাকা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত হ্রদ। এই হ্রদের নিচ থেকে যখন প্রথমবারের মতো প্রাচীন সভ্যতার খোঁজ মিলতে শুরু করে তখন বিস্ময়ে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেন গবেষকরাও। তিতিকাকা হ্রদটি রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও বলিভিয়ার মাঝামাঝি জায়গায়। প্রায় ৩২০০ বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল হ্রদে মাঝখানে ভীষণ গভীর। সেখানের গভীরতা প্রায় ১০০০ ফুট। ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাচীন ইনকা সভ্যতারও অনেক আগে থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা এই হ্রদটি পবিত্র বলে মান্য করত। লোককথা প্রচলিত আছে, এই হ্রদ থেকে দেবতা ভিরাকোচা উঠে আসেন। তিনি তিয়াহুয়ানাচো নামের একটি জায়গায় আসেন প্রথম আন্দিজ পর্বতমালার অধিবাসীদের পূর্বপুরুষকে তৈরি করার নিমিত্তে। তিতিকাকা হ্রদের জলতলে এই সভ্যতার যে স্থাপনাগুলো দেখতে পাওয়া যায় তা দেখে অনুমান করা হয়, এটি আসলে প্রাচীন কোনো মন্দির বা উপাসনালয়ের ভগ্নাবশেষ। আজও গবেষকরা ভেবে পান না পানির এত গভীরে কী করে এমন একটি স্থাপনার নানা অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এমনিতে হ্রদের নিচে এই সভ্যতার নিদর্শনগুলো ডুবে থাকলেও শুকনো মৌসুমে স্থানীয়রা এটি দেখতে যান। তাদের কাছে এটি প্রাচীন যুগের প্রাসাদ। এখনো প্রচলিত আছে, আগে যখন ডুবুরিরা মুক্তার সন্ধানে রওনা হতো তখন তারা পানির নিচে গিয়ে এই ডুবন্ত স্থাপনার ছাদ স্পর্শ করে আসত। এটা তারা আসন্ন সাফল্যের প্রত্যাশায় করত। এই জলতলে ডুবে থাকা সভ্যতার নানা বিষয় নিয়ে বিশদ গবেষণার জন্য ফরাসি সমুদ্রবিজ্ঞানী জ্যাক কস্টিউরের নাম উল্লেখযোগ্য। প্রচলিত ধারণার বেশির ভাগই মুখের কথা ভেবেই তিনি সরাসরি পানির নিচে অনুসন্ধান চালান। তিনি প্রাচীন গুপ্তধনের সন্ধানে এই জায়গাটিতে অভিযান চালিয়ে খুব একটা সফল হননি। তবে প্রাচীন সভ্যতার বেশকিছু নিদর্শন তিনি খুঁজে বের করেন। পানির নিচ থেকে প্রাচীন তৈজসপত্র নিয়ে উঠে আসেন তিনি। এরপর ১৯৬৭ সালে বলিভিয়ান সরকার ও ১৯৮৮ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি তিতিকাকা হ্রদের নিচে বৈজ্ঞানিক তথ্যের জন্য অভিযান চালিয়েছে। ধীরে ধীরে আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের মাধ্যমে আরও উপযুক্ত অভিযান চালানো হয়েছে হ্রদটির নিচে। বিভিন্ন দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদরা হ্রদের নিচের অনেক প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন উপাদান খুঁজে পান। বেশিরভাগ নমুনা নিদর্শনেই মিলেছে হ্রদের প্রায় ১০০ ফুট গভীরতা। ২০০০ সালে চমকপ্রদ খবর বের হয়ে আসে গবেষকদের কাছে। এবার হ্রদের নিচে পাওয়া যায় আস্ত একটি মন্দির।

সেটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২০০ মিটার ও প্রস্থের দিক দিয়ে ছিল ৫০ মিটার। মন্দিরের সঙ্গে আরও পাওয়া গেছে শস্য মাড়াইয়ের জন্য ব্যবহৃত ট্যারেস বা ছাদ, একটি লম্বা রাস্তা ও ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের লম্বা দেয়াল। এখনো রহস্যের শেষ খুঁজে পাননি গবেষকরা। তবে তাদের দাবি ভয়াবহ কোনো বন্যার কবলে পড়েই পানির নিচে ডুবে গিয়েছিল এই প্রাচীন সভ্যতা।

 

সর্বশেষ খবর