শিরোনাম
শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

শরম (দশম পর্ব)

তসলিমা নাসরিন

শরম (দশম পর্ব)

অলঙ্করণ : আহমেদ তারেক

ঝামেলায় কে যায়! এসব কি একা একা করা যায়। নাকি করলে আমার রক্ষে আছে! এই সমাজটাকে এখনও জানো না। আমি তো এই সমাজের জন্য সুইটবল নই। নই বলেই তোমার সঙ্গে যা ইচ্ছে তাই করতে পারছি।

-যা ইচ্ছে তাই?

-হ্যাঁ যা ইচ্ছে তাই।

-আমি একটা বাজে ছেলে ছিলাম জুলেখা। আমি ওই ধর্ষকদের দলে ছিলাম। তুমি জানো তো সব। ওই অচিন্ত্য। ওই বিশ্ব ...

-তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তুমি হিন্দু হয়ে হিন্দুদের দোষ দিচ্ছ।

-তুমি মুসলমান হয়ে মুসলমানদের দোষ দিচ্ছ।

-দোষ দিচ্ছি কারণ ঘটনাটা ওরাই ঘটিয়েছে।

-না। আমি জানি কারা ঘটিয়েছে। আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। তা তো অন্তত মনে আছে?

-না। আমার চোখ বাধা ছিল। আমি জানি না কে পৌঁছে দিয়েছে।

-আমি দিয়েছি।

-তুমি দাওনি। আমজাদ আমাকে বাড়ির সিঁড়িতে রেখে চলে গেছে।

-জুলেখা তুমি এখন ভালো আছো। কারও বিরুদ্ধে তোমার কোনও কেইস করার দরকার নেই। তুমি ভুলে যাও পেছনের কথা। শুধু আমার দিকে তাকাও, শুধু ভালো কথা বলো। ভালোবাসার কথা বলো। ওইসব রেইপ, কিডন্যাপ-শব্দগুলোকে হেইট করি।

জুলেখা বলছিল,-আমি তো প্রতিরাতেই ধর্ষিতা হতাম সুরঞ্জন। আমার বর কি আমাকে কি কোনওদিন ভালোবেসে ছুঁয়েছে? ওভাবেই, তোমার বন্ধুরা আমার ওপর যা করেছিল, প্রায় ও ভাবেই তো আমার স্বামী আমার ওপর অত্যাচার করতো।

অত্যাচারের ফসল ওই বাচ্চা। আমি তো কোনওদিন সুখ পাইনি মিলনে। কেবল তোমার সঙ্গেই পেয়েছি। তুমিই আমাকে প্রথম সুখের মুখ দেখালে। আমার জন্য এই সঙ্গম এইসব ধর্ষণ ছাড়া, অত্যাচার ছাড়া আর কিছু ছিল না।

একটু থেমে, বুকে পড়া জলগুলো মুছে দিয়ে আবার বলছিল-

যখন ওরা আমাকে ধরে নিয়ে গেল, বুঝতে পাচ্ছিলাম যে সবাই মিলে ধর্ষণ করবে। সবাই মদ খেয়ে টাল হয়ে আছে। আমি চিৎকার করলে মুখ চেপে ধরে যদি কেউ, গলা টিপে ধরে যদি, যদি পকেট থেকে ছুরি বের করে গলাটা কেটে দেয়। যদি মেরে ফেলে। ধর্ষণ সে তো আমার কাছে নতুন নয়। আমি মরতে চাইছিলাম না। আমি তাই সহ্য করছিলাম, এমন কিছু করিনি যা করলে ওরা কেউ রাগ করতে পারো। মেরে ফেলতে পারো।

-মিছিমিছি আমজাদের দোষ দিও না।

-কী লাভ আমার? ঠোঁট উল্টে বলে জুলেখা।

-শোধ নিচ্ছ।

-কিসের শোধ?

-তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। ওই চেয়েছিল পর্যন্তই। জোর করে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়েটা সত্যি সত্যি করেনি বলে।

জুলেখার বিস্মিত দুচোখ।

সুরঞ্জন বলে,-যদি সত্যি আমজাদরা করতো, তোমার মতো ডেয়ারিং মেয়ে কেইস করতো না, এ আমি বিশ্বাস করি না। জুলেখা সুরঞ্জনের অর্থহীন কথাবার্তার কোনও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। তার মনে পড়ে সেদিনের ঘটনার পর প্রায় প্রতিদিন বাড়ি ফিরে ঘেন্না ছড়তো মহব্বত। জুলেখা তার বাড়িতে একটা বাড়তি লোক। একটা নষ্ট মেয়েলোক। একে মহব্বত চায় না। চোখের সামনে থেকে এই মেয়েলোক দূরে চলে যাক। জুলেখার বাপের বাড়িতে খবর দিয়েও, মামাকে খবর দিয়েও কোনও হিল্লে হল না। কেউ জুলেখাকে নিতে এলো না। ঘাড় ধরে বেশ কয়েকবার ধাককা দিয়েছে মহব্বত। কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছে জুলেখা। প্রতিবারই সে বলেছে, পুলিশ ডাকবে। বেরোলে সোহাগকে নিয়েই সে জন্মের মত বেরোবে, বলে দিয়েছে। সোহাগের প্রতি টান মহব্বতের প্রচণ্ড। সোহাগকে ছেড়ে তার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। এভাবে ছ মাস কেটেছে। ছ মাস পর মহব্বত নিজে দেখে শুনে একটা বিয়ে করে নিয়েছে। গ্রামের মেয়ে। লেখাপড়া ছ সাত ক্লাস। বউ নিয়ে স্বামী অন্য ঘরে শোয়। আর জুলেখা সোহাগকে বুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুর্ভাবনায় রাত কাটায়। রাতের পর রাত। মহব্বতের বাড়িতে ছেড়া পাপোসের মতো জীবন কাটাতো জুলেখা। যেদিন দুপুর বেলা অবেলায় বাড়ি ফিরে সুরঞ্জনকে ধরে ফেলে, বাপের বাড়ির ভাইকে, সফিকুলকে, সেদিনই তার সামনেই তিন তালাক বলে দিল মহব্বত। সুরঞ্জন জুলেখার বিছানায় বসে ছিল, সেই বসা বাপের বাড়ির ভাইয়ের মতো বসা নয়। জানালার পর্দাগুলো টেনে দেওয়া। অন্ধকার করে দেওয়া ঘর। সেখানে সুরঞ্জনের সার্টখানা খোলা, খালি গা। মহব্বত যখন ঘরে ঢুকেছে, জুলেখা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, পেছনেমাত্র এসে দাঁড়িয়েছে, হাতের ট্রেতে দুটো মাংসের কাবাব আর দু কাপ চা। ট্রেটা টেবিলে রেখে জুলেখা যেই না দাঁড়ালো, শুনলো তালাক উচ্চারণ। তালাক তালাক তালাক। তালাক হয়ে গেল। তালাক হয়ে যাওয়া মানে জুলেখাকে বাড়ি ছাড়তে হবে। কিন্তু ছেলেকে নিতে গিয়ে বাধা পেলো মহব্বতের। ছেলে নাকি দেবে না। সোহাগকে ফেলে জুলেখাই বা কোথায় কোন চুলোয় যাবে! বেনেপুকুর রোডে নিজের মামার বাড়িতে গিয়ে উঠলো। কাছেই মহব্বতের বাড়ি। ও বাড়িতে সোহাগ। মহব্বতের নতুন বউকে মা বলে ডাকতে হচ্ছে তার। জুলেখা বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া মেয়ে। কেঁদে বুক ভাসিয়ে আত্দহত্যা করে সে বাঁচতে চায় না। এতদিনে সে বুঝে গেছে বেঁচে থাকতে হলে, মেয়েদের, বিশেষ করে মুসলমান মেয়েদের, জীবন বেরিয়ে যায় জীবন বাঁচাতে।

মহব্বত তাকে তালাক দেবার পর জুলেখা একফোঁটা চোখের জল ফেলেনি। শুধু সুরঞ্জনের দিকে পাথর চোখে তাকিয়েছিল। ভাবছিল, এবার কী করবে তুমি? ছেড়ে পালাবে তো! দায়িত্ব নেবার ভয় বুকে বাসা বাঁধছে তো! জুলেখা মনে মনে জানতো মহব্বত তাকে একদিন না একদিন তালাক দেবে। এতদিন সোহাগের মুখের দিকে তাকিয়ে দিচ্ছিল না। না হলে ধর্ষিতা হওয়ার দিনই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিত। মহব্বত কোনও থানা পুলিশ করেনি। যারা তার বউকে ধর্ষণ করেছে, তাদের খোঁজ যদি সে নেওয়ার চেষ্টা করতো, খোঁজ পেতো। লোক তো মহব্বতের কম নেই। কিছুই করেনি সে। কারণ দুএকজন বন্ধু বলেছে করে নাকি কোনও লাভ নেই, বরং, জীবনটা যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমজাদের সঙ্গে ব্যবসাসূত্রে মহব্বতের দীর্ঘদিনের শত্রুতা। আমজাদ এবং তার লোকেরা যে জুলেখাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তা মহব্বতের কানে গিয়েছে। কিন্তু এ নিয়েও বেশি ঘাঁটাঘাটি করতে চায়নি। আমজাদ যদি জুলেখার সর্বনাশ করে মহব্বতের ওপর রাগ কমিয়ে ফেলে, তাহলে মহব্বতের জন্যও বরং এ শুভ সংবাদ। মহব্বতের রাগ বরং এক্ষেত্রে পড়েছে জুলেখার ওপর। জুলেখার দোষ নেই সে জানে, তারপরও মহব্বতের মনে হয়, জুলেখারই দোষ। নিশ্চয়ই সে সুখ পেয়েছে ওসবে। নিশ্চয়ই তার আরাম হয়েছে। মহব্বতের মরলেও বিশ্বাস হবে না জুলেখা বাধা দিয়েছে ওই লোকদের। বরং সময় সুযোগ পেলে ওই লোকদের কাছেই জুলেখা ছুটে ছুটে যাবে। জুলেখা সুখের সন্ধান পেয়ে গেছে। মহব্বতের ছোট গণ্ডি থেকে সে যে কোনও কারণেই হোক বেরিয়ে গেছে। সুখের সাগরে সে সাঁতরে এসেছে। মহব্বতের আশংকা হয় এই কিডন্যাপের পিছনে জুলেখারও হাত ছিলো। জুলেখা বলতে চেষ্টা করছে মুসলমান কিছু ছেলে এই কাণ্ড করেছে। কিন্তু মহব্বতের কানে হিন্দু ছেলেদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে। যদিও অভিযোগটি ভিত্তিহীন, কিন্তু কিছু লোকের এসব অভিযোগ করে, দল পাকিয়ে শয়তানি করে বড্ড আনন্দ হয়। মহব্বত হিন্দু মুসলমানে যায় না, এক দুপুরের ছোট্ট অপহরণ বা ধর্ষণের ধোঁয়াও তাকে এতটুকু স্পর্শ করে না। ওই নষ্ট মেয়ে মানুষটাকে চোখের সামনে থেকে দূর করতে পারলেই মহব্বত শান্তি পাবে। বিয়ে করার পর থেকেই মহব্বতের সহ্য হত না জুলেখার নড়নচড়ন। মনে মনে তাকে তালাক দিত সারাদিন। বরং জুলেখার দুর্ঘটনা তাকে বিরাট একটা সুযোগ দিয়ে দিল তালাক দেওয়ার। এমন সুযোগ জীবনে সে আর পাবে না। ভালো ভালোয় শুভ কাজটি সেরে ফেলতে পারলে মহব্বতের প্রাণ জুড়োবে।

জুলেখা জানতো যে সে অসহায় অবস্থায় পড়লে সুরঞ্জন কেটে পড়বে। পুরুষরা তো এটাই বেশ ভালো জানে, বিপদ বাঁধানো, আর বিপদ দেখলে কেটে পড়া। সুরঞ্জনের অমন ব্যাকুলতা, সব ফেলে তার কাছে ছুটে ছুটে আসা, জুলেখাকে আনন্দ দিয়েছে অনেক। এই অশান্তির সংসারে সুরঞ্জনই তার সবচেয়ে বড় আনন্দ। জুলেখার এই আশংকাটি সত্যি হয়নি। সুরঞ্জন পালায়নি। যেদিন মহব্বত তালাক বলে দিল, শুধু তালাকই বলে দিল, সুরঞ্জনের ওপর হাত তোলেনি, জুলেখাকেও স্পর্শ করেনি, জুলেখা কাঁদেনি। শুধু পাথরের মতো বসেছিল। সুরঞ্জনকে সে বলেছে বেরিয়ে যেতে। এক পাও সুরঞ্জন নড়েনি। সোহাগকে নিয়ে সেদিনই বেরিয়ে যাবে কিনা, ভাবছিল। ভাবনাগুলো তালগোল পাকিয়ে তাকে শূন্যের মধ্যে পাক খাওয়াচ্ছিল সারাক্ষণ।

আশেপাশের বাড়ির লোকেরা কেউ জানলো না কী ঘটে গেছে এ বাড়িতে। বিয়ে হয়ে বাড়িটিতে আসার পর থেকে পাড়া পড়শি থেকে দূরেই থেকেছে জুলেখা। কারও বাড়িতে তেমন যাওয়া আসা নেই। বাড়িটিতে একাই ছিল। মহব্বতের আত্মীয়স্বজন সব থাকে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে। মাঝে মাঝে জঙ্গিপুর থেকে লোক আসে। মহব্বত মাসান্তে যায়। বউ বাচ্চা কখনও নেয়, কখনও একাই। তালাক দিয়ে জুলেখাকে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে যেতে আদেশ করেছে মহব্বত। বলে দিয়েছে সোহাগকে সে পাবে না। সোহাগের খোঁজ যেন সে না করে। এক কাপড়েই জুলেখা বেরিয়েছিল, সুরঞ্জন ছিল পাশে। তাকে নিয়ে বেরিয়েছিল ছ বছরের সংসার ছেড়ে।

জুলেখা সিউড়ি কলেজ থেকে পাশ করা মেয়ে। অবশ্য তার এই পাশের মর্যাদা কেউ ই দেয়নি। নিজের চেষ্টাতেই সে পড়েছে। পাস করেছে। রবিউল ইসলাম নামের একজন শিক্ষক প্রেরণা দিতেন ভালো পড়াশোনা করে বড় হওয়ার জন্য। দেখা হলেই বলতেন,-মেয়েদের জীবনে পড়াশোনার দাম সবচেয়ে বেশি। তুমি যদি আজ শিক্ষিত হও, কোনও না কোনও কাজে তোমার শিক্ষাটাকে কাজে লাগাতে পারবে। জ্ঞান কখনও ওয়েস্ট হয় না। বলতেন, তোমার মাথাটা খুব ভালো। পড়াশোনা করলে তুমি অনেক বড় হবে। বড় হওয়া জুলেখার হয়নি। মহব্বতের টাকা পয়সা ছিল বলে সংসারে বাঁদিগিরি করতে হয়নি। কিন্তু ওই সংসারকে নিজের বলে কোনওদিন মনে হয়নি তার। মহব্বত তার বিএ পাশ নিয়ে কোনওদিন কিছু জানতে চায়নি। জুলেখার অনেক গুণ আছে, কিন্তু মেয়ে হিসেবে তার সবচেয়ে বদগুণ ছিল ওই বিএ পাশটিই। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তার কলেজ পাশ করার গুণকে কখনও ভালো চোখে দেখেনি। মহব্বত নিজে আইএ পর্যন্ত পড়েছে। বউ-এর বিএ তার কাছে কাঁটার মতো। নিজের টাকা রোজগারের নেশা, জঙ্গিপুরের বাপদাদার কাঠের ব্যবসা ছেড়ে এক বন্ধুর পরামর্শে কলকাতায় হুট করে বাসনপত্রের ব্যবসায় নামলো। কাঠের ব্যবসার ভার বড় ভাইয়ের কাঁধে দিয়েছে। মহব্বতের জীবনে এক টাকা করা ছাড়া তেমন কোনও সাধ স্বপ্ন নেই। বিয়ে করে ঘরে বউ আনা মানে ঘরের কাজকম্ম করার দাসি আনা। ছেলেপুলে হলে বুড়ো বয়সে তারাই দেখবে।

জুলেখা পাশ করার পর সম্বন্ধ এলো, কলকাতায় ব্যবসা আছে, জঙ্গিপুরে বাড়ি আছে, স্বভাব চরিত্র ভালো। দেরি না করে জুলেখাকে তার বাবা এবং আত্মীয়-স্বজনরা বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। মা মরা মেয়ে বলে বাবা একটু আদর যত্ন করতেন, কিন্তু নিজে পঙ্গু বলে মেয়েকে পার করার দুশ্চিন্তায় তিনি মগ্ন থাকতেন। পার হয়ে মেয়ে বাবার দুশ্চিন্তাকে নিজের ঘাড়ে নিয়ে বাবাকে অন্তত এ থেকে মুক্তি দিয়েছে। তার কি এ শহরে চাকরি একটা জুটবে না!

এখনও চাকরির একটা চেষ্টা করছে সে। চাকরির চেষ্টা ওদিকে সুরঞ্জনও করছে। তবে চাকরি পাক বা না পাক, বেলঘরিয়ার নন্দন নগর ছেড়ে এই পার্ক-সার্কাসে তো এসেছে। চাকরি পাওয়ার চেয়ে কিছু কম প্রাপ্তি এটা নয়। সুরঞ্জন বলেছে, আপাতত দুজনই টিউশনি দিয়ে চালাক, পরে কিছু একটা

নিশ্চয়ই জুটবে। সুরঞ্জনের মতো উদাসিন থাকতে চায় না জুলেখা। কিছু একটা, ছোট হলেও করতে চায়। টিউশনি

তার পোষাবে না। [ চলবে ]

 

 

 

সর্বশেষ খবর