রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

ভেজাল খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ভেজাল খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি

১৯৯৪ সালে আমেরিকার এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সি বলেছে, ফরমালিন ফুসফুস ও গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টি করে। ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টির জন্য ফরমালিনকে দায়ী করে।

টেঙ্টাইল কালারগুলো খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশের পর এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যার ক্ষতি করে না। তবে সবচেয়ে বেশি ও দৃশ্যমান ক্ষতিগুলো হয় আমাদের লিভার, কিডনি, হৃদপিণ্ড ও অস্থিমজ্জার। ধীরে ধীরে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বেলায় নষ্ট হয় তাড়াতাড়ি, তরুণদের কিছুটা দেরিতে।

খাদ্যপণ্যে ভেজালের কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি এগুলো অত্যন্ত বেড়ে গেছে। জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল্লাহ জানান, ফুটপাতে শরবত তৈরির জন্য ব্যবহৃত পানি ও বরফ দূষিত। এর ফলে হেপাটাইটিস-ই ও হেপাটাইটিস-এ রোগ সংক্রমণের প্রবণতা রয়েছে। ব্যবহৃত রং কিডনি ও লিভারে জটিলতা সৃষ্টি করে। একই গ্লাস ব্যবহার করার ফলে একজনের রোগ জীবাণু সংক্রমিত করে অন্যকে। কৃষিবিদ ড. আবদুল মান্নান বলেন, ফল ব্যবসায়ীরা সাধারণত যেসব নিম্নমানের কার্বাইড ব্যবহার করেন তা থেকে আর্সেনিক তৈরি হয়। আর্সেনিক হলো সেঁকো বিষ। সেই বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং মানব শরীরে প্রবেশ করে। ফল ভালো করে ধুয়ে খেলে কিছুটা কম ক্ষতি হলেও তা নির্মূল হয় না কখনো। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের 'বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি' শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। কেমিক্যাল মিশ্রিত বা ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় সেগুলো হলো- পেট ব্যথাসহ বমি হওয়া, মাথাঘোরা, মল পাতলা বা হজম বিঘি্নত মল, শরীরে ঘাম বেশি হওয়া এবং দুুর্বল হয়ে যাওয়া, পালস রেট কমে বা বেড়ে যেতে পারে। এমনকি হঠাৎ অচেতন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম বলেন, ইউরিয়া ও হাইড্রোজ হচ্ছে এক ধরনের ক্ষার। এগুলো পেটে গেলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পেপটিক এসিড উৎপন্ন করে যা ক্ষুধামন্দা, খাবারে অরুচি, বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রদাহসহ নানা রকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের ডা. আহমদ সাইফুল জব্বার, (ইউরোলজি) বলেন, মেটাল বেইজড ভেজাল খাবারে কিডনি স্বল্পমাত্রা থেকে সম্পূর্ণ বিকল হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রে ভেজাল খাবারের জন্য হজমের গণ্ডগোল, ডায়েরিয়া এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের এনেসথেসিয়া ডা. মো. মিল্লাত-ই-ইব্রাহীম বলেন, বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি ও ফলমূূল উৎপাদনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে এ খাবারগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিষক্রিয়া কার্যকর থাকে। যা রান্না করার পরও অটুট থাকে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় করে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রং, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করা হয়। এগুলো গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন প্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 

 

সর্বশেষ খবর