বৃহস্পতিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

উপকূলের নেভিগেশন লাইট

উপকূলের নেভিগেশন লাইট

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে দেশের উপকূলীয় এলাকার একটি বড় অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে যেসব স্থানে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বরগুনা। বরগুনার তালতলীতে অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলেও ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সংবাদ পেয়ে সময়মতো আশ্রয়কেন্দে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার ফলে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। সেসময় ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয় এমন একজন মানুষকে যিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিডরের সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিডরের আগাম সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন। আর তিনি হলেন জয়দেব দত্ত। সিডর আঘাত হানার আগে অনেকেই যার কথা পাগলের প্রলাপ বলে উপহাস করত সেই মানুষটি একাই প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছেন কয়েক হাজার মানুষের। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির অধীনে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কাজ করছেন ৪৮ বছর বয়সের এ মানুষটি। ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস পেলে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে নেমে পড়েন ফ্ল্যাগবাহী সাইকেল আর মেগাফোন নিয়ে। গ্রামের পর গ্রাম ছুটে মানুষকে সতর্ক করেন। সবাইকে অনুরোধ জানান নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে। ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলের হাজার হাজার মানুষের কাছে জয়দেব ছিল একটি প্রিয় নাম। স্থানীয়রা তাকে বলেন উপকূলের নেভিগেশন লাইট। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে প্রচারিত ইত্যাদিতে নেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জয়দেব দত্ত বলেন, ১৪ তারিখ রাত ৮টার সময় সিপিবির সহকারী পরিচালক তাকে বলেছেন-

জয়দেব ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। আমি ঘাবড়ে গেলাম। আমি তিনটা ফ্ল্যাগ ভাড়া করা মোটরসাইকেলে বেঁধে সবাইকে সতর্ক করার জন্য নেমে পড়ি। আমি হাফপ্যান্ট পরে লাল রেইনকোর্ট জ্যাকেট দিয়ে শুধু একটি কথাই বলেছি- ২০ ফুট পানি, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। ১৫ তারিখ দুপুরে ঝড় আসে নাই। মানুষ আমাকে উপহাস করতে লাগল। আমাকে পাগল বলল। কি জয়দেব তোমার কথায় তো বাঘ আসে না। আমি কইলাম আইজ কিন্তু বাঘে খাইবে। আইজ কিন্তু বাঘে খাইবে। তোদের পাছ আমি ছাড়মু না। আশ্রয়কেন্দ্রে না নিয়া আমি ফিরুম না। রাত্র ২টা ৩টা পর্যন্ত আমি এইরকম কাজ করেছি।'

ইত্যাদিতে জয়দেব দত্তের এই প্রতিবেদন প্রচারের পর- গত ৮ মে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে জয়দেবকে রেড ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০০৮ প্রদান করা হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর