বৃহস্পতিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

গহের আলীর তাল সাম্রাজ্য

গহের আলীর তাল সাম্রাজ্য

নওগাঁ জেলার ভিমপুর ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের এক শতোর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধ গহের আলী, সোজা হয়ে চলতে পারেন না। তবু একের পর এক লাগিয়ে চলেছেন গাছ, শুধুই তালগাছ। শতোর্ধ্ব গহের আলীর সামর্থ্য নেই অন্য ফলদ বা দামি বনজ গাছের চারা কেনার। এই বয়সে তার জীবিকা ভিক্ষান্ন। চাল-ডাল আর তালের অাঁটি ভিক্ষে হিসেবে চান তিনি। ঝুলিতে করে বয়ে আনা তালের অাঁটি পুঁতে দেন সরকারি রাস্তার দুই পাশে। গত ৩০ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে গহের আলীর ওপর একটি প্রতিবেদন প্রচার করে ইত্যাদি। গাছ জন্মায়। গহের আলী চারার যত্ন নেন। পানি দেন। গাছ বড় হয়। এমনি করে এ যাবৎ প্রায় ১৮ হাজারেরও বেশি তালের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। ভিমপুর ইউনিয়নের রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে যে তাল গাছগুলো তার সবই গহের আলীর লাগানো। এই অঞ্চলের রাস্তাগুলোর পাশে আগে কোনো গাছপালা ছিল না। প্রখর রৌদ্রে পথ দিয়ে যেতে ছায়া ছিল না কোথাও। বড় কষ্ট হতো তখন মানুষের। এসব দেখেই গহের আলীর মাথায় গাছ লাগানোর চিন্তা আসে। শুরু করেন খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে তালের অাঁটির ভিক্ষা। পথিককে ছায়া দেওয়ার জন্য যে গাছ লাগানো শুরু করেছিলেন তিনি। ইত্যাদির মঞ্চে উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে গহের আলী বললেন- 'তার ইচ্ছা তিনি শান্তিতে যেন মরতে পারেন'।

গহের আলীকে এই বয়সেও যেন আর ভিক্ষা করতে না হয় এবং বৃক্ষরোপণের জন্যও কারও দ্বারস্থ হতে না হয় সেজন্য তার জীবন সাধনার সামান্য স্বীকৃতি হিসেবে তার হাতে দুই লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেওয়া হয়। ইত্যাদিতে প্রচারের পর সেই বছরেরই ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিবেশ পদক-২০০৯ প্রদান করা হয় এবং গহের আলী পরিবেশ সংরক্ষণ ক্যাটাগরিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। ওই সময়ও ইত্যাদির টিম গিয়েছিল তার বাড়িতে। তখন গহের আলী লাঠিতে ভর দিয়েও দীর্ঘ পথ হেঁটে তার লাগানো গাছ দেখতে যেতে পারেন না। তাই একটি ভ্যান গাড়িতে চড়ে তার ছেলে তাকে নিয়ে যান তার তাল সাম্রাজ্যে। 'ইত্যাদি' থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে এখন তিনি কিছু ফলের গাছ লাগিয়েছেন। ভ্যানে করে গিয়ে কখনো তিনি সেসব গাছের পরিচর্যা করেন। তবে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ সালে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। গহের আলীর মৃত্যুতেও তাই শোকে আকুল হয়ে কেঁদেছে অনেকেই।

 

 

সর্বশেষ খবর