শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

গান গায় বুলবুল

মঈনুস সুলতান

গান গায় বুলবুল

আমাদের ছোটবেলা রবির বাজারে হাটের দিন প্রচুর ক্যানভেসারের সমাগম হতো। ক্যানভেসারদের মধ্যে একজনতো রীতিমতো খোল করতাল ঢুলিসহ আবির্ভূত হতো। সম্ভবত সে বিক্রি করত কোনো মারাত্দক ব্যাধির স্বপ্নে পাওয়া ওষুধ। ওষুধটি ঠিক কী রোগের ছিল এত বছর পর আর মনে নেই, তবে সালসাটি সম্ভবত সর্বরোগে কিছু না কিছু উপকার করত। তাই হাটবারে ক্যানভেসারের আগমন হলে আমি আর ঘরে থাকতে পারতাম না। সেকালে আমার তেমন কোনো অসুখ-বিসুখ ছিল না, প্রয়োজন ছিল না কোনো স্বপ্নে নির্দেশিত সালসার, তবুও আমি প্রতি হাটবারে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জনস্রোতে শামিল হয়ে ক্যানভেসারের বর্ণনা শুনতাম। অপেক্ষা করতাম কখন গান শুরু হবে বলে। আজকাল নানারকম অসুখ-বিসুখে কষ্ট পাই। রকমারি নার্সিংহোমে ডাক্তারদের সঙ্গে কনসাল্ট করি। কিন্তু কিছুতে কিছু হয় না। মনে হয় আবার যদি সেই ক্যানভেসারের দেখা পেতাম সালসাটি কেনার সঙ্গে সঙ্গে গাছতলায় দাঁড়িয়ে দিব্যি এক বিকালে মন চনমন করা গান শোনা হয়ে যেত।

থাইল্যান্ডের কনকেন শহর থেকে গাড়ি চালিয়ে আসছিলাম। উদ্দেশ্য বেলাবেলি সীমান্তে এসে ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ পেরিয়ে সন্ধ্যার আগেই লাওসের ভিয়েনচান শহরে পৌঁছে যাব। কিন্তু পথের পাশে মস্ত বনপিপুল গাছের নিচে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট একটি জনসমাবেশ দেখে গাড়ি আর না থামিয়ে পারলাম না। মনে হলো এখানে হয়তো পেয়ে যেতে পারি স্বপ্নে নির্দেশিত কোনো বটিকা।

গুটি গুটি হেঁটে ভিড়ে মিশে যাই। কোনো ক্যানভেসারের মনমাতানো বক্তৃতা হচ্ছে না দেখে একটু হতাশ হই। তবে যা হচ্ছে তা একটু না দেখে গাড়িতে ফিরে আসতে মন চায় না। মনে হলো কী আর হবে তাড়াহুড়া করে, একটু দেখেই যাই না বিষয়টা কি।

মাটিতে পাশাপাশি রাখা সুচারু কাঠে তৈরি দুটি পিঞ্জিরা। পিঞ্জিরাগুলোর একটিতে নকল মুক্তা বসিয়ে নকশা করা। অন্যটিতে পিতলের পাতে খোদাই করে কিছু লেখা। মুক্তা বসানো পিঞ্জিরার পাশে বসা লোকটির গলায় সোনার চেন, লকেটে থাই রাজার চিত্র। পিতলের নামফলকযুক্ত পিঞ্জিরাটি ধরে আছে খালি গায়ে দুই বাহুতে উল্কি অাঁকা এক প্রৌঢ়। দুটি পিঞ্জিরাতেই আছে একটি করে পাখি। পাখিগুলো গাইছে। তাদের গলার স্বর উঁচু গ্রামে বাঁধা, তবে শ্রুতিমধুর। একটি পাখি হঠাৎ করে গান বন্ধ করে পাখা ঝাপটাতে শুরু করে। চেন পরা লোকটি শিস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পাখিটি আবার ফিরে যায় গানে। অন্য পাখিটি এবার গান বন্ধ করে অস্থির হয়ে পিঞ্জিরার ছাদে ঝুলাঝুলি শুরু করে। প্রৌঢ় পাখিওয়ালা 'ইয়ে হই হই' রব তুলে পিঞ্জিরায় চাটি মেরে পাখিটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। খানিক তাল ভঙ্গের পর খেচর দুটি আবার সমস্বরে সমধুর তানে গাইতে শুরু করে।

প্রায় বছর দুয়েক আগে থাইল্যান্ডের একটি ন্যাশনাল পার্কে নেচার-ওয়াকে গিয়ে 'রেড হুইসকার বুলবুল' নামের পাখি সম্পর্কে জানতে পারি। সাধারণ বুলবুলের চেয়ে চোখের নিচে একটি লাল টিকা এ পাখিটির সৌন্দর্যে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। তখন শুনেছিলাম এ বুলবুলের গলার স্বর অতি মধুর বলে একে পোষার জন্য থাই ও মালয়েশিয়ানদের মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে 'ব্যাংকক পোস্ট' নামক একটি সংবাদপত্রে পড়ি, লাল টিকা বুলবুল এতই বিরল হয়ে এসেছে যে- বার্ডওয়াচাররা রীতিমতো লবি করে থাইল্যান্ডে এদের গানের কমপিটিশন বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকার থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, এ বুলবুল পোষতে হলে বিশেষ রকমের লাইসেন্স পেতে হবে। মনে প্রশ্ন আসে- এত কিছু করেও কী শখের পাখিওয়ালাদের খাঁচায় লাল টিকা বুলবুলকে বন্দী করা থেকে বিরত করা যাবে? আমি বার্ডওয়াচার নই, রুটি-রুজির জন্য আমাকে অন্য ধান্দা করতে হয়। কিন্তু বিরল প্রজাতির পাখিগুলোকে খামোকা কষ্ট দিতে দেখলে আমার খারাপ লাগে। ভাবি, এই শখের দুই পাখিওয়ালারা জানে কী- বুলবুল দুটো আসলে গান করছে না? তারা মূলত তাদের টেরিটরি রক্ষার জন্য উত্তেজিত হয়ে তার স্বরে চেঁচাচ্ছে। এ রকম ক্রমাগত চেঁচাতে থাকলে তার অবশ্য প্রতিক্রিয়া পড়বে পাখিগুলোর স্বরযন্ত্রে। পিঞ্জিরার কৃত্রিম পরিবেশে এদের বংশ বিস্তারও হবে রুদ্ধ। কিন্তু কী আর করা যাবে? মানুষের শখের জন্য এ পাখিগুলোর অচিরে বিলুপ্ত হওয়া ভিন্ন কী-বা গতি আছে? এসব ভাবতে ভাবতে গাড়িতে ফিরতেই দেখি যা হওয়ার হয়ে গেছে। বুলবুলের গান শুনতে গিয়ে ঘণ্টাখানেকের মতো লেট হয়ে গেছে। সীমান্তে যে ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ থাইল্যান্ডকে লাওসের সঙ্গে যুক্ত করেছে তা বন্ধ হবে বেলা সাড়ে ৫টায়। এখন অতি দ্রুত গাড়ি না চালালে আজ বিকালে ব্রিজ অতিক্রম করার কোনো উপায় থাকবে না।

হাইওয়েতে ট্রাফিক হবে ভেবে ম্যাপ দেখে গাঁয়ের ভেতর দিয়ে ঈষৎ অাঁকাবাঁকা পথে গাড়ি ছোটাই। স্পিড বৈধ সীমার ঊর্ধ্বে তুলে ড্রাইভ করছি আর ভাবছি এ বিরল প্রজাতির বুলবুলগুলো বিলুপ্ত হবে অচিরে। সংবেদনশীল মানুষ বোধ করি তা রোধ করতে পারবে না। মনে হতে থাকে এমনও দিন আসবে যখন আর লাল টিকা বুলবুল জামরুলের ডালে লেজ দুলিয়ে গান করবে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো ক্যাসেটে ধারণকৃত পাখির গান রেকর্ড প্লেয়ারে বাজিয়ে শুনবে। এসব ভাবতে ভাবতে একটি কাঁচা সড়কে এসে পৌঁছি। ম্যাপ অনুযায়ী এদিকে কাঁচা রাস্তা থাকার কথা না। দুই পাশে ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে মনে হয় ভুল পথে এসে গেছি। আমার পাশ দিয়ে তীব্র সাইরেন বাজিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দুটি মোটরবাইক চলে যায়। কী করি ভাবতে ভাবতে সহসা একটি পেট্রল পাম্প দেখে ব্রেক কষে দাঁড়াই। থাই ভাষায় দু'একটি বাক্য ভিন্ন কিছু বড় একটা বলতে পারি না। অনেক কষ্টে সীমান্ত শহর নংকাইয়ের উল্লেখ করে দেহ ভঙ্গিতে দিকনির্দেশনা চাই। জবাবও আসে ইশারায়। পাম্পওয়ালা যে দিক থেকে আসছিলাম ঠিক সে দিক পানে উল্টো ফিরে যেতে ইঙ্গিত দেয়। আজ কপাল জোরে সীমান্তে পৌঁছতে পারলেও ব্রিজ যে খোলা পাব না এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। রোদ কমে আসছে দেখে গাড়ির গতি বাড়াই। সঙ্গে সঙ্গে কানে বেজে উঠে লাল টিকা বুলবুলের সুরেলা আওয়াজ। খানিক আগে শোনা ঝংকারের স্মৃতিচারণ করতে বেশ ভালো লাগে। ভাবতে শুরু করি- আমার নিজস্ব মনের দ্বৈততা নিয়ে। আমার মনন প্রিয় সত্তা চায় বন্দী পাখিদের মুক্তির স্বপক্ষে কথা বলতে। আবার একই সঙ্গে আবেগাক্রান্ত মনে পিঞ্জিরার পরিবেশ জাত রুদ্ধ গান এক ধরনের পরশ বুলায়। অনেক সময় আমি নিজেই বুঝতে পারি না আমার পক্ষপাত কোন দিকে?

সীমান্ত শহর নংকাইতে আজ কিন্তু আর পৌঁছা গেল না। যেখানে এসে পৌঁছলাম- স্থানটিকে ঠিক শহর বলা যায় না, আনেকটা মফস্বলের বড় বাজারের মতো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আবার যদি পথ হারাই এই ভয়ে আর ড্রাইভ করার সাহস হয় না। রাজসড়কের এক পাশে গাড়ি পার্ক করে এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে খুঁজতে শুরু করি একটি গেস্টহাউস বা হোটেলের যেখানে অন্তত রাতটা কাটানো যায়। চলতে গিয়ে দেখি পথের পাশে একটি ভাঙ্গা পিকাপ ট্রাক ঘিরে খানিক জটলা। আমাকে কারও সঙ্গে কথা বলে একটি ঘর বা গেস্টহাউসের সন্ধান পেতেই হবে। আমি পিকাপের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। কালো চেহারার বেশ শক্তপোক্ত এক রমণী ট্রাকের পেছনে মাদুর পেতে বসে আছে। তার সামনে সাজানো বেশক'টি শিশি বোতল, আর ছোট্ট ছোট্ট গ্লাস। গোটাতিনেক গোলাকার এনামেলের থালায় আগুনে পোড়া মোরগের ঠ্যাং, চটচটে ঝোলে চুবানো শামুক বা গুগলি জাতীয় কোন চাট। স্থানটি ঠিক অন্ধকার নয়। ব্যাটারির সঙ্গে তারের সংযোগে জ্বলছে টর্চের বাল্বের মতো ছোট্ট দুটি বাতি। মহিলা যে ঝাঁজাল তরল বিক্রি করছেন তার ক্রেতার সংখ্যা জনাচারেক। সবাই পুরুষ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছোট্ট গ্লাসে করে পান করছেন। তবে একজন বেশ শান্তশিষ্ট দেখতে, শার্টের বুক পকেটে তার নীল নোটবুক ও কলম গোঁজা। তিনি মাদুরে আসন পেতে বসে অন্যমনস্ক ভাবে চুষে চুষে খাচ্ছেন গুগলি বা শামুক জাতীয় আহার্য। আমাকে দেখেই মহিলা এক গাল হোসে ছোট্ট একটি গ্লাস তুলে ইশারা করেন। আমি যখন এ স্থানে এসেই গেছি প্রয়োজনটি ভাঙা ভাঙা থাই ভাষায় তাকে খুলে বলি। জানতে চাই, কোথায় রাত কাটানোর জন্য একটি ঘর পাওয়া যাবে? মহিলা তার পাশে মাদুরে আসন পেতে বসা খদ্দেরকে কিছু বলেন। উনি এক ঢোকে গ্লাসের তরল গলায় ঢেলে ট্রাক থেকে নেমে এসে আমাকে তার সঙ্গে যেতে ইশারা করে হাঁটেন। যাক, তিনি হয়তো আমাকে কোনো গেস্ট হাউসের সন্ধান দিতে পারবেন ভেবে স্বস্তিবোধ করে তার সঙ্গে বাজারের একটি গলিপথ দিয়ে হাঁটি।

যেতে যেতে এক স্থানে আমার পথপ্রদর্শক ঈষৎ ছমছমে অন্ধকারে থমকে দাঁড়ান। রাস্তার পাশে ভগ্ন মন্দিরের মতো একটি ছোট্ট দালান। দালানের দ্বিতলে সিমেন্টের ছত্রির ছায়ায় দাঁড়ানো বৃহৎ মূর্তির আদল। নিচে ছাদহীন উঁচু বাঁধানো বারান্দা। একটি জলচৌকিতে গোটাতিনেক কিশোরী মেয়ে বেজায় সাজগোজ করে বসে তাস খেলছে। তাদের পোশাক আশাক দেখে মনে হয় বুঝি শখের নাটকে নাচের ভূমিকায় অভিনয় করতে যাবে। আমার পথপ্রদর্শক ইঙ্গিতে তাদের পানে তাকাতে বলেন। মেয়েগুলো এখানে বসে তাস খেলছে কেন- আমি ঠিক বুঝতে পারি না। ভগ্ন দালানের চৌকাট থেকে ঝুলে রঙিন কাগজে তৈরি তারার মতো দেখতে একটি ফানুস। ফানুসের আলোয় কম বয়সী মেয়েগুলো আশ্চর্য রকমের লাস্যময় হয়ে উঠে। একটি মেয়ে তাস থেকে চোখ ফিরিয়ে আনমনা পথের দিকে তাকায়, তারপর ছোট একটি হাত আয়নায় মুখ দেখতে দেখতে লঘু হাতে তাসের দান চলে।

আমি ক্লান্ত, আমার প্রয়োজন রাতযাপনের জন্য একটি শয্যার। তাই এসব পথদৃশ্যে মনোযোগ না দিয়ে দ্রুত হাঁটি। এক ঝলক বাতাস বয়ে নিয়ে আসে হাসনাহেনার গন্ধ। আমার পথপ্রদর্শক হাঁটতে হাঁটতে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করেন- আমি কোন দেশ থেকে আগত? কি কাজ করি এবং মইনা কত? তাকে একটু একটু ইংরেজি বলতে দেখে আমি আশ্বস্তবোধ করি।

আমরা চুনকাম করা এক দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়াই। ওখানে মরচে পড়া টিনের শেডে ঝুলানো বেশক'টি পিঞ্জিরায় কাকলি করে উঠে লাল টিকা বুলবুল। তাদের পেরিয়ে আমরা চলে আসি তীব্র ফ্লাড লাইটে উজ্জ্বল ঝোপঝাড়ে ফুলফোটা আঙ্গিনায়। ওখানে অল্প বয়স্ক দুটি মেয়ে মন্দিরে পূজা দিতে যাওয়ার পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে তাদের অভিব্যক্তিতে কোনো পরিবর্তন আসে না। তবে তারা যেন কোনো মন্ত্র পড়ছে এ রকম ঠোঁটের নীরব কম্পনে দুই হাত জোড় করে বুকের কাছে এনে প্রণত হয়। আঙ্গিনায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় বাড়িটি কাঠের। বেশ কয়েক ধাপ সিঁড়ি উঠে গেছে উপরে। পথপ্রদর্শক আমাকে এ বাড়িতে যেতে বলেন। এ ঘরটিকে মোটেই গেস্ট হাউস বা হোটেল বলে মনে হয় না। ভাবি ছোট্ট গঞ্জে বোধকরি ও ধরনের কিছু নেই। হয়তো এ বাড়িতে পেয়িং গেস্ট রাখে। সিঁড়ি বেয়ে উপরতলায় উঠে আসি। দোতলার খোলামেলা কাঠের পাটাতন অত্যন্ত নির্জন। কী কারণে জানি মনের ভেতর থেকে এক ধরনের বাধা আসে। পথপ্রদর্শক বোধকরি আমার দ্বিধা বুঝতে পারেন। তিনি লাইটারে ফস করে একটি সিগারেট ধরিয়ে আঙ্গুলের ইশারায় বাঁদিকের জানালায় তাকাতে বলেন। জানালার গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। সবুজ চায়ের পেয়ালার মতো তার ফুলেল কাচুলিতে ঝকমক করছে নকল মণিমুক্তা। আমি তাকাতেই গাছ থেকে পাকা ফলটি পড়ার মতো তার ঠোঁট থেকে ঝরে এক টুকরা হাসি। আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না কোথায় এসেছি। ফিরতে উদ্যত হই। পথপ্রদর্শক আমাকে থামান। ডানদিকেও যে আরেকটি জানালা আছে তার ভাবভঙ্গিতে এবার তা বুঝতে পারি। ওদিকে ফিরতেই দেখি সে জানালায়ও দাঁড়িয়ে আছে আরেক তরুণী। এ মেয়ের হাতে বেইলি ফুলের মালা জড়ানো, যা থাই ভাষায় 'ডক হাক' বা আক্ষরিক অনুবাদে 'ভালোবাসার পুষ্প' বলে পরিচিত। স্থানটি ত্যাগ করে উল্টো পথে হাঁটি। পথপ্রদর্শক আমাকে ছাড়েন না। অতি কষ্টে তাকে বুঝিয়ে বলি, আমার প্রয়োজন শয্যাসঙ্গিনী নয়, কেবল মাত্র একটি শয্যার। অবশেষে তিনি একটি থাই শব্দ উচ্চারণ করে হাল ছাড়েন। শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ 'নপুংসক'। একা হাঁটতে হাঁটতে কানে বুলবুলের মধুর ঝংকার শুনি। অনেক পিঞ্জিরা ও এক জোড়া জানালার অলিক চিত্রময়তা আমাকে বিষণ্ন করে দিতে থাকে।

 

 

সর্বশেষ খবর