মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

বইমেলার চাওয়া-পাওয়া

বইমেলার চাওয়া-পাওয়া

হাসান আজিজুল হক : কথাশিল্পী

এবারের মেলায় প্রখ্যাত লেখক হাসান আজিজুল হকের নতুন উপন্যাস এসেছে। এ ছাড়া পুরনো কয়েকটি বইয়ের নতুন সংস্করণ এবারের মেলায় এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে- 'লাল ঘোড়া আমি, রোদে যাবো, ফুটবল থেকে সাবধান' ইত্যাদি। নতুন বই প্রকাশ না হওয়ার বিষয়ে লেখক বলেন, লেখা শেষ করতে পারিনি বলে বই প্রকাশ হচ্ছে না। মেলার পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে শুনে আমার অনেক বেশি ভালো লাগছে। কারণ বড় পরিসরে মানুষ এখন ইচ্ছেমতো ঘুরেফিরে বই কিনতে পারছে। অবরোধ ও হরতাল মেলায় কী ধরনের প্রভাব ফেলছে এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসান আজিজুল হক বলেন, অবরোধ ও হরতালের কারণে এখনো এবারের মেলায় আসতে পারিনি। মেলার পুরো সময়টা আমাকে রাজশাহীতেই কাটাতে হবে। মেলা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভালো নয়। নিরাশার সঙ্গে আশা থাকে, সমস্যার সঙ্গে সমাধান থাকে আর সব অসুন্দরের সঙ্গে সুন্দর সব সময় বিরাজমান থাকে। তাই আমিও এবারের মেলা নিয়ে অনেক আশাবাদী।

আসাদ চৌধুরী : কবি

এবারের মেলায় 'কবিতা নির্বাচিতা' ও 'ও নদীরে' নামের দুটি নতুন কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। আর জনপ্রিয় এই কবির কাব্যগ্রন্থগুলোর প্রতিও কাব্যানুরাগীদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুই জায়গাতে মেলা আয়োজনের পাশাপাশি মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিসর বাড়ানোতে ভীষণ আনন্দিত জনপ্রিয় এই কবি। আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল মেলার পরিসর বৃদ্ধি হোক। আয়োজকরা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। পরিসর বৃদ্ধি পেলে মেলার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করেন খ্যাতিমান এই কবি। পরিসর যত বৃদ্ধি পাবে প্রকাশকদের অংশগ্রহণ তত বেশি হবে। সৃজনশীলতার এই ক্ষেত্রটি অনেক দূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হতো। এবারের মেলা নিয়ে বইপ্রেমীদের মাঝে যে ধরনের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এবারের মেলাটি স্মরণকালের সবচেয়ে সফল মেলা হতে পারত। শুধু হরতাল ও অবরোধের কারণে মেলার সফলতার পথ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েও এবারের গ্রন্থমেলা গতবারের সফলতাকে ছাড়িয়ে যাবে।

ইমদাদুল হক মিলন : কথাশিল্পী

১৯৭৭ সালে আমার প্রথম বই বের হয়। তখন বছরজুড়ে বই প্রকাশ হতো। এখন কেবল ফেব্রুয়ারি মাসে বই প্রকাশ হচ্ছে। সবাই যেন মেলামুখী হয়ে গেছে। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতের একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বছরজুড়ে বই প্রকাশ হয়। এবারের মেলায় প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের চারটি উপন্যাস। অনন্যা থেকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে 'পারুল কন্যা', 'সাড়ে তিন হাত ভূমি', 'সুরভী' ও 'ভূত এসে দেখা করে গেলো'।

ব্যতিক্রমী গল্পের সুবাদে লেখকের প্রতিটি বই-ই ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবারের মেলায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন জনপ্রিয় এই লেখক। ঢাকার বাইরের পাঠকরা মেলায় আসতে পারছেন না বলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হবে এবারের গ্রন্থমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই। ইমদাদুল হক মিলন আরও বলেন, ঢাকার বাইরের পাঠকদের জন্য মার্চে দেশের বিভিন্ন জেলায় মেলার আয়োজন করলে পাঠক, লেখক এবং প্রকাশক সবাই উপকৃত হবেন।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল : শিক্ষাবিদ

ব্যতিক্রমীধারার লেখক হিসেবে মুহম্মদ জাফর ইকবালের তুলনা তিনি নিজেই। বিশেষ করে শিশুতোষ ও সায়েন্সফিকশনধর্মী লেখনীর সুবাদে সময়ের অন্যসব জনপ্রিয় লেখকদের চেয়ে নিজেকে আলাদা একটি অবস্থানে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন দেশবরেণ্য এই লেখক। বরাবরের মতো এবারের গ্রন্থমেলায়ও পাঠকদের জন্য রুচিশীল ও আনন্দদায়ক বই নিয়ে এসেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এবারের মেলায় প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত অন্যতম বইটি হচ্ছে তাম্রলিপি থেকে 'গ্রামের নাম কাঁকনডুবি'। মেলায় এলেই বইটির পাঠক-ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে হয় জনপ্রিয় এই লেখককে। হরতাল, অবরোধ, সহিংসতাসহ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা মেলায় কী ধরনের প্রভাব ফেলছে জানতে চাওয়া হলে জনপ্রিয় এই লেখক জানান, মেলা তার নিজ গতিতেই চলছে। পাঠক ও বইপ্রেমীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলায় আসছে এবং পছন্দের বই কিনছে। বইয়ের প্রতি যাদের ভালোবাসা আছে কোনো ধরনের নৈরাজ্য ও সহিংসতা তাদের ঘরের চার দেয়ালে আটকিয়ে রাখতে পারে না।

আনিসুল হক : কথাশিল্পী

বরাবরের মতো এবারের মেলায়ও জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হকের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে। তার বইয়ের মধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, শিশুতোষ বই। আনিসুল হক রচিত বইগুলো 'বিক্ষোভের দিনগুলিতে প্রেম', 'মায়ের কাছে ফেরা', 'ভয়ঙ্কর দ্বীপে পোকা গোয়েন্দা', 'যখন আমি মটকু ছিলাম' ও লেখকের পঞ্চাশটি গল্প নিয়ে প্রকাশিত বই 'প্রিয় পঞ্চাশ'। মেলার সফলতা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে আনিসুল হক বলেন, এবারের মেলায় শুক্র ও শনিবার ছাড়া মানুষ খুব একটা আসছে না। অথচ অন্যান্যবারের মেলায় প্রায় প্রতিদিনই লোকজন আসত। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবারের মেলাকে মারাত্দকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মেলার স্বার্থে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রত্যাহার করা উচিত। না হলে একুশের চেতনায় ঋদ্ধ বাঙালির প্রাণের এই গ্রন্থমেলা ব্যর্থতায় পর্যবর্ষিত হবে। পত্রিকায় সংবাদ পড়ে ও বিজ্ঞাপন দেখে অন্যান্যবার ঢাকার বাইরের পাঠকরা বই কেনার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসতেন। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। রাজনৈতিক সমাধান না হলে লেখক, পাঠক, প্রকাশকসহ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মঈনুল আহসান সাবের : কথাশিল্পী

অন্তর্মুখী লেখক মইনুল আহসান সাবের। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে সময়ের অন্য সব জনপ্রিয় লেখকের চেয়ে নিজেকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন ভিন্নধারার এই লেখক। এবারের মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার চারটি বই। বইগুলো হচ্ছে- 'কারণজল', 'আব্দুল জলিল যে কারণে মারা গেলো', 'মানুষের মেঘ ও মরুভূমি' ও 'দূরের গল্প'। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যদের মতো জনপ্রিয় এই লেখককেও পীড়া দেয়। সব ধরনের নৈরাজ্য উপেক্ষা করে বইপ্রেমীরা মেলায় আসছেন এবং বই কিনছেন। এতে নিঃসন্দেহে সুন্দরের কাছে অসুন্দরের পরাজয় ঘটেছে। কোনো ধরনের সহিংসতা বইপ্রেমীদের ঘরের কোণে আটকিয়ে রাখতে পারেনি। সব সময়ই মানুষের জয় হয়, মেলায় দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের আগমনে অন্তত এটুকু তো বলাই যায়। ঢাকার বাইরের মানুষ আসতে পারছে না বলে একটু প্রভাব তো পড়ছেই। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী কোনো প্রভাব নয়। মেলার পরিসর বৃদ্ধি নিয়ে মইনুল আহসান সাবের বলেন, পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই তবে স্টল অ্যারেঞ্জমেন্টটা ঠিক হয়নি। স্টল অ্যারেঞ্জমেন্ট আরও ভালো হওয়া দরকার ছিল।

 

 

সর্বশেষ খবর