মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইতিহাস খুব পুরনো নয়

ইতিহাস খুব পুরনো নয়

এই ছবিটি ফ্রান্সের একটি নিগ্রো গ্রামের দৃশ্য। পশুর সঙ্গে তুলনা করে এখানে কালোদের অন্য প্রাণীর সঙ্গে প্রদর্শন করা হতো।

চিড়িয়াখানার পশু প্রদর্শনীর মতোই মানুষের প্রদর্শনী হতো। কখনো খাঁচায় বন্দী করে আবার কখনো প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্দী করে অ-ইউরোপীয়, আফ্রিকান এবং আদিবাসী মানুষের প্রদর্শন করা হতো।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ১৮০০ শতাব্দীর শেষ থেকে ১৯০০ শতাব্দী জুড়ে এই ঘটনার বিচরণ। গোটা পৃথিবীতেই তখন জাতিগত বিদ্বেষ ছিল চরমে। সাদা চামড়ার মানুষের হাতে হরহামেশাই নির্যাতিত নিগৃহীত হতো কালো চামড়ার মানুষেরা। সমাজের সবচেয়ে নীচু কাজগুলো করতে বাধ্য করা হতো তাদের। দাস হিসেবে সাদা চামড়ার মানুষের নির্যাতন সয়ে সয়ে পেরিয়ে যেত গোটা জীবন। নিজস্ব জীবন বলতে কোনো কিছুই ছিল না তাদের। তারও অনেক পরে বর্ণবাদ প্রথার বিলুপ্তির মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় কালো চামড়ার মানুষেরা।

কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে মাত্র ২০০ বছর আগে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে তৈরি হয়েছিল 'মানুষের চিড়িয়াখানা'। চিড়িয়াখানার পশু প্রদর্শনীর মতোই মানুষের প্রদর্শনী হতো। কখনো খাঁচায় বন্দী করে আবার কখনো প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্দী করে অ-ইউরোপীয়, আফ্রিকান, এশিয়ান এবং আদিবাসী মানুষের প্রদর্শন করা হতো। বিশেষ করে কালো চামড়ার মানুষেরা ছিল এই প্রদর্শনীর মূল আকর্ষণ।

প্রশ্ন আসতে পারে কোথায় কোথায় ছিল এমন 'ধমানবিক' মানব চিড়িয়াখানা? উত্তরটা খুব কঠিন নয়। তখনকার দিনের সব বড় শহরেই মানব চিড়িয়াখানার অস্তিত্ব ছিল। প্যারিস, হামবুর্গ, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, লন্ডন, বার্সেলোনা, মিলান, পোল্যান্ড, সেন্ট-লুইস কিংবা নিউইয়র্ক- সবখানেই এমন চিড়িয়াখানা ছিল। এ চিড়িয়াখানার খাঁচার মধ্যে আটকা থাকত কালো মানুষ। আর তাদের দলবেঁধে দেখতে যেত সাদা চামড়ার মানুষেরা। বলাবাহুল্য, কাজটিতে তারা দারুণ আনন্দও খুঁজে পেয়েছিল। নইলে মানব চিড়িয়াখানার এই ধারণা এত দ্রুত প্রসার লাভ করত না। কিংবা এত বাণিজ্যিক রূপও লাভ করত না।

বর্তমান যুগের চিড়িয়াখানাগুলোতে যেভাবে জাল দিয়ে এবং খাঁচা তৈরি করে পশুদের আটকে রেখে প্রদর্শনী করা হয়, তখন কালো মানুষদের এভাবে প্রদর্শন করা হতো। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাদা চামড়ার মানুষ তাদের দেখতে আসত।

 

সর্বশেষ খবর