মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা

চিড়িয়াখানা নয় জাতিগত প্রদর্শনী!

চিড়িয়াখানা নয় জাতিগত প্রদর্শনী!

একটি জাতিগত প্রদর্শনী কার্ল হ্যাগেনব্যাক শো-এর পোস্টার

পশুর মতো মানুষকে প্রদর্শনের ধারণাটি দ্রুত প্রসার লাভ করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এর চর্চা শুরু হয়। অভিজাত সাদা চামড়ার মানুষের পাশাপাশি অনেক বড় ব্যবসায়ীও এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো প্রদর্শনী দল সার্কাস দলের মতো বিশ্বের বড় শহরগুলোতে তাদের প্রদর্শনী নিয়ে ভ্রমণ করত। একে প্রদর্শনী না বলে ভ্রাম্যমাণ চিড়িয়াখানা বলাই ভালো। এসব প্রদর্শনীর সাফল্যও ছিল ঈর্ষণীয়। প্রচুর মানুষ দেখতে আসত কালোদের। তবে উদ্যোক্তারা তখন থেকেই কালো মানুষের সঙ্গে এহেন আচরণের বিষয়টিকে জাতিগত প্রদর্শনী বলে চালিয়ে দিত।

** ১৮৭৪ সাল। কার্ল হ্যাগেনব্যাক নামের একজন জার্মান ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মূলত বণ্যপ্রাণী সরবরাহকারী এবং ইউরোপের বিভিন্ন চিড়িয়াখানার উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী ছিলেন। সে বছর তিনি স্যামন [Samoan] এবং সামি [Sami] নামের মানুষ প্রজাতির একটি প্রদর্শনী করার উদ্যোগ নেন। 'পিউরলি ন্যাচারাল মানুষ' শীর্ষক সেই প্রদর্শনীটি সাদাদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে। ১৮৭৬ সালে তিনি তার একজন সহযোগী পাঠালেন মিসরীয় সুদানে। উদ্দেশ্য ছিল সেখান থেকে কিছু বন্য পশু এবং নুবিয়ান আদিবাসী নিয়ে আসা।

নুবিয়ান আদিবাসীদের নিয়ে হ্যাগেনব্যাকের প্রদর্শনী সাফল্য লাভ করে। ফলে ইউরোপ থেকে হ্যাগেনব্যাক তার প্রদর্শনী নিয়ে প্যারিস, লন্ডন এবং বার্লিন সফর করেন। এ ছাড়াও পশুর পাশাপাশি তিনি আদিবাসী কালো মানুষ সরবরাহের এজেন্টে পরিণত হন। তিনি এসকিমাক্স মানুষদের টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করতেন আর হামবুর্গে তাদের প্রদর্শনী করা হতো।

** প্যারিসের অভিযোজন উদ্যানের তৎকালীন পরিচালক ছিলেন জিওফ্রে ডি সেইন্ট হিলারি। ১৮৭৭ সালে তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নুবিয়ান এবং ইনুইট মানবদের নিয়ে দুটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সে বছর অভিযোজন উদ্যানের দর্শনার্থী বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেল। ফলে উদ্যোক্তারা দারুণ উৎসাহ খুঁজে পেলেন। এরপর ১৮৭৭ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ত্রিশটি আলাদা আলাদা এ ধরনের সফল প্রদর্শনী করেন অভিযোজন উদ্যানের পরিচালকরা, যার প্রতিটিতেই বিশ্বের বিপন্নপ্রায় আদিবাসী কালো চামড়ার মানুষদের প্রদর্শনীর বস্তুতে পরিণত করা হয়।

** ১৮৩৩ সালের এক আন্তর্জাতিক ঔপনিবেশিক মানুষ রপ্তানি প্রদর্শনীতে সুরিনামের স্থানীয় মানুষদের প্রদর্শন করা হয়। যেটি অনুষ্ঠিত হয় আমস্টারডামে।

** ১৮৭৮ এবং ১৮৮৯ সালে পার্সিয়ান বিশ্বমেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল এ ধরনের প্রদর্শনী। ১৮৭৮ সালে নাইজার নামে এই নিগ্রো গ্রামকে তুলে ধরা হয়।

সেবার মেলায় ২৮ মিলিয়ন লোকের সমাগম হয়েছিল। ১৮৮৯ সালে প্রায় ৪০০ আদিবাসী মানুষের প্রদর্শনী ছিল মেলার প্রধান আকর্ষণ।

** ১৯৯০ সালে বিশ্বমেলায় মাদাগাস্কারের বিখ্যাত ডিয়রামার প্রদর্শনী করা হয়। অন্যদিকে ঔপনিবেশিক প্রদর্শনী মার্সেলিস (১৯০৬ এবং ১৯২২), ঔপনিবেশিক প্রদর্শনী প্যারিস (১৯০৭ এবং ১৯৩১) এও খাঁচার মধ্যে মানুষ পুরে প্রদর্শন করা হয়। এসব মানুষের কেউ কেউ অর্ধনগ্ন আবার কেউ কেউ একেবারেই বস্ত্রহীন ছিল।

** ১৯৩১ সালে প্যারিসের প্রদর্শনী ছিল দারুণ সফল। সেবার কমিউনিস্ট পার্টির আয়োজনে ছয় মাসে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এ প্রদর্শনী দেখতে আসে।

 

সর্বশেষ খবর