শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার ১৭ দিন

আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার ১৭ দিন

স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে আনোয়ার হোসেন

লিবিয়ায় আল-ঘানি তেল খনি (অয়েল ফিল্ড) থেকে আইএস (জঙ্গি) কর্তৃক অপহৃত আনোয়ার হোসেন মুক্তি পেয়ে এক মাস দেশের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গয়েছপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসায় পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। চাঁদার জন্য নয় লিবিয়া সরকারকে চাপ সৃষ্টি ও ভয়ভীতি দেখানোর জন্য আইএস সদস্যরা অপহরণ করছে বলে জানান দেশে ফেরা আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ার হোসেন জানান, গত ৬ মার্চ লিবিয়ার বিএওএস কোম্পানির আল-ঘানি তেল খনিতে (ওয়েল ফিল্ড) কর্মরত অবস্থায় লিবিয়ার এস্টেটস অব ইসলামী দল (আইএস) সদস্যরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তেলের খনিতে ঢুকে আমি ও অপর বাংলাদেশিসহ নয়জনকে অপরহণ করে গাড়িতে করে বিমানবন্দর এলাকায় নিয়ে যায়। অপহৃত নয়জনের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি, একজন ঘানার, চারজন ফিলিপাইনি ও দুজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ছিলেন। অনেক দূর নিয়ে সবার নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে এবং তিনজন মুসলমানের পরিচয় জানতে পেরে বলে তোমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। বাকিদের শেষ করে দেওয়া হবে। পরে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে আরেকটি তেলখনিতে সন্ধ্যায় নিয়ে যায় এবং প্রচণ্ড শীতে ওই খানে রাতযাপন করি। তারা কোনো নির্যাতন করেনি। পরে সারা দিন গাড়ি করে ঘোরানোর পর একটি নবনির্মিত হাসপাতালে নিয়ে তিনজনকে রাখে। ওখানে তাদের দুদিন পর খাবার দেয়। ওই সময় সবার কাছ থেকে মোবাইল সেট নিয়ে যায়। বাকি ছয়জনকে অন্য দিকে নিয়ে যায়। ১৭ দিন পর ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় সিরাত নামে একটা শহরের পাশে একটি মাদ্রাসায় আমাদের ছেড়ে দিয়ে আইএস সদস্যরা চলে যায়। সেখানে মাদ্রাসায় ছাত্রদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাদের মোবাইল থেকে কোম্পানিকে ও দেশে স্ত্রী মারুফা খাতুনসহ স্বজনদের ফোন করে ঘটনাটি জানাই এবং ওখানে রাতযাপন করি। পর দিন কোম্পানি ড্রাইভার পাঠিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে ওই দেশের সেনাবাহিনীর কাছে পাঠায়। আর্মিরা আমাদের কাছ থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে মিডিয়াকে তথ্য দেয় এবং সেখানে (আর্মি ক্যাম্পে) এক সপ্তাহ রাখে। পরবর্তীতে ২ এপ্রিল আর্মিরা (বিএওএস) আমাদের কোম্পানির ত্রিপোলির প্রধান অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে কোম্পানির লোকজন ও বাংলাদেশ দূর্তাবাসের লোকজন আসে। পরে লিবিয়া থেকে কোম্পানি দুই বাংলাদেশিকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিমানে করে ঢাকায় আসি। বিমানবন্দর থেকে নেমে বড়ভাই ইমাম উদ্দিনের উত্তরা বাসায় উঠে এবং ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি বেগমগঞ্জের গয়েছপুর আমজাদ হাজির বাড়িতে আসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন আরও জানান, (আইএস) জঙ্গি নামে পরিচিত এস্টেটস অব ইসলামী দল সদস্যরা মূলত চাঁদার জন্য আমাদের অপহরণ করেনি। তারা লিবিয়া সরকারকে হুমকি, ভয়ভীতি ও চাপ সৃষ্টির জন্য অপহরণ করেছে। তারা আমাদের কোনো নির্যাতন করেনি। এদিকে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মারুফা খাতুন ও স্থানীয় লোকজন জানান, আনোয়ার হোসেন মুক্তি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসায় পরিবারের পাশাপাশি গ্রামবাসী খুবই আনন্দিত ও স্বস্তি বোধ করছে। আনোয়ার হোসেনের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার বাবার নাম ইউনুছ মিয়া। আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মারুফা খাতুন জানান, ২০১০ সালে আনোয়ার হোসেন চাকরি নিয়ে প্রথম লিবিয়ায় যান। এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশে আসেন। ৩৬ দিন দেশে থাকার পর ২০১২ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি আবারও লিবিয়ায় যান।

 

 

সর্বশেষ খবর