সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভূমিকম্প

রণক ইকরাম

ভূমিকম্প

ভূমিকম্প কি

সহজ কথায় ভূমির কম্পনই হচ্ছে ভূমিকম্প বা Earthquake। এই প্রাকৃতিক বিষয়টিকে তাবৎ সৃষ্টিকুলের জন্য দুর্যোগ বলা চলে। এতে কিছু সময়ের জন্য মাটির নিচের শিলাস্তর কেঁপে ওঠে। মাটির উপরে থাকা দালান-কোঠা, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে সেই কম্পন ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো এই কম্পন এতই শক্তিশালী হয় যে বহু বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়ে এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী আহত বা নিহত হয়। শক্তিশালী ভূমিকম্প তার উৎপত্তিস্থল থেকে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কেন এই দুর্যোগ

ভূমির বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এই স্তরগুলো একটির ওপর অন্যটি স্থিত অবস্থায় থাকে। ভূ-ত্বকের পাশাপাশি দুটো স্তরের মাঝে ফাটল ধরলে বা ক্ষয় হলে ভারসাম্য নষ্ট হয়। দুটো স্তরের সংযোগস্থলকে 'ফল্ট' বলে। ভূমির বাইরের স্তরের প্রবল চাপ ভূ-ত্বকের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। এই চাপে ভূ-ত্বকের মাঝে হঠাৎ ভারসাম্য নষ্ট হলে বা দুটো স্তরের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটলে প্রচণ্ড শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে যা ভূকম্পন সৃষ্টি করে। গোলাকার পৃথিবীর অনেকগুলো ব্লকে রয়েছে একাধিক ট্যাকটোনিক প্লেট। ট্যাকটোনিক প্লেট একটির সঙ্গে অন্যটির ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়, আঘাত করে এবং কখনো পিছলে পড়ার ঘটনা ঘটে। একটি প্লেট যখন হঠাৎ করে অন্যটি থেকে স্লিপ করে তখন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

পরিমাপ

রিখটার স্কেলে ভূকম্পনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। গাণিতিক সূত্র অপেক্ষা যান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এটা মাপা হয়। আর এক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রের নাম সিসমোগ্রাফ। একটি স্প্রিংয়ে ভারী বস্তুর সঙ্গে গ্রাফ অঙ্কন কলম ও পেপার ড্রাম যুক্ত থাকে। যখন ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তখন মাত্রানুযায়ী গ্রাফ তৈরি হয় যা দেখে মাত্রা বোঝা যায়।

এই গ্রাফটির একক প্রকাশ করা হয় রিখটার স্কেলে। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত এই যন্ত্র প্রতিনিয়ত তথ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ভয়াবহতার মাত্রা

কেন্দ্রে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় তা দিয়েই ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারিত হয়। রিখটার স্কেলের চেয়ে নিখুঁত কম্পন মাপা হয় 'মোমেন্ট ম্যাগনিচিউড' পদ্ধতিতে। এর মাধ্যমে বড় আকারের ভূকম্পন পরিমাপ সম্ভব হয়। ভূকম্পনের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

গ্রেট আর্থকোয়াক : ৮.০ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্পকে 'গ্রেট আর্থকোয়াক' বলে বিবেচনা করা হয়। এর আঘাতে যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর।

মেজর আর্থকোয়াক : ৭.০-৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পকে 'মেজর' মানের কম্পন বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ভূমিকম্প মারাত্দক ক্ষতিসাধন করতে পারে।

স্ট্রং : ৬.০-৬.৯ মাত্রার ভূকম্পনকে 'স্ট্রং' বলা হয়, যাকে আমরা শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে বিবেচনা করি।

মডারেট : ৫.০-৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্প 'মডারেট' বিবেচিত হবে।

এর বাইরে রয়েছে মাইনর আর্থকোয়াক যার মাত্রা ৩.০-৩.৯ পর্যন্ত। আর মাইক্রো ৩.৩ ম্যাগনিচিউডের কম মাত্রার ভূমিকম্পকে 'মাইক্রো' বলে ধরে নেওয়া হয়। এই দুই মাত্রায় তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিসাধিত হয়।

কী করা উচিত

ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার কোনো পূর্বাভাস নেই। এটি থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় বস্তুত নেই। যতটুকু করা যায় কেবল নিজেদের সজাগ ও সতর্ক রেখে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা। প্রত্যেকের উচিত ভূমিকম্প শুরু হলে কে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে সেটা জেনে রাখা। ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেলে আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি না করে চট করে নিজেকে শক্তিশালী টেবিল বা এ ধরনের আসবাবের নিচে নিয়ে যেতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাচের জানালার পাশে অথবা এমন দেয়াল যা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তার পাশে অবস্থান নেওয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি ভূমিকম্পের সময় আপনি বিছানায় থাকেন, তাহলে সেখানেই থাকুন এবং বালিশ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন ঝাড়বাতি বা ফ্যান জাতীয় কিছু ঘরে থাকলে সেটা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। আশপাশে শক্ত পিলার থাকলে সেটার নিচে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমিকম্পের সময় অধিকাংশ মানুষ নিহত হন ভূমিকম্প চলাকালীন অবস্থান পরিবর্তনের সময়। তাই কোনো অবস্থাতেই ভূমিকম্প হওয়ার সময় দৌড় দেওয়া অথবা দ্রুত বিল্ডিং থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করা ঠিক নয়। উঁচু দালানের টপ ফ্লোরে থাকলে ছাদে চলে যাওয়া নিরাপদ। তবে রাস্তা যদি পরিষ্কার জানা না থাকে তাহলে ঘরেই অবস্থান নেওয়া উচিত। আপনি যদি বাইরে থাকেন এবং ভূমিকম্প হয়, তাহলে বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন। এছাড়া আপনি যদি ড্রাইভ করতে থাকেন এবং ভূমিকম্প অনুভব করেন, তাহলে গাছ, বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক খুঁটি ইত্যাদি থেকে দূরে নিরাপদ স্থানে গাড়ি পার্ক করে থেমে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

সর্বশেষ খবর