রবিবার, ২৪ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

নজরুলের প্রেম-বিদ্রোহের কুমিল্লা অধ্যায়

মহিউদ্দিন মোল্লা

নজরুলের প্রেম-বিদ্রোহের কুমিল্লা অধ্যায়

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লার জামাতা। তিনি ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচবার কুমিল্লায় এসেছেন। কুমিল্লা মহানগর ও মুরাদনগরের দৌলতপুরে কাটান এক বছরের বেশি সময়। তার জীবনে যে দুজন নারী এসেছিলেন সে দুজনই কুমিল্লার। প্রথমজন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের খাঁ বাড়ির আলী আকবর খানের ভাগিনী নার্গিস আসার খানম। অপরজন কুমিল্লা মহানগরের বসন্ত কুমার মজুমদারের মেয়ে আশালতা সেনগুপ্তা দুলী। কুমিল্লায় অবস্থানকালে তিনি যেমন কবিতা, গান লিখেছেন, সংস্কৃতি চর্চা করেছেন, তেমনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করেছেন। হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে কুমিল্লার রাস্তায় ইংরেজবিরোধী গান গেয়েছেন। এ কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। মুরাদনগরের দৌলতপুর, কুমিল্লা মহানগরের কান্দিরপাড়ের ইন্দ্রকুমার সেনের বাড়ি, ধর্মসাগর পাড়, রানীর দীঘিরপাড়, মহেশাঙ্গন, দারোগা বাড়ি, টাউন হল ময়দান, সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণের বাড়ি, নবাব বাড়িসহ কুমিল্লার আনাচে-কানাচে তার পদচারণার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখায় ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কবি নজরুল ছাত্রাবাস।

কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়ার দীঘির দক্ষিণ পাড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে 'নজরুল মেমোরিয়াল একাডেমি' নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কবির অন্যতম একটি কাব্যগ্রন্থের নামে কুমিল্লা ধর্মসাগরের উত্তরপাড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে 'গুলবাগিচা প্রাথমিক বিদ্যালয়'। কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে 'নার্গিস-নজরুল বিদ্যানিকেতন' নামের একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখানে সংগীত নৃত্য, নাটক প্রশিক্ষণ ও পাঠাগারের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে 'নজরুল নিকেতন পাঠাগার'। কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটে গড়ে তোলা হয়েছে নজরুলের নামে একটি সংগীত বিদ্যালয়। কুমিল্লার বিবিরবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে 'জাতীয় কবি নজরুল শিশু নিকেতন' নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মুরাদনগরের দৌলতপুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে 'নজরুল মঞ্চ'। দৌলতপুরের 'খাঁ' বাড়িতে ঢোকার পথে স্থাপন করা হয়েছে 'নজরুল তোরণ'। মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে 'কবি নজরুল মিলনায়তন'। ১৯৬২ সালে কুমিল্লার সে সময়ের জেলা প্রশাসক কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ নজরুল স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য শহরের ফরিদা বিদ্যায়তনের সামনের সড়কটি 'নজরুল এভিনিউ' নামকরণ করেন। ১৯৭০ সালে কুমিল্লায় সাহিত্য চর্চার মানসে গঠিত হয় 'নজরুল ললিত কলা পরিষদ'। যা পরবর্তীতে 'নজরুল পরিষদ' নামে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭২ সালে 'নজরুল স্মৃতি পরিষদ' গঠিত হয়। এ পরিষদ নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহে স্মৃতিফলক নির্মাণের ব্যবস্থা করে। ১৯৯২ সালে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির সামনে শিল্পী উত্তম গুহের তৈরি 'চেতনায় নজরুল' শীর্ষক একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলাকে ভাগ করে নতুন উপজেলা করার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন উপজেলা 'কবি নজরুল' উপজেলা নামকরণের দাবি উঠেছে।

কুমিল্লায় নজরুল জন্মজয়ন্তী জাতীয়ভাবে ১৯৯২ সালে প্রথম পালিত হয়। এবার ২৫ মে থেকে তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয়বারের মতো কুমিল্লায় নজরুল জন্মজয়ন্তী জাতীয়ভাবে পালিত হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নজরুল গবেষক ড. আলী হোসেন চৌধুরী বলেন, নজরুল কুমিল্লায় এসে হয়ে উঠেন অসাধারণ। এখানের গুণীজনদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে। তিনি প্রেমে-বিরহে, সংগ্রাম আর গ্রেফতারে হয়ে উঠেন বিদ্রোহের কবি নজরুল।'

 

সর্বশেষ খবর