মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

চলনবিলাঞ্চলের ১৬ নদী হুমকিতে

চলনবিলাঞ্চলের ১৬ নদী হুমকিতে

শত বছরের বিবর্তনে ঐতিহ্যধারী মৎস্য সম্পদে ভরা চলনবিল আজ মরা বিলে রূপান্তরিত হচ্ছে। মহাসড়ক নির্মাণ, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ, কালভার্ট, স্লুুইসগেট, ক্রসবাঁধ ও দখল-দূষণসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণে ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে এ বিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে এর আয়তন। বিলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত সিরাজগঞ্জ জেলার ১৬টি নদী করতোয়া, ইছামতী, গুমানী, গোমতী, আত্রাই, ভদ্রাবতী, গোহালা, বড়াল, নন্দকুজা, গাড়াদহ, কাকন-কানেশ্বরী, সরস্বতী, মুক্তাহার, ঝবঝবিয়া, ফুলজোড় নদী ছিল চলনবিলের প্রাণ। কালের বিবর্তনে এগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিলুপ্তির পথে চলনবিলের মৎস্য সম্পদ। একসময় বিলের মাছ উত্তরাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়েও ভারতে রপ্তানি করা হতো। অন্যদিকে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীরা জাল দলিল তৈরি করে দখলে নিয়েছে কয়েক হাজার একর জমি। উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ড থেকে জানা গেছে, চলনবিলের ১০টি উপজেলার আবাদযোগ্য বেশির ভাগ খাসজমি ও জলাশয় এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এ ছাড়াও বেলকুচি-শাহজাদপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক হুরাসাগরটিও মরাখালে পরিণত হয়েছে।

সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও নওগাঁর আত্রাই নিয়ে বৃহত্তর চলনবিল। গঠনকালে চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮ বর্গ কি. মি.। এ বিলে রয়েছে ৩৯টি বিল, ৪ হাজার ২৮৬ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট ছোট-বড় ১৬টি নদী এবং ১২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ২২টি খাল। ২২টি খালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিমাইচড়া খাল, নবীর হাজীর জোলা, বেশানীর খাল, হক সাহেবের খাল, উলিপুর খাল, গুমানী খাল, কুমারভাঙ্গা খাল, গাড়াবাড়ি খাল, জানিগাছার জোলা, কিনু সরকারের ধর ও সাত্তার সাহেবের খাল।

১৯৬৭ সালে চলনবিলের ইতিকথা বইতে এম এ হামিদ টি কে লিখেছেন- ১৯২৭ সালে জনবসতি এলাকা বাদ দিয়ে চলনবিলের জলময় অংশের আয়তন ছিল ৫০০ বর্গ মাইলের উপরে। ১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপ কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, তৎকালে বিলের আয়তন ছিল ১৪২ বর্গ মাইল। এর মধ্যে ৩৩ বর্গ মাইল এলাকায় সারাবছর পানি জমে থাকত। ওই রিপোর্টে বলা হয়, চলনবিল তার পানির স্রোতধারা ও নাব্য হারিয়ে ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে এর আয়তন দাঁড়ায় মাত্র ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে মূল বিলটির আয়তন দাঁড়ায় ১৫.৯ থেকে ৩১ কি. মি.। এ ছাড়া বিলের গভীরতা ১.৫৩ মিটার থেকে ১.৮৩ মিটার। প্রতি বছর চলনবিলের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে ফসলি জমি। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. মো. রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে জানা গেছে, ২৫ বছর আগেও চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এসব নদ-নদীতে বছরজুড়েই ৬-১২ ফুট পানি থাকত। ফলে সারাবছরই নৌচলাচল করত। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে এসব নদী ভরাট হয়ে গেছে। ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব ও ১৯৮০-এর দশকে পদ্মার উৎসমুখে অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মাণের ফলে চলনবিলের বিভিন্ন নদ-নদী ও বিল, জলাশয়, খালগুলো পলি জমে ক্রমে ভরাট হয়ে গেছে। তা ছাড়া বিলের মাঝ দিয়ে যথেচ্ছভাবে সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, নদী দখল করে বসতি ও দোকানপাট স্থাপন করায় নদীগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

 

সর্বশেষ খবর