মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফারাক্কা আর দখলদারের প্রভাবে কুষ্টিয়ার ৮ নদী

ফারাক্কা আর দখলদারের প্রভাবে কুষ্টিয়ার ৮ নদী

ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব আর দখলদারদের নগ্ন থাবায় অস্তিত্ব হারাতে বসেছে কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৮টি নদী। এক সময়ের খরস্রোতা এসব নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও নদী দখল করে বাড়িঘর আবার কোথাও স্থাপন করা হয়েছে দোকানপাট। আবার কোথাও ইচ্ছামতো বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নদীর স্রোতধারা। এখন আর বোঝার উপায় নেই, এক সময় এসব নদীতে বড় বড় পাল তোলা নৌকা আর লঞ্চ, স্টিমার চলত।

পদ্মার অন্যতম শাখা গড়াই ও মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তিও এ জেলায়। ভারত পদ্মানদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় দেশের দীর্ঘ ও বৃহত্তম পদ্মানদী আজ হুমকির মুখে। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে নানা অজুহাতে ভারত পানির ন্যায্য হিস্সা দিচ্ছে না। এতে নদীর অবস্থা দিনকে দিন সঙ্গীন হচ্ছে। এর মারাত্দক প্রভাব পড়েছে গড়াই ও মাথাভাঙ্গা নদী এবং এর শাখা, উপশাখা নদী ও বিল-হাওরগুলোর ওপর। নদীতে পানি প্রবাহ না থাকায় দিন দিন এসব নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে ভূমিদস্যুরা নদীর দুই পাড় দখল করে নিচ্ছে।

দৌলতপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হিসনা নদী আর শাখা নদী কুমার। এ নদী দুটির এখন করুণ দশা। মাছ চাষের নামে স্থানীয় প্রভাবশালীরা হিসনা নদীতে অসংখ্য বাঁধ দেওয়ায় এর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ওই উপজেলার মথুরাপুর, হোসেনাবাদ, আল্লার দর্গা ও ভেড়ামারা শহরের কাছে ক্ষমতাধররা এ নদীর দুই পাড় দখল করে বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। আর হিসনার শাখা কুমার নদীর পুরোটাই চলে গেছে দখলদারদের পেটে। ভেড়ামারা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চন্দনা। তবে পদ্মার শাখা নদীর অবস্থাও কুমার নদীর মতো। মিরপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সাগরখালি নদী। কয়েক বছর আগে খনন করে এর প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কাজ হয়নি। প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে এ নদীর দুই পাড়। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুমার নদী (২)। গড়াইয়ের শাখা এ নদীটি বিলীন হওয়ার পথে। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে নদীটিতে। ঝাউদিয়া ও বৈদ্যনাথপুর বাজারসংলগ্ন এলাকায় নদীর বড় অংশ দখল করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর অর্ধেক অংশ শুকিয়ে পানি প্রবাহ থেমে গেছে। বর্ষা মৌসুমেও নদী আর আগের অবস্থা ফিরে পায় না। পদ্মার প্রধান শাখা গড়াই নদী। দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা নেই এ বৃহৎ নদীটিরও। নদীগুলোর এই করুণ দশার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে এলাকার জীববৈচিত্র্য আর কৃষি ক্ষেত্রে। জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

 

সর্বশেষ খবর