শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

দখলের কবলে মহানন্দা

দখলের কবলে মহানন্দা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে নদীতীরবর্তী প্রায় তিন হাজার বিঘা নদী শিকস্তির জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। আর ওই জমি একটি চক্র নিজের নামে রেকর্ড করে প্লট আকারে বিক্রি শুরু করায় ছোট হয়ে আসছে নদীর গতিপথ। অন্যদিকে নদী শিকস্তির জমি ও নদীতীরবর্তী সরকারি গো-চারণ ভূমির শত শত একর আবাদি জমি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে প্রভাবশালীরা। এতে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া, মহারাজপুর, বালিয়াডাঙ্গা, গোবরাতলা, ইসলামপুর, দেবীনগর ও সুন্দরপুর, শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর, চককীর্তি, নাচোল উপজেলার ফতেহপুর, গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা, বোয়ালিয়া ও ভোলাহাট উপজেলার দলদলি ইউনিয়নের মহানন্দা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী নদী সিকস্তির প্রায় ৩ হাজার বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। এসব আবাদি জমিতে হাজার হাজার মণ ফসল উৎপন্ন হলেও সরকারের কোষাগারে কিছুই জমা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ দখলদার ও ভূমি অফিসের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেদের মধ্যে তা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উজ্জ্বল কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নতুন আসায় নদী শিকস্তির জমি অবৈধ দখলে আছে কিনা তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এরফান আলী নদী শিকস্তির জমি কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি স্বীকার করে জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একসনা ইজারা দেওয়া বন্ধ থাকায় কিছু ভূমিহীন মানুষ ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জমিগুলো চাষাবাদ করছেন। তবে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এরফান আলী ভূমিহীন মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা জমিগুলো চাষাবাদ করছে দাবি করলেও সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী জোতদার শ্রেণির লোকেরা জমিগুলো দখলে নিয়ে অন্যজনের কাছে টাকার বিনিময়ে একসনা ইজারা প্রদান করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে ওই জমিতে বছরে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকার ধান ও ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন রবিশস্য উৎপন্ন হয়। এ ছাড়াও বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গাপুর মৌজায় গো-চারণ ভূমি হিসেবে ঘোষিত প্রায় ৩০০ বিঘা সরকারি খাসজমি একটি সংঘবদ্ধ চক্র গ্রাম্য ক্লাবের নামে দখল করে টাকার বিনিময়ে অন্যের কাছে ইজারা দিচ্ছে। এসব সরকারি জমিতে বছরে কয়েক হাজার মণ ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে আবদুস সালাম নামে এক ব্যক্তি অতি সম্প্রতি মহানন্দা সেতু সংলগ্ন মহানন্দা নদীর বিশাল এলাকা ভরাট করে প্লট হিসেবে মাটি বিক্রি করছে। এতে নদীর প্রশস্ততা কমে গেছে। ওই জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আবদুস সালাম নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি জমির মালিক দাবিদার আবদুস সালাম। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নজরুল ইসলাম জানান, নদীর মাটি ভরাট করে প্লট করা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে এবং নদীর জমি কীভাবে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই অবৈধ দখলদারদের প্রতি একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির আশীর্বাদ থাকায় বিষয়টি জেনেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব রয়েছে। এদিকে উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় কী পরিমাণ নদী শিকস্তির জমি রয়েছে এবং সেগুলো কারা ভোগদখল করছেন জানতে চাইলে তারা সে ব্যাপারে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেননি। মো. রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 

 

সর্বশেষ খবর