বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

স্বচ্ছ জলের পিয়াইন এখন বালুর মাঠ

স্বচ্ছ জলের পিয়াইন এখন বালুর মাঠ

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর 'স্বচ্ছ জল'-কে তুলনা করা হতো আয়নার সঙ্গে। জাফলং বেড়াতে গিয়ে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলরাশির নিচে মাছের খেলা দেখে অভিভূত হতেন পর্যটকরা। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এ নদীতে শুটিং হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্রের।

খরস্রোতা সেই পিয়াইনের বুকে এখন খেলা করে না মাছ, চলে না পর্যটকদের নৌকা। পিয়াইনের বুকে এখন ধু-ধু বালুচর। কোন কালে এখানে খরস্রোতা একটি নদী ছিল-এমনটা বিশ্বাসই করতে চান না পর্যটকরা। অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন ও উজান থেকে নেমে আসা বালুর কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের এই নদীটি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারতের ডাউকি নদী সিলেটের জাফলং দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীটির একটি শাখা ডাউকি নাম ধারণ করে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের মুখতলা এলাকায় গিয়ে সারি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

এ নদী স্থানীয়ভাবে 'জাফলং নদী' হিসেবেও পরিচিত। অপর শাখাটি পিয়াইন নামে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর সঙ্গে মিশেছে। সরেজমিনে জাফলং গিয়ে দেখা যায়, ডাউকি বা জাফলং নদী থেকে হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করছে। নৌকা নিয়ে পর্যটকরা নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু অস্তিত্ব সংকটে পড়া পিয়াইন নদীতে বালু ছাড়া এক ফোঁটা পানি নেই। চারদিকে শুধু বালু আর বালু। নদীতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।

কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আবদুল হাফিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলধারার কথা তিনি বই-পুস্তক ও সংবাদপত্রে পড়েছেন। কিন্তু বেড়াতে এসে পিয়াইন নদীর অস্তিত্বই খুঁজে পাননি।

স্থানীয় সংগ্রামপুঞ্জির আদিবাসী সত্তরোর্ধ্ব জোসেফ তংচং বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একসময় পিয়াইন নদী ছিল খরস্রোতা।

পানিও ছিল স্বচ্ছ। স্থানীয় লোকজন গোসলের পাশাপাশি ওই নদীর পানি খেতেন। চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য পিয়াইন নদী ও পার্শ্ববর্তী খাসিয়া পলি্লতে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসতেন। কিন্তু 'বোমা মেশিন' ও এস্কেভেটর দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন এবং নিয়মিত বালু অপসারণ না করায় নদীটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।

সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট'র প্রধান নির্বাহী মো. আবদুল হাই আল হাদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পিয়াইন নদী মরে যাওয়ায় পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে পিয়াইন নদী খননের দাবি জানান তিনি।

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

 

সর্বশেষ খবর