বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

নওগাঁর শ্রীহীন পুনর্ভবা

নওগাঁর শ্রীহীন পুনর্ভবা

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেকালের কথাটির সঙ্গে এখনকার বাস্তবের আর কোনো মিল নেই। বৈশাখ মাস না আসতেই নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এককালের খরস্রোতা পুনর্ভবা এই নদীটি খরা না আসতেই শুকিয়ে শুধুই স্মৃতি আর মরা খালে পরিণত হয়েছে। বছরের অধিকাংশ সময় বুক ভরা বালি নিয়ে নদীটি তার স্মৃতি বহন করে আসছে। নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, কলমুডাঙ্গা, পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল উপজেলা সদর নিতপুরের কোলঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে। এককালে বারো মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসন আমলে এলাকার সব রাস্তাঘাটগুলো অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময়ে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকা যোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেন যোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে নৌকা ভিড়ত। সে সময় এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর-বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়াসহ উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকারের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসন ব্যবস্থা নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাক যোগে স্বল্প সময়ে পেঁৗছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদী পথের প্রয়োজন অনেকটায় ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না এটি একটি নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। সেই সঙ্গে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদী পাড়ের হাজার হাজার লোকজন। এ বিষয়ে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ জেলায় পাঁচটি নদী রয়েছে। নদীগুলো হলো- ছোট যমুনা, আত্রাই, তুলশিগঙ্গা, মহানন্দা ও পুনর্ভবা। সব নদীগুলো ড্রেজিং করা দরকার। ইতিমধ্যেই বর্তমান সরকার সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের জনসাধারণের কষ্টের কথা চিন্তা করে সম্প্রতি এই নদীর বুকে কলমুডাঙ্গার বলদিয়াঘাট ও হাপানিয়া ঘাটে দুটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

 

সর্বশেষ খবর