বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে করতোয়া ও ইছামতী

অস্তিত্ব সংকটে করতোয়া ও ইছামতী

দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ১৯টি ছোট-বড় আত্রাই, করতোয়া, কাঁকড়া, ঢেপা, পুনর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা, ইছামতী, ভূল্লী, পাথরঘাটা, নর্ত, ছোট ঢেপা, বেলান, নলসীশা, তুলসীগংগা, চিরি, মহিলা, তেঁতুলিয়া (তুলাই), ভেলামতি নামের নদী। এসব নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৭২৪ কি.মি.। ১৩ উপজেলায় ছোট-বড় বিল রয়েছে ৭৫টি। নদীগুলোর অন্যতম পুনর্ভবা, ঢেপা, আত্রাই, ছোট যমুনা, মহিলা আর করতোয়া। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীগুলো হয়ে ওঠে প্রমত্তা। দু-কূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হয়। সৃষ্টি হয় বন্যা পরিস্থিতি। এলাকা বিশেষে নদীর পার ভেঙে ক্ষতি হয় ফসল, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতির। এরপর বর্ষাকাল পেরিয়ে গেলেই নদী শুকাতে শুরু করে। শুকনো মৌসুমের গোড়াতে আত্রাই ছাড়া অন্য কোথাও স্রোত তো দূরের কথা, কোনো কোনো নদীতে পানিই থাকে না। পলি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুনর্ভবা, আত্রাই, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনাসহ অনেক নদী শুকিয়ে যাওয়া অংশে দখল করে প্রভাবশালীরা গম, ইরি-বোরো ধান, ভুট্টা, আলু, ডাল প্রভূতি শীতকালীন সবজি আবাদ করছে। নামে শাখা কাল নদী কিন্তু সে নদীতেই পানির আকাল। ভরা মৌসুম ছাড়া যেখানে পানি থাকে না। পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ার শাখা কাল নদীটি এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। ঘোড়াঘাট উপজেলার মহিলা নদীর দুই পাশে বোরো ধানের বীজ তলা তৈরি ও ইরি বোরো আবাদের উপযোগী করতে এ এলাকারই কিছু অসাধু ব্যক্তিরা নদী ভরাটের উৎসবে মেতে উঠেছে। মহিলা নদী হচ্ছে করতোয়া নদীর শাখা নদী। তুলাই নদীর পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে ৫-৬ বছর আগেও এ এলাকার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি আবাদ হতো হরহামেশাই। একসময়ের খরস্রোতা পুনর্ভবা নদী এখন মরাখাল। কাহারোল উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এ নদী প্রয়োজনীয় সংস্কার ও ড্রেজিংয়ের অভাবে করুণ অবস্থা। আবার দখল হয়ে নদীর দুই পাড়ে অবাধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘর নির্মাণ করেছে স্থানীয় লোকেরা। স্থানীয় এলাকাবাসী সুকুমার জানান, আজ থেকে ২০ বছর আগেও জেলা শহর থেকে ব্যবসায়ীরা নদী পথে নৌকা নিয়ে কাহারোল হাটে ব্যবসা করার জন্য আসতেন। কিন্তু এখন নদীর বুকে শুধু বালু চর। এক সময়ের প্রমত্তা ঢেপা নদীর তলদেশে চাষ হচ্ছে বোরো ধান। চিরিরবন্দরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের স্রোতস্বিনী প্রমত্তা ইছামতী নদী এখন যেন মরা খাল। দেখলে মনে হবে নদী আর ফসলের মাঠ যেন একাকার হয়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, চলতি শুষ্ক মৌসুমে জেলার ছোট-বড় সব নদীর চরে সহস্রাধিক চাষি ৯০৬ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮, ব্রি-৩২ জাতের বোরো ধান, তরমুজ, আলু, মরিচ, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছে। ভূমিহীন কৃষকেরা সুযোগ পেলেই এসব নদীর চরে চাষাবাদ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুজ্জামান নয়ন জানান, ড্রেজিং না করায় ঢেপা নদীসহ কয়েকটি নদীর প্রস্থ ও গভীরতা কমে প্রায় সমতল হয়ে গেছে।

বর্ষা মৌসুমে পলি ও বালু পড়ে নদীগুলো ভরাট হয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। নদীতে জেগে উঠা চরে চলছে চাষাবাদ। কৃষি মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২০০১ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢেপা নদীতে একটি ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়। মো. রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

 

সর্বশেষ খবর