বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত ভারত

ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত ভারত

বাংলাদেশ থেকে নারী পাচারের ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে ভারত। সেভ দ্য চিল্ড্রেনের জরিপ সূত্রে জানা যায়, শেষ পাঁচ বছরে শুধু ভারতেই পাঁচ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের বরাত দিয়ে ইউএনডিপির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে ৩ লাখ নারী ও শিশু পাচার করে ভারতে নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে পাকিস্তানে পাচার হয়েছে ২ লাখ নারী ও শিশু। পাচার হওয়া এসব নারী ও শিশুর বয়স ১২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪০০ নারী-শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব নারী-শিশু ৬০ ভাগ কিশোরীর বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার নারী ও শিশু ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে থাকে। সম্প্রতি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মানব পাচার প্রতিরোধে আইন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও বন্ধ হয়নি মানব পাচার। জানা গেছে, দেশের ১৮টি রুট দিয়ে প্রতি বছর পাচারের শিকার বেশির ভাগ নারীর স্থান হয় ভারতের পতিতাপল্লীতে। ভারতীয় সমাজকল্যাণ বোর্ডের এক তথ্য থেকে জানা যায়, সেখানকার বিভিন্ন পতিতাপল্লীতে প্রায় ৫ লাখ পতিতাকর্মী রয়েছে, এর বেশির ভাগই বাংলাদেশি। বিয়ে, চাকরি এবং আর্থিক প্রলোভনে পড়েই এসব নারী পাচারের শিকার হয়ে থাকে। এদিকে পাচারের শিকার শিশুদের মরুভূমির উটের জকি হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর আগেই বিশ্বজুড়ে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে, পাচার হওয়া শিশুদের অনেককে হত্যার পর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা হয়। খোদ রাজধানী ঢাকা মহানগরীতেই নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের গডফাদাররা দিব্যি বিলাসী জীবনযাপন করছে এবং দেশব্যাপী এই চক্রের নেটওয়ার্ক রয়েছে। আর সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সঙ্গেও এদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া বিজিবি ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার দৌলতদিয়ার চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম মণ্ডল ওরফে নুরু মেম্বারকে নারী পাচারকারীদের অন্যতম গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথমে প্রলোভন ও অপহরণ করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। পতিতাবৃত্তিতে নাম লেখানোর পর অধিক উপার্জনের প্রলোভন দিয়ে তাদের বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে পাচার করে দেওয়া হয়। নুরু মেম্বারের নেতৃত্বে গঠিত এ দলটির দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে রয়েছে একক আধিপত্য। তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারী হয়েও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অপরজন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার জহিরুল ওরফে জিয়া। গডফাদার হিসেবে দিনাজপুর জেলার সীমান্ত এলাকায় মানব পাচার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তার নেতৃত্বে বিরামপুরের কাটলা ও ঘাসুরিয়া সীমান্ত এলাকায় দালাল ও পাচারকারীরা বেশ সক্রিয়। গোয়েন্দা রিপোর্ট মতে কক্সবাজারের একজন সংসদ সদস্যের নিকটাত্দীয় মৌলভী মুজিবুর রহমানের নাম রয়েছে গডফাদারের তালিকায়। তিনি মালয়েশিয়ায় সমুদ্রপথে ট্রলারযোগে মানব পাচার করে আসছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব পাচারকারীরা অত্যন্ত শক্তিশালী চক্র। তাদের সঙ্গে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। এ কাজের জন্য মাসিক বেতনে দালালও নিয়োগ দেওয়া রয়েছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় এসব দালাল সক্রিয় বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর