মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিলীন হওয়ার পথে লালমনিরহাটের ১১টি নদী

বিলীন হওয়ার পথে লালমনিরহাটের ১১টি নদী

সংস্কারের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাটের প্রায় ১১টি নদী। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের পরিবর্তে সেখানে ধান, পাট, ভুট্টা, ডাল, আলু ও তামাকসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য চাষাবাদ হচ্ছে। এছাড়া থেমে গেছে শত শত বছর ধরে বয়ে চলা প্রাণের প্রবাহ। জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। এসব নদী, উপনদী, শাখা-প্রশাখা নদী, ছড়া নদী, নালা, নদীখাদ জেলার মানুষের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি।

এ জেলার প্রধানতম নদী তিস্তা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের উৎস হিসেবে বিবেচিত হলেও এটি এখন মৃতপ্রায়। বৃহত্তর এই নদীটিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়ি জেলার গজলডোবা নামক স্থানে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজ থেকে ১০০ কিলোমিটার উজানে। ফলে তিস্তা অববাহিকার পানিপ্রবাহ অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়া এবং কৃষি-নৌসহ জীবনযাত্রায় মারাত্দক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিস্তা চরাঞ্চলে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের জীবনজীবিকায় চরম হাহাকার নেমে এসেছে।

পানির অভাবে শুধু এ জেলাতেই প্রতি বছর মাছের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে হাজার মেট্রিক টন। এর পাশাপাশি আর্সেনিক সমস্যা, জীববৈচিত্র্যে হুমকি, কৃষি সেচসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর, লালমনিরহাট জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ১১টি নদী সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে অনেক স্থানেই এসব নদীর কোনো অস্বিত্বই দেখা যায় না। এর মধ্যে কিছু কিছু নদী এ জেলা থেকে হারিয়ে গেছে।

হারিয়ে যাওয়া নদীগুলো হচ্ছে- ধরলা, দুধকুমার, তিস্তা, স্বতী, ভেটেশ্বর, বুড়ি তিস্তা, সানিয়াজান, রত্নাই, কুরুম, চারাল কাঁটা, মালদহ প্রভৃতি।

সূত্র মতে, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্দার ফুলছড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার তিস্তা নদীটি মৃৃতপ্রায়। বর্তমান পানিশূন্য অবস্থায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর তলদেশে দু'পাড়ের মানুষেরা ধানের ও অন্যান্য ফসলের আবাদ করছে। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিস্তা নদীর দু'পাড় দখল করে নিচ্ছে। অনেকেই দখল করে অবৈধ স্থাপনাসহ দোকানপাট নির্মাণ করছে।

এক সময় তিস্তা নদীর এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও চলাচলের উত্তম পন্থা হিসেবে ব্যবহার করত। এ নদীতে বিভিন্ন বণিক এসে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহায়তা দিত। বর্তমান নদীর উৎসমুখসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ক্রসবাঁধ নির্মাণ, ব্রিজ ও স্লুইস গেট নির্মাণ করায় আর পানি আসতে পারে না। পানির চলাচল না হওয়ায় বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী তিস্তা নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন জানান, নদীর উৎসমুখে ক্রস বাঁধ, ব্রিজ ও স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য নদীটি অচল হয়ে গেছে। নদীটিকে পুনরায় সচল করার জন্য এ অঞ্চলের জনতাসহ তিস্তা আন্দোলন কমিটি আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে জেলার পাটগ্রাম উপজেলা থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার বিস্তৃত ছিল ধরলা নদী। এ নদীর এখন অস্তিত্বই নেই। নৌকার পরিবর্তে সেখানে চলছে কলের লাঙ্গল।

এ ব্যাপারে শিক্ষক সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম জানান, ধরলা নদীতে ছোটবেলায় আমরা নৌকায় চড়েছি, মাছ ধরেছি। এখন সেই নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। একই অবস্থা সানিয়াজান ও বুড়ি তিস্তা নদীর। বছরে দু'বার আমন ও ইরি ধান চাষাবাদের উর্বর ভূমি এখন এ দুটি নদী। দুধকুমার হারিয়েছে তার জৌলুস। অন্যদিকে মালদহ আর কুরুম নদী এখন খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এ জেলার মানুষের কাছে।

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

 

সর্বশেষ খবর