মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ

হারিয়ে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ

'ব্রহ্মপুত্র সাগর জল-উথাল-পাথাল ঢেউ উঠে' কবির কাব্য-ভাবনায় ব্রহ্মপুত্রের রূপ ছিল এমনই। যমুনা থেকে শুরু হয়ে জামালপুর জেলার বুকচিরে ময়মনসিংহ-ভৈরব হয়ে ব্রহ্মপুত্র মিশেছে মেঘনায়। একসময় ব্রহ্মপুত্রে উথাল-পাথাল ঢেউ ছিল, ছিল খরস্রোতা। মূলত ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে সওদাগর-বণিকদের বাণিজ্য-নৌকা আসা-যাওয়ার সূত্র ধরেই একসময়ের জঙ্গলাকীর্ণ এ অঞ্চলে গড়ে ওঠে জনবসতি। কিন্তু অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ আর দখলের কবলে পড়ে উত্তাল সেই ব্রহ্মপুত্র যৌবন হারিয়ে ক্ষীণ হতে হতে এখন পরিণত হয়েছে সরু খালে।

এই আশির দশক পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রে ছিল উথাল-পাথাল ঢেউ। শহরের কাচারিঘাট, সাত্তারের ঘাট, কালীঘাট, তমালতলা চাপাতলা ঘাট আর বানিয়াবাজার ঘাটে নিয়মিত ভিড়ত হাজার মণের অসংখ্য নৌকা। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদ আর তমালতলা ঘাটকে ঘিরেই জামালপুরের প্রাণকেন্দ্র তমালতলা হাট ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর থাকত বছরজুড়ে। মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে সেই ব্রহ্মপুত্র এখন ক্ষীণকায় শীর্ণ পানাডোবায় পরিণত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যা আর ভাঙনের কবল থেকে শহর রক্ষায় ১৯৯৮ সালে পাথালিয়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে পৌর কর্তৃপক্ষ একটি বাঁধ নির্মাণ করে শহরমুখী মূল স্রোতধারা আটকে দেয়। মূলত অপরিকল্পিতভাবে এই বাঁধ নির্মাণের ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে ব্রহ্মপুত্র। আর এই সময় থেকে জেলা শহরের হাসপাতাল এলাকা ও দেওয়ানপাড়া থেকে সদর উপজেলার নরুন্দি পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলতে থাকে দখলের মহোৎসব। শহরের কালীঘাট, তমালতলা, বানিয়াবাজার, নান্দিনা এলাকা থেকে নরুন্দি পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদ দখল করে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে দখলদারেরা। দখলদারদের কবলে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী তমালতলা ঘাট। এখানে বিশাল সব গুদামের আড়ালে নদী আর ঘাট খুঁজে পাওয়া কঠিন। গেল ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হাসপাতালের সামনে থেকে দেওয়ানপাড়া টেনিস মাঠ পর্যন্ত নদীতীরের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও বাকি এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছে দখলদারেরা। হারিয়ে যেতে বসেছে ব্রহ্মপুত্র নদ।

শফিক জামান, জামালপুর

 

সর্বশেষ খবর