মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাগেরহাটে মরে গেছে ২৩টি নদী

সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মরে গেছে ২৩টি নদী। এ জেলার ৯টি উপজেলার বুক চিরে বহমান এসব নদীতে এখন আর লঞ্চ -স্টিমার ও কার্গো ভ্যাসেল চলাচল করতে পারছে না। এ নদীগুলোর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে ভাটার সময় নদীতে হাঁটু পানিও থাকে না। শুকিয়ে যাওয়া এসব নদী দেখে এ জনপদের মানুষ এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন-হাতড়ে বেড়ান নিকট অতীত। এ জেলায় পলি জমে মরে যাওয়া ২৩টি নদী হচ্ছে পুটিমারী, বিশনা, দাউদখালী, মংলা, ভোলা, ঘষিয়াখালী, কালিগঞ্জ -খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর, ভাষা, বেমরতা- দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমী, দোয়ানিয়া, যুগীখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা ও চিত্রা নদী। এছাড়া অতিরিক্ত পলি জমে মরে গেছে বাগেরহাটের তিন শতাধিক ছোট-বড় খাল। এসব নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবন্দর মংলার সঙ্গে সারা দেশের সহজে কার্গো ভ্যাসেলসহ নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চলছে না ঢাকা-খুলনা স্টিমার ও ঢাকা-বাগেরহাট লঞ্চ সার্ভিস।

অন্যদিকে নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না। আর বর্ষা মৌসুমে জলাদ্ধতায় প্রতি বছরই কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। এ জেলায় লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খালে ভেড়ি বাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের ফলে ফসলি জমিতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি না উঠতে পারছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) ৫টি পোল্ডারের ১৬৫টি স্লুুইচ গেটে সরকারিভাবে কোনো লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটার পানি নামার সময় ফ্লাপগেট (স্লুইচ গেটের নিচের অংশগুলো সব সময় বন্ধ থাকায় ভরাট হয়েছে নদী। অন্য দিকে ফারাক্কা বাঁধের কারণে এসব নদীগুলোতে উজানের পানি না আসার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের পানি স্থির হয়ে থাকায় অতিরিক্ত পলি জমেও ভরাট হয়ে গেছে নদী-খাল। এ কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্রুত ভাটায় নেমে গিয়ে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের সবুজ প্রকৃতি। বাগেরহাটে অতিরিক্ত পলি জমে শুকিয়ে যাওয়া নদী ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিন জানান, মংলা বন্দর থেকে ঘষিয়াখালী চ্যানেল হয়ে বন্দরের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের এই রুটটি সচল রাখতে রামপাল উপজেলা সদর হয়ে দাউদখালী নদীতে এ বছর ড্রেজিং করা হয়েছে। জুনে এই চ্যানেলটি খুলে দেওয়া হবে। বাগেরহাট জেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, নদী খাল ভরাট হওয়ার ফলে দেশি প্রজাতির মাছ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে সমুদ্রের লোনা পানি বদ্ধ হয়ে দেশি সরপুঁটি, পাবদা, শিং, মাগুর, ফোলই, খৈলশা, গজাল, চুচড়া, চাঁন্দা, রয়ভেদাসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে।

আহসানুল করিম, বাগেরহাট।

সর্বশেষ খবর