বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

কক্সবাজার টেকনাফে বিপ্লব

কক্সবাজার টেকনাফে বিপ্লব

কক্সবাজারে আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ

আব্দুস সালাম, টেকনাফ (কক্সবাজার)

কক্সবাজারের টেকনাফ উপক্থলীয় এলাকায় কাকড়াঁ চাষের ব্যাপক বিসত্দার ঘটেছে। বর্তমানে ১০০ একর জমিতে কাকড়াঁর চাষ করা হচেছ। তবে কাকড়াঁ চাষে জড়িতরা সবাই ব্যাপক সফলতা অর্জন করছেন বলে জানায়। তবে কাকড়াঁ চাষীরা সরকারী পৃষ্টপোষকটা পেলে এ শিল্প ব্যাপক আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাময় শিল্প প্রসারে সংশিস্নষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয় কাকড়াঁ চাষীরা। গত ৭/৮ বছর আগে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মৃত আলী আকবরের ছেলে মোসত্দাফিজুর রহমান তার এলাকার ৩২ জনকে নিয়ে একটি সমিতির মাধ্যমে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বালুখালি ও হোয়াইক্যং খালের ২৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কাকড়াঁ চাষ শুরম্ন করেন। ওই সময় তারা কাকড়াঁ চাষ করে ব্যাপক স্বালম্বী হয়েছেন। পরে তারা কাকড়াঁ চাষ বৃদ্ধি করেন। এর পর থেকে কাকড়াঁ চাষ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদের বিসত্দার ঘটেছে।

জানাযায়, টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১০০ একর জমিতে কাকড়াঁ চাষ করা হচ্ছে। বিশেষ করে হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, বালুখালি, কানজর পাড়া, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, খারাংখালি, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, দমদমিয়া ও টেকনাফ জালিয়া পাড়া এলাকায় প্রজক্টের মাধ্যমে কাকড়াঁ চাষ করা হচ্ছে। এ সব প্রজেক্টে উৎপাদিত কাকড়াঁ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। ফলে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচেছ। তবে চিংড়ী মাছের বাজার না থাকায় অনেক চিংড়ী চাষী কাকড়াঁ চাষের দিকে ধাবিত হচেছ। অধিকাংশ চিংড়ী প্রজেক্টে এবার কাকড়াঁ চাষের প্রসত্দতি চলছে বলে জানা গেছে।

কাকড়াঁ চাষীরা জানান, চিংড়ী প্রজেক্টে আড়ার ঘেরা দিয়ে কাকড়াঁ চাষের জন্য পস্নট তৈরি করা হয়। ওই পস্নটে নদীর লবন পানি ঢুকানো হয়। সে পানির সাথে কাকড়াঁ ও ঢুকে যায়। পরে সময়মত কাকড়াঁ পরিপূর্ণ হলে তা উঠানো হয়। এ সব কাকড়াঁর খাদ্য হিসাবে নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট ছোট মাছ। এ সব মাছ সংগ্রহ করে ছোট করে লবন দিয়ে বিষাক্টতা নষ্ট করে পানিতে ধুয়ে পস্নটে কাকড়াঁর খাদ্য দেওয়া হয়। পরে তা বাজারজাত করা হয়। প্রজেক্টে উৎপাদিত চিংড়ী বর্ষাকালে চাহিদা কম থাকে। তবে উৎপাদিত কাকড়াঁকে ১১ ভাগে ভাগ করা হয়। বর্তমানে তা সবর্োচ্চ ৩০০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সর্বোচচ সাইজে বড় কাকড়াঁ কেজিতে মেয়েলি ৫টি আর মদ্দা ২টি ধারন করা হয়।

বর্তমানে আরকান রপ্তানীযোগ্য কাকড়াঁ সরবরাহকারী ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নামে ৪৩ জনের একটি নিবন্ধিত সমিতি রয়েছে। এ সমিতির মাধ্যমে কাকড়াঁ চাষীরা তাদের সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে থাকে।

 

সায়েদ জালাল উদ্দিন, কক্সবাজার

এক সময়ের অবহেলিত কাঁকড়া এখন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগে কৃত্রিমভাবে উৎপাদন হচ্ছে কাঁকড়া। এতে করে রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতি বছর শত কোটি ডলার যোগ হওয়ার উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। জানা গেছে, ২০০৩ সালের দিকে প্রথম কাঁকড়ার পোনা ও চাষ বিষয়ে গবেষনা কার্যক্রম শুরম্ন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ । এরপর ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ইউএসএআইডি'র অর্থায়নে ও আনত্দর্জাতিক মৎস্য গবেষনা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ'র এ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম এন্ড নিউট্রিশন প্রকল্পের যৌথ তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের একটি হ্যাচারীতে নতুন উদ্যোগে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে নিবিড় গবেষনা কার্যক্রম গ্রহন করে।

বর্তমানে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছরা, সদরের খুরম্নশকুল, টেকনাফ, চকরিয়ার ডুলাহাজারাসহ জেলার অনত্দত ১০টি স্থানে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। খুরম্নশকুলের একটি প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, কাঁকড়া চাষের জন্য বাঁশ ও রশি দিয়ে এখানে তৈরী করা হয়েছে মাচা। কিছুদূর পর পর সবুজ টিনের ছাউনি দিয়ে বানানো হয়েছে কিছু বাসা। এসব বাসার মধ্যে মজুদ করা হয়েছে কাঁকড়া চাষের সরঞ্জামাদি। ছোট ছোট করে তৈরী করা হয়েছে পুকুরগুলো। এভাবেই আধুনিক পদ্ধতিতে চলছে কাঁকড়া চাষ।

স্বাধীনতাপরর্বতী সময়কাল থেকে বাংলাদেশে বানিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষ শুরম্ন হয়। সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকায় চিংড়ি/মৎস্য ঘেরের প্রধান ফসল বাগদা চিংড়ি হলেও সাথী ফসল হিসাবে ঘেরে যৎসামান্য কাঁকড়া উৎপাদিত হত। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কাঁকড়া না খাওয়ায় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাই ছিল এর প্রধান ভোক্তা। তাই চাহিদা কম থাকায় কাঁকড়ার বাণিজ্যিক উৎপাদন ছিলনা বললেই চলে। এ অবস্থা চলে নব্বই দশক পর্যনত্দ। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে উদ্যোগী কতিপয় ব্যাবসায়ী বাংলাদেশ থেকে সীমিত পরিসরে কাঁকড়া রপ্তানি শুরম্ন করেন থাইল্যান্ড, কেরিয়া, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানসহ মঙ্গোলিয়ান বেল্টের দেশগুলোতে।পরবর্তীকালে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বানিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সীমিত আকারের চাষ থেকে উৎপাদিত কাঁকড়া বিগত বছর গুলোতে ৫ থেকে ৭ হাজার টন প্রতি বছর রপ্তানি হয়। সে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে চাষের পরিধি ও রপ্তানী। বর্তমানে কাঁকড়া চাষ একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিনত হয়েছে। কক্সবাজার মৎস্য অফিস জানায়, বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকায় পাওয়া বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে মাড ক্রাব বা শীলা কাঁকড়ার দাম ও চাহিদা আনত্দর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশী। তাই কাঁকড়া চাষ ও ফ্যাটেনিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চিংড়ি চাষে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থাকলেও কাঁকড়া চাষে এ ঝুঁকি নেই।

 

সর্বশেষ খবর