শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

শরম (৩৮তম পর্ব)

তসলিমা নাসরিন

শরম (৩৮তম পর্ব)

অলঙ্করণ: শাকীর এহসানুল্লাহ

'লজ্জা' উপন্যাস লিখে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনায় পড়েছিলেন তসলিমা নাসরিন। একপর্যায়ে তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। 'লজ্জা' উপন্যাসের নায়কের সঙ্গে লেখিকা তসলিমা নাসরিনের দেখা হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। সেই অনুভূতি নিয়ে তিনি লিখলেন তার নতুন উপন্যাস 'শরম'। উপন্যাসটি  বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

 

তার কষ্টগুলো কেউ রোদে মেলে দিয়ে দেখেনি। নেপথলিনের ঘ্রাণে ডোবানো তার শৈশব কৈশোরকে ছুয়ে দেখার যারা ছিল, তারা কেউ নেই।

সোবহান কি বিবাহিত?জুলেখা একটু ঘনিষ্ঠ হয়েই বসেছিল। প্রশ্ন শুনে ছিটকে সরে যাওয়ার মতো শরীর না হলেও মন হয়।

সোবহান মাথা নাড়ে, হ্যাঁ বিবাহিত।

বাচ্চা কাচ্চা আছে ?

হ্যাঁ একটা মেয়ে।

বয়স কত?

তিন।

নাম কি?

মন।

মন? বাহ। সুন্দর নাম তো।

পুরো নাম কী?

দিলরুবা পারভিন।

আপনার স্ত্রী কি কিছু করেন? চাকরি বাকরি?

সোবহান ম্লান হেসে বলে, না।

কেন? বউদের ঘরে বসিয়ে রাখার পক্ষপাতি আপনি? লেখাপড়া করেনি?

করেছে। কিন্তু মনে হয় না ও বাইরে কাজ করতে চায়।

এ তো শুধু মনে হওয়া।

কণ্ঠে আমার সামান্য শ্লেষ।

জুলেখা ভাবছে সুরঞ্জন তাকে লেলিয়ে দিয়েছে সোবহানের পেছনে। সুরঞ্জনের ওপর প্রতিশোধ তাকে আলো দিচ্ছে, সোবহানের প্রতি মুগ্ধতা তাকে পায়ের তলায় মাটি দিচ্ছে, সুতরাং আহলাদে পথ চলছে সে। আর এই বাঙালি সমাজে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে নরমাল বলে ভাবা হয়। জুলেখা আর সোবহান মুসলমান হলে কী, এই সমাজেরই তো মানুষ। না হয় পুজোটা করে না, শাখা সিঁদুর পরে না, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তো জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, মানসিকতা তো এই সমাজই গড়ে দিয়েছে। সব পুরুষই, লক্ষ করেছি, কোনও মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে যখন, তখন তাকে প্রেমিকা বলে পরিচয় দিচ্ছে, কিন্তু তার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তাকে আর প্রেমিকা বলে মনে করছে না। সে এখন স্ত্রী, অন্য কোনও মেয়ে হবে প্রেমিকা। যে প্রেমিকা সে-ইই যে স্ত্রী হতে পারে এবং একই সঙ্গে সে-ই যে প্রেমিকা_ এটা অনেক বন্ধুদের বোঝাতে গিয়েও দেখেছি ওরা ব্যাপারটা ধরতেই পারে না।

সোবহান একটা প্রশ্নও আমাকে করেনি। নিজে শুধু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। কিছু জানতে ইচ্ছে হয় না লোকটার? মানুষকে বিশ্বাস করে অনেক ঠকার পরও আমার স্বভাব সেই মানুষকেই বিশ্বাস করা। সোবহানকে দেখেই দশে দশ দিতে ইচ্ছে করে না আমার। আপাতত, বুঝি যে, সোবহান মহা আহলাদে আছে, বেশ কিছু নারী পুরুষ তাকে বেশ খাতির করছে।

সুরঞ্জন এবার হাসতে হাসতে বলে, এরকম ছিনতাই করে নিয়ে আসছেন। মেয়েরাও এরকম করে তাহলে, শুধু পুরুষই নয়। হেসে বলি, ইকুয়ালিটির কথা কী শুধু শুধু বলি!

দুজনের হাসি পরিবেশকে রহস্যমুক্ত করে। হালকা করে। সুরঞ্জন শ্বাস নেয় নিশ্চিন্তে। আশ্চর্য সুন্দর সকাল, আশ্চর্য সুন্দর গান। কতকাল ভোর দেখিনি। কতকাল গান শুনি না।

কেন? কী হয়েছে তোমার?

সুরঞ্জন ঠোঁট উল্টে বলে, জানি না।

চিরসখা হে, ছেড়ো না মোরে গানটা যখন বাজছে, আমাদের একরকম স্তব্ধ করে রাখলো। এই গানটা কণিকাও গেয়েছেন। রমাও কম ভালো গান নি।

সুরঞ্জনকে উঠিয়ে নিয়ে আসার আমার অনেকগুলো কারণ। ও ঝিলের ধারে গিয়ে বসে থাকে, এই খবর আমাকে স্বস্তি দিচ্ছে না। ও কি সুধাময়ের মতো কিছু করতে চাইছে। যে ছেলে প্রেমে ডুবে আছে, প্রেমিকা নিয়ে চমৎকার সময় কাটাচ্ছে, যখন সামনে অফুরান স্বপ্ন, এমন সময় প্রেমিকাকে বিদেয় করে দিচ্ছে আশ্চর্য নির্লিপ্তি নিয়ে, সে হয় মাথার অসুখে ভুগছে, ভীষণ ডিপ্রেশনে, যে কোনও মুহূর্তে আত্দহত্যা করে ফেলতে পারে। কোনও ভরসা নেই। ঝিলের পাড়ে বসে থাকা খুব ভালো লক্ষণ নয়। আমার কোনও উদ্দেশ্যই নেই জুলেখার সঙ্গে তার সম্পর্ককে চালিয়ে যেতে বলা। চালিয়ে গেলেই যে তার ডিপ্রেশন চলে যাবে তা আমি মনে করি না। আমার উদ্দেশ্য ওর একঘেয়ে জীবন থেকে একটু ছুট্টি দেওয়া। দূরে কোথাও, দূরে দূরে কে না যেতে চায়। ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠো বললেই কেউ কাটাতে পারে না। স্যাঁতসেঁতে জীবনটায় একটু রোদ্দুর চাই। একটু যা ইচ্ছে তাই চাই। কেউ কেয়ার করে, কেউ ভালোবাসে নিঃস্বার্থভাবে, কেউ চাপ সৃষ্টি করে না, এমন কী ভালোবাসার চাপও, চাই। কোনও সম্পর্ক কি আছে, মুক্তির সম্পর্ক, এমন কিছু আজ দিতে চাইছি সুরঞ্জনকে। আকাশ দিতে চাইছি। যেদিকে দুচোখ চাইছি দিতে। সব ভুলে সব ফেলে হারিয়ে যাওয়া চাইছি দিতে। আমার আচরণে আমার ইচ্ছের কতটুকু কী প্রকাশ পায় আদৌ পায় কী না কে জানে।

আটটার দিকে একটা চায়ের দোকানের কাছে থামিয়ে চা খাই দুজন। সামনে বিস্তৃত সবুজ ক্ষেত। প্রচুর তাল গাছ এ দিকটায়। নারকেল গাছ তো আছেই। গ্রাম চিরকালই আমাকে টানে। যখনই ঘন সবুজ আর নির্জনতার কাছে আসি, ভাবি প্রায়ই আসবো, প্রায়ই আর আসা হয় না। হয় না হয় না, কত হয় না নিয়ে বাঁচতে হয়। হওয়ালে এভাবেই হওয়াতে হয়। সাত সকালে তুড়ি। চল। যাই। যেদিকে দুচোখ যায়। যেদিকে দুচোখ যায় আমার ছোটবেলা থেকেই আমার রক্তে। কলেজ থেকে ফিরে ইয়াসমিনকে রিক্সায় তুলে বেরিয়ে পড়তাম। রিক্সাঅলা জিজ্ঞেস করতো, কোথায় যাবেন। বলতাম, যান। বলতো যাবো কোথায়? যেদিকে আপনার ইচ্ছে সেদিকে চলুন। রিক্সাঅলা অবাক, বলে, মানে? তখন খোলাসা করে বলতাম, যেদিকে দুচোখ যায়, যান। তখন সে পায়ে প্যাডেল মারতো। এই জিনিসটা রিক্সাঅলারাও পছন্দ করতো। নিজের পছন্দমতো জায়গা দিয়ে চলা ওদের মনে ফুর্তি জাগাতো।

বিদায় দাও খেলার সাথি, গেল যে খেলার বেলা... গানটা যখন বাজে, তখন সামনে অনন্ত পথ আর ঘিরে ধরা দুধারের সবুজ। কেউ কোনও কথা বলি না অনেকক্ষণ। এক সময় বলি সুরঞ্জনকে, কথা বলো।

কী কথা?

যা ভালো লাগে তাই। যা ইচ্ছে করে।

সুরঞ্জন বলে না কিছু।

কী ইচ্ছে করে? রাজনীতি নিয়ে বলবে?

সুরঞ্জন হা হা করে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বলে, না।

অর্থনীতি?

না।

মেজরিটি মাইনরিটি রিলেশান?

না।

হিন্দু মুসলমান? একটুও না।

সজোরে মাথা নাড়ে সুরঞ্জন।

তোমার বাবা মা বোন, বোনের বাচ্চাগুলো?

না।

বন্ধুবান্ধব?

না।

জুলেখা।

মাথা নাড়ে সুরঞ্জন। না।

নিউ ফ্রেন্ড সোবহান?

সুরঞ্জন চোখ ছোট করে হাসে। বলে, না।

বেগবাগান? বেলঘরিয়া? টিউশনি? স্টুডেন্টস?

না। বাংলাদেশ? না। ওরে বাবা। তাহলে তো কিছুই বলবে না তুমি সুরঞ্জন।

সবকিছুতেই ওর অনীহা বলে কথা বলবে না। আমাকে বলতে হয়, সিট বেল্টের কথা। সিট বেল্ট সে বাধতে না চাইলেও বাধতে বাধ্য করি। আমাকেও সে বাধ্য করে আধ ঘণ্টা পর পর গাড়ি থামাতে। তার সিগারেটের তৃষ্ণা। গাড়ির ভেতর খাওয়া নিষেধ।

সুতরাং গাড়ি থামাও।

পাঞ্জাবি থাবায় সকালের নাস্তা হয়। বর্ধমানের কাছে গিয়ে দুপুরের খাবার। না, ওসব নিয়ে আমরা কিছু কথা বলি না। সবই যা দেখছি চোখের সামনে, যা খাচ্ছি, যা শুনছি, তা নিয়ে। অতীত নেই। ভবিষ্যত নেই। আমাদের তখন শুধু বর্তমান আমরা দুটি মানুষ জন্ম নিয়েছি সকাল ছটায়। তারপর থেকে জীবন কাটাচ্ছি। কেবল কি সুরঞ্জনের জন্য, এই বেরিয়ে পড়াটি আমার জন্য দরকার ছিল না কি! ছিল।

খামোকা পথ ভুল করে আবার পথ চিনে চিনে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসি। কোপাইএর ধার ধরে হাঁটি দুজন। অনেকক্ষণ। কোনও গাছের এলিয়ে পড়া, নদীর ভেঙে পড়া দেখলে দাঁড়াই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত দেখি। মন ভরতে থাকে। তারপর তো রাঙামাটির পথে হাঁটা পাশাপাশি। গাইতে গাইতে গান। গানগুলি ছিল ভেতরে। সোতের মতো বেরিয়ে আসে যেন। সাঁওতাল এলাকায় হেঁটে বেড়াই। মাটির বাড়িগুলোর ভেতরে ঢুকে কথা ওদের জীবনযাপন দেখি। সুরঞ্জন কোনওদিন সাঁওতাল পল্লীতে আসেনি। অবাক হয়ে দেখে সব। সোনাঝুরি বনে হাঁটতে থাকি আর বলতে থাকি খুব সাধারণ কথা। অনেকক্ষণ হয়তো হাঁটছি বা বসে আছি, বা শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছি, কথা বলছি না। নৈঃশব্দও যে আশ্চর্য সুন্দর হতে পারে। শুধু পাখির আওয়াজ শুনি দুজন বসে বসে। ধীরে ধীরে, একটু একটু করে, অন্ধকার যেমন পড়ে আমাদের ওপর, একই সঙ্গে আলো পড়তে থাকে। এ কী! আকাশ আমাদের দিকে বড় মায়ায় তাকিয়ে থাকে। যেন গোটা আকাশটা জুড়েই চাঁদ, এমন চাঁদ। আজ যে পূর্ণিমা, কে জানতো! সোনাঝুরি বনে সাঁওতাল রমণীরা আগুন জ্বেলে হাড়িয়া খেয়ে নাচছে। ওদের কাছ থেকে চেয়ে হাড়িয়া নিয়ে খেল সুরঞ্জন। ওদের সঙ্গে নাচলোও। হাড়িয়া খাওয়া সুরঞ্জন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগুনের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো, তুমিও নাচো।

এ সুরঞ্জন নয়, এ হাড়িয়া। সুরঞ্জন আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করে না।

কী ব্যাপার, তুমি আমাকে তুমি বলছো কেন?

পাশে দাঁড়িয়ে রমণীদের তালে তালে নাচতে নাচতে বললো,

তুমি আমাকে তুমি বলো কেন?

শোধ নিচ্ছ?

হ্যাঁ শোধ নিচ্ছি।

সুরঞ্জন হা হা করে জোরে প্রাণ ফাটিয়ে হাসতে থাকে। এও কি হাড়িয়া? সুরঞ্জন নয়? আমার বিশ্বাস হতে থাকে এ প্রাণ খুলে হাসছে ছেলেটি সুরঞ্জন।

আমার খুব ভালো লাগতে থাকে। সোনাঝুরি বনটা পূর্ণিমায় দিনের মতো দেখতে লাগে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় এ জগতটায় বুঝি নেই আমি। যেন অন্য কোনও অপরূপ দেশে কারও ডানায় করে উড়ে এসেছি। সুরঞ্জন একটা সাঁওতাল মেয়ের সঙ্গে এলিয়ে পড়েছে। সে কী চুমু খেতে চাইছে কাউকে। খাক, আজকের এই অসাধারণ চাঁদের আলোয় যা ইচ্ছে তাই করা যায়।

রাত একটার দিকে ফাঁকা হয়ে আসে সব। বাড়ি ফিরে যায় ওরা। আমি আর সুরঞ্জন চাঁদের আলোয় শুয়ে থাকি সাদা বালিতে। চারদিকে গলে পড়তে থাকা চাঁদ আর হু হু হাওয়া। কেউ আমরা ঘরে ফেরার কথা উচ্চারণ করি না। যেন এ জীবনের বাইরে আমাদের আর কোনও জীবন নেই। চোখ যখন মেলি, ভোর হবে হবে করছে। তখনই গাড়িতে স্টার্ট দিই। সোনাঝুরি বনের পাশ দিয়ে রাঙামাটির পথ ধরে কলকাতার দিকে। পথে সুর্যোদয় পড়লো। সবুজের ওপর রক্ত চুয়ে চুইয়ে পড়লো, সাক্ষী হয়ে রইলাম। পথে সুরঞ্জন একবারও জিজ্ঞেস করে না, কেন তাকে নিয়ে এসেছিলাম। কোনও জরুরি কথা ছিল কী না।

চল চা খেতে থামি।

ওদিকটা কী সুন্দর সবুজ। চল দাঁড়াই।

এরকম আমরা কলকাতার বাইরে পলূশানের বাইরে ঘিঞ্জি গলির স্যাঁতসেঁতে জীবনের বাইরে, একটানা যাপন করা একঘেয়ে জীবন থেকে বাইরে বেরিয়ে একটু শ্বাস নিয়ে আসি। এর মানে এই নয় আমাদের জীবন পুরোপুরি পাল্টে গেল। আমাদের জীবনে সামান্য একটু হাওয়া বইলো। সুরঞ্জনকে সুখ দিয়ে, এই হাওয়া দিয়ে আমার কী লাভ, যে কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে। নিজেকেও শুধোতে পারি, কেন।

এই কেনর উত্তর খুব জটিল কি? সুরঞ্জনকে আমার খুব আপন মনে হয়। আপন কেন মনে হবে? সুরঞ্জন তো আমার সৃষ্ট কোনও চরিত্র নয়। ওর একটা অস্তিত্ব আছে। আমি তাকে তার চলাফেরা তার কথা তার চিন্তা কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তারপরও মনে হয় তার ওপর আমার অধিকার আছে। উপন্যাস লেখার কারণে সেটা হয়তো জন্মেছে। আর সুরঞ্জনের প্রতি আমার যে ভালোবাসা, যে পক্ষপাত, তাকে অন্তর দিয়ে বোঝার যে চেষ্টা সেটাকে একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না।

কলকাতায় ঢোকা মানে একশহর দুষণের মধ্যে, বায়ু দুষণ, শব্দ দুষণ, আর অশ্লীল ট্রাফিকের ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গেলাম, যেখানে হাওয়া ঢোকার কোনও জায়গা নেই। বেগবাগানে সুরঞ্জনকে নামিয়ে দিয়ে বলি, অ্যাই শোনো, একদিন বালিগঞ্জ লেকের পাড়ে যাবো তুমি আর আমি। ঠিক আছে?

_ হঠাৎ লেক?

হ্যাঁ লেক। ওখানে সাঁতার কাটা যায় না? সাঁতার কাটবো।

সাঁতার?

হ্যাঁ সাঁতার।

সুরঞ্জন মাথা নাড়ে। হ্যাঁ বা না, কিছু হবে একটা। আমি আর জানতে চাই না। গাড়ি ঘুরিয়ে নিই। জীবন কী সুন্দর। চল বেঁচে থাকি। ঝিলের ধারে যাও কেন? মরতে? এসব বলে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। আমারও মাঝে মাঝে মরতে ইচ্ছে করতো। জীবন আমার কাছে একটা ফালতু জিনিস হয়ে উঠেছিল। আত্দহত্যারও ইচ্ছে হত আমার। তখন কে যেন, খুব আপন কেউ যে তা নয়, কাঁধে হাত রাখলো ভালোবেসে, স্নেহে। ওই কাঁধে হাত রাখাটা আমাকে বড় বিহ্বল করে তুলেছিল। জীবন যে কত সুন্দর। ওই স্পর্শটুকু না পেলে হয়তো বোঝা হত না আমার।

এরপর কয়েকদিন সুরঞ্জনের সঙ্গে আমার কথাও হয় না। দেখাও হয় না। সুরঞ্জন এখন আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। যেটা ছিল, সেটা সে একবার শুনি মায়াকে দিয়ে দিয়েছে, আরেকবার শুনি কিরণময়ীকে দিয়েছে। এত ধোঁয়া আমি সরাতে পারি না। একটা চরিত্রে এত অপরিচ্ছন্নতা থাকলে কী করে চলে! একদিন জুলেখার কাছে সুরঞ্জনের খোঁজ নিতে গিয়ে শুনি সে নাকি বাংলাদেশ গেছে। বাসে। কার নাকি দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে আছে। [ চলবে ]

 

 

সর্বশেষ খবর