বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

কলকাতায় রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কালকাণ্ড

* ঘরে এক মহিলা ও দুটি পোষ্য কুকুরের কঙ্কাল * ৬ মাস ধরে মৃত বোনকে \'খাওয়ান\' ভাই * ডায়রির পাতা ভরপুর অবিশ্বাস্য যৌনতায়

কলকাতায় রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কালকাণ্ড

কঙ্কাল উদ্ধারের রোমহর্ষক বর্ণনা

ভারতের কলকাতা। বাঙালিদের আবাসস্থল বলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত। বাংলা ভাষাভাষি মানুষের এই শহরে এক মহিলা ও দুটি পোষ্য কুকুরের কঙ্কাল নিয়ে পুরো ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাটি গতমাসের। জুনের ১১ তারিখের সংবাদপত্রে প্রথম খরবটি প্রকাশ পায়। পরদিন থেকে কলকাতার কঙ্কালকাণ্ড হয়ে মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ। দিনভর টিভি চ্যানেলগুলো ছুটে চলে এই কঙ্কালরহস্যের পেছনে। পত্রিকার প্রধান আকর্ষণ এই খরবটি। ঘটনা কলকাতার শেক্সপিয়র সরণির একটি বাড়িকে ঘিরে। রবিনসন স্ট্রিটের একটি ফ্ল্যাট থেকে এক মহিলা এবং দুটি পোষ্য কুকুরের কঙ্কাল উদ্ধারের করে কলকাতার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর জানায়, রবিনসন স্ট্রিটের একটি ফ্ল্যাটের জানালা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। দমকলকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে শৌচাগারের বাথটব থেকে অরবিন্দ দে (৭৭) নামে এক বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার করে। অরবিন্দবাবু পেশায় বি টেক ইঞ্জিনিয়ার। অন্যঘরে উদ্ভ্রান্ত এক যুবক বসে রয়েছে। অরবিন্দবাবুর ছেলে পার্থ। ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে ওই ফ্ল্যাট থেকেই কাপড় জড়ানো অবস্থায় তিনটি কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। সন্দেহ হওয়ায় অরবিন্দবাবুর ছেলে পার্থকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কঙ্কাল তিনটি তার বোন দেবযানী দে এবং বাড়ির দুই পোষ্য কুকুরের। কুকুরগুলো গত বছরের আগস্টে মারা যায়। তারপর থেকেই খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করেছিলেন পেশায় গানের শিক্ষিকা তার বোন দেবযানী দে। ৬ মাস আগে অপুষ্টিজনিত কারণে মারা যান বছর সাতচলি্লশের দেবযানী। এর পরেও শেষকৃত্য না করে দেবযানীর মৃতদেহের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটেই বসবাস করছিলেন অরবিন্দবাবু ও তার ছেলে পার্থ। রোজ রাতে দিদির মৃতদেহকে 'খাওয়াতেন' পার্থ। এমনকি দিদির আত্মা তাদের সঙ্গেই রয়েছে এমন আবহ সৃষ্টি করার জন্য গোটা বাড়িজুড়ে লাগানো হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। সেখান দিয়েই নানা ধরনের 'ভৌতিক' আওয়াজ শোনা যেত বলে পুলিশ জানাচ্ছে।

ছ'মাস ধরে ওই মৃত মহিলাকে 'খাওয়ানো' হয়েছে। তার আত্মা যে ওই বাড়িতেই ঘোরাঘুরি করছে, এমন আবহ সৃষ্টি করার জন্য গোটা ফ্ল্যাটজুড়ে লাগানো হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। এর সঙ্গেই ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ওই মহিলার বাবার অগ্নিদগ্ধ দেহ। স্মরণকালের মধ্যে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা মনে করতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের অফিসাররা। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে মহিলার ভাইকে। মনস্তত্ত্ববিদেরা এই ঘটনাকে 'সাইকোলজিক্যাল কেস' হিসাবেই দেখছেন। ওই মহিলা ও তার দুই পোষ্যের দেহ ধীরে ধীরে কঙ্কালে পরিণত হওয়ার সময়েও পড়শি বা স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ কোনও গন্ধ পেলেন না কেন, তা নিয়েও রহস্য দানা বেঁধেছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসছে আরও নানা প্রশ্ন। তার কয়েকদিন পরেই ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ডায়রি। ডায়রির পাতায় অরবিন্দবাবুর পরিবারের নানা উত্থান-পতনের গল্প জানা যায়। কীভাবে অবাধ্য যৌনতায় ভর করে এই পরিবারের দুর্দশার গ্রহণ লাগে তার বর্ণনা ছাড়াও উঠে আসে নানান চমকপ্রদ ঘটনা।

 

সর্বশেষ খবর