বুধবার, ৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

মৃত বোনকে \\\'খাওয়াতেন\\\' ভাই

মৃত বোনকে \\\'খাওয়াতেন\\\' ভাই

দেবযানী দে

ভাই পার্থ। পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী পার্থের দিদি দেবযানী দে। রবিনসন স্ট্রিটের ফ্ল্যাট বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নারী কঙ্কালটির বিষয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পার্থবাবু জানান সেটি তার বোন দেবযানীর কঙ্কাল। কিন্তু তার বোন মারা গেছেন- এই সত্যটি অস্বীকার করেন তিনি। ঘরে গিয়ে দেখা যায় রোমহর্ষক দৃশ্য। একটি চাদরে মোড়া কঙ্কাল। তার পাশেই আরও দুটি কুকুরের কঙ্কাল। ঘরে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ছড়ানো ছিটানো রয়েছে। কঙ্কাল পরীক্ষা করে স্পষ্ট জানা যায়, বোনের কঙ্কালকে নিয়মিত খাওয়াতেন ভাই পার্থ। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন প্রতি রাতে তার বোনের আত্মা এই ঘরে নেমে আসত। তাই তিনি বোনকে আপ্যায়ন করতেন। তার বোন দেবযানী দে কীভাবে মারা গেলেন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঘাম ছুটে যায় পুলিশের। পরে দেখা গেল তার বোনের মৃত্যুর সঙ্গে ঘরে থাকা অন্য দুটি ল্যাম্ব্রাডার কুকুরের কঙ্কালের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই কুকুর দুটি পোষ্য কুকুর ছিল। দেবযানী দে কুকুর দুটিকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনি যখন থেকে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া একেবারেই ছেড়ে দিলেন তখন এই কুকুর দুটি ছিল তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী। কোন এক কারণে আকস্মিক একটি কুকুর মারা যায়। কিন্তু এই কুকুরকে সমাধিস্থ করতে সম্মত হয়নি বোন দেবযানী। সেই কুকুরে পচন ধরে গেলে রোগের জীবাণুকে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় কুকুরটিও শিগগিরই মারা যায়। কুকুর দুটি ঘরের পচতে শুরু করলেও এগুলো অাঁকড়ে ধরে থাকেন দেবযানী। গত বছর আগস্টে মারা যায় তাদের দুটি পোষা কুকুর। প্রিয় পোষ্যদের দেহ সৎকার না করে নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছিল দে পরিবার। কুকুর দুটি মারা যাওয়ার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন দেবযানী। তিনি কার্যত খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেন। ধীরে ধীরে অপুষ্টির শিকার হয়ে রোগাক্রান্ত হন তিনি। পোষ্য-বিদায়ের শোক সহ্য করতে না পেরে গত ডিসেম্বরে অনশন করে মৃতুকে কার্যত বরণ করে নেন দেবযানী। কিন্তু তার মৃত্যু গ্রহণ করতে পারেননি ভাই পার্থ। দেবযানী মারা যাওয়ার আগেই তার কণ্ঠ রেকর্ড করে রাখেন। পেনড্রাইভে করে তার বোনের কণ্ঠ বিভিন্ন অডিও সেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ঘরের দেয়ালে বসিয়ে রাখেন। চিকিৎসকরা দাবি করেন ভাই পার্থের মানসিক অসুস্থতা এমনই এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তিনি বোনকে জীবিত ভাবতে থাকেন। যে কারণে প্রতি রাতে তিনি খাবার তুলে দেন মৃতের মুখে। কার্যত কঙ্কালকে খাওয়াতে থাকেন পার্থবাবু। ভাই তার বোনকে সৎকার না করে ঘরে রেখে দেওয়ায় বাধ সাধেন তার বাবা। এ নিয়ে দুজনের কথা কাটাকাটিও হয়। কিন্তু পিতা অরবিন্দ ছেলের এই মানসিক অসুস্থতার কাছে পরাজিত হলে ঘরেই কঙ্কালটি থেকে যায়। ভূতের বাড়ি হয়ে ওঠে এটি।

 

সর্বশেষ খবর