বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাঝির ছেলে ভারতের রাষ্ট্রপতি

মাঝির ছেলে ভারতের রাষ্ট্রপতি

তাকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব বলেই চেনে সারা বিশ্ব। ভারতকে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সমৃদ্ধ করতে তার গবেষণা ও অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এই বিশ্বজয়ী মানুষটিকে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে সফলতার শীর্ষে উঠে আসতে হয়েছে। খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার বাবা ছিলেন একজন মাঝি। সারাদিন নৌকায় যাত্রী পারাপার করে খুব সামান্যই আয় করতেন তিনি। সেই সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলত না। বাধ্য হয়ে শৈশবেই আয় রোজগারে পথে পথে ছুটতে হয়ে তাকে। কিন্তু একদিন এই মাঝির ছেলের মেধার কাছেই হার মেনেছে দরিদ্রতা। পরবর্তীতে নাম লিখিয়েছে রাজনীতিতে। সম্মানিত হন ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়ে। তার পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আবদুল কালাম। জন্ম ১৫ অক্টোবর, ১৯৩১ সালে। সংক্ষেপে তার পরিচয় বলতে গেলে বলতে হয় তিনি একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল কালাম মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির রামেশ্বরম নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন ও বড় হয়ে ওঠেন। তার বাবা জয়নুল-আবেদিন একজন নৌকার মাঝি এবং মাতা আশিয়াম্মা একজন গৃহবধূ ছিলেন। খুব গরিব পরিবারের সন্তান বলে খুব অল্প বয়সেই তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল। বিদ্যালয়ে ছুটির পর তিনি সংবাদপত্র বিক্রি করে রোজগার করতেন। গণিতশাস্ত্রে আগ্রহী উজ্জ্বল ও কর্মঠ পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে একজন মধ্যম মানের ছাত্র ছিলেন। রামনাথপুরম সোয়ার্জ ম্যাট্রিকুলেশন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপন করে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিরুচিরাপল্লিতে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ'স কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক লাভ করেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমান প্রকৌশলবিদ্যা সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন। এই প্রতিষ্ঠানে পড়ার সময় তার পঠনপাঠনের অগ্রগতিতে অখুশি ডিন তিন দিনের মধ্যে প্রকল্প শেষ না করলে বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখালে কালাম নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে তার প্রকল্প সম্পন্ন করেন। আটটি পদের জন্য পরীক্ষায় নবম স্থান লাভ করায় ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে তার স্বপ্ন খুব অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়। তিনি পরবর্তীতে চল্লিশ বছর বয়সে কাজে যোগ দেন। রক্ষা অনুসন্ধান এবং বিকাশ সংগঠন এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। এরই মাঝে তিনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত গবেষণায় সাফল্যের দেখা পান। তিনি পরিচিত হতে থাকেন- ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব হিসেবে। বিশেষত ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ভারতের পোখরান-২ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর বিশ্বজুড়ে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববাসীর নজরকাড়া এই বিজ্ঞানী কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি। একের পর এক ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উড্ডয়নে ভারতীয় সমরাস্ত্র বাহিনীর কাছে বিশেষভাবে গুরুত্ব লাভ করেন। ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে তিনি আরও কয়েকটি মিসাইল যোগ করে তাক লাগিয়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতেও নাম লেখান। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জনতা পার্টি ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে তিনি ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। সময়ের স্রোতে তার অবদান আরও উজ্জ্বল হতে থাকে। তিনি পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও ভারতরত্নসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সম্মান লাভ করেন।

ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় ভারতীয় প্রমাণ সময় সন্ধে ৬:৩০ নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে বেথানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ভারতীয় প্রমাণ সময় ৭:৪৫ নাগাদ তার মৃত্যু ঘটে। তার মৃত্যুর এই অপূরণীয় ক্ষতিতে বিশ্বের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ শোক জানান। ভারতজুড়ে এই বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও সাবেক রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

একনজরে

তার পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আবদুল কালাম। ছিলেন ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি। সময়কাল ছিল ২৫ জুলাই, ২০০২ থেকে ২৫ জুলাই, ২০০৭ পর্যন্ত।

জন্ম : ১৫ অক্টোবর ১৯৩১। রামেশ্বরম, রামনাথস্বামী জেলা, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারতীয়। (অধুনা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে)। মৃত্যু : ২৭ জুলাই ২০১৫ (৮৩ বছর) শিলং, মেঘালয়, ভারত। জাতীয়তা : ব্রিটিশ ভারতীয়। ভারতীয়। অধ্যয়নকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : সেন্ট জোসেফ'স কলেজ, তিরুচিরাপল্লি, মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।

পেশা : অধ্যাপক, লেখক, বিমান প্রযুক্তিবিদ।

ধর্ম : ইসলাম

 

 

সর্বশেষ খবর