বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

নৌকা বানানো ছেলেটা রকেট বিজ্ঞানী

নৌকা বানানো ছেলেটা রকেট বিজ্ঞানী

আবদুল কালামের বিখ্যাত একটি বই 'মাই জার্নি : ট্রান্সফরমিং ড্রিমস ইনটু অ্যাকশনস'। এই বইয়ের পরতে পরতে রয়েছে এই পদার্থ বিজ্ঞানীর জীবনের নানা ঘটনা। বাবা ছিলেন নৌকার মাঝি। তিনি দুটি দ্বীপে নৌকায় করে যাত্রী পারাপার করতেন। বাবার আয়ে সংসার চলত না বলে আবদুল কালামও শৈশবে আয়ের পথ খোঁজেন। শৈশবে তিনি বাবার জন্য একটি নৌকা বানিয়েছিলেন। নিজেদের একটি নৌকা থাকলে আর অভাব থাকবে না সেটাই ছিল তার নৌকা বানানোর লক্ষ্য। কাঠ আর কিছু ধাতব পদার্থ সংগ্রহে কাজে লেগে পড়েন তিনি। তিনি বইয়ে লেখেন- সমুদ্র উপকূলে চলাফেরার জন্য নৌকা প্রয়োজন। কাঠ এবং কিছু ধাতব পদার্থের সংমিশ্রণে একটি বোটে জীবন সঞ্চারিত হতে দেখতে দেখতে সম্ভবত প্রকৌশল দুনিয়ার ধারণা প্রথম আমার মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। বোট বানানোর জন্য কাঠ সংগ্রহ করা হলো। আহমেদ জালালুদ্দিন নামে এক কাজিন আমার পিতাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন। যেখানে বোটটি নতুন চেহারা পাচ্ছে প্রতিদিন আমি সেখানে যাওয়ার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। এক রকম অধৈর্য হয়ে পড়তাম। বিশাল বিশাল কাঠ কেটে কেটে একটি সুনির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া হচ্ছিল। তা শুকানো হচ্ছিল। এরপর তা মসৃণ করা হচ্ছিল। তারপর তা একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া দেওয়া হয়। আগুন জ্বালিয়ে কাঠ থেকে বাকল ও অপ্রয়োজনীয় অংশ পুড়িয়ে আলাদা করা হতো। এরপর তা দিয়ে বানানো হতো গলুই। আস্তে আস্তে বোটের নিচের অংশ বানানো হলো। তারপর পাশের অংশ। এরপর শুরু হতো গলুই বানানো। এ ঘটনাগুলো ঘটেছে আমার চোখের সামনে। এর অনেক বছর পরে আমি কাজ করতে গিয়ে জানতে পারি কীভাবে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে হয়। প্রকৌশল জগতের এ মাইলফলকের মূলে রয়েছে জটিল গণিত ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা।

আবদুল কালাম কিন্তু ঠিকই একদিন অ্যারোস্পেস নিয়ে পড়াশোনা করে সাফল্যের দেখা পেয়েছিলেন। তার হাত ধরেই ভারতে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সফল ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছিল। কর্মক্ষেত্রের শুরুতে আরব সাগর কেন্দ্রিক গবেষণামূলক কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গোপসাগরে টানা দুই দশক পরীক্ষা চালিয়েছেন স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার মিসাইল। যার মধ্যে ছিল পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম মিসাইলও। মহাকাশ গবেষণায় শুরু থেকে ছিল অসামান্য আগ্রহ। যা পরবর্তী সময়ে দেশটির মিসাইল কার্যক্রম পুরোপুরি আবদুল কালাম নির্ভর হয়ে উঠতে বড় ভূমিকা রাখে। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি মাত্র একবারের জন্য উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ করেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসায় বছর খানেকের জন্য অবস্থান করেছিলেন তিনি। নৌকা বানানো সেই কিশোর একদিন ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়ে ওঠেন। মেধাবী ও এই পদার্থবিজ্ঞানীর এসবের বাইরে ব্যক্তি জীবনে তামিল সাহিত্যের প্রতি ছিলেন দুর্বল। পড়তে পারতেন পবিত্র কোরআন শরিফ ও ভগবত গীতা।

কালাম বলে ডাকুন

তখন এ পি জে আবদুল কালাম ভারতের রাষ্ট্রপতি। সাংবাদিক ছুটছেন তার একটি ছোট সাক্ষাৎকারের জন্য। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে তিনি যখন এই সাবেক রাষ্ট্রপতির নাগাল পেয়েই সম্বোধন করলেন, ইওর এক্সিলেন্সি... কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে আবদুল কালাম বললে, আমাকে কালাম বলে ডাকুন। তাকে কেন সর্বসাধারণের রাষ্ট্রপতি বলা হয় তা বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। পরে বিখ্যাত টাইমস অব ইন্ডিয়া এ নিয়ে শিরোনামে লেখে, 'কল মি কালাম।'

 

সর্বশেষ খবর