রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

রূপকথা নয় সত্যি!

কেমন হতো যদি চলতি পথে একদিন আপনার দেখা হয়ে যেত লম্বা কেশের অধিকারী রুপানজেলের সঙ্গে? কিংবা সেই যে তুষারকন্যার সাত বামন! কেমন লাগবে আপনার যদি একদিন ওরা আপনাকে ঘিরে ধরে চারপাশ থেকে? নিশ্চয় ভাবছেন, ধুর তাই কি হয় নাকি? ওরা তো শুধুই রূপকথার বানোয়াট চরিত্র। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, এই যে রূপকথা আর এর চরিত্রগুলো, এদের অনেকেই ততটাই বাস্তব আর সত্যি যতটা কিনা আপনি! আর এমনই কিছু সত্যিকারের রূপকথা আর রূপকথার চরিত্রকে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন— সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি।

 

রুপানজেল

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে বেশ আগ্রহের আর মুখোরোচক একটা ব্যাপার ছিল একসময় রুপানজেল আর রুপানজেলের গল্পের সঙ্গে জড়িত সত্যিকারের এ ঘটনাটি। তৃতীয় শতাব্দীতে জন্ম নেয় বাস্তবের এ রুপানজেল। বলা হয়, সেই যুগের সেই তরুণীটি দেখতে এতটাই সুদর্শনা ছিল যে, তার বাবা, বিখ্যাত পাগান ব্যবসায়ী মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখতে শুরু করেন। পাছে মেয়ে পালিয়ে যায় কিংবা মেয়েকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ! এশিয়া মাইনরের বাসিন্দা মেয়েটির কাছে সেই বন্দী অবস্থার অন্যতম সাহায্যকারী জিনিসটি ছিল তার লম্বা চুল। চুলের মাধ্যমেই সবার সঙ্গে, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করত সে। সেসময় কেবল চুলই নয়, বরং খ্রিস্টান ধর্ম দ্বারাও প্রভাবিত হয় তরুণীটি। আর এ কথা জানতে পেরেই পরবর্তীতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তার। অবশ্য শেষ পর্যন্ত মানুষের হাতে নয়, বরং বজ্রপাতের ফলেই মারা যায় সে। আর তার এ মৃত্যুকে ঘিরেই জন্ম নেয় রুপানজেল নামক রূপকথার চরিত্রটি।

 

অ্যানাসটেসিয়া

বলশেভিক বিপ্লবের অনেক আগে রাশিয়ার রাজকীয় পরিবারে জন্ম নেয় অ্যানাসটেসিয়া। অ্যানাসটেসিয়ার মা ছিল নিজের ক্ষমতার দ্বারা প্রচণ্ডভাবে মুগ্ধ। নানারকম তুকতাক আর জাদুকরী ক্ষমতা ছিল তার। সেগুলোর মোহে দিন-রাত কেটে যেত তার। এ তো গেল মায়ের কথা। অ্যানাসটেসিয়ার বাবা ছিলেন অন্যরকম পর্যায়ের উদাসীন! কারোরই সময় ছিল না মেয়ের দিকে তাকানোর। ফলে প্রচণ্ড কষ্টের ভিতরে বড় হতে থাকে এই রাজকুমারী। একসময়  প্রাসাদের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে  মৃত্যুবরণও করতে হয় তাকে। শুধু অ্যানাসটেসিয়াই নয়, এতে মারা যায় তার ভাইও। পরবর্তীতে বলশেভিক বিপ্লবের পরে মানুষের ভিতরে গুজব ছড়িয়ে যায় যে অ্যানাসটেসিয়া বেঁচে আছে! সেসময় ব্যাপারটির নাটকীয়তায় অভিভূত হয়ে এ অ্যানাসটেসিয়া চরিত্রটি রূপকথায় নিয়ে আসেন শিল্পীরা। যদিও পরবর্তীতে প্রমাণ হয় যে অ্যানাসটেসিয়া মৃত! সত্যিই তার মৃত্যু হয়েছিল অনেক অনেক আগেই।

 

তুষারকন্যা ও সাত বামন

শুনতে নতুন আর অবাক করা মনে হলেও সত্যি যে আদতে তুষারকন্যা আর সাত বামনের গল্প রচিত হয়েছিল ১৬ শতকের এক সম্ভ্রান্তবংশীয় তরুণী মার্গারেট ভর ওয়াল্ডেকের জীবনের কষ্টগুলোর ওপর ভিত্তি করে। এবং অবশ্যই তাতে কিছু রং মাখিয়ে! তবে গল্পের মতো মার্গারেটের জীবনেও ছিল বামন, যারা কিনা কারখানায় অত্যধিক শারীরিক কষ্টের কারণেই বামন রূপ পেয়েছিল। তুষারকন্যার মতোই মার্গারেটের মা খুব ছোটবেলাতেই মারা যায় আর ঘরে আসে সৎ মা। শুরু হয় অত্যাচার। ঘর থেকে মার্গারেটকে বের করে দেয় সৎ মা। পরবর্তীতে মার্গারেটের সঙ্গে পরিচয় হয় এক রাজপুত্রের। একে অন্যকে ভালোবেসে ফেলে তারা। রাজা অবশ্য এ ভালোবাসার গল্পকে কখনোই মেনে নেননি। ফলাফল হিসেবে শেষ অব্দি বিষাক্ত আপেল খেয়ে মারা যেতে হয় মারআরেটকে!

 

সিন্ডারেলা

গল্পের মতো বাস্তবের এ সিন্ডারেলাকেও কিন্তু প্রচণ্ড কষ্টের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছিল প্রথম জীবনে। অসম্ভব সুন্দর সে নাম ছিল রোডেপিস। যার মানে- গোলাপি চিবুক। আর এ অসম্ভব সৌন্দর্যের কারণেই সবার নজর আকর্ষণ করে রোডেপিস সেই ছোটবেলা থেকেই। দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয় তাকে সেসময়। আর তারপর খানিকটা স্বাভাবিকতা ফিরে আসে তার জীবনে। যদিও দাসদের জীবন ছিল খুব কষ্টের, প্রচণ্ড সৌন্দর্যের কারণে রোডেপিসকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন মনিব। রোডেপিসকে তিনি কিনে দিয়েছিলেন সোনার জুতা। আর এই জুতো আর নিজের সৌন্দর্যের মাধ্যমেই ফারাও আহমোসের চোখে পড়ে রোডেপিস। ফারাওয়ের আগে থেকেই অনেক রানী ছিল। রোডেপিসকেও নিজের অনেক রানীর একজন করে নেয় রাজা। হ্যাঁ! এ অব্দি সবটাই সিন্ডারেলার সঙ্গে অনেকটা মিলে যায় রোডেপিসের। সৌন্দর্য, জুতা, রাজার সঙ্গে বিয়ে। তবে শেষ অব্দি কিন্তু রূপকথার শেষটা যেমন হয় সেভাবে সুখী হতে পারেনি এ নারী সিন্ডারেলার মতো। অবশ্য হওয়ার ছিলও না!

 

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

আরও অনেক গল্পের মতো রূপকথা মনে হলেও আসলে কিন্তু এটি রূপকথা নয়। ১২৬৪ সালে জার্মানিক গ্রাম হ্যামিলিনে সত্যিই প্রচুর ইঁদুরের প্রকোপ ছিল। গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল ইঁদুরের অত্যাচারে। ঠিক সে সময় এক বাঁশিওয়ালা এসে শহরের সেব ইঁদুরকে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানায় গ্রামবাসীদের আর বিনিময়ে কিছু টাকা তাকে দিতে বলে। নিজের কথা মতো কাজ করলেও পরবর্তীতে ঠিক গল্পের কাহিনী অনুসারেই গ্রামবাসী তাকে তার প্রাপ্য দেয়নি। ফলে রেগে গিয়ে বাঁশিওয়ালা গ্রামের সব শিশুকে নিয়ে চলে যায়। একেবারের মতো। এরপর আর কোনোদিন ফিরে আসেনি শিশুগুলো। কোথায় গিয়েছে তারা, কি হয়েছিল তাদের- এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হলেও সত্যিটা জানা যায়নি কোনোদিন।

 

আরব্য রজনীর গল্প

একটি দুটি নয়, বরং অনেকগুলো আরব রূপকথার সমাহার এ বই আর এই চরিত্রগুলো তৈরি হয়েছিল আরবের এক খুনি রাজার স্ত্রী শেহেরজাদে। যে রাজার অভ্যাস ছিল প্রতি রাতে একজন রানীকে নিয়ে সময় কাটিয়ে ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করার। তবে শেষ অব্দি নিজের গল্পের মাধ্যমে রাজাকে প্রতিহত করে শেহেরজাদে। বাস্তবে আল খাইজুরান বিন আত্তা নামক ইয়েমেনে জন্ম নেওয়া এক নারীর সঙ্গে গল্পটি মিলে যায়, যাকে কিনা দাস হিসেবে বেচে দেওয়া হয়েছিল আর রাজা যার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন এক পর্যায়ে গিয়ে। এবং অবশ্যই শেহেরজাদের মতো কোনো কৌশলেই সেটা করেছিলেন আল খাইয়ুরজান বিন আত্তা। রাজাকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করেছিলেন সবক্ষেত্রে এ নারী। যদিও আসল কারণ জানা যায়নি, কিন্তু সে কারণকে কেন্দ্র করে রূপকথা গড়ে উঠতেও সময় নেয়নি খুব বেশি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর