শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

আজও লাপাত্তা স্কাইজ্যাকার কুপার

তানভীর আহমেদ

আজও লাপাত্তা স্কাইজ্যাকার কুপার

এফবিআইকে নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন ড্যান কুপার। তিনি একমাত্র আমেরিকান স্কাইজ্যাকার যাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা শুনে এফবিআই তার চেহারার বেশ কয়েকটি রূপ প্রকাশ করেছিল। তবে সবই বৃথা। আজও তার হদিস পায়নি এফবিআই।

পরদিন থ্যাংকসগিভিং ডে। আমেরিকায় এ দিনে বন্ধুত্বের আড্ডা বেশ জমে ওঠে। সবাই বেশ হাসিখুশি। কয়েকজন যাত্রী পোর্টল্যান্ডে এসেছেন। সেটেলড নেমে যাবেন এই বলে কালো স্যুট-টাই পরা এক ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন। বোর্ড পাস করার সময় তাকে দেখে মনে হলো বেশ শিক্ষিত, ধনী ব্যবসায়ী। নাম বললেন ড্যান কুপার। ব্যবসায়িক তাড়া হয়তো রয়েছে। অন্য যাত্রীদের নিয়ে বিমানটি আকাশে পাখা মেলল। বেশ কিছুক্ষণ পর হাতে থাকা সুটকেসটা খুলল কালো স্যুট পরা কুপার। হঠাৎ করে বিমানের ভিতর পরিবেশ বদলে গেল। কুপার হুমকি দিল— আমার সুটকেসে বোমা আছে। কোনো চালাকি নয়! সবাই যার যার আসনে চুপ করে বসুন। বিমানের পাইলট ও অ্যাটেনডেন্সরা হতবাক হয়ে গেলেন। সবাই আতঙ্কিত হলেও কুপার তার পরিকল্পনা মাফিকই চলছিলেন। রেডিও মাধ্যমে ততক্ষণে জানাজানি হয়ে গেল বিমান ছিনতাই হয়েছে। বোয়িং ৭২৭ নর্থওয়েস্ট। কুপার সাধারণ যাত্রীদের জীবনের মূল্য হাঁকালেন, বলা যায় মুক্তিপণ— পুরো দুই লাখ মার্কিন ডলার। ত্রিশ জনের বেশি যাত্রীর জীবন নিঃসন্দেহে তারচেয়ে অনেক দামি। কর্তৃপক্ষ টাকার জোগাড় করল। কিন্তু পাগলাটে কুপারকে কোনোমতেই মানানো যাচ্ছিল না। সেটেলড বিমান অবতরণ করল। পুরো দুই লাখ ডলার কুপারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হলো। বিমানে ডলার ঢুকতেই যাত্রীদের ছেড়ে দিল সে। তবে হঠাৎই পরিস্থিতি বদলে গেল কুপারের চালাকিতে। সে তিনজন পাইলট ও একজন বিমানবালাকে বিমানে রেখে দিল। হুকুম দিল— বিমান আকাশে উড়াও। সমুদ্রের দিকে যাও।

উপায় ছিল না। বিমান আকাশে ভাসানো হলো আবার। বিমানে উঠেই চারটি প্যারাসুট হাতের কাছে রাখল সে। বিমানবালাকে পাইলটদের কাছে ককপিটে পাঠিয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিল। একটি হেলিকপ্টারও সেই বিমানের পিছু নিয়েছিল। কেউ কিছু জানল না, দেখল না। প্রায় ৪৬ মিনিট পর সব চুপচাপ দেখে বিমানবালা ও পাইলট কেবিনে ফিরে এলেন। কেউ নেই! ড্যান কুপার যে সিটে বসেছিলেন সেখানে তার টাইটা পড়ে রয়েছে। আর দুটো প্যারাসুট বিমানের মেঝেতে। বুঝতে বাকি রইল না ড্যান কুপার প্যারাসুট পরে বিমান থেকে বাইরে ঝাঁপ দিয়েছেন। খবরটি চাউর হলো সবজায়গায়। দুই লাখ ডলার নিয়ে ড্যান কুপার লাপাত্তা। তাও আবার আকাশের মাঝখান থেকে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও— এটাই সত্যি। পরদিন এয়ারফোর্সের লোকজন তন্নতন্ন  করে খুঁজল পুরো এলাকা। এক হাজার সৈন্য মাঠে নামানো হলো। পুরো এলাকা খুঁজে তারা সমুদ্র কিনারায় পৌঁছে গেল। সমুদ্রের ভিতর অবধিও খোঁজা হলো। কোথাও নেই কুপার। রহস্যমানব যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল। এরপর ১৯৮০ সালে কুপারের চুরি করা টাকার একটি অংশ খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকে আবার নিজেকে কুপার বলেও দাবি করে আলোচনায় এসেছেন বিভিন্ন সময়। সে যাই হোক, কুপার কিন্তু একজনই এবং তিনি লাপাত্তা। এফবিআই কয়েক যুগ ঘাম ঝরিয়েও কুপারের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি।

 

 

 

রহস্যমানব

১৯৭১ সালে ড্যান কুপার আকাশ থেকে লাপাত্তা হয়ে যান। নর্থওয়েস্ট বোয়িং ৭২৭ থেকে তিনি যখন ঝাঁপ দেন তখনো মানুষ শিউরে উঠেছিল তার মৃত্যুর কাব্য রচিত হতে যাচ্ছে এমনটি ভেবে। তবে প্যারাসুট মেলতেই সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। ওয়াশিংটন রাজ্যেই তার অবতরণ হতে পারে সেটি মেনে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে আদৌ কী হয়েছিল তা কেউ জানে না। সে সময় স্কাইজ্যাকার মানে যারা আকাশ পথে হাইজ্যাক করে অভ্যস্ত তাদের জন্য কিউবা ছিল স্বর্গ। সে দিকে কেন যাননি কুপার? প্রশ্নের উত্তর নেই। স্মার্ট হাইজ্যাকারের খেতাবটা বুঝি এমনিতেই জোটেনি তার। তিনি একমাত্র আমেরিকান স্কাইজ্যাকার যিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েননি। কুপার ২ লাখ মার্কিন ডলার লুট করে পালিয়েছিলেন। তিনি টাকার জন্যই বিমান থেকে লাফ দিয়েছিলেন তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কথিত আছে, তিনি লুটের এই বিপুল পরিমাণ অর্থের বেশিরভাগই ব্যবসায় ঢেলেছিলেন।

সর্বশেষ খবর