শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
Forbes—এর চোখে

সবচেয়ে বেশি আয়ের তারকা

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

তারকাদের নিয়ে করা ১০০ জনের তালিকা ফোর্বস ম্যাগাজিনের জন্য নতুন কিছু নয়। সেই ১৯৯৯ সাল থেকে নিজেদের এ তালিকা প্রকাশ করে আসছে এ ম্যাগাজিনটি প্রতি বছর। আর সেই ধারাতেই সম্প্রতি ফোর্বস বাছাই করেছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আয় করে তালিকার প্রথমে থাকা সব পেশার কিছু তারকাকে আর প্রকাশ করেছে সেই তালিকা। চলুন দেখে আসি ফোর্বসের সেই সবচেয়ে বেশি আয়ের তারকা ২০১৬ তালিকাটির প্রথম সারির কয়েকজনকে।

 

টেইলর সুইফট (সংগীতশিল্পী )

২৬ বছর বয়সেই বিশ্বের প্রতিটা মানুষকে নিজের জাদুকরী কণ্ঠের আবেশে আবেশিত করে তোলা এ তরুণী ২০১৬-এর প্রথমভাগ অব্দি আয় করে নিয়েছেন প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৫ সালে ক্ষমতাধর নারীদের ভিতরে নিজেকে ৬৪তম স্থানে ও ২০১৬ সালে আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যে নিজের চেষ্টায় এতটা আসার জন্য ফোর্বসের আরও দুটি তালিকায় জায়গা করে নেন সুইফট। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। এ বছরের সমসাময়িক সব তারকার আয়ের সঙ্গে টক্কর লাগিয়ে সবাইকে হারিয়ে দিয়ে সামনে চলে এলেন নিজের অভিজ্ঞতাগুলোকে পুঁজি করে গানের লাইন লিখে যাওয়া এ তারকা। গানের জগৎ ছাড়াও কেডস, ডায়েট কোক আর অ্যাপলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেন এ সংগীতশিল্পী।

 

 

ওয়ান ডিরেকশন (গানের দল)

মেড ইন দ্য এএম, ফোর, টেক মি হোম, আপ অল নাইট, এক্স ফ্যাক্টরের মতো কিছু অসম্ভব ভালো কাজ উপহার দিয়ে অনেক আগেই শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল লন্ডনে জন্ম নেওয়া ছেলেদের গানের দল ওয়ান ডিরেকশন। কিছুদিন আগে দলের একজন সদস্য জেইন মালিক দল ছেড়ে চলে গেলেও তাই মুখ থুবড়ে পড়তে হয়নি ওয়ান ডিরেকশনকে। বর্তমানে খানিক বিরতিতে রয়েছে দলটি। দলের সদস্যদের ভিতরে আছেন নায়াল হোরান, লিয়াম পেইনি, হ্যারি স্টাইলস ও লুইস টমিলনসন। একটুখানি বিরতি হয়তো পড়ে গেছে চলার পথে। কিন্তু তারপরেও গত বছরের সাফল্যকে সঙ্গী করে এ বছরের প্রথম অব্দিও নিজেদের আয় দিয়ে বাকি সব গানের দলকে ছাড়িয়ে গেছে ওয়ান ডিরেকশন। আয় করে নিয়েছে ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ওয়ান ডিরেকশনের স্থান ছিল এ তালিকার চার নম্বরে। এ বছর অনেকটা বাধা-বিপত্তি পেরিয়েও নিজেদের দুই ধাপ সামনে এগিয়ে আনতে পেরেছে দলটি।

 

 

 জেমস প্যাটারসন (লেখক)

গান আর খেলাধুলা নয়, এবার আসা যাক ছাপা অক্ষরের দুনিয়ায়। আর এ দুনিয়ার অন্যতম কর্ণধার, অ্যালেক্স ক্রস বইটির মাধ্যমে সবচেয়ে পরিচিত জেমস প্যাটারসন এবার রয়েছেন সবচেয়ে বেশি আয় করে নেওয়া তারকাদের তালিকার ৩ নম্বর স্থানে। যদিও গত সালে তিনি ছিলেন ৭ নম্বর স্থানে। তবে কেবল বেশি আয়ই যে করেন এই লেখক তা নয়, সেইসঙ্গে প্রচুর কাজ করতেও অভ্যস্ত তিনি।

সহকারী লেককদের সাহায্যে প্রচুর পরিমাণ লেখার সুনাম আছে তার। তার লেখাগুলো কেবল বইয়ের পাতাতেই নয়, জীবন্ত হয়ে রূপ দিয়েছে অনেক অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রকেও। অ্যালেক্স ক্রস, কিস দ্য গার্লস, অ্যালং কেইম অ্যা স্পাইডারসহ বেশকিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে জেমস প্যাটারসনের লেখনী অনুসারে। ৬৯ বছর বয়সী এ লেখক এ বছর মোট মিলিয়ে আয় করেছেন ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাতেই উঠে আসেন সেরার তালিকায়।

 

 

ডক্টর ফিল ম্যাকগ্রো (চিকিৎসক)

৬৫ বছর বয়সী এ চিকিৎসক টেলিভিশন মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়। আর টেলিভিশন থেকেই তিনি আয় করে নিয়েছেন প্রায় ৮৮ মিলিয়ন ডলার। টেলিভিশনের পাশাপাশি লেখক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতিমান এ তারকা সবচেয়ে বেশি পরিচিত ২০০২ সাল থেকে চালিয়ে আসা তার টেলিভিশন শো ডক্টর ফিলের কারণে। তার হাত ধরেই এ টিভি চ্যানেল অনেকদূর এগোয়। এমনিতে বেশ চালাক ব্যবসায়ী হিসেবে ম্যাকগ্রুকে চেনেন সবাই। নিজের প্রাত্যহিক শো থেকে বেশ ভালো একটা পরিমাণের টাকা আয় করেন তিনি। এ ছাড়াও দ্য ডক্টরস শোটির নির্বাহী প্রযোজক ম্যাকগ্রুপ। প্রথমদিকে করা অপরাহ উইনফ্রের কিছু সাহায্য আরও দ্রুত সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে তাকে। দ্য অপরাহ উইনফ্রে শোতে ১৯৯০ সালের শেষের দিকে আসেন তিনি। আর তারপর থেকেই লাভ করেন তারকাখ্যাতি। বর্তমানে এএআরপি ও অ্যাসট্রাজেনেকার সঙ্গেও জড়িত আছেন ডক্টর ফিল. ম্যাকগ্রুপ।

 

 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (ফুটবলার)

বেতন ও বোনাসের ৫৩ মিলিয়ন এবং বাড়তি ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে মোটমাট ৮২ মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে গেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এ বছরে। ২০১৪-১৫তে উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি গোলের অধিকারী হওয়ায় গত বছর এ ফুটবলার অর্জন করেন চতুর্থ গোল্ডেন সু। তবে কেবল খেলার মাঠেই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ তুখোড় অবস্থানে আছেন এ খেলোয়াড়। বর্তমানে তিনবার ফিফা সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবজয়ী এ অ্যাথলেটের সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন অনুসারী। গত বছর দ্য ডকুমেন্টারি রোনালদো, অ্যা নেমসেক ফ্রাগনেন্স লিগাসি নামক একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেন রোনালদো। এ ছাড়াও নাইকের নতুন জুতার মডেল হিসেবে কাজ করেন এ তারকা ফুটবলার। এতকিছুর সঙ্গে সামনে পর্তুগাল, মাদ্রিদ আর নিউইয়র্কে তিনটি হোটেলের উদ্বোধন করবেন তিনি। ভাবছেন একসঙ্গে এতকিছু? তবে এটাই কিন্তু শেষ নয়। কোটিপতি পিটার লিমের কোম্পানির সঙ্গে গত বছরেই প্রায় ৪০ মিলিয়নের একটি ৬ বছরকালীন ছবিস্বত্ব চুক্তি করেন তিনি। সব মিলিয়ে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি আয় করে ফুটবল তারকাদের ভিতরে প্রথমেই নিজের অবস্থানটি ধরে রেখেছেন রোনালদো। যদিও সব মিলিয়ে তালিকার পঞ্চমে আছেন তিনি।

 

 

 কেভিন হার্ট (কৌতুক অভিনেতা)

একই অঙ্গে অনেকগুলো রূপের মতো ফিলাডেলফিয়ায় জন্ম নেওয়া এ তারকার খ্যাতি রয়েছে একইসঙ্গে কমেডিয়ান, অভিনেতা, লেখক ও প্রযোজক হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই মানুষকে হাসিয়ে আনন্দ দেওয়ার প্রতিভা ছিল তার। ক্যারিয়ারের শুরুটা নানারকম কমেডি প্রতিযোগিতাতে জয়ী হওয়ার মাধ্যমে শুরু হলেও ২০০০ সালে টিভি সিরিজ আনডিক্লেয়ারডে অভিনয়ের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ তারকাকে। সিরিজটি খুব বেশিদিন না চললেও এরপর কেভিনের হাতে আসে একের পর এক পেপার সোলজারস, স্কেয়ারি মুভি ৩, সোল প্লেন, ইন দ্য মিক্স আর লিটল ফকারসের মতো কিছু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। নিজের হাস্যরসাত্মক অভিনয়ের দ্বারা থিঙ্ক লাইক অ্যা ম্যান, রাইড অ্যালোন, অ্যাবাউট লাস্ট নাইট ও গেট হার্ডসহ আরও কিছু চলচ্চিত্রকে তুলে ধরেন। আর ২০১৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকাদের মধ্যে ছিলেন কেভিন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর প্রায় ৮৭ মিলিয়ন ডলার আয় করে ফোর্বসের সবচেয়ে বেশি আয় করা তারকাদের তালিকার ৬ নম্বর স্থানেও জায়গা করে নিয়েছেন এ তারকা।

 

 

হাওয়ার্ড স্টের্ন  (রেডিও ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব)

দ্য হাওয়ার্ড স্টের্ন শোয়ের জন্য পরিচিত এ তারকা একইসঙ্গে কাজ করে চলেছেন রেডিও ও টেলিভিশনে। প্রযোজক, লেখক, অভিনেতা, আলোকচিত্রীসহ বেশকিছু কারণে সবার কাছে অত্যধিক পরিচিত হাওয়ার্ডের জন্ম ১৯৫৪ সালে। ১৯৮৬ সালে রেডিওতে নিজের এ শোটি চালু করেন হাওয়ার্ড। যেটা কিনা আজ অব্দি সফলভাবে চলে আসছে। যদিও এর অনেক আগে থেকেই রেডিওতে কাজ করা শুরু করেন তিনি। নিজেকে সব মাধ্যমের রাজা বলে দাবি করা হাওয়ার্ড বিখ্যাত তার বেস্টসেলার দুটি বই প্রাইভেট পর্টস আর মিস আমেরিকার জন্যও। দ্য নিউইয়র্ক টাইমের বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নেয় এ দুটি বই। সেখানে বলা হয় যে, এ বই দুটির প্রতিটি ১ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। টেলিভিশনে অসংখ্য লেট নাইট শো করেছেন হাওয়ার্ড। এ বছর প্রায় ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে নিয়ে ফোর্বসের সর্বোচ্চ আয়ের অধিকারীদের তালিকার সপ্তম অবস্থানে আছেন হাওয়ার্ড স্টের্ন।

 

 

লিওনেল মেসি (ফুটবলার)

২০১৬ সাল পর্যন্ত বেতন, বোনার আর বাড়তি কিছু আয়ের উৎস থেকে মোটামুটি ৭৭ মিলিয়ন ডলার আয় করে নিয়েছেন ফুটবলার লিওনেল মেসি। সেইসঙ্গে নিজেকে তুলে ধরেছেন ফোর্বসের ভিন্নধর্মী এ তালিকায়ও। এই জানুয়ারিতেই ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের খ্যাতি নিজের করে নেন ফুটবল জগতের বিস্ময় লিওনেল মেসি। এ ছাড়াও ৪৮টি গোল ও ২২টি গোলদানে সাহায্য করে বার্সেলোনাকে ২০১৫ সালে ৫টি ট্রফি (লা লিগা, কোপা ডেল রে, চ্যাম্পিয়নস লিগ, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, ইউরো সুপার কাপ) এনে দেওয়ার জন্য পঞ্চমবারের মতো ব্যালন ডি অর পান এ তারকা। খেলার মাঠের বাইরেও আর সমসাময়িক ফুটবলারদের দেখাদেখি বেশ ভালো আয় করেন এ তারকা। তুর্কি এয়ারলাইন কোবে ব্রেইয়ানতের সঙ্গে গত বছর একটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নেন তিনি। যেটা কিনা ইউটিউবে গত বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনচিত্রে পরিণত হয়। সম্প্রতি টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামসের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফের একটি বিশ্বব্যাপী শিশুর জন্য শিক্ষা ক্যাম্পেইনে কাজ করেন মেসি।

 

 

লিব্রন জেমস (বাস্কেটবল খেলোয়াড়)

নিজের জন্মস্থান ওহিয়ো থেকেই বাস্কেটবলের প্রতি উৎসাহিত হন। এনবিএ তারকা হওয়ার স্বপ্ন তখন থেকেই লালিত। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবে পা বাড়াল ২০০৩ সালে এনবিএ ড্রাফটের মাধ্যমে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৬ সালের এনবিএ চ্যাম্পিয়নশিপ হন তিনি। তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়াও চারটি সর্বোচ্চ মূল্যের খেলোয়াড়ের (২০০৯, ২০১০, ২০১২ ও ২০১৩ ) খেতাব, দুবার অলিম্পিক গোল্ড মেডেল, এনবিএ স্কোরিং টাইটেলসহ ২০০৪ সালে এনবিএ রোকি অব দ্য ইয়ার খেতাব পান তিনি। খেলার মাঠ ছাড়াও বই, প্রামাণ্যচিত্র আর বিজ্ঞাপনে তার পদচারণা ব্যাপক। এ ছাড়াও ইএসপিওয়াই অ্যাওয়ার্ডস, স্যাটারডে নাইট লাইভসহ বেশ কিছু অনুষ্ঠান পরিচালনাও করেন। ২০১৫-তে ট্রেইনরেক চলচ্চিত্রে দেখা যায় তাকে। সবমিলিয়ে তার আয় বিশাল। প্রায় ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে তিনি এ বছর উঠে এসেছেন ফোর্বস ম্যাগাজিনের সবচেয়ে বেশি আয়ের অধিকারী ২০১৬ তালিকার দশম অবস্থানে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর