শিরোনাম
শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রযুক্তি যেভাবে বদলে দেবে বিশ্ব

তানভীর আহমেদ

প্রযুক্তি যেভাবে বদলে দেবে বিশ্ব

প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে প্রতিনিয়ত। মানুষের জীবন সহজ, আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে প্রযুক্তির অবদান অস্বীকার করার জো নেই। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তির খোঁজ করে চলেছেন। কিছু কিছু প্রযুক্তির উত্কর্ষ মানুষের কল্পনাকেও ছাপিয়ে গেছে। প্রতি দশকেই মানুষের প্রাযুক্তিক উন্নয়ন বিস্ময় সৃষ্টি করছে। আগামী বছরগুলোতে এই গতি আরও বাড়বে। তখন পৃথিবীর চেহারা বদলে যাবে। আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনাচারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে। আগামী দিনগুলোতে আসছে ওষুধ সরবরাহকারী ড্রোন, মানুষ যান্ত্রিক হাত-পা প্রতিস্থাপন করবে, বিষণ্নতা কাটাতে থাকবে সঙ্গী রোবট, হাইপারলুপে পাড়ি দেবে শহর...

 

২০১৮

ওষুধ পৌঁছে দেবে চতুর ড্রোন

ড্রোনের উপযোগিতা এরই মধ্যে মানুষকে গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। তাই অচিরেই মাঠে নামছে অত্যাধুনিক ড্রোন। আর মাত্র দুই বছরের মধ্যে ওষুধ ও ত্রাণ পরিবহনে সক্ষম ড্রোন দুর্গম ও বিপদগ্রস্ত অঞ্চলের দিকে উড়তে শুরু করবে। শিগগিরই গ্রাহকের ঘরে পিজার অর্ডার পৌঁছে দিয়ে তাক লাগিয়ে দেবে ড্রোন।

 

২০২২

হাইপারলুপে শহর পাড়ি দেবে যাত্রীরা

কাছের শহরগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হাইপারলুপ। কয়েকশ কিলোমিটার রেঞ্জ ধরে ছুটতে পারবে এমন দ্রুতগতির ট্রেন ও বাস চালু হবে। হাইপারলুপ একটি আবদ্ধ টানেল, যেটির মধ্য দিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার বেশি গতিতে ছুটে যাবে ট্রেন। মস্কোতে হাইপারলুপের উন্নয়ন চলছে।

 

২০২৫

মানুষের মতো ভাববে বুদ্ধিমান রোবট

আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের উন্নয়ন নিয়ে জোরোশোরে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য দেখা দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন এক প্রযুক্তি যাতে করে যন্ত্র নিজে থেকেই সীমিত পরিসরে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বলা হচ্ছে, আর মাত্র দশ বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রের দেখা পেয়ে যাবে মানুষ। ইতিমধ্যে স্বল্প পরিসরে এ ধরনের যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। কিছু কিছু কম্পিউটারকে এখনই সুপারকম্পিউটার ও ‘সুপার হিউম্যান’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই বুদ্ধিমান রোবটের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

২০২৫

স্মার্টফোনের রাজত্বে ভাঙন ধরবে

২০২৫ সালে মানুষ অযথাই এ ধরনের একটি যন্ত্র পকেটে নিয়ে ঘুরতে চাইবে না। হাতঘড়ি, ব্রেসলেট বা জুয়েলারির সঙ্গে স্মার্টফোনের প্রযুক্তি জুড়ে দেওয়া হবে। প্রযুক্তির উত্কর্ষে বাতাসেই ভেসে উঠবে স্ক্রিন। ম্যাজিক লিপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এ ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনার ঘোষণা দিয়েছে।

 

২০২৬

অঙ্গহারা মানুষ হবে যন্ত্রমানব

বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অনেকেই হাত, পা হারান। অনেকে আবার বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম হাত-পা জুড়ে দিয়ে তাদের আবার সক্ষম করে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় হাত ও পায়ের স্থলে যান্ত্রিক হাত-পা প্রতিস্থাপনের সুফল পেতে যাচ্ছে মানুষ। এতে সময় লাগবে আর দশটি বছর।

 

 

২০২৬

যে পোশাক মানুষকে করে তুলবে ‘সুপারম্যান’

এই অসম্ভব ভাবনা কিন্তু নতুন নয়। তবে বাস্তবে সেটাই তুলে আনল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুন্দাই। তারা বিশেষ এক ধরনের পোশাক বিজ্ঞানীদের সামনে তুলে ধরেন যা মানুষের শারীরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। এই পোশাকে ব্যবহৃত যান্ত্রিক লিফট ব্যবহার করে মানুষ তার সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ওজন তুলতে পারবে। তবে এই পোশাকে এখনো মানুষ সহজে চলাফেরা করতে পারে না। আর দশ বছরের মধ্যে এটি সাধারণ পোশাকের মতোই হালকা হবে। এটি পরিধানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে মানুষ। এ ধরনের পোশাক শুধু ভারী কাজ করতেই মানুষকে সাহায্য করে তা  নয় সঙ্গে বড় দুর্ঘটনা থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাবে।

 

২০২৬

চালকবিহীন গাড়ি নিরাপদে পৌঁছে দেবে

যোগাযোগ ব্যবস্থায় দুর্ঘটনা এড়ানোর বহু সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে মানুষ। গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা কমিয়ে আনতে চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণে কথা বলা হচ্ছে। পূর্বনির্ধারিত প্রোগ্রাম অনুযায়ী এটি নিরাপদে আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। এগুলো দামেও সাশ্রয়ী হবে।

 

 

২০২৮

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দেবে অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবারই আকাশ ছোঁয়া প্রত্যাশা রয়েছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ঘরে বসেই পৌঁছে যেতে পারবেন কৃত্রিমভাবে উপস্থাপিত যে কোনো জায়গায়। এতে যোগাযোগ করতে পারবেন। চাইলেই পাওয়া যাবে সামনাসামনি যে স্থান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। শুনতে পারবেন কৃত্রিম ব্যবস্থায় স্থাপিত শব্দও। গুগল এক্সিপিডেশন অ্যাপের মাধ্যমে ইতিমধ্যে একদল শিক্ষার্থীকে ঘুরিয়ে আনা হয়েছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের মতো দুর্গম স্থান থেকে। অদূর ভবিষ্যতে বইয়ের পড়া চোখের সামনে তুলে আনবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি।

 

২০৩০

মঙ্গলের মাটিতে মানুষের পায়ের ছাপ পড়বে

এটি অনেকটাই ভবিষ্যদ্বাণী। বিশ্লেষকরা এখনো জানেন না মহাকাশ গবেষকরা ঠিক কী চাচ্ছেন, তারা মানুষ পাঠাবেন নাকি রোবট? তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাসাসহ প্রথমসারির মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের দিকে যাত্রার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ২০৩০ সালে মানুষের মঙ্গলযাত্রা হতে পারে।

 

 

২০৩৬

আধুনিক দালান নির্মাণে থ্রি ডি প্রিন্টিংয়ের ব্যবহার

আগামী দিনের দালান নির্মাণে থ্রি ডি প্রিন্টিংয়ের ব্যবহার করা হবে। ২০ বছরের মধ্যেই উঁচু ও নান্দনিক দালান নির্মাণের বড় অংশজুড়েই নকশা প্রণয়নে এর ব্যবহার বাড়বে। ইউসিএসের এক অধ্যাপক ইতিমধ্যেই দানবাকৃতির থ্রি ডি প্রিন্টার তৈরি করছেন যেটা গোটা এক দালান তৈরিতে সক্ষম।

 

২০৪০

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উৎকর্ষে

জীবন হবে অভূতপূর্ব২০৪০ সালের মধ্যেই একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে মানুষ। প্রতিদিনের জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়বে। বিজ্ঞানী পিয়ারসনের মতে, বিভিন্ন যান্ত্রিক পণ্য রোবোটিক হয়ে উঠবে। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার রোবটকে আমাদের গৃহকর্মীর সেবা দেবে। একটি উঁচু দালানও ছোট শহরের আদলে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। নিত্যদিনের অপরিহার্য ইলেকট্রিক যন্ত্র ও কলকারখানায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট মানুষের পাশাপাশি কাজ করবে। ইতিমধ্যে বহু রোবটের মাধ্যমে সেই অভিজ্ঞতা নিতে শুরু করেছে মানুষ। ভারী ও ক্লান্তিহীন কাজের জন্য এ ধরনের রোবট মানুষের জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিষণ্নতা ও একাকিত্ব কাটাতে সঙ্গী রোবট, শিক্ষক রোবট, চিকিৎসক রোবট, পরিচ্ছন্নতাকারী রোবট, নিরাপত্তা প্রদানকারী সৈনিক রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে বহুল ব্যবহৃত হবে।

 

২০৪৫

ভার্চুয়াল পৃথিবীতে মানুষের বিচরণ

২০৪৫ সালের মধ্যেই মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে তথ্য সংরক্ষণের প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করতে পারে মানুষ। এটি সম্ভব হলে মানুষের স্মৃতি তথ্য ভাণ্ডারে জমা করা যাবে। এখন যেমন চাইলেই আমরা কোনো গান বা ভিডিও দেখতে পারি তখন মানুষের স্মৃতি ভাণ্ডার হাতড়ে সেসব দেখা ও শোনা যেতে পারে।

 

২০৫০

মহাকাশ থেকে বিদ্যুৎ

পৃথিবীর শক্তি সরবরাহের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ করে চলেছে প্রথমসারির বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। এরা আশাবাদী গ্যাস, তেল ও কয়লা ছাড়াও বিদ্যুতের জোগান দেবে মহাকাশ। মহাকাশের শক্তি ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে এরই মধ্যে সাফল্যের দেখা মিলেছে। সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাতাস ও সমুদ্রের জল ব্যবহার করে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি মহাজাগতিক রশ্মি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ২০৫০ সালের মধ্যেই।

 

১০০ বছর পরের পৃথিবী

 

২১১৬ সাল। ঠিক ১০০ বছর পরের পৃথিবী নিয়ে বিজ্ঞানীরা যা ভাবছেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে পৃথিবীর উপরিতলের অধিকাংশ যাবে ডুবে।  সমুদ্রের নিচে কৃত্রিম শহর-নগর গড়ে তুলবে মানুষ। তারই নমুনা মডেল এটি।

সর্বশেষ খবর