বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

youtube এর বিস্ময়কর উত্থান

রোকন রাইয়ান

youtube এর বিস্ময়কর উত্থান

ভিডিও শেয়ারিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ইউটিউব। কী নেই এখানে? লুঙ্গি পরার কায়দা-কানুন থেকে শুরু করে নায়াগ্রা ভ্রমণ। সবকিছুই পাওয়া যায়। ইউটিউব দখল করে নিয়েছে ছেলে-বুড়ো সবার মন। হুমড়ি খেয়ে যেভাবে একসময় টিভি দেখতেন, এখন দেখেন ইউটিউব। আয়ও করা যায় সহজে। হওয়া যায় সেলিব্রেটি। সব মিলিয়ে তরুণদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হয়ে পড়েছে ইউটিউব। কিন্তু সাইটটি সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন? আসুন জানি আরও কিছু।

 

পথচলা শুরু

শুরুটা ২০০৫ সালে। একটা প্রেমময় দিনে। ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ দিনেই ক্যালিফোর্নিয়ার সান মাটেওতে পরীক্ষামূলক চালু হয় ইউটিউব ডটকম। উদ্যোক্তা তিন তরুণ। চাদ হার্লে, স্টিভেন চ্যান ও জাভেদ করিম। কাজের সুবাদে একসঙ্গেই থাকতেন তিন বন্ধু। চাকরি করতেন অর্থ আদান-প্রদানের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পেপ্যালে। কাজ আর নিজেদের  প্ল্যানিং শেয়ারিং চলত একসঙ্গে। তবে ঝামেলা বাধল কিছুদিন পর। পেপ্যালের মালিক প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করে দিলেন অনলাইনে নিলাম ওয়েবসাইট ইবের কাছে। চাকরি গেল অনেক কর্মীর। সঙ্গে চাদ হার্লে, স্টিভেন চ্যান ও জাভেদ করিমেরও।

চাকরি হারানো তিন বন্ধু ভাবনায় পড়লেন। ডুবে গেলেন অসীম চিন্তায়। কী করা যায়। কোনটা হবে জীবনের মাইলফলক। হঠাৎ করেই মাথায় এলো ইউটিউবের ভাবনা। অনলাইনে ভিডিও শেয়ারিংয়ের ওয়েব চালু করলে কেমন হয়? মাথা থেকে নেমে এলো মুখে। তারপর কাগজে-কলমে। তিন বন্ধুর কাছেই ভালো লাগল বিষয়টা। ব্যস আর দেরি কেন! এমনিতে অবসরে কিছু করার প্রেরণা ছিল। যেটা হবে একদমই নিজেদের। নিজের মতো করে ভাবা, প্রতিষ্ঠিত করা। শুরু হয়ে গেল ইউটিউব। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলক চালু করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত হয় দুই মাস পর। মে থেকে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য খুলে দেওয়া হলো ইউটিউব। এ দুটা মাস নিজেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। প্রতিষ্ঠাতাদের ভাবনায় শুরুটা ছিল স্রেফ মজা। বিনোদন এবং শেয়ারিং। তাই নিজেদের সামান্য অর্থ দিয়েই শুরু হয়েছিল বিশাল এই প্ল্যাটফরম। কিন্তু এটা যখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। বিপুল পরিমাণ ইউজার আসতে লাগল সাইটে। এগিয়ে এলো একটা বড় কোম্পানি। সেকুয়া ক্যাপিটাল নামের ওই কোম্পানি সে বছরই নভেম্বর মাসে ইউটিউবে বিনিয়োগ করলেন ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার। সাইটের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগও বাড়ে। পরের বছর এপ্রিল মাসে আরও ৮০ লাখ ডলার যোগ হয় ইউটিউবের একাউন্টে। ইউটিউব এ মুহূর্তে গুগলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। ২০০৬ সালে গুগল তার সেবাভিত্তিক বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইউটিউব কিনে নেয়। বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এই ভিডিও সাইটটি।

 

তিন প্রতিষ্ঠাতা

পৃথিবী বিখ্যাত অধিকাংশ কোম্পানিই একক মালিকানাধীন। কিন্তু ইউটিউবের  ক্ষেত্রে  বিষয়টি ব্যতিক্রম। যেহেতু সাইটটি শুরু হয়েছিল শখের বসে এবং আইডিয়াটা এসেছিল বন্ধুদের আড্ডার মধ্যে সে কারণে তিনজন মালিক পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চাদ হার্লে, স্টিভেন চ্যান এবং জাভেদ করিম। তিনজনই ছিলেন তরুণ এবং সমবয়সী। শুরুতেই ইউটিউব চালু করেছেন শখের বসে। সমালোচকরাও সাইট দেখে হেসেছেন। টিপ্পনিও কেটেছেন আড়ালে-আবডালে। কিন্তু সেই ইউটিউবই যে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করে ফেলবে সেটা কে জানত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় জন্ম চাদ হার্লের। ডন ও জোয়ান হার্লের দ্বিতীয় সন্তান। ছোটবেলায় আঁকাআঁকির প্রতি আকর্ষণ ছিল। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহের বিষয়বস্তু পাল্টে যায়। তিনি ধীরে ধীরে কম্পিউটার এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতি ঝুঁকতে থাকেন। টুইন ভ্যালি স্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে চারুকলা নিয়েও পড়াশোনা করেন চাদ। তিনি ইউটিউবের সিইও পদে যুক্ত ছিলেন শুরু থেকেই। তবে সম্প্রতি এ পদ ছেড়ে দিয়েছেন। ইউটিউবের উপদেষ্টা হিসেবে আগের মর্যাদাতেই বহাল রয়েছেন চাদ হার্লে।

ইউটিউবের আরেক প্রতিষ্ঠাতা স্টিভেন চ্যান। তাইওয়ানের বংশোদ্ভূত চ্যানেল জন্ম ১৯৭৮ সালের ১৮ আগস্ট।

১৫ বছর বয়সে তার পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে ছিল প্রচুর আগ্রহ। আরবানা ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ২০০২ সালে স্নাতক হন। ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক স্টিভেন চ্যান।  ইউটিউবের আরেক প্রতিষ্ঠাতার নাম জাভেদ করিম। বাবার নাম নাইমুল করিম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় অবস্থিত থ্রিএম প্রতিষ্ঠানের একজন গবেষক। জাওয়াদের মা ক্রিস্টেন করিম একজন জার্মান এবং তিনি ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটায় অধ্যাপনা করেন। ছোট থেকেই প্রযুক্তিতে ভীষণ আগ্রহ জাভেদ করিমের। কর্মজীবনও শুরু করেছিলেন এমন প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকেই জড়িয়ে পড়েন ইউটিউবের বিশাল এরিয়ায়।

 

সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও

ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও কোনটি? গ্যাংনাম স্টাইল। নিঃসংকোচেই বলা যায়। কারণ গ্যাংনাম স্টাইল যতবার দেখা হয়েছে তার ধারেকাছেও নেই অন্য কিছু। এর পরিসংখ্যান দেখলে রীতিমতো মাথা হট হয়ে যাবে। এর দর্শন ইউটিউবের নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা কেউ ছাড়িয়ে গেছে। ভেঙে দিয়েছে সব রেকর্ড। চিন্তা করুন, কতবার দেখা হতে পারে এ মিউজিক ভিডিও? থাক, চিন্তায় এত বড় পরিসংখ্যান আটবে না। বলেই দিচ্ছি। ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখার সর্বোচ্চসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৭ বার। কিন্তু গ্যাংনাম স্টাইল দেখা হয়েছে। ৯,২২৩,৩৭২,০৩৬,৮৫৪,৭৭৫,৮০৮ বা ৯ কুইন্টিলিয়নেরও বেশি। কি, চোখ আসমানে গেছে তো? একটু সহজ করে বলি তাহলে— গ্যাংনাম দেখা হয়েছে ৯২ হাজার ২৩৩ কোটি কোটিরও বেশি! আর সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছেই। শুধু তাই নয়, গ্যাংনাম স্টাইলকে পর্যালোচনা করে যে ভিডিওগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলোও কোটি কোটি দর্শক ছাড়িয়ে গেছে। গ্যাংনাম স্টাইলের শিল্পী দক্ষিণ কোরিয়ার পপতারকা সাই। আসল নাম পার্ক জেই সাং। প্রথম অ্যালবাম বের হয় ২০০১ সালে। গায়ক হবেন এমন ধারণা ছিল না পরিবারে। বাবার ছিল প্রতিষ্ঠিত আইটি কোম্পানি। সেখানেই ফিউচার গড়বেন এমনটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু সাই শুরু থেকেই স্কুল পালানো ছেলে। পড়াশোনার জন্য ছোটবেলায় আমেরিকা পাঠানো হলেও পরিকল্পনা সেভাবে এগোয়নি। নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি জন্ম থেকেই ব্লি ক্লাসের। ইউটিউব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমরা কখনো ভাবিনি, কোনো ভিডিও ২১৪ কোটির বেশি বার দেখা হবে বা ভিউয়ের সংখ্যা ৩২ অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে। সাইয়ের আবির্ভাবের আগে এটা ভাবাও যায়নি। ‘গ্যাংন্যাম স্টাইল’ প্রথম ইউটিউবে ছাড়া হয়েছিল ২০১২ সালে। গ্যাংনাম স্টাইল সম্পর্কে সাই বলেন, ‘ড্রেস ক্ল্যাসি, ডান্স চিজি’ অর্থাৎ, জামাকাপড় দামি, কিন্তু নাচ আজগুবি। স্ট্যাইলটা এমনই দাঁড় করিয়েছেন তিনি। গ্যাংনাম স্টাইলের পর ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও তালিকায় দুই নম্বরে আছে কানাডিয়ান কিশোর তারকা জাস্টিন বিবারের মিউজিক ভিডিও ‘বেবি’। তবে তার ভিউয়ের সংখ্যার সঙ্গে গ্যাংনাম স্টাইলের পার্থক্য ১০০ কোটিরও বেশি।

 

সবচেয়ে বেশি আয়কারী ‘পিউডাইপাই’

ইউটিউবে সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যানেলটির নাম পিউডাইপাই। স্বাভাবিকভাবে আয়টা তাদেরই বেশি হওয়ার কথা। হচ্ছেও তাই। শুধু আয় নয়, পিউডাইপাইয়ের ক্রিয়েটর এখন রীতিমতো কোটিপতি বনে গেছেন। গত বছর চ্যানেলটি ইউটিউব থেকে আয় করেছে ৭.৪ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৫৬ কোটি। 

পিউডাইপাইয়ের ক্রিয়েটর ফেলিক্স কেলবার্গ। মাত্র ২৬ বছর বয়সী এ সেলিব্রেটির জন্ম সুইডেনে। তার চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার আছে ৪৪ মিলিয়ন। ফেলিক্স কেলবার্গ মূলত অনলাইন গেমের জন্যই সবার কাছে পরিচিত। ইউটিউবে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দ্রুত এগিয়ে যাওয়া মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। পিউডাইপাইয়ের ইউটিউবে পথচলা শুরু ২০১০ সালের এপ্রিলে। মাত্র ৫ বছরেই চ্যানেলটিকে এ উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি।

সুইডেনের গোথেনবার্গে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কেলবার্গ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমির ডিগ্রি ফেল করে এসেছেন ইউটিউবে ক্যারিয়ার গড়তে। যদিও এসব মাধ্যমে জনপ্রিয়তাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বলা যায় না।

কিন্তু তার বেলায় হয়েছে উল্টো। তিনি প্রমাণ করে ছেড়েছেন এখানেও উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়া যায়।

ফেলিক্স কেলবার্গ গেমের পাশাপাশি নিজেও হাস্যরসে পরিপূর্ণ দারুণ মানুষ। তার প্রকাশিত প্রতিটি ভিডিও দেখার অপেক্ষায় থাকে কোটি কোটি ভক্ত। নিজেকে তিনি কখনো বড় মনে করেন না। সব সময় বলেন, আমি আপনাদের মধ্যেই একজন।

 

প্রথম ভিডিও

ইউটিউবে এখন কত হাজার ভিডিও আছে? সেই তথ্য অজানা। কারণ এখানে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ভিডিও আপলোড হয় দেড় ঘণ্টার। সংখ্যার হিসাবে এ এক বিশাল সমুদ্র। তবে ইউটিউবে সর্ব প্রথম ভিডিও কী ছিল? তার তথ্য নিশ্চয়ই আছে। হ্যাঁ, গত বছর ইউটিউবের ১০ বছর পূর্তিতে ইউটিউব নিজেরাই একটি ভিডিও শেয়ার করে।

সেখানে দেখানো হয় ইউটিউবের সর্ব প্রথম আপ করা ভিডিওটি। ইউটিউবের প্রথম ভিডিওটি ছিল মাত্র ১৮ সেকেন্ডের। যেটি তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সহপ্রতিষ্ঠাতা জাভেদ করিম। ভিডিওর নাম ‘মি অ্যাট দ্য জু’। ভিডিওটি জাভেদ করিম সান দিয়েগোর চিড়িয়াখানায় তৈরি করেছিলেন। ২০০৫ সালে ২৩ এপ্রিল ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ভিডিওটি ছিল সান দিয়েগোর একটি চিড়িয়াখানার বিবরণ। ভিডিওতে আছে হাতি দেখার সংক্ষিপ্ত বিবরণ। জাভেদ নিজেই উপস্থাপন করেন। জাভেদ করিম তখন জানতেন না, এ ভিডিওটিযে ইতিহাসের অংশ হতে চলেছে। খেয়ালের বসেই তৈরি করেছিলেন ভিডিওটি। কিন্তু সেই ভিডিটিই সারা বিশ্বের দর্শকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। মাত্র ১৮ সেকেন্ডের এ ভিডিওটি কতবার দেখা হয়েছে জানেন? ২ কোটি বারেরও বেশি। এখনো ইউটিউবে আগ্রহী হয়ে উঠা ইউজাররা মাঝে মাঝেই খোঁজেন ইউটিউবের প্রথম এই ভিডিওটি।

 

ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি?

হ্যাঁ। বিষয়টি গর্ব করার মতোই। বিশ্ববিখ্যাত এ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা একজন বাংলাদেশি। বিষয়টি অন্যরকম প্রেরণার। বাঙালি পারে এবং পারবেন এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি আছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ তরুণ প্রতিষ্ঠাতার নাম জাভেদ করিম। যদিও জাভেদ করিমের জন্ম জার্মানিতে, কিন্তু তার বাবা নাইমুল করিম একজন খাঁটি বাঙালি। তিনি এক সময় কাজের জন্য পারি দেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বিয়ে করেন সেখানেই। জার্মান বংশোদ্ভূত নারী ক্রিস্টেন করিমকে। তাদেরই প্রথম সন্তান জাভেদ করিম। ছোটবেলা থেকেই সৃষ্টিশীল কাজে মনোযোগী জাভেদ। তিনি পোর্টেবল ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স, সলভিং ড্যাড পাজল, থ্রিডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবোটিক ওয়েবক্যাম, রেডিওসিটি ইনজিন, রে-ট্রেসার, লাইফ থ্রিডি, কোয়াক ২ মডেল ভিউয়ারসহ বেশ কিছু প্রজেক্টের উদ্ভাবন করেন। পড়ালেখা করেন ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় এট আরবানা-শ্যাম্পেইন এ। ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। গুগল যখন ইউটিউব কিনে নেয় তখন জাভেদ করিমকে ৬৪ মিলিয়ন ডলারের ১,৩৭,৩৩৪টি শেয়ার দেওয়া হয়। জাভেদ পরবর্তী সময়ে এই টাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিজনেস আইডিয়া শুরু করতে ও এগিয়ে নিতে ব্যবহার করেন।

 

ছোটদের জন্য আলাদা ইউটিউব!

শিশু-কিশোরদের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি ইউটিউব চালু করেছে আলাদা ভার্সন। ইউটিউব কিডস নামের একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে শিশুদের জন্য নিরাপদ ভিডিও সরবরাহ করবে। মূলত বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে অ্যাপটিকে করা হয়েছে শিশুবান্ধব। এর আইকনগুলো বেশ বড় আকৃতির। ফন্টগুলোও বড় করা হয়েছে। স্ক্রল করে বেশিদূর যেতে হবে না কারণ ভিডিও সাজেশনগুলো থাকবে কাছাকাছি।

ইউটিউবের যে অ্যাপটি বর্তমানে চালু রয়েছে, তার চেয়ে একেবারেই হবে ইউটিউব কিডজ। এখানে শিশুদের উৎসাহে লাগাম টানার অধিকার পাবেন অভিভাবকরা। শিশুদের এই ইউটিউব কিডস সাইটটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও অবিভাবকরা ছিলেন বিশাল চিন্তায়। কারন, শিশুদের হাতে মোবাইল বা ট্যাব ছেড়ে দেওয়াটা তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে পড়াশোনার তো ক্ষতি হবেই, সঙ্গে বখেও যেতে পারে প্রিয় সন্তান। আর সে কারণেই টাইমার সেট করতে পারবেন অভিভাবকরা। তাদের হুকুম মেনে নির্দিষ্ট সময় পরে আর অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাবে।

 

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল

বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত ইউটিউব চ্যানেলের নাম সালমন দ্য ব্রাউনফিশ। চ্যানেলের আর্টিস্টিও ইতিমধ্যে অর্জন করেছেন অসামান্য খ্যাতি। ইউটিউব তাকে সিলভার সম্মাননা দিয়েছে। অভিনয়ে ক্যারিয়ার তো সমৃদ্ধই করে ফেলেছেন। বিভিন্ন নাটক এবং মিউজিক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তাকে। সালমান দ্য ব্রাউনফিশের বতর্মান সাবস্ক্রাইবার ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি। এ পর্যন্ত তার চ্যানেলটি দেখা হয়েছে আড়াই কোটি বার। ২০১২ সালের ফেরুয়ারিতে চ্যানেলটি ক্রিয়েট করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সালমান মুহাম্মদ মুক্তাদির। সালমানই প্রথম বাংলাদেশি ইউটিউবার যিনি সম্প্রতি ইউটিউবের সিলভার বাটন জিতেছেন। ২০১৫ সালে নিউইয়র্কে ইউটিউবের এক সম্মেলনে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

 

সেরা তিনে ইউটিউব

শত শত জনপ্রিয় ওয়েবসাইটকে পেছনে ফেলে ইউটিউব অবস্থান করছে তৃতীয় স্থানে। অ্যালেক্সা রেটিং অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভিজিট করা ওয়েবসাইটের তালিকায় গুগল ও ফেসবুকের পরেই রয়েছে এটি। মজার ব্যাপার হলো ইউটিউব কোনো সার্চ ইঞ্জিন না হওয়া সত্ত্বেও এখানে যতবেশি ‘সার্চ’ করা হয়ে থাকে তা বিং, আস্কডটকম ও ইয়াহুর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মিলিত সার্চের চাইতেও অনেক বেশি। ইউটিউবে সার্চের পরিমাণ হিসাব করলে গুগলের পরেই থাকে এর অবস্থান। ইউটিউবে ইউজাররা খুব সহজে নিজস্ব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভিডিও দেখা এবং আপলোডের সুবিধা  পেয়ে থাকেন। সঙ্গে অন্যের ভিডিও পর্যালোচনার অবারিত সুযোগ রয়েছে এখানে। একই সাথে খুব সহজে সার্চ করে পছন্দের শিল্পীদের মিউজিক ভিডিও দেখার সুযোগ পান ইউজাররা। গবেষকদের ধারণা এ কারণেই ইউটিউব এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সবচেয়ে বড় ভিডিও

আপনার যদি ইউটিউবে সবচেয়ে বড় ভিডিওটি দেখার শখ হয় তবে বেশ লম্বা সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। না সেটা একদিন বা এক সপ্তাহও নয়, তারও বেশি। আর ধৈর্যকে টেনে বানাতে হবে চীনের প্রাচীরের মতো।

কারণ ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি ব্যাপ্তির ভিডিওটি একদিন কিংবা এক সপ্তায়ও দেখে শেষ হবে না। লাগবে টানা ২৫ দিন। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। কত ঘণ্টার তাহলে ভিডিওটি? সোজা হিসাব— ৫৯৬ ঘণ্টা ৩১ মিনিট ২০ সেকেন্ড। গুনে গুনে ২৫ দিনই লাগবে। ২৫ দিনের ব্যাপ্তি এ ভিডিওটি তৈরি করেছেন জোনাথান হেনড্রিক নামের একজন অ্যাপস ডেভেলপার। ২০১১ সালের জুলাইয়ে তিনি ভিডিওটি আপলোড করেন। এত লম্বা ভিডিও হলেও ইউজাররা অবহেলা করেনি। সব মিলিয়ে ২৮ লক্ষ বার দেখা হয়েছে ভিডিওটি। মজার ব্যাপার হলো, ভিডিওটি আপ করার প্রথম সপ্তাহেই ৩৬ হাজার বার দেখা হয়। শৈল্পিক এবং আনকমন ধাঁচের ভিডিও করতে ভালোবাসেন হেনড্রিক। ইউটিউব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতেই তার মাথায় আসে এই থিম।

 ইউটিউবের সর্বোচ্চ ভিডিওটি তিনি তৈরি করবেন। যা হবে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ভিডিওটিতে চিলির বিভিন্ন বস্তু ও দৃশ্য স্থান পেয়েছে। 

ভিডিও বানিয়ে জেলে

প্র্যাংক ভিডিও ইউটিউবের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। বাংলাদেশের অনেক তরুণও প্র্যাংক ভিডিও তৈরি করে থাকেন। কিন্তু প্র্যাংক ভিডিও বানিয়ে জেলে যেতে হবে এমনটা কে ভেবেছিল। তাইতো মজা করতে গিয়ে এক ইউটিউব চ্যানেলের চার  ব্রিটিশ তরুণকে জেতে হয়েছিল জেলে। মজা করার উদ্দেশ্যে বাস্তবে কোনো কিছু করার ভনিতাকে প্র্যাংক বলা হয়। যারা এই কাজ করে থাকেন তাদের বলা হয় প্র্যাংকস্টার। লন্ডনের সেই ৪ তরুণ ও বাস্তব কিছুই করেছিলেন মজার জন্য। কিন্তু সেটা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যার কারণে রীতিমতো কোট কাচারি এমনকি জেলও খাটতে হয় তাদের। ভিডিওটা ছিল মিথ্যা ডাকাতি ও অপহরণ করা। চ্যানেলের নাম ট্রোলস্টেশন। ইউটিউবে তাদের সাবস্ক্রাইবার আছে ৭ লাখ ১৮ হাজার। চ্যানেলটির প্র্যাংক ভিডিওর জন্য লন্ডনে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

নাম জটিলতায় মামলা

ইউটিউবের নাম কীভাবে ইউটিউব হলো এ তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। নির্মাতাদের কেউ এখনো এ বিষয়ে মুখ খুলেননি। তবে নাম জটিলতায় মামলার মুখোমুখি পড়তে হয়েছিল ইউটিউবের তিন প্রতিষ্ঠাতাকে। জটিলতাটা ছিল ডোমেইন নিয়ে। সেসময় www.utube.com নামে একটা সাইট ছিল। সেটি ছিল মূলত  ইউনিভার্সাল টিউব এর  সংক্ষিপ্ত রূপ। আইটি প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল টিউব অ্যান্ড রোলফর্ম ইকুইপমেন্ট ছিল এই ডোমেনেইর মালিক। কিন্তু ইউটিউব (youtube.com) চালু হওয়ার পর  তাদের সাইটে গিয়ে এতবেশি মানুষ ইউটিউব সার্চ করা শুরু করে যে প্রায়ই ওভারলোড হয়ে যেত। বাধ্য হয়ে ২০০৬ সালের নভেম্বরে মামলাটি করে তারা। অবশ্য পরে তারাই ডোমেইন নাম পরিবর্তন করে www.utubeonline.com রাখে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর