মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

যত জঞ্জাল হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে

মাহবুব মমতাজী

যত জঞ্জাল হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে

হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে কর্দমাক্ত রাস্তা ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদের প্রধান সড়কসহ এ এলাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচেও চলে বিরতিহীনভাবে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ নানা ধরনের যানবাহন। পথচারীরা শুধু অপেক্ষায় থাকে কখন একটু ফাঁক মিলবে ওপারে যাওয়ার। আবার অনেকে হুড়োহুড়ি করে চলন্ত গাড়ির সামনে বা পেছন দিয়ে রাস্তা পার হন। এসব নিত্য দিনের ঘটনার সঙ্গে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের বেহাল দশা নিয়ে সাধারণের অভিযোগের শেষ নেই। যে কারণে চলতে ফিরতে তাদের প্রতি মুহূর্তে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আর পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। পথচারীদের অভিযোগ, রাস্তা পারাপারের পরিকল্পিত ব্যবস্থা না থাকায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে এই এলাকার। এ ছাড়াও ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষ হওয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও নিচের অংশের খানাখন্দ মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। 

পরিবহন শ্রমিকরা জানান, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার মানুষ চলাচল করে থাকে। যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, শ্যামপুর, ডেমরাসহ রাজধানীর পূর্বাংশের মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। আর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতেও এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়। গত আড়াই বছরে ফ্লাইওভারের নিচে এ সড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় অন্তত অর্ধশত মানুষ মারা গেছে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ দক্ষিণ বিভাগ।  যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, কাপ্তানবাজার, দোলাইরপাড়, কাজলা, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবাজার এবং দনিয়া এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সড়কে নেই জেব্রাক্রসিং। বেশিরভাগ সড়কের ওপরের অংশ ভাঙাচুরা আর খানাখন্দে ভরা। আবার ফুলবাড়িয়া থেকে বঙ্গবাজার পর্যন্ত সড়কটির অংশ বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, ঘোড়ার গাড়ি পার্কিং, ঘোড়ার আস্তাবল এবং ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে করে দখল করে রেখেছে অসাধু কিছু গোষ্ঠী। সায়েদাবাদ জনপদ মোড়টি ব্যস্ততম চৌরাস্তা হলেও পথচারীদের পারাপারে ট্রাফিক পুলিশের কোনো তত্পরতা নেই।  যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক সুজন খান জানান, এই এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু পথচারীদের রাস্তা পারাপারে পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই। রাস্তার যে বেহাল পরিস্থিতি, বর্ষায় এটি নর্দমা হয়ে যায়। এটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা হেদায়েত বলেন, এই সড়কটি দিয়ে চলতে জনগণের কষ্ট দেখার কেউ নেই। এখানে ফ্লাইওভার করে আমাদের কী লাভ হলো। নিচের অংশ দিয়ে চলাচলের কোনো ভালো পরিবেশ নেই। আবার আগে আমরা ওভারব্রিজে পার হতাম আর এখন প্রাণটা হাতে নিয়ে পার হতে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার বহুমুখী ফুটওভারব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়। সেই থেকে সায়েদাবাদ জনপদ মোড়ের আন্ডারপাসটি বন্ধ করে দেওয়া হয় ফ্লাইওভার চালুর পর। আর ফ্লাইওভারের জন্য নিচের সড়ক ও ফুটপাথের যেসব এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় সেসব জায়গায় পরবর্তীতে কোনো পরিকল্পিত সংস্কার হয়নি। ফলে অনেক জায়গায় ফুটপাথের অবস্থা বেহাল। এ ছাড়া সড়কে দেওয়া হয়নি জেব্রাক্রসিং। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় দেওয়া হয়নি গতিরোধকও। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত রাস্তা পার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে টিকাটুলী থেকে জয়কালী মন্দির, জয়কালী মন্দির থেকে কাপ্তানবাজারের টোলপ্লাজা পর্যন্তও নেই পথচারীদের রাস্তা পার হওয়ার ব্যবস্থা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিফান নেওয়াজ বলেন, ফ্লাইওভারের ওপর-নিচ দুটিই ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু নিচের অংশগুলোতে দেখা গেছে অপরিচ্ছন্ন, গাড়ি পার্কিং এবং ঘোড়ার আস্তাবলে দখল হয়ে আছে। ফ্লাইওভার হচ্ছে দূরের যাত্রীদের জন্য। আর কাছাকাছি যারা যেতে চান তারা নিচের রাস্তা ব্যবহার করবেন এটিই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে নিচ-ওপর দুটি রাস্তা পরিষ্কার, চলাচলে উপযোগী হতে হবে।

সর্বশেষ খবর