রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বর্ণাঢ্য উৎসব সোহরাওয়ার্দীতে

জিন্নাতুন নূর

বর্ণাঢ্য উৎসব সোহরাওয়ার্দীতে

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই নৌমঞ্চ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

এই যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ জাতীয় সম্মেলন করছে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। সম্মেলন ঘিরে রাজধানীকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছে দলটির নেতা-কর্মীরা। আর মূল সম্মেলনস্থল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল সম্মেলনের প্রথমদিন তথা উদ্বোধনী দিনটি ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঠাসা। টানা কয়েকদিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জমজমাট আয়োজন অতীতের যে কোনো রাজনৈতিক আয়োজনকে ছাপিয়ে গেছে। সম্মেলনস্থল পরিণত হয় একটি উৎসব কেন্দ্রে। এমনকি এই সম্মেলনে প্রযুক্তির ব্যবহারও সবার দৃষ্টি কেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সরাসরি সম্মেলনের সম্প্রচার ছিল ব্যতিক্রমী একটি উদ্যোগ। আগত নেতা-কর্মীদের আপ্যায়নেও ছিল বিশাল আয়োজন। আর রাজনৈতিকভাবেও দলটির ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ পদ কে পাচ্ছেন এবং কর্মপন্থা নির্ধারণে এই সম্মেলন গণমাধ্যমে গুরুত্ব পায়। এই সম্মেলনে আগত রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বিশ্লেষক, আগত দেশি-বিদেশি অতিথি সবাই এই বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রশংসা করেছেন।

সম্মেলনস্থল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছোট-বড় ছবি ছাড়াও সম্মেলনস্থল ছোট-বড় নৌকা, সাদা বক, শাপলা, হরিণ ইত্যাদি কৃত্রিম উপকরণে তৈরি বস্তু দিয়ে সাজানো হয়। বিশেষ করে মঞ্চের সাজসজ্জা, জমকালো সাংস্কৃতিক আয়োজন, অনুষ্ঠানস্থলের ব্যতিক্রমী স্টল ও তথ্যবহুল প্রকাশনা আগতদের দৃষ্টি কেড়েছে। এ ছাড়া গতকাল সম্মেলনস্থলে দলের ইতিহাস নিয়ে যে বর্ণিল প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন তা সবার দৃষ্টি কাড়ে। বঙ্গবন্ধুর ছবি, আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ পথচলার ইতিহাস, শেখ হাসিনার ভোট ও ভাতের জন্য সংগ্রাম ইত্যাদির প্রদর্শনী ছিল উল্লেখযোগ্য।

সকাল ১০টার কিছু পরে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই মঞ্চে উঠে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানালে নেতা-কর্মীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে সম্মেলনস্থল মুখরিত করে তোলেন। নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চে সকালে বেলুন ও সাদা পায়রা উড়িয়ে দুই দিনের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ এ সময় তার পাশেই ছিলেন। এরপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলীয় প্রধান আর দলীয় পতাকা তোলেন সৈয়দ আশরাফ। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় বেজে উঠে জাতীয় সংগীত। সকাল সোয়া ১০টায় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করে মঞ্চের মাঝখানে আসন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় মঞ্চে আরও ছিলেন মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্যাহ, নূহ উল আলম লেনিন ও সাহারা খাতুন।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পরে একে একে গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। উদ্বোধনী ঘোষণার পর ‘আলোর অগ্নিযাত্রা’ শীর্ষক সংগীত ও নৃত্যের সঙ্গে দলীয় সংগীত, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করা হয়। এ অংশ পরিচালনা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় প্রথমেই ‘এখন সময় বাংলাদেশের... এখন সময় আমাদের’ এ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। যা শেষ হয় জয় বাংলা স্লোগানে। এরপর একে একে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’ ইত্যাদি গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশিত হয়।

এরপর শুরু হয় সম্মেলনের মূল পর্ব। দলটির প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের উপস্থাপনায় প্রথমেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এরপর সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর সম্মেলনে উপস্থিত ১২টি দেশ থেকে আসা ৫৫ বিদেশি অতিথিকে পরিচয় করিয়ে দেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। পরিচয়পর্ব শেষে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক বিমান বসু, গোলাম নবী আজাদ, আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত, যুক্তরাজ্যের জেনি রেথবনসহ ১৭ জন বিদেশি অতিথি।

বিদেশি অতিথিদের বক্তব্যের পরই সভাপতির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে সম্মেলন দুই ঘণ্টার জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে কাউন্সিলরা বক্তব্য রাখেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলার পর তা মুলতবি করা হয়। এরপর রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মঞ্চে পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ রবিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে।

এর আগে সকাল ৭টা থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল প্যান্ডেলে আসতে থাকেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেটররা। সকাল ৯টার মধ্যেই কানায় কানায় ভরে ওঠে প্রায় ৩০ হাজার লোকের ধারণক্ষমতার সুবিশাল প্যান্ডেল। প্রধানমন্ত্রী আসার পরও অনেক কাউন্সিলর, ডেলিগেটর ও বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত অতিথিদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্যান্ডেলে জায়গার সংকুলান না থাকায় প্যান্ডেলের বাইরে মাইকের সামনে দাঁড়িয়েই হাজার হাজার নেতা-কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে দেখা যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আগত প্রায় ৩০ হাজার অতিথিকে মধ্যহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয়।

তবে সম্মেলনে আগত নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ‘কে হচ্ছেন দলটির নতুন সাধারণ সম্পাদক’ এটি নিয়ে আলোচনা করেন। আর এই সম্মেলন ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের নিরাপত্তা জোরদারের সঙ্গে সড়কে গাড়ি চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। জানা যায়, সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্য অঙ্গসংগঠনগুলো শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা দায়িত্বে ছিলেন। তারা সম্মেলনস্থলে প্রবেশের সাতটি প্রবেশপথে ৫০টি ইউনিটে ভাগ করে কাজ করেন।

 

সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও অতিথিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও বিকল্পধারার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী     —বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী —বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

সোহরাওয়ার্দী অভিমুখে তৃণমূল নেতা-কর্মীর ঢল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

বিদেশি অতিথিদের একাংশ     —বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

ছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান    —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর