রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঢল নেমেছিল লাখো নেতা-কর্মীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢল নেমেছিল লাখো  নেতা-কর্মীর

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। ঢাকার প্রবেশপথগুলো দিয়ে আসা বেশির ভাগ গাড়িরই গন্তব্য ছিল সম্মেলনস্থল। কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা মূল সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে পারলেও সাধারণ নেতা-কর্মীরা ছিলেন সম্মেলনস্থলের বাইরে। রাজধানীর টিএসসি মোড়, শাহবাগ মোড়, পল্টন মোড়, রমনা পার্ক সড়ক, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন নেতা-কর্মীরা। কোথাও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। স্মরণকালের জাঁকজমকপূর্ণ এ সম্মেলন দেখতে আসা নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ছিল আনন্দের বন্যা। সবার মুখে ছিল কালজয়ী স্লোগান— ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত ব্যানার-পোস্টার ছিল হাতে হাতে। সব মিলিয়ে সম্মেলনের আশপাশে ছিল জনসমুদ্র।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকাগুলো ঘুরে ও বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার রাতেই বাসযোগে সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেন সারা দেশের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিকটবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেন তারা। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে গতকাল সকালে নেতা-কর্মীরা আসতে থাকেন। সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় আসা জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন নেতারা নিজ নিজ সংসদীয় আসনের এমপি ও স্থানীয় শীর্ষ  নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড, গায়ে নানা রঙের গেঞ্জি ও মাথায় নৌকা প্রতীকের ক্যাপ লাগিয়ে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেন। মৎস্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন ফেনীর দাগনভূইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন মামুনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা। একইভাবে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওবায়দুল কাদেরের ছবি নিয়ে অবস্থান নেন রমনা পার্কের সামনে, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছিরের সমর্থকরা হাইকোর্ট মাজারসংলগ্ন এলাকায়, পটুয়াখালীর আ স ম ফিরোজের সমর্থকরা রমনা পার্কের সামনে, ফেনীর নিজাম হাজারীর সমর্থকরা মৎস্য ভবন, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানের সমর্থকরা রমনা পার্কের সামনে; ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও পরিবহন লীগের নেতাদের নেতৃত্বে দোয়েল চত্বর, টিএসসি মোড়ের সামনে অবস্থান নেন হাজার হাজার নেতা-কর্মী। এসব সমর্থক বসে বসে গানের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেন। ব্যান্ড পার্টির গানে গানে মুখরিত হয় পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশ। এ ছাড়া যশোর, খুলনা, শেরপুর, বাগেরহাট, ভোলা, সাতক্ষীরা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, জামালপুর, নেত্রকোনা, জয়পুরহাট, রংপুর, লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, রাজশাহী, বরগুনা, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, নীলফামারী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ সব জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে অবস্থান নেন। বসার জায়গা দখলের প্রতিযোগিতায় ছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির নেতারা। এ নিয়ে বেশ কয়েক স্থানে নেতা-কর্মীদের বিতর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। তবে অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে থাকা নেতা-কর্মীদের খাবার ও পানি নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ ছিল না। সকাল থেকে শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, রমনা পার্কের সামনে, টিএসি মোড়, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট গেটের সামনে সারিবদ্ধভাবে ছিল খাবারভর্তি পিকআপ ভ্যান। দূরদূরান্ত থেকে অংশ নেওয়া কাউন্সিলরদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে নগর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো। একাধিক স্থানে ছিল পানির গাড়ি।

উৎসবমুখর টিএসসি : লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা। সম্মেলনের কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই লোকারণ্য হয়ে ওঠে পুরো টিএসসি এলাকা। তাদের পদচারণে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতা-কর্মীকে পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করতে দেখা যায়। এদিকে কর্মসূচি চলাকালে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করতে না পেরে টিএসসি, হাকিম চত্বর, রমনা কালী মন্দির এলাকা, দোয়েল চত্বরসহ ঢাবি ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান নেন বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মী। সম্মেলনস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য বক্তাদের বক্তব্য শোনেন। সম্মেলনের কারণে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত টিএসসি এলাকা হয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এদিন টিএসসি হয়ে শুধু অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর টিএসসি হয়ে যান চলাচল শুরু হয়। সম্মেলনে আসা নেতা-কর্মীদের সুবিধার্থে টিএসসি এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়। সম্মেলন চলাকালে টিএসসির বিভিন্ন পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে টিএসসি ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ।

লোকারণ্য শাহবাগ : ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলনে আগত নেতা-কর্মীর ভিড়ে লোকারণ্য হয়ে ওঠে শাহবাগ, বাংলামোটর থেকে শুরু করে এলিফ্যান্ট রোড পর্যন্ত এলাকা। ৯টার আগেই লাখো নেতা-কর্মীর উৎসবমুখর পদচারণ দেখা যায়। যানবাহন চলাচল সীমিত হওয়ায় বাংলামোটর, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে নেতা-কর্মীর অধিকাংশই পায়ে হেঁটে আসেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও গন্তব্যে যেতে পড়ে দুর্ভোগে। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে সারা দেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের লাখো নেতা-কর্মীর স্রোত দেখা যায় শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অভিমুখে। রংবেরঙের সাজে আসেন নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কর্মীদের ট্রাকমিছিল সম্মেলনস্থলে যাওয়ার পথে সবার নজর কাড়ে। সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাষণ শুনে শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার নেতা-কর্মী মুগ্ধ হন। আর সম্মেলনে আগত বিদেশি অতিথিদের ভাষণ শুনে হন উজ্জীবিত ও উত্ফুল্ল। তবে দিনভর শাহবাগ এলাকায় আসা নেতা-কর্মীদের মাঝে আলোচনার বিষয় ছিল— কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। নিজ পছন্দের নেতা কোন পদ পেতে পারেন, তার হিসাব-নিকাশ কষতে দেখা গেছে কমবেশি সবাইকে।

সর্বশেষ খবর