রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মাহিন্দ্রার অবিশ্বাস্য উত্থান কাহিনী

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রাক্টর নির্মাণ ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রা গ্রুপ। মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা গাড়ি প্রস্তুতকারী এই প্রতিষ্ঠানটি কৈলাশ চন্দ্র মাহিন্দ্রার হাত ধরে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। মাত্র ১৩ বছরে তিনি অবিশ্বাস্য উচ্চতায় তুলে আনেন মাহিন্দ্রা গ্রুপকে। শুরুর দিকে টাটা স্টিলে কাজ করেন দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা কৈলাশ মাহিন্দ্রা। বর্তমানে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে মাহিন্দ্রা গ্রুপের। গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি এখন ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়েছে নানা দিকে—

তানিয়া তুষ্টি

মাহিন্দ্রার অবিশ্বাস্য উত্থান কাহিনী

যেভাবে গড়েন মাহিন্দ্রা

মাহিন্দ্রার যাত্রা শুরু হয় জিপ তৈরির মাধ্যমে। নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দখল করে বিশ্ববাজার। নতুন পণ্য আবিষ্কারে হয়ে ওঠে অপরের অনুকরণীয়। যার ফলশ্রুতিতে মাহিন্দ্রা আজকের অবস্থানে। মাহিন্দ্রায় প্রথম অটোমোবাইল ব্র্যান্ড যা ভারতে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল বা এসইউভিএস ধারণাকে সংযোজন করে। এই গাড়িগুলো যেকোনো ধরনের ভঙ্গুর রাস্তায়ও সহজে চালানো যায়। শৌখিন ভ্রমণকারীদের কাছে গাড়িটি খুব পছন্দের। এর সঙ্গে মাহিন্দ্রা প্রথম বাজারে আনে বিদ্যুতে চলা দুই চাকার গাড়ি।
তার নাম কৈলাশ চন্দ্র মাহিন্দ্রা। কেসি নামেও তিনি পরিচিত। পাঞ্জাবের লুধিয়ানার একটি গ্রামে ১৮৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন কেসি মাহিন্দ্রা। নয় ভাইবোনের মধ্যে কৈলাশ চন্দ্র মাহিন্দ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারান। এতগুলো ভাইবোনের সংসারে সবার ভরণপোষণের জন্য চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। অপরদিকে সবার লেখাপড়ার খরচ জোটানো পরিবারের জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। তাই বেঁচে থাকার যুদ্ধে নামতে হয় অল্প বয়সেই। এই পরিস্থিতিতে বড় ভাই একটি চাকরি জুটিয়ে নেন। নিজের চাকরির সামান্য আয়ে সংসারের হাল ধরেন কৈলাশ চন্দ্রের বড় ভাই জগদীশ চন্দ্র মাহিন্দ্রা।

সংসারের টানাপড়েন থাকলেও থেমে থাকেনি মেধাবী কৈলাশ চন্দ্রের পড়াশোনা। তিনি লাহোরের সরকারি কলেজ থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। সেখানেই তার পাণ্ডিত্য প্রকাশ পায়। এরপর তিনি ক্যামব্রিজে অনার্স শেষ করেন। ছাত্র অবস্থায় কৈলাশ চন্দ্র হকিতে পারদর্শী ছিলেন।

অনার্স শেষ করে মেসার্স মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানিতে জয়েন করেন।

১৯৪২ সালে কেসি আমেরিকায় ইন্ডিয়া ক্রয় কমিশনের হেড হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।  এরপর সেখানে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। তিন বছর কাজ করার পর ১৯৪৫ সালে কৈলাশ চন্দ্র ইন্ডিয়ায় ফিরে এসে ইন্ডিয়া কোল ফিল্ড কমিটির চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন। এই কাজের পাশাপাশি অটোমোবাইল এবং ট্রাক্টর প্যানেলে যোগদান করেন। কয়লা খনি কমিটিতে তার অবদান প্রশংসা কুড়াতে থাকে। এই সেকশনে তিনি নতুন নতুন পরিকল্পনা প্রয়োগ করতে থাকেন। তার কর্মপরিচালনায় দিনে দিনে বিস্ময়কর উন্নতি অর্জন করতে সক্ষম হয়। তার করা কোল কমিশনের রিপোর্ট ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আগে থেকেই লেখালেখির অভ্যাস থাকায় একই বছর তিনি স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জির জীবনী লিখেন।

এর পর ১৯৪৬ সালে কেসি বোম্বে চলে আসেন। সেখানে এসে বড় ভাই জগদীশ চন্দ্র মাহিন্দ্রার সঙ্গে যৌথভাবে গড়ে তোলেন মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা গ্রুপ। তার সারা জীবনের কাজের দক্ষতা প্রয়োগে গ্রুপটি তৈরি হয়। এরপর দেখা যায় মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ভারতের শিল্পে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়েছে।

কৈলাশচন্দ্রের কর্মজীবনের ঝকঝকে ক্যারিয়ার মূলত বয়সের সঙ্গে শেষ হয়ে যায়নি। তিনি কর্মজীবনের শেষের দিকে এসে গড়ে তোলেন এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান। মাহিন্দ্রার কার্যক্রম চলাকালে তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এবং হিন্দুস্তান স্টিলের ডিরেক্টর পদে কাজ করেছেন। এক কথায় কৈলাশ চন্দ্র গড়ে তোলেন সোনায় মোড়ানো একটি ক্যারিয়ার। এরপর ১৯৬৩ সালে মেধাসম্পন্ন এই লোক পরোলোক গমন করেন। ভারত দোশি ২০০৮ এর এপ্রিল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাহিন্দ্রা গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন। এর পাশাপাশি এই গ্রুপের সিএফও পদেও তিনি আছেন। এর আগে তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর পদে ছিলেন। ভারত দোশি ডিরেক্টর থাকার মেয়াদে গ্রুপের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার নেওয়া উদ্যোগে মাহিন্দ্রা নিজের বিস্তার আরও বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। নতুন করে মার্কেট প্লেস তৈরি করছে। এখন পর্যন্ত মাহিন্দ্রা যেখানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি নতুন করে সেখানে পদচিহ্ন ফেলার ব্যবস্থা করছেন ভারত দোশি। বাড়িয়ে চলেছেন। মাহিন্দ্রার অপর এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব অরুণ নন্দ। তিনি মাহিন্দ্রার রিয়েল স্টেট অ্যান্ড হসপিটালিটি ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। তিনি অলাভজনক সেবামূলক কাজে রেখেছেন অনন্য অবদান। অরুণ নন্দ ব্যক্তিজীবনেও অনেক বেশি প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। ইন্দো ফ্রান্স চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান পদে থেকেছেন। তিনি ইন্ডিয়ার গভর্নিং বোর্ডের মেম্বারও ছিলেন। তার জীবনের সমস্ত কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডি লা লিজিওন ডি অনার পুরস্কারে ভূষিত হন।


মাহিন্দ্রা জিপ গাড়ি দিয়ে আলোচনায় আসেন কৈলাশ চন্দ্র মাহিন্দ্রা

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়

মাহিন্দ্রা গ্রুপ অব কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালে। প্রথমে এটি স্টিল কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ১৯৪৭ সালে তারা জিপ তৈরির কাজ প্রথম শুরু করে। সে বছরই কোম্পানিটি বাজারে গাড়ি নিয়ে আসে। এক বছরের মধ্যে নিজেদের অবস্থান একটি ভালো পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। বর্তমানে এই কোম্পানি অন্যান্য কোম্পানির রোল মডেল হিসেবে অবস্থান করছে। ১৯৯৪ সালে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মাহিন্দ্রা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে। তিনটি ইউএস অ্যাসেম্বলি কারখানার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকা এবং কানাডার ৩৫০ এর অধিক ডিলারকে ট্রাক্টরের জোগান দিতে থাকে। ডিলার ও গ্রাহকদের দেওয়া সেবায় এতটায় সন্তুষ্টি অর্জন করে যে, দিন দিন গ্রাহক ও ডিলারের সংখ্যা বেড়েই চলে।

একইভাবে মাহিন্দ্রা দখল করে চীনের বৃহত্তর বাজার।

মাহিন্দ্রা চীনে পদার্পণ করেছিল ২০০৪ সালে। জিয়াংলিং মোটর কোম্পানি গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মাহিন্দ্রা চায়না ট্রাক্টর কোম্পানি লিমিটেড (এমসিটিসিএল) গঠন করে। পাঁচ বছর পরে মাহিন্দ্রার উন্নয়ন নীতির অংশ হিসেবে অপর এক চাইনিজ ট্রাক্টর প্রস্তুতকারী কোম্পানি, জিয়াং ইয়ানচেং ট্রাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোং লিমিটেড (ইয়ানচেং ট্রাক্টর) এর সঙ্গে নতুন চুক্তিতে আসে। যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় নতুন আয়োজন। কোম্পানির নাম দেওয়া হয় মাহিন্দ্রা ইউয়েদা ইয়েনচেং ট্রাক্টর কোম্পানি লিমিটেড (এমওয়াইওয়াইটিসিএল)। আজ, এমওয়াইওয়াইটিসিএল চায়নার পাঁচটি প্রথম সারির ট্রাক্টর কোম্পানির অন্যতম। ভারতের বাজার ছাড়াও নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের মতো এশীয় দেশগুলোতে ট্রাক্টরের বাজার দখল করে আছে মাহিন্দ্রা। ভালো ট্রাক্টর বলতে এখানে মাহিন্দ্রায় ভরসা। একইভাবে আলজেরিয়া, মরক্কো, মিসর, নাইজেরিয়া, ঘানা, আঙ্গোলা, তিউনিশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ২১টিরও বেশি দেশে অন্যতম বৃহত্তম ট্রাক্টর ব্র্যান্ড মাহিন্দ্রা। দক্ষিণ আমেরিকার চিলি, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, ইক্যুয়েডর এবং আর্জেন্টিনায় মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর প্রচুর পরিমাণে বিক্রয় হয়। ইদানীং পূর্ব ইউরোপের তুর্কি, সার্বিয়া এবং মেসিডোনিয়ায় মাহিন্দ্রা পা রেখেছে। টেকসই এবং স্থায়িত্বের দিক থেকে বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে মাহিন্দ্রার দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কৃষি কাজের এই বাহনটি চাহিদার বিচারে মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেড বৃহত্তম ট্রাক্টর কোম্পানি হিসেবে জনপ্রিয়।


 

১৪ বিলিয়ন ডলারে মাহিন্দ্রা

বিশ্বের নামি-দামি কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাহিন্দ্রা অন্যতম। এক কথায় মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেড আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা। কৈলাশ চন্দ্র মাহিন্দ্রার হাত ধরে মাহিন্দ্রা কোম্পানির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে কোম্পানিটি প্রায় ৫০ বছর পার করেছে। এর সম্পদের পরিমাণও নেহায়েত কম নয়। যাত্রা শুরুর এতগুলো বছর পার করার পরও, বর্তমানে মাহিন্দ্রার বার্ষিক ট্রাক্টর বিক্রয়ের পরিমাণ ২১ হাজার ৪০০। মাহিন্দ্রা গ্রুপ লিমিটেড বর্তমানে সারা বিশ্বেই বিস্তৃত। শুধু ট্রাক্টর ব্যবসায়ই কোম্পানিটি থেমে থাকেনি। ইস্পাত ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও আজকের মাহিন্দ্রা অনেক এগিয়ে। গাড়ি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান তো বটেই মহাকাশ, কৃষি-শিল্প, অটোমোবাইল, নির্মাণ যন্ত্রপাতি, পরামর্শ সেবা, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, খামার সরঞ্জাম, অর্থ ও বীমা, শিল্প যন্ত্রপাতি, তথ্য-প্রযুক্তি, অবসর এবং আতিথেয়তা, সরবরাহ হিসেবে শিল্পে পরিচালনা রিয়েল এস্টেটসহ অসংখ্য সেবামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাজে তাদের উপস্থিতি রয়েছে। ভারতের অর্থনীতিতে মাহিন্দ্রার পদচারণা প্রশংসার দাবিদার। ভারতের কৃষক ও সাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আজকের মাহিন্দ্রার ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। ভারতের গাড়ি ব্যবসায় বর্তমানে ইউরোপের বাজার ধরতে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা বর্তমানে বিদ্যুত্চালিত গাড়ি উদ্ভাবনে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। কোম্পানির হালকা বাণিজ্যিক যানবাহন ও ভারী বাণিজ্যিক যানবাহন ভারতের শ্রমসাধ্য, নির্ভরযোগ্য, পরিবেশবান্ধব এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়াতে গোটা বিশ্বে এর গাড়ির ব্যাপক চাহিদা। মাহিন্দ্রা গ্রুপের রিয়েল এস্টেট পরিচালনায় রয়েছে মাহিন্দ্রা রিসার্চ ভ্যালি, কম্পিউটার সহযোগী ইঞ্জিনিয়ারিং ও নকশার ওপর মনোনিবেশ করে। তাদের নতুন এসব প্রজেক্টে রয়েছে নন্দনতত্ত্ব, স্টাইল, ধারণা, প্যাকেজিং, নকশা ও উন্নয়ন, ভার্চুয়াল ভ্যালিডেশন, প্রটোটাইপিং এবং পরীক্ষার সব বিবরণ। মাহিন্দ্রা রিয়েল এস্টেট সাধারণের কথা চিন্তা করে ২০ লাখ রুপিতে ফ্ল্যাট বিক্রির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। যার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মাহিন্দ্রা মুম্বাইয়ের ভারতীয় সদর দফতর। আনন্দ মাহিন্দ্রা কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ভারতের বাজারে শীর্ষস্থানীয় ধনকুবেরের মধ্যে আনন্দ মাহিন্দ্রা অন্যতম। তাকে ভারতের সবচেয়ে স্বনামধন্য শিল্পপতি বলে বিবেচনা করা হয়। আনন্দ মাহিন্দ্রা বর্তমানে ভারতের বৃহত্তম গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান কোটাক ব্যাংক, সর্ববৃহৎ অবকাশ মালিকানা কোম্পানি এবং পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় আইটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ বিশ্বের নামি ম্যাগাজিনগুলোতে উঠে এসেছে মাহিন্দ্রা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম। মাহিন্দ্রা গ্রুপের ব্যবসা বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে বিস্তৃত। আর এসব প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। মাহিন্দ্রা গ্রুপে বিশ্বের এক লাখ ৪৪ হাজার কর্মী কর্মরত আছে। বিশ্বজুড়ের বিস্তৃত এ কোম্পানিটি সম্পদের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। অসংখ্য ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত মাহিন্দ্রার ব্যবসা দিনের পর দিন মানুষের নজর কাড়ছে।

আমাদের দেশেও মাহিন্দ্রার পদচারণা বেশ প্রশংসিত। মাহিন্দ্রার এ অর্জন আধুনিক ভারতের অর্থনীতি তো বটেই, বিশ্ব অর্থনীতিতেও সরাসরি ভূমিকা রাখছে।


 

মাহিন্দ্রা স্করপিও এনে আলোচনায় এসেছে

মাহিন্দ্রার যত পণ্য

মাহিন্দ্রা ট্রাক্টরগুলো এখন সম্পূর্ণ নতুন এমকেএম সিরিজের ইঞ্জিনের সঙ্গে এসেছে, যা আরও বেশি জ্বালানি-সাশ্রয়ী।  ট্রাক্টর ছাড়াও মাহিন্দ্রার রয়েছে বিভিন্ন রকম গাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে মাহিন্দ্রা স্করপিউ। ইউরোপের দেশগুলোতে একে মাহিন্দ্রা গোয়া নামে ডাকা হয়। ফোর হুইল ড্রাইভের গাড়িটি ২০০২ সালে প্রথম বাজারে আসে। মাহিন্দ্রা স্করপিউ গেটওয়ে মাহিন্দ্রার আরও একটি গাড়ি। এটি দুটি মডেলে পাওয়া যায়। একটি হলো পাঁচ সিট ও চার ডোরের অন্যটি হলো দুই সিট এবং দুটি ডোরের। মাহিন্দ্রার আরও একটি গাড়ি হলো মাহিন্দ্রা বলেরো। আর ২০১১ সালে আসে মাহিন্দ্রার আরও একটি ব্র্যান্ড এক্সইউভি-৫০০। এটি স্পোর্ট ইউটিলিটি বাহন। এ ছাড়া মাহিন্দ্রার ডেসিকা লোগান তৈরি হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে। ২০০৪ সালে প্রথম বাজারে আসার পর এখনো বিশ্বের বাজার দখল করে আছে।

মাহিন্দ্রা রিভা বিদ্যুত্চালিত গাড়িটি ২০১৩ সালে প্রথম বাজারে আসে। জ্বালানি স্বল্পতার কারণে গাড়িটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়াও মাহিন্দ্রা গ্রুপের মাহিন্দ্রা জুলো, মাহিন্দ্রা ভেরিটো, মাহিন্দ্রা কেইউভি-১০০, মাহিন্দ্রা ভেরিটো ভাইভ ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি গোটা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।


 

ট্রাক্টর নির্মাণে আধুনিকায়ন দিয়ে চমক দেখায় মাহিন্দ্রা

গবেষণা, শিক্ষা ও উন্নয়ন

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মাহিন্দ্রা নানা ধরনের বিকাশ-ধর্মী কাজ সম্পন্ন করে থাকে। তাদের গবেষণার কাজ পরিচালনায় রয়েছে মাহিন্দ্রা রিসার্চ ভ্যালি, কম্পিউটার সহযোগী ইঞ্জিনিয়ারিং ও নকশার ওপর মনোনিবেশ করা। তাদের কাজের মধ্যে আরও রয়েছে  নন্দনতত্ত্ব, স্টাইল, ধারণা, প্যাকেজিং, নকশা ও উন্নয়ন, ভার্চ্যুয়াল ভ্যালিডেশন, প্রটোটাইপিং এবং পরীক্ষার সব বিবরণ। এসব কার্যক্রম বাজারে নতুন পণ্য আনা, তার মান নির্ধারণ, উন্নয়নের নির্মাণ পরীক্ষণ, গবেষণা এবং মূল্যায়ন সময় হ্রাস করে। মাহিন্দ্রা রিসার্চ ভ্যালি এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। এ গবেষণা সংস্থাটিই ভারতের অত্যাধুনিক এবং কোর আর অ্যান্ড ডি সেন্টার। এর চমৎকার সিকিউরিটি সিস্টেম সবাইকে মুগ্ধ করে। মাহিন্দ্রা রিসার্চ ভ্যালিতে ছবি তোলা একেবারেই নিষেধ। গেট পাস নিয়ে আপনি যদি এখানে প্রবেশ করেন তবে প্রথমেই আপনার মনে হবে আপনি বুঝি কোনো এয়ারপোর্টে চলে এসেছেন। রিসিপশনে দেখতে পাবেন কাট আউট মডেলের একটি এক্সইউভি ৫০০ এবং এর পাউয়ার ট্রেইন এসেম্বল। মাহিন্দ্রা রিসার্চ ভ্যালি অনেকগুলো অংশে বিভক্ত। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এর সব কার্যক্রম। সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ চলে এখানে। ভারতের চেন্নাইয়ে ১২৫ একর জমির ওপর তৈরি হয়েছে এই সংস্থা। এখানে প্রায় ১৫০০ প্রকৌশলী ও ডিজাইনার একসঙ্গে কাজ করেন। ২০০৮ সালে শুরু হয় মাহিন্দ্রা ওয়ার্ল্ড স্কুল। এখানে প্রায় ৬৫ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সাড়ে ৮০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। ২০১২ সালে স্কুলটি ন্যাশনাল সেনিটেশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।


 

মাহিন্দ্রা ওয়ার্ল্ড সিটি

মাহিন্দ্রার পরিসেবা

ভারতবর্ষের মাহিন্দ্রা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ট্রাক্টর বাজারের দখলদার। বিশ্ববাজারের প্রায় ৪২ শতাংশ ট্রাক্টরই মাহিন্দ্রা এবং স্বরাজ ব্র্যাওন্ডর। নিজেদের ব্যবসায় মাহিন্দ্রা শুধু মুনাফা অর্জনে কাজ করে না। গড়েছে হাসপাতাল ও ওয়ার্ল্ড সিটি। তবে বেশি আলোচনায় এসেছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর নির্মাণ করে। মাহিন্দ্রার নানা ধরনের সেবার মধ্যে রয়েছে কৃষি-প্রযুক্তি উন্নীতকরণ, মাহিন্দ্রা অ্যাপ্লিট্রাকের অধীন কৃষি-যান্ত্রিক সমস্যা সমাধান, নানা ধরনের তথ্যসেবা প্রদান।  বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি, ফসল সুরক্ষা, বাজার-জাতকরণ এবং সমৃদ্ধি অর্জনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সামগ্রিক গ্রামীণ উৎপাদনে এ পদ্ধতি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তাদের উপার্জন এবং জীবনধারার উন্নয়নেও এসব প্রশিক্ষণের রয়েছে দারুণ সফলতা। কৃষিবিষয়ক কঠিন কাজকে সহজ করে মুনাফা বাড়াতেও সাহায্য করে। মাহিন্দ্রার কৃষি যন্ত্রপাতি এবং পরিসেবাগুলো কৃষকদের উন্নতিতে সাহায্য করে আসছে।


 

মাহিন্দ্রাই সেরা

মাহিন্দ্রা প্রথম এবং একমাত্র কোম্পানি যারা জাপান কোয়ালটি মেডেল এবং ডিমিং অ্যাপ্লিকেশন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। মাহিন্দ্রায় গুণমানে প্রাধান্য পায় বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র ট্রাক্টর প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে।

জাপান কোয়ালিটি মেডেল (জেকিউএম) জিতে প্রমাণ করেছে তাদের কর্মদক্ষতা। এই পুরস্কারটি মূলত সারা বিশ্বে একটি কোম্পানির সব কাজের কোয়ালিটি যাচাই করে সর্বোচ্চ রূপে সম্মানিত করে। জেকিউএম একটি উচ্চ পর্যায়ের গ্রাহক লক্ষ্যে, সামগ্রিক গুণগত মানের উন্নতি এবং ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার উৎকর্ষতাকে স্বীকৃতি দেয়। এ ছাড়াও মাহিন্দ্রা বিশ্বের প্রথম ট্রাক্টর কোম্পানি, ২০০৩ সালে গুণ-মানের উৎকর্ষতার জন্য ডিমিং অ্যাপ্লিকেশন পুরস্কার জিতে। একমাত্র ট্রাক্টর প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে উভয় পুরস্কার জেতার এটিও আরেকটি নজির। এদিক থেকেও মাহিন্দ্রা কোম্পানি সেরার সম্মান অর্জন করেছে।


 

এক নজরে

প্রতিষ্ঠাতা কৈলাশ চন্দ্র মাহিন্দ্রা।

বর্তমান চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্রা।

মাহিন্দ্রার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

বিশ্বের ১০০ দেশে মাহিন্দ্রার ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি লোক কর্মরত রয়েছে।

মাহিন্দ্রার নতুন পরিকল্পনা মহাকাশ গবেষণা।

মহাকাশ, কৃষিশিল্প, অটোমোবাইল, নির্মাণ যন্ত্রপাতি, পরামর্শ সেবা, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, খামার সরঞ্জাম, অর্থ ও বীমা, শিল্প যন্ত্রপাতি, তথ্য-প্রযুক্তি, অবসর, আতিথেয়তা এবং রিয়েল এস্টেট

বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র ট্রাক্টর প্রস্তুতকারী কোম্পানি জাপান কোয়ালিটি মেডেল জেকিউএম অর্জন করে।

সর্বশেষ খবর