বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

১০ টাকার চালের কাঙাল জমিদার বিত্তবান

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামের সিকদার পাড়ার জোহরা বেগম (৬০)। তার স্বামী মীর আবদুল আলীম বিপুল পরিমাণ জমির মালিক। এলাকায় তারা জমিদার পরিবার হিসেবে পরিচিত। তিন ছেলের মধ্যে দুজন ওমান প্রবাসী, একজন একটি কলেজে চাকরি করেন। 

একই ইউনিয়নের মো. আরিফ (১৮)। পড়েন একটি কলেজে। প্রায় ৪০ কানি জমির মালিক তার পিতা মো. আমিনুল হক। অপর দুই ভাই করেন বালুর ব্যবসা। এভাবে বিত্তবান ও জমিদার পরিবারের সদস্যরা পাচ্ছেন গরিব, অসচ্ছল এবং দুস্থদের নামে বরাদ্দ ১০ টাকার চাল। তালিকায় আছেন প্রবাসী, ব্যবসায়ী, সরকার দলীয় সমর্থক ও বহুতল ভবনের মালিকরাও।  

একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ পাওয়া সরকার সমর্থক ডিলাররা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ১০ টাকার চাল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি ও ওজনে কম দেওয়ার। এ ব্যাপারে গ্রাহকরা অভিযোগ করলে তাদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয় বলে জানা যায়। পটিয়া উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নে গত ৩০ সেপ্টেম্বর মেসার্স হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের এক ডিলারের বিরুদ্ধে প্রতিজনকে ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৪-২৫ কেজি করে চাল দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এ সময় এলাকার লোকজন উত্তেজিত হলে এক পর্যায়ে বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। ফটিকছড়ির দাতমারা ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকার ডিলার ফারুকের গোডাউন থেকে এনাম সওদাগরের দোকানে বিক্রি এবং ১০০ বস্তা গরমিল পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে ফারুকের ডিলারশিপ বাতিল ও তার দুটি গোডাউন সিলগালা করে উপজেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুল আলম বলেন, তাড়াহুড়া করে তালিকা করায় কোনো কোনো উপজেলায় কিছুটা ভুল-ত্রুটি হয়েছে। এসব বিষয়ে অভিযোগও আসছে। তবে প্রথম ধাপের পর এসব ত্রুটি সংশোধন করে নতুন তালিকা প্রকাশ প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, ওজনে কম দেওয়া, নাম ভুল করাসহ অন্য কোনো অনিয়ম দেখা দিলে কিংবা অভিযোগ পেলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফটিকছড়ির একজনের ডিলারশিপ বাতিল ও গোডাউন সিলগালা করা হয়। তা ছাড়া অভিযোগ পেলে ওই ডিলারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, সরকারি কোনো দফতরে কাজ করতে না পারার মতো কালো তালিকাভুক্ত করাসহ শাস্তিমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম আছে। চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকার ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ (ইউনিয়ন পর্যায়) প্রকল্প নামে গরিব, দুস্থ, অসহায় ও বিধবাদের জন্য প্রতিকেজি ১০ টাকা মূল্যে চাল বিতরণের কর্মসূচি শুরু করে। সারা দেশে ৫০ হাজার পরিবারকে এ চাল দেওয়া হবে। চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় ৮০ হাজার ৬৯২টি পরিবারকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে ১২ হাজার ৭২০টি পরিবার, পটিয়ায় ৪ হাজার ৬১২টি, আনোয়ারায় ৩ হাজার ৩১৪টি, বাঁশখালীতে ১৩ হাজার ৩৩৬টি, বোয়ালখালীতে ১ হাজার ৬৪১টি, সাতকানিয়ায় ৭ হাজার ৬৪৫টি, লোহাগাড়ায় ৬ হাজার ১০২টি, হাটহাজারীতে ১ হাজার ৪০৯টি, সন্দ্বীপে ৯ হাজার ১৯৪টি, রাউজানে ৩ হাজার ৬৪১টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৬ হাজার ১৪২টি, চন্দনাইশে ৩ হাজার ৬১৬টি ও সীতাকুণ্ডে ১ হাজার ৩৬টি। চট্টগ্রামে মোট ডিলার ২৩৪ জন। প্রতি সপ্তাহে শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার চলা এ কর্মসূচি চলবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং আগামী বছরের মার্চ ও এপ্রিলে।

সর্বশেষ খবর