শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মার্কিন নির্বাচনে সিআইএ এফবিআই

তানভীর আহমেদ

মার্কিন নির্বাচনে সিআইএ এফবিআই

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। দেশে দেশে সিআইএর ভূমিকা নিয়ে রয়েছে রহস্য। মার্কিন নির্বাচন ও সরকারের ভাগ্য বদলেও তাদের প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরাসরি তাদের হস্তক্ষেপ না থাকলেও পর্দার আড়ালে তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটাই কুয়াশাচ্ছন্ন। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বরাবরই তাদের ভূমিকা নিয়ে আলাদা করে হিসাব কষে থাকেন।

 

সিআইএর ইশারায় ডুবেছে যারা

আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। গোপনীয়তার দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি। তাদের ইশারা বোঝার সাধ্য নেই কারও। বিশ্বজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক ছড়ানো। নজরদারি, তথ্য সংগ্রহ আর রাজনৈতিক পালাবদলে বরাবরই সিআইএর ভূমিকা আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে। বিশ্বজুড়ে সরকার পরিবর্তনে তাদের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের শঙ্কা যোগ হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই যা বলা হলো— তাদের ইশারা বোঝার সাধ্য নেই। সিআইএকে শুধু দোষারোপ করেই কথা থামাতে হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানের নকশাকারী হিসেবে শুধু দোষারোপই করা হয়েছে তাদের, হাতেনাতে মিলেনি কিছুই। বিশ্বব্যাপী যাদের নিয়ে এ কথা চাউর হয় তারা নিজ দেশের রাজনীতি ও সরকারের পালাবদলে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ও প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রাখেন না—এমনটা ভাবতে নারাজ বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের অনেকেই কেলেঙ্কারিতে ডুবেছেন।

ক্ষমতা তো হারিয়েছনই, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও হারিয়েছেন।

এই কেলেঙ্কারিগুলোর পেছনে সিআইএর কারসাজি থাকতে পারে এমন শঙ্কা অনেকেই করে থাকেন। শক্ত কোনো প্রমাণ না থাকায় এসব শুধুই অভিযোগ আর আশঙ্কাতেই সীমাবদ্ধ। আর কৌশলী সিআইএ সব সময় সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজের অবস্থান অটুট রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কেলেঙ্কারির তালিকায় ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কথা চলে আসে সবার আগে।

প্রেসিডেন্ট নিক্সন যেন অভিযোগের সমুদ্রতলে চাপা পড়েন এই কেলেঙ্কারির কবলে পড়ে। ১৯৭০-এর দশকের যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি পেছনে সিআইএর ভূমিকা নিয়ে বেশ জোরেশোরে কথা ওঠে। ১৯৭২ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযান চলাকালে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল ও প্রশাসনের ৫ ব্যক্তি ওয়াশিংটন ডিসির ওয়াটারগেট ভবনের বিরোধী ডেমোক্রেট দলের সদর দফতরে আড়িপাতার যন্ত্র বসায়। নিক্সনের প্রশাসন এই কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ভয়াবহ এই নির্বাচনী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। বসে থাকেনি এফবিআই। তারা প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রচারণার কাজে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের পুনরায় নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটির সংশ্লিষ্ঠতা খুঁজে পায়। ডোবেন নিক্সন। এ ছাড়া প্রচ্ছন্নভাবে সিআইএ-কে দায়ী করা হয় কেনেডির রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেও। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম রাষ্ট্রপতি জন এফ. কেনেডি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাত্র তিন বছর পর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

মার্কিন সরকারি তদন্তে কেনেডি হত্যার জন্য সাবেক মেরিন সেনা অসওয়াল্ডকে দায়ী করা হলেও এ হত্যারহস্য এখনো পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি। কারণ দুদিন পরেই জ্যাক রুবি নামক একজনের গুলিতে হার্ভি নিহত হয়। কেউ কেউ বলেন, মার্কিন সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি মহল এ ভয়াবহ কাজে সহায়তা করেছে।

উল্লেখ্য, তার ছোটভাই রবার্ট এফ কেনেডিও পরবর্তীতে গুপ্তহত্যার শিকার হন। ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রার্থী হওয়ায় আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন।

এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে ইরান-কন্ট্রা কেলেঙ্কারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান পুরোপুরি ফেঁসে যান। ইরানে অস্ত্র বিক্রির টাকা নিকারাগুয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের পর বিচার প্রক্রিয়াও চলে। সে সময় প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের পুরো প্রশাসন এতে বেকায়দায় পড়ে। এত বড় কেলেঙ্কারিতে পড়ে রিগ্যান কার্যত অসহায় হয়ে পড়েন। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের পেছনেও সিআইএর কারসাজি থাকতে পারে—এমন প্রশ্ন ওঠে।

 

এফবিআইয়ের তোপে নাকাল হিলারি

ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে এবার মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন হিলারি ক্লিনটন। সাবেক ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সবচেয়ে বেশি নাস্তানাবুদ হচ্ছেন তার ই-মেইল কেলেঙ্কারির কারণে। রাষ্ট্রীয় সার্ভার ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ই-মেইল পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ ভালোভাবে নেয়নি মার্কিন জনগণ। এরই মধ্যে ট্রাম্প এ বিষয়টিকে পুঁজি করে ভোটের পাল্লাভারী করার চেষ্টা করছেন তখন নাটকের মঞ্চে নেমেছে এফবিআই। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র ১১ দিন আগে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের বিষয়টি পুনঃতদন্তের ঘোষণা দিয়ে ভোটারদের একরকম দ্বন্দ্বে ফেলে দিয়েছে এফবিআই। এদিকে নিজেকে নিরপরাধ দাবি করেও হিলারি কার্যত সুবিধা করতে পারছেন না। এফবিআইয়ের এই ভূমিকায় রীতিমতো হতবাক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এফবিআইয়ের এই চাল হিলারিকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। তার ফলাফলও হাতে এসে গেছে। বহু হিলারি ভক্ত মিডিয়াকে বলছেন, তারা শেষ মুহূর্তে এসে সিদ্ধান্ত বদলানোর চিন্তা করছেন। অনেকে বলছেন, ভোটই দিতে যাবেন না। নির্বাচন-পূর্ব জরিপগুলোতে হুট করেই পিছিয়ে পড়তে শুরু করেন হিলারি।

অবশ্য বর্তমানে দৃশ্যপট যেভাবে বদলাচ্ছে তার পেছনে এফবিআইয়ের হুট করেই হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত চালু করা বড় ভূমিকা রয়েছে। ঘটনা শুরু এ বছরের জুলাইয়ে। এফবিআই পরিচালক কোমি জানান, ২০০৯-১৩ মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন হিলারি ক্লিনটন অসতর্কভাবে বেশ কিছু গোপন তথ্য আদান-প্রদান করেন। যা অপরাধমূলক কাজ। মূলত ফেডারেলের আইন ভঙ্গ করে নিজের ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করে হিলারি এসব কাজ করেছিলেন। এরও আগে ২০১৫ সালে প্রথম এ অভিযোগটি উঠলেও তখন তদন্তের পর গুরুতর কিছু পাওয়া যায়নি বলে এফবিআই জানিয়েছিল। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না আনার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। কিন্তু নির্বাচনের আগে হুট করেই এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি বললেন, তদন্তকারীরা হিলারির মেইলগুলোতে কোনো বিশেষ তথ্য আছে বা কোনো বিশেষ বার্তা বহন করে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন। এফবিআই ইতিমধ্যে ডেমোক্রেট প্রার্থীর ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভারে বেশকিছু স্পর্শকাতর তথ্য পেয়েছে।

এফবিআই পরিচালকের হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি নিয়ে কথা বলায় নির্বাচন-পূর্ব মুহূর্তে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে—এটি সহজেই বোঝা যাচ্ছে। প্রচ্ছন্নভাবে ইতিমধ্যে নড়বড়ে অবস্থায় পড়েছেন হিলারি। হিলারি ভক্তদের কাছে এফবিআই পরিচালকের এই বার্তা বড় ধরনের ধাক্কার মতো লেগেছে। যে কারণে হিলারি চুপ নেই। তিনি গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে ডেমোক্রেটদের ই-মেইল তদন্ত করার নামে এফবিআই নির্বাচনে জড়িয়ে পড়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এফবিআই প্রধান আইন ভেঙেছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগে ঝড় তুলেছেন এফবিআই প্রধান।

 

হলিউড ইলেকশনিয়ারিং !

নেপথ্যে সিআইএ এফবিআই?

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের খবর শোনার জন্য বিশ্ববাসী মুখিয়ে রয়েছেন। প্রতিদিনই হচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়ার করা জনমত জরিপ। এই জরিপগুলো কতটা নিরপেক্ষ এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে। মিডিয়াগুলোর পক্ষাবলম্বন তো রয়েছেই সঙ্গে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কারসাজি। বহু বছর ধরে এ নিয়ে সমালোচনা হলেও সিআইএ বা এফবিআইয়ে দোষারোপ করার মতো কোনো প্রমাণ কিন্তু কারও হাতেই নেই। এরই মধ্যে হিলারি-ট্রাম্পের তিন ধাপের বিতর্ক শেষে এখন মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রে রয়েছে এই জনমত জরিপগুলো। সর্বশেষ তিনটি মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের জরিপের একটিতে ৬ শতাংশ, একটিতে ৫ শতাংশ এবং অন্যটিতে ৩ শতাংশ ভোটে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছেন হিলারি। এর আগে প্রায় প্রতিটি জরিপে এগিয়ে ছিলেন হিলারি। কিন্তু এফবিআই পরিচালকের হুট করেই হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি আবার তদন্তের কথা বললে দৃশ্যপট বদলে যায়। জনমত জরিপে এগিয়ে আসতে শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষে এবিসি-ওয়াশিংটন পোস্টের চালানো জরিপে হিলারিকে এক পয়েন্টে পিছিয়ে এগিয়ে যান ট্রাম্প। আর সেই জরিপের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা দলের কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পরপরই আবারও আলোচনায় চলে আসে হলিউড ইলেকশনিয়ারিং কথাটি। আমাদের দেশে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা কারচুপির অভিযোগের মতো গুরুতর ব্যাপার এটি। বিভিন্ন মার্কিন মিডিয়া এরই মধ্যে তাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। প্রথমসারির মিডিয়াগুলো হিলারিকে সমর্থন দিচ্ছে বলে হলিউড ইলেকশনিয়ারিংয়ের কথা চাউর হলো।

 

ট্রাম্পকেও ইশারা সিআইএর

মার্কিন নির্বাচনে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ না থাকলেও তাদের প্রচ্ছন্ন প্রভাব অজানা নয় কারও। হিলারিকে এফবিআই শেষ মুহূর্তে ডোবাবেন বলে অনেকে মত দিলেও ট্রাম্প কিন্তু একেবারে আরাম কেদারায় বসে নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটারদের জানালেন, তিনি জয়ী হলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বাতিল করা ওয়াটার বোর্ডিংসহ আরও অনেক খারাপ জেরার পদ্ধতি আবারও চালু করবেন। কিন্তু সিআইএর পরিচালক জন ব্রেনান বললেন, উল্টো কথা। তিনি বলেছেন, নতুন প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দিলেও সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের ‘ওয়াটার বোর্ডিং’সহ তথাকথিত ‘প্রবলতর জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল’ আর ব্যবহার করা হবে না।

সিআইএ প্রধানের এমন মন্তব্য আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ভালো রকম ইঙ্গিত বলেই বিশ্লেষকরা মানছেন।

 

ছাড় নেই কারও

বিভিন্ন সময় গুজবের আদলে বহু উড়ো কথা ভেসে আসলেও মার্কিন রাজনীতিতে সিআইএ বরাবরই ডার্ক হর্স। জনসম্মুখে তাদের নিয়ে অভিযোগের যত কথামালা সাজানো হোক না কেন, প্রশাসনিক বিচারের উদাহরণ এলে সেটা হাওয়ায় উবে যায়। আর সিআইএ সে কারণেই সব অস্বীকার করে অহেতুক দোষারোপের কথাই বলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু মার্কিন সরকারের পালা বদলেই সিআইএ এবং এফবিআই প্রধানদের ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায়। গত বছর উইকিলিকস সিআইএ প্রধান ব্রেনানের কিছু ই-মেইল ফাঁস করে দিলে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। এর আগে ২০১২ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর পদমর্যাদার সাবেক নারী কর্মকর্তা পলা ব্রডওয়েলের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর সাবেক জেনারেল পেট্রাউস সিআইএর প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবার নির্বাচনের আগে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি তদন্তের কথা বলে এফবিআই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ এনেছে ডেমোক্রেটরা। আইন ভঙ্গ করেছেন তিনি, এই অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন এফবিআই প্রধান।

 

 দেশে দেশে সিআইএর কত কাহিনী

সিআইএ-কে নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনা হয়েছে। বিভিন্ন অভ্যুত্থান, হত্যাকাণ্ড ও সরকারের পালাবদলে তাদের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সমালোচক, লেখক ও ঐতিহাসিক উইলিয়াম ব্লাম একটি বই লিখেন। বইটি সারা বিশ্বে ব্যাপক সমাদৃত হয়। বইটির নাম ‘কিলিং হোপ : ইউএস মিলিটারি অ্যান্ড সিআইএ ইন্টারভেনশনস সিন্স ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’। ১৯৪৮ সালে গোপন কার্যক্রমের জন্য একটি নতুন শাখা তৈরি করে সিআইএ। এরপর থেকেই মূলত সিআইএ আরও সংগঠিত হয়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে আসছে—এমনটাই ধারণা করা হয়। ১৯৫৩ সালে ইরানের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিআইএ সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে। ১৯৫৮ সালে গুয়াতেমালায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিআইএ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জ্যাকব আরবেঞ্জকে উত্খাত করে বলে মনে করা হয়। একইভাবে ধারণা করা হয়, ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত লাওসের গণতান্ত্রিক নির্বাচন বাতিল করতে প্রায় প্রতি বছর একটি করে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করত সিআইএ। ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলে সিআইএ সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার জোয়াও গৌলার্ত। ১৯৭৩ সালে চিলিতে আমেরিকার প্রথম নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক নেতা সালভেদর এলেন্ডেকে উত্খাত করার পর হত্যার অভিযোগ ওঠে সিআইএর বিরুদ্ধে। কুয়েত থেকে ইরাককে স্বাধীন করার পেছনেও তাদের হাত রয়েছে। ব্লামের বইটিতে এ ছাড়াও ১৯৯২ সালের দিকে সিআইএ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি শুরু করেছে বলে প্রকাশ পায়।

সর্বশেষ খবর