সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কত কাহিনী

তানভীর আহমেদ

যত কেলেঙ্কারি

আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের কেলেঙ্কারির হিসাবের খাতা খুললে বেশ ভারী হবে। বহু কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে তারা প্রেসিডেন্সি পদ হারিয়েছেন, দেশের জনগণের কাছে হারিয়েছেন জনপ্রিয়তা। তবে রাষ্ট্রীয় কেলেঙ্কারি ছাড়াও অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগত প্রেম, যৌনতা, নারী নির্যাতনে জড়িয়ে খুইয়েছেন সব। শুরুতেই বলা যায়, থমাস  জেফারসনের কথা। স্যালি হেমিংস নামে একজন মিশ্র জাতিগত ক্রীতদাসের সঙ্গে জেফারসনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। স্যালি জেফারসনের স্ত্রীর সেবান ছিলেন। জর্জ ডাব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার গুজব ছিল। ২৯তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি হার্ডিংয়ের সঙ্গে ক্যারি ফুলটন ফিলিপস নামে এক নারীর ১৫ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ক্যারি ফুলটন প্রেসিডেন্টের বন্ধুর স্ত্রী ছিলেন। ৩৪তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে তার ড্রাইভার সামার্সবির যৌন সম্পর্ক ছিল। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ছয় বছর পরে তিনি (ড্রাইভার) একটি বইতে এ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। জন এফ কেনেডি ও হলিউডের তারকা মেরিলিন মনরোর প্রেম কাহিনী তো বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এমনকি বলা হয়ে থাকে কেনেডির জন্যই মেরিলিন আত্মহত্যা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সারা জীবন ধরে এমন একজন নারীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যিনি তার স্ত্রী এলেনর রুজভেল্টের সেক্রেটারি ছিলেন। লুসি মার্সার এবং রুজভেল্টের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ১৯১৬ সালে। ১৯১৮ সালে মার্সারের স্যুটকেসে এক প্যাকেট প্রেমপত্র পান রুজভেল্টের স্ত্রী। যদিও পরবর্তীকালে তিনি স্বামীকে বিবাহবিচ্ছেদের প্রস্তাব করেন কিন্তু এ দম্পতি আর বিচ্ছেদের পথে যায়নি। ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের সঙ্গে বিক্রয়কর্মী মারিয়া হালপিনের  প্রেমের খবর প্রকাশ করে একটি পত্রিকা। পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণেরও অভিযোগ তোলা হয়। বিল ক্লিনটন ও মনিকা লিউনস্কির প্রেম কেলেঙ্কারি হয়তো সব মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারির মধ্যে সবচেয়ে আলোচনামুখর। যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম এ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কিকে জড়িয়ে কেলেঙ্কারির কাহিনী জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। মার্কিন ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা। এখন যখন তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন, তখনো তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারিকে ধরাশায়ী করার জন্য বিল ক্লিনটনের যৌন কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে ধরছেন। ৩৬তম মার্কিন  প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে মেডেলিন ব্রাউন নামে একজন নারীর সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক ছিল বলে গুজব রয়েছে।

 

যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট

বিশ্বজুড়ে মার্কিনিদের আগ্রাসনের জন্য যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট বলাই যায়। সোয়া দুইশ বছরের ইতিহাসে অসংখ্য যুদ্ধ রচনা করেছেন তারা। মার্কিন ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস।  রোনাল্ড উইলসন রিগ্যান ৪০তম মার্কিন  প্রেসিডেন্ট। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত শাসনামলে প্রথম আগ্রাসনের শিকার লেবানন। ১৯৮৩ সালে গ্রানাডা এবং ১৯৮৬ সালে বার্লিনের ডিস্কোভারে বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ায় হামলা চালান তিনি। এরপর ৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত বুশের আগ্রাসন বিশ্ববাসী দেখেছে। ক্ষমতার প্রথম বছরেই পানামা, এরপর ১৯৯১-তে ইরাকে হামলা চালানো হয়। ১৯৯২-এ সোমালিয়ায় হামলা চালান। এরপর মার্কিন ৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ক্ষমতার প্রথম বছরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অজুহাতে ইরাকে হামলা চালান। একই সালে সোমালিয়ায় এবং পরের বছর হাইতি ও বসনিয়ায় হামলা চালান। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সালে ন্যাটো বাহিনীর সমর্থনে বসনিয়ায় বিমান হামলা চালান। ১৯৯৬-তে ইরাক এবং ১৯৯৮-এ সুদান ও আফগানিস্তানে হামলা চালায় ক্লিনটন বাহিনী। ১৯৯৯ সালে কসোভোয় হামলা চালান ক্লিনটন। এরপর ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ৪৩তম  প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ক্ষমতায় থাকেন। আফগানিস্তানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩-এ আবারও ইরাকে হামলা করে শেষ হয় জর্জ ডাব্লিউ বুশের শাসনামল।

 

ধনী প্রেসিডেন্ট

জন এফ কেনেডির সম্পদের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার। এই বিশাল পরিমাণ অর্থ তিনি আয় করেছেন ব্যাংকিং, স্টক ট্রেডিং, বিতর্কিত মদের ব্যবসা থেকে।

জর্জ ওয়াশিংটনের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৫২ কোটি ডলার। তার এই বিশাল সম্পদের একমাত্র উৎস জমি। ওয়াশিংটন পরিবার ভার্জিনিয়া প্রদেশে ৮ হাজার একর সম্পদের মালিক।

টমাস জেফারসনের সম্পদের পরিমাণ ২১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। তিনিও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকেই আয় করেছেন।

থিওডর রুজভেল্টের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ১২  কোটি মার্কিন ডলার। আয়ের উৎস ছিল বই  লেখা থেকে। তিনি মোট ৪০টি বই লিখেছেন।

অ্যান্ডরু জ্যাকসনের সম্পদের পরিমাণ ১১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। জমি ও সেনাবাহিনীর চাকরি থেকেই তার এই আয় হয়েছে।

জেমস ম্যাডিসনের সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। ভার্জিনিয়ায় তার মন্টেপেলিয়া  কোম্পানির ৪ হাজার একর সম্পদ রয়েছে। তিনি ‘ফাদার অব কনস্ট্রাকশন’ নামেও পরিচিত।

হার্বার্ট হুভারের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে ৭ কোটি মার্কিন ডলার।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের অর্থ-সম্পদের প্রধান উৎস ছিল তার স্ত্রী এলেনর রুজভেল্টের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি। এ ছাড়া  কাজ করেছেন নিউইয়র্কের স্টেট সিনেটর,  নেভির সহকারী সচিব ও নিউইয়র্কের গভর্নর হিসেবে।

লিন্ডন বি জনসনের সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তারও আয়ের উৎস জমি।  টেক্সাসে তিনি বিশাল সম্পদের মালিক।

 

আমেরিকা গড়লেন যারা

আমেরিকা সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে সারা বিশ্বে আলোচিত। আমেরিকার গণতন্ত্র চর্চার উদাহরণ টানা হয় সব বিশ্বব্যাপী। আজকের এই অবস্থানে আসতে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে চারজনকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। বলা হয়, আধুনিক আমেরিকা গড়তে তাদের অবদানই সবেচেয়ে বেশি। প্রথমেই বলা হয়,

জর্জ ওয়াশিংটনের কথা। ভার্জিনিয়ায় সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তি ছিলেন ওয়াশিংটন। আমেরিকার বিপ্লবের সময় (১৭৬৫-১৭৮৩) তিনি কন্টিনেন্টাল আর্মির কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন। ১৭৮৭ সালের সংবিধানবিষয়ক সম্মেলনেও প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি, যেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফিলাডেলফিয়ায়। আট বছরের শাসনকালে তিনি আঞ্চলিক উত্তেজনা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আমেরিকান জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায়ও তার অবদান ছিল তাত্পর্যপূর্ণ। স্বাধীনতা সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখেন তিনি। তার মৃত্যুর পর রাজনীতিবিদ হেনরি লি বলেন, তিনি যুদ্ধে প্রথম, শান্তিতে প্রথম আর আমেরিকান হৃদয়েরও প্রথম মানুষ। ওয়াশিংটন ছিলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটন ছিলেন জাতীয় বীর।

এরপর বলা হয় আব্রাহাম লিঙ্কনের কথা। ১৮৬০ সাল। কঠিন সময় পার করছিল আমেরিকা।  আমেরিকার মানুষ নির্বাচিত করেন আব্রাহাম লিঙ্কনকে। ইতিহাসবিদরাও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের  প্রেসিডেন্টদের মধ্যে লিঙ্কন সর্বশ্রেষ্ঠ। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টও কথাটিতে সমর্থন দিয়ে বলেছিলেন, লিঙ্কন তখন একাই আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি ঐক্যের প্রতীক। লিঙ্কন তার শাসনকালে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছিলেন, ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করেছিলেন এবং অর্থনীতির আধুনিকায়নে ভূমিকা রেখেছিলেন। 

বলা হয়, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের কথা। আমেরিকার ৩২তম প্রেসিডেন্ট হন ডেমোক্র্যাট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ছিল আমেরিকা। তখন পাঁচ হাজার ব্যাংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শ্রমিকদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার হয়ে পড়েছিল। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার কয়লাসমৃদ্ধ জেলাগুলোর এবং উত্তর-পূর্বের বড় বড় শহরের শিশুরা অনাহারে দিন কাটাচ্ছিল। ফ্রাঙ্কলিনের শাসনামলে ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৭ সালের মধ্যে আমেরিকার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে যায়। তাকে চার দফা ক্ষমতায় রাখে আমেরিকানরা,  যেটি একটি ব্যতিক্রম।

এরপর বলা যায় রোনাল্ড রিগ্যানের কথা। রিগ্যান মুদ্রাস্ফীতি নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন ১২.৫ থেকে ৪.৪ শতাংশে। এ ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঠাণ্ডা যুদ্ধে দৃঢ় ভূমিকা রেখে চলেছিলেন। ১৯৮৪ সালে দ্বিতীয় দফায় ডেমোক্র্যাট ওয়াল্টার মনডেনকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রিগ্যান।

সর্বশেষ খবর