মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হোয়াইট হাউস রহস্য

আবদুল কাদের ও সাইফ ইমন

হোয়াইট হাউস রহস্য

গোটা বিশ্বের নজর এখন হোয়াইট হাউসের দিকে। দু-একদিনের মধ্যেই জানা যাবে কে হচ্ছেন হোয়াইট হাউসের নতুন বাসিন্দা। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রেসিডেন্টের বাসভবন হিসেবে হোয়াইট হাউস সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই অন্যরকম আগ্রহের বিষয়। ১৭৯০ সালে জর্জ ওয়াশিংটন এই ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। শুরুর দিকে এর নাম ছিল প্রেসিডেন্ট প্যালেস। এখানে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বসবাস শুরু করেন আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস। দুবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পায় ভবনটি। সাদা রং করে সংস্কারের পর থেকেই ভবনটি হোয়াইট হাউস হিসেবে পরিচিতি পায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের নানা ঘটনার সাক্ষী এই হোয়াইট হাউসকে ঘিরে কত ঘটনা আর কত রটনা! এসব নিয়েই আজকের রকমারি।

 

ভূত কাহিনী

আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত বাড়ি হোয়াইট হাউস। ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের দফতর। যেখানে দিনের আলোয় চলে রোজকার কাজ আর রাত নামলেই থমকে দাঁড়ায় অজানা ইতিহাস। ঘুরে বেড়ায় অশরীরী আত্মা। ইতিহাসে এই সাদা ভবনটি বহু ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। এখনো নাকি ভবনটিতে আব্রাহাম লিংকনের ভূতকেও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এ জন্যই হয় তো প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান তার স্ত্রীকে লিখেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীর এক জঘন্য জায়গায় থাকি’। আসলে কীসের ইঙ্গিত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট! তাহলে সত্যিই কি হোয়াইট হাউসে ভূত রয়েছে? এখানকার কর্তাদের অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের চিলেকোঠায় আছেন। কিন্তু তিনি তো অনেক আগেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অফিসে মারা যান। আবার বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্টের জীবনে উঠে এসেছে ওভাল অফিসের চিলেকোঠার ভৌতিক ছায়া। ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যানের দেহরক্ষী শুনতে পান, ‘আই অ্যাম ডেভিড বার্ন’। কে বা কারা এরকম শব্দ করত আজও রহস্য। তবে শোনা যায়, হোয়াইট হাউসের জমির মালিক ছিলেন এই ডেভিড বার্ন। অনেকেই টিভিতে রোজ গার্ডেন দেখেছেন। প্রেসিডেন্টের প্রেস কনফারেন্স এখানেই হয়। ১৮ শতকের ফার্স্ট লেডি ডলি মেডিসন নাকি রোজ গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক শতক পর ফার্স্ট লেডি ইলেন উইলসন গার্ডেনটি উত্খাতের নির্দেশ দেন। কর্মীরা রিপোর্ট করেন, ডলির আত্মা নাকি গার্ডেনে ঘুরে বেড়ায়। ১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসের বেজমেন্ট পুনর্নির্মাণ করা হয়। অনেকের মতে, এখানে অতৃপ্ত আত্মা রয়েছে। মাঝে মাঝে এখানে বিশাল আকৃতির বিড়াল দেখা যায়। অনেকে আবার ছোট বিড়াল ছানা দেখতে পান। অনেকেই প্রেসিডেন্ট লিংকনকে হোয়াইট হাউসের ভূত নামে চেনেন। মারা যাওয়ার পর থেকে আজ অবধি প্রায়ই লিংকনের ভূতকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় এখানে। অনেকে তো বটেই, ফার্স্ট লেডি ইলিয়ানর রুজভেল্টও নাকি দেখেছেন তাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানেরও একই কথা, আব্রাহাম লিংকন নাকি তার দরজায় কড়া নেড়েছিলেন। ২০০২ সালে আগত অতিথিরা দোতলার পশ্চিম দিকের রুমেও অ্যাডামসের স্ত্রী এবিগেইলকে দেখেন। হোয়াইট হাউসের মাস্টার বেডরুমে আগত অতিথিদের একজনের দাবি, এক ব্রিটিশ সেনা রুমটিতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। যে কিনা ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময়কার ব্রিটিশ সেনা ছিলেন। আরেকবার প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের মেয়ে লিন্ডার দাবি, তিনি নাকি প্রেসিডেন্ট লিংকনের ছেলে উইলিকে দেখেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, উইলি মাস্টার বেডরুমটিতে বেশি সময় থাকতেন এবং এখানেই মারা যান। প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের স্ত্রীও একই ঘটনার শিকার হন। দ্য ইয়েলো ওভাল রুমটি প্রেসিডেন্ট লিংকনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল। রুমটি লিংকনের বেশ পছন্দের ছিল। কথিত আছে, রুমটির জানালায় প্রায়ই লিংকন দাঁড়িয়ে থাকেন। ফার্স্ট লেডি গ্রেস ক্লোজিও একই দাবি করেছিলেন। কিন্তু ফার্স্ট লেডি মেরি টোড ভিন্ন সুর তোলেন। তিনি নাকি প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন এবং জন টেইলরকে দেখেছেন। ভৌতিক রহস্য থেকে হোয়াইট হাউসের সদর দরজাটিও বাদ যায়নি। ব্রিটিশ সেনারা নাকি এখনো তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সবচেয়ে অদ্ভুত রহস্য অ্যানি সুরাতের ঘটনায়। ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট লিংকনকে হত্যার অভিযোগে অ্যানির মায়ের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অ্যানিকে সদর দরজায় দেখা যায় যেখানে তার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মা জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন। এখনো জুলাইয়ের ৭ তারিখ মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে এমন ঘটনা ঘটে। এখানেই শেষ নয়, হোয়াইট হাউসের দ্য রোজ রুম, লিংকনের বেডরুম এবং দোতলার পশ্চিম দিকের রুমগুলো নানা ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী। একবার নেদারল্যান্ডসের রানী উইলহেলমিনা এক রাতের জন্য রোজ রুমে ছিলেন। তিনি দেখেন বড় হলরুমে লিংকন   দাঁড়িয়ে আছেন এবং মাঝে মাঝে তার দরজায় কড়া নাড়ছেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট লিংকনের দখলে। প্রেসিডেন্ট  টেডি রুজভেল্ট, হার্বাট হোভার এবং ডিউড ইজেনহোয়ার তো বটেই, সাবেক ফার্স্ট লেডি জ্যাকুই কেনেডি ও লিডবার্ড জনসন এবং সুসান ফোর্ড, ম্যারুইন রিগেনের মতো প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টের সন্তানরাও এই তিক্ত ভৌতিক অভিজ্ঞতার শিকার হন।

 

অদ্ভুত শখের মেলা

শখ পূরণ বা শখ লালন করতে কে না ভালোবাসে। নিজের শখের তোলা কত তা সবারই জানা। কিন্তু যখন জানতে পারেন হোয়াইট হাউসেই মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বিড়াল, কুকুর কিংবা পাখি পালন করেন তখন অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইতিহাস এমনটিই সাক্ষ্য দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সময়ের সাবেক প্রেসিডেন্টরা বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত প্রাণী হোয়াইট হাউসে এনেছিলেন। জন কেলভিন কুলিজ ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম প্রেসিডেন্ট। তিনি বিভিন্ন পশু পালতেন। তার সময় হোয়াইট হাউস ছিল তার ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা। ৬টি কুকুর, ২টি সিংহ, একটি হংসী, একটি হরিণ, একটি ক্যাঙ্গারু, রেকুন নিয়ে ছিল তার শখের পসরা। রেকুনটির নাম ছিল ‘রেবেকা’ এবং এই অশান্ত প্রাণীটি সব সময় শিকলে বাঁধা থাকত। চিড়িয়াখানার খরচ কেলভিন মার্কিন প্রশাসনের কাঁধে তুলে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কেলভিনের চিড়িয়াখানার সংগ্রহে জলহস্তীও ছিল। প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টও পোষা প্রাণীদের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তার ছয় সন্তানের পোষা প্রাণীদের মধ্যে ছিল সাপ, কুকুর, বিড়াল, গিনিপিগ, পাখিসহ আরও অনেক প্রাণী। প্রেসিডেন্ট টেডি রুজভেল্ট শ্যারনে বেড়াতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া এক বাচ্চার কাছ থেকে বেডজার উপহার পান। বেডজার হলো গর্তবাসী এক জাতীয় ক্ষুদ্রাকৃতির নিশাচর প্রাণী। হোয়াইট হাউসে টেডি রুজভেল্টের সংগ্রহে ছিল দুটি ভল্লুক, একটি টিকটিকি, শিংওয়ালা ব্যাঙ এবং একটি ঘোড়া। পরবর্তীতে প্রাণীগুলো ব্রোনক্স চিড়িয়াখানায় দিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন হোয়াইট হাউসের লনে এক পাল ভেড়া পালতেন। উইলসন যুদ্ধের সময় বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তার জন্য ভেড়া পালতেন। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো। একদিকে ভেড়াদের ঘাসও খাওয়া হতো সঙ্গে লনের ঘাসও ছোট ছোট করে কাটা হয়ে যাচ্ছিল। হোয়াইট হাউস ইতিহাস অ্যাসোসিয়েশনের জন রিলে থেকে জানা যায়, উইলসনের ভেড়ার উল নিলামে বিক্রি করে যে টাকা উপার্জন হতো তা আমেরিকান রেডক্রসের কাছে যেত, বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে ব্যবহৃত হতো এসব টাকা। প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভার পালতেন অপোজাম। কুয়েন্টিন-এর পোষা প্রাণীর অ্যাডভেঞ্চার কিন্তু এখানেই শেষ নয়। একবার সে দোকান থেকে কয়েকটি সাপ ধার করে এনেছিল। অতিরিক্ত উত্তেজনায় দৌড়ে বাবাকে দেখাতে গিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলাকালে বাবার ডেস্কে সব সাপ ফেলে দিয়েছিল। হোয়াইট হাউসে বিশ্বনেতাদের উপহারের তালিকায় ছিল কিছু অস্বাভাবিক প্রাণী। প্রেসিডেন্ট জেমস বুকানান সাবেক সিয়াম অর্থাৎ পুরনো থাইল্যান্ডের রাজার কাছ থেকে এক পাল হাতি উপহার পেয়েছিলেন। যা হোয়াইট হাউসেই পালন করা হতো। আরেকবার প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভ্যান বারেনকে ওমানের সুলতান এক জোড়া বাঘ শাবক উপহার দিয়েছিলেন। বাঘ শাবকগুলো এতটাই সুন্দর ছিল যে, হোয়াইট হাউসের সবাই শাবকগুলোকে পছন্দ করতেন। ওমানের সুলতান বাঘ শাবক উপহার দেননি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার দিয়েছেন ভবিষ্যতের সম্পদ। প্রেসিডেন্ট বুশও দুটো স্কটিশ টেরিয়ার কুকুর পুষতেন। তিনি ‘স্পটি’ নামে একটি ইংলিশ স্প্রিঙ্গার স্পেনিয়েলও পুষতেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও দুই মেয়ের শখ পূরণে ‘বো’ নামের পর্তুগিজ ওয়াটার কুকুর নিয়ে আসেন। এরপর ২০১৩ সালে ওবামা নিয়ে এলেন কুকুরছানা সানি। এদিকে পোষা প্রাণীগুলো অদ্ভুত সময় পার করেছিল হোয়াইট হাউসে। ওয়ারেন হার্ডিঙের পরিবার তাদের কুকুরের জন্য জন্মদিনের পার্টি আয়োজন করেছিল।

 

যত দুর্ঘটনা ও অনুচরবৃত্তি

হোয়াইট হাউস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দফতর। ভবনটি নিয়ে শুরু থেকেই ঘটেছিল অসংখ্য ঘটনা। সৃষ্টি করেছিল জল্পনা-কল্পনার। ভবনটি অসংখ্য অবৈধ অনুপ্রবেশ, বন্দুক আক্রমণ, আগুন দেওয়াসহ নানা অপতত্পরতা ঘটনার সাক্ষী। ১৮৪০ সালে প্রেসিডেন্ট জন টেইলর একদিন হোয়াইট হাউসের ভিতরে দক্ষিণের খোলা ময়দানে হাঁটছিলেন। হঠাৎ কোথা থেকে একটি পাথর উড়ে এলো। পরে বের হয়ে আসে আসল ঘটনা। এক নেশাগ্রস্ত লোক প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে পাথরটি ছুড়েছিলেন। জনশ্রুতি আছে, নেশাগ্রস্ত লোকটি একজন চিত্রশিল্পী। এ ঘটনার ৭২ বছর পর ১৯১২ সালে মাইকেল উইন্টার নামের এক ব্যক্তি কয়েকবার হোয়াইট হাউসে হানা দেন। প্রথমবার নিরাপত্তা গেট অতিক্রম করার সময় রক্ষীরা ছেড়ে দিলেও কয়েক মিনিট পরই লোকটি আবারও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। এবার আর ছাড় দেওয়া হয়নি। গ্রেফতার করা হয় এবং তার পকেট থেকে ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। হোয়াইট হাউসে অনুপ্রবেশের সময় প্রথম গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটে ১৯৭৬ সালের ২৭ জুলাই। চেস্টার প্লাম্মার নামে এক ট্যাক্সিচালক হোয়াইট হাউসের ৮ ফুট দেয়াল টপকানোর চেষ্টা করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের গুপ্তচর তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। মার্কিন মুদ্রা থেকে ‘ইন গড উই ট্রাস্ট’ কথাটি মুছে ফেলতে অ্যান্থনি হেনরি নামে এক ব্যক্তি কারাতে স্যুট পরিহিত অবস্থায় হাতে বাইবেল নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তার দ্ব্বিতীয় মেয়াদের জন্য শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় একটি মেরিন ব্যান্ড দলের সঙ্গে রবার্ট লট্টা হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। তিনি গুপ্তচরদের হাতে ধরা পড়ার আগে ১৪ মিনিট এক্সিকিউটিভ রেসিডেন্স-এ অবস্থান করেছিলেন। ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে ফ্রান্সিস্কো মার্টিন ডুরান ভবনটি লক্ষ্য করে ২৯ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ সময় তিনিও গ্রেফতার হন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তখন দফতরেই ছিলেন। তার ৪০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রায় একই রকমভাবে আরেকটি ঘটনা ঘটে ২০০১-এ। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তখন ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে কয়েক ফুট দূরে ছিলেন। রবার্ট পিকেট নামে আইআরএস-এর সাবেক অ্যাকাউন্ট্যান্ট হোয়াইট হাউস লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। দশ মিনিটের মাথায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাকে গ্রেফতার করে। ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে খ্রিস্ট-বিরোধী বলে ৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান অস্কার রামেরিও নামের এক ব্যক্তি। ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় পেনসিলভেনিয়ার এক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২৫ বছরের জেল দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ৯ জুনের ঘটনা, জোসেফ ক্রিফোর্ড নামের এক ব্যক্তি অদ্ভুত ঘটনা ঘটান। একটি চালকবিহীন জিপ দিয়ে হোয়াইট হাউসের সিকিউরিটি গেটে আঘাত করেন। পরে অবশ্য তিনি নিজেকে বায়োপোলার ডিসঅর্ডার রোগী বলে দাবি করেন। কোনো লাভ হয়নি। তাকেও ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রিমোর্টচালিত ড্রোন ক্রাশ করা হয়। সম্প্রতি মে মাসের ২০ তারিখে জেসি ওলিভারি নামের এক ব্যক্তি সিকিউরিটি চেক পয়েন্টে হামলা চালান। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গুলিবিদ্ধ হন এবং তিনিও গ্রেফতার হন।

 

অগ্নিকাণ্ডের নির্মম শিকার

ব্রিটিশ সেনারা হোয়াইট হাউসে পৌঁছানোর আগেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসন এবং তার স্ত্রী ডলি নিরাপদেই মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। জনশ্রুতি আছে, ব্রিটিশ সেনারা হোয়াইট হাউসে ব্যাপক লুটপাট করে।

সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউস। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ভবনটির অগ্নিকাণ্ডের ইতিহাস রয়েছে। দুবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল হোয়াইট হাউস। যার মধ্যে ইঙ্গ-আমেরিকান যুদ্ধ অন্যতম। এখনকার ব্রিটিশ-মার্কিন সম্পর্কের কথা সবারই জানা। ব্রিটিশ-মার্কিনিরা একে অপরের মিত্র। তবে ২০২ বছর আগেও এমনটি ছিল না। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রতিশোধের নেশায় প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউসও জ্বালিয়ে দেয়। দিনটি ছিল ১৮১৪ সালের ২৪ আগস্ট। ব্রিটিশদের রাজ যে পরাশক্তি আমেরিকার ওপরও ছিল এই ঘটনাটি তার রাজসাক্ষী। মূলত ঘটনাটির সূত্রপাত ১৮১২ সালে। আমেরিকানরা ১৮১২ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ব্রিটিশদের তো বটেই, কানাডা এবং রেড ইন্ডিয়ান জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় মার্কিনিরা। যুদ্ধটি ইঙ্গ-আমেরিকান যুদ্ধ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিকরা এই যুদ্ধকে আমেরিকার দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবেও চিহ্নিত করেন। সে বছর মার্কিন বাহিনী কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ইয়র্ক শহরে হামলা করেছিল। মূলত সূত্রপাত এখান থেকেই। এর প্রতিশোধ নিতেই ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবেশ করে। প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউসে আগুন লাগিয়ে দেয়। সে সময় ভবনটি হোয়াইট হাউস নামে নয়, প্রেসিডেন্ট প্যালেস হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন ছিল চতুর্থ প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যাডিসনের রাজ। ব্রিটিশ সেনারা হোয়াইট হাউসে পৌঁছানোর আগেই জেমস ম্যাডিসন এবং তার স্ত্রী ডলি মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে পালিয়ে যান। শোনা যায়, ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউসে লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘটনাটি সে সময় গোটা বিশ্বে নাড়া দিয়েছিল। ফার্স্ট লেডি ডলির চিঠি থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ সেনারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর কাছাকাছি আসার খবর পেয়েই ১৮১৪ সালের ২২ আগস্ট যুদ্ধক্ষেত্রে জেনারেলদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন। অবশ্য যাওয়ার আগে স্ত্রীকে বলেন, সাহস থাকলে যেন তার জন্য অপেক্ষা করেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গুছিয়ে যে কোনো মুহূর্তে হোয়াইট হাউস ত্যাগের কথা বলেছিলেন। এদিকে ফার্স্ট লেডি ডলি এবং রক্ষীদের নিয়ে প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় থাকেন। আবার আকস্মিক ব্রিটিশ সেনাদের উপস্থিতির ভয়ও ছিল। অবশেষে ব্রিটিশদের আগমন টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সঙ্গে প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের বিশাল ছবি নিতে ভুল করেননি। প্রথম প্রেসিডেন্টের প্রতি শ্রদ্ধা আর ব্রিটিশরা যেন ওয়াশিংটনের মর্যাদাহানি করতে না পারে সে জন্য এ সিদ্ধান্ত। ২৩ আগস্ট রাতে ডলি ওয়াশিংটনের প্রতিকৃতিটি রক্ষার সব বর্ণনা দিয়ে বোনকে চিঠিও লিখেছিলেন। সেখানেই উঠে এসেছিল পুরো ঘটনা। হোয়াইট হাউস ত্যাগ এবং পূর্ব নির্ধারিত স্থানে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে স্বামী প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিন দিন পর ব্রিটিশ সেনারা ওয়াশিংটন ত্যাগ করলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সস্ত্রীক রাজধানীতে ফিরে আসেন। তিন দিনেই ভবনটি ধ্বংস করেছিল ব্রিটিশরা। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ম্যাডিসন ও তার স্ত্রী আর কখনো হোয়াইট হাউসে ফিরে যাননি। আগুনে পোড়ার সংস্করণে সাদা রং করা হয় বলে এর নামকরণও করা হয় হোয়াইট হাউস। ১৮১৭ সালে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো পুনর্নির্মাণ করা হোয়াইট হাউসে বাস করতে শুরু করেন।

 

এক ঝলক

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হচ্ছে হোয়াইট হাউস। প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সরকারি বাসভবন ছিল পেনসিলভেনিয়ায়। জর্জ ওয়াশিংটনই প্রথম প্রেসিডেন্টের জন্য স্থায়ী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং ১৭৯০ সালে হোয়াইট হাউস নামে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীর ১০ বর্গমাইলের মধ্যে অবস্থিত এ ভবনে ১৮০০ সালে আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস এবং তার স্ত্রী এবিগেইল অ্যাডামস প্রথম বসবাস শুরু করেন। হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন ক্ষমতাসীন অবস্থায় তিনজন প্রেসিডেন্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের বিয়ের অনুষ্ঠান শুধু হোয়াইট হাউসে হয়। দুবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পায় হোয়াইট হাউস। সময়ের ব্যবধানে হোয়াইট হাউসের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ৬ তলাবিশিষ্ট হোয়াইট হাউসে মোট ১৩২টি কক্ষ রয়েছে। হোয়াইট হাউসে ১৮৪৫ সালে ক্যামেরায় প্রথম ছবি তোলা হয় প্রেসিডেন্ট জেমস কে পোকের। হোয়াইট হাউস আঙিনায় প্রথম মোটরযানে আরোহন করেন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট প্রথম উড়োজাহাজে চড়ে পানাম সফরে যান।

 

 

প্রথম বিবাহ

ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিবাহের আয়োজনগুলো বেশ জমজমাটই হয়। মার্কিন ইতিহাসেও তেমন ঘটনা রয়েছে। হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন ক্ষমতাসীন অবস্থায় তিনজন প্রেসিডেন্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের বিবাহের অনুষ্ঠান শুধু হোয়াইট হাউসে হয়। এটাই ছিল প্রেসিডেন্ট ভবনের ইতিহাসে প্রথম এবং শেষ বিবাহ। দিনটি ছিল ১৮৮৬ সালের ২ জুন। কনে ফান্সিস ফোলসম ছিলেন ক্লিভল্যান্ডের চেয়ে ২৭ বছরের ছোট। তখন ক্লিভল্যান্ডের বয়স ছিল ৪৯ বছর এবং ফান্সিসের ২১। ফান্সিসের বাবা ছিলেন ক্লিভল্যান্ডের আইন বিশারদ। বহু গণ্যমান্য মার্কিন রাজনীতিবিদকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল সেই বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

 

 

প্রথম ছবি

জেমস কে পোক ছিলেন আমেরিকার ১১তম প্রেসিডেন্ট। তার শাসনামলেই হোয়াইট হাউসের ভিতরে প্রথম ছবি তোলা হয়। মার্কিন ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম ঘটনা। তখন ১৮৪৫ সাল। ক্যামেরায় প্রথম ক্লিকটি করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জেমস কে পোকের। এর আগে আর কোনো প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে ছবি তোলেননি। ১৮৪৫ সালের ৪ মার্চ জেমস কে পোক প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শুরু করার পর থেকে হোয়াইট হাউসে ছবি তোলার সংস্কৃতি চালু হয়। যার ধারা আজও চলে আসছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর