বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফার্স্ট লেডি ফার্স্ট ম্যান

তানভীর আহমেদ

ফার্স্ট লেডি ফার্স্ট ম্যান

যেভাবে আসল ফার্স্ট লেডি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সম্বোধনের জন্য ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ শুরু থেকেই জনপ্রিয় ছিল। আমেরিকার ইতিহাসে নারী প্রেসিডেন্ট না থাকায় সব ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্টের স্ত্রীদের সম্বোধনের জন্য ‘লেডি’ বা ‘ফার্স্ট লেডি’ ব্যবহার করা হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামাকে ফার্স্ট লেডি বলে সম্বোধন করা হয়। ‘ফার্স্ট লেডি’ ধারণাটি বহুকাল পুরনো। প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে আলাদা মর্যাদাপূর্ণ সম্বোধনের স্বার্থেই এটির উদ্ভব। জর্জ ওয়াশিংটনের স্ত্রী মার্থা ওয়াশিংটন কিন্তু লেডি ওয়াশিংটন নামেই বেশি পরিচিতি পান। তবে ১৮৩৮ সালে সেন্ট জোন্সব্যারি পত্রিকার একটি নিবন্ধে প্রথম সম্মানসূচক ‘ফার্স্ট লেডি’ সম্বোধন করে। ১৮৪৯ সালে ফার্স্ট লেডি সম্বোধন মানুষের মুখে মুখে বেশ ছড়িয়ে পড়ে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের যদি স্ত্রী না থাকে সেক্ষেত্রে তার কন্যাকেও ফার্স্ট লেডি সম্বোধন করে সম্মান জানানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি অবিবাহিত হন সেক্ষেত্রে তার নিকটাত্মীয় বা প্রশাসনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারী কর্মকর্তাকেও ফার্স্ট লেডি হিসেবে ডাকা হতে পারে। নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার স্বামীকে ফার্স্ট ম্যান বা ফার্স্ট জেন্টেলম্যান বলে সম্বোধন করা যায়। এ ছাড়াও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে সেকেন্ড লেডি সম্বোধন করা হয়।

 

ফার্স্ট লেডির কাজ কী?

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের স্ত্রীদের মর্যাদাপূর্ণ সম্বোধন ফার্স্ট লেডি। ফার্স্ট লেডি হিসেবে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের সার্বিক ঘরোয়া ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের প্রধান তিনি। হোয়াইট হাউসে আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসব পালনের গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করেন। সেখানে তার নির্দিষ্ট অফিস কক্ষ রয়েছে। তার অধীনে কাজ করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রেস সেক্রেটারি, হোয়াইট হাউস সোশ্যাল সেক্রেটারি, চিফ ফ্লোরাল ডিজাইনার ইত্যাদি। হোয়াইট হাউস সামলানোর দায়িত্বে বড় অংশ তার হাতেই থাকে। আমেরিকান ফার্স্ট লেডি কোনো বেতন পান না বটে, তবে তাকে রাষ্ট্রের বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় দিতে হয়। প্রেসিডেন্টকে সর্বতোভাবে সহায়তা দেওয়া তার আবশ্যিক কাজের মধ্যে পড়ে।

ফার্স্ট লেডিকে জনগণের সামনে জনপ্রিয় করার জন্য তাকে অনেক বিষয়ে প্রশিক্ষণ  দেওয়া হয়। হোয়াইট হাউসের আদব-কায়দা বা রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল তাকে শিখতে হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে তো বটেই একজন ফ্যাশন সচেতন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তিনি জনগণের কাছে অনুকরণীয় হয়ে ওঠেন। দেশি ও বিদেশি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার আলোচনা গুরুত্ব বহন করে।

 

ট্রাম্প জিতলে ‘ফার্স্ট লেডি’

ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প হবেন ১৮৭ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো ফার্স্ট  লেডি যিনি বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। স্লোভেনিয়ার রাজধানী জুবলিনজার ছোট শহরে জন্মেছিলেন মেলানিয়া। বাবা ভিক্টর স্থানীয় করপোরেশনের মেয়র অফিসের কর্মী। পরবর্তী জীবনে তিনি সফল গাড়ি বিক্রেতা হিসেবে পরিচিতি পান। অন্যদিকে মা মালিজা ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার। মেলানিয়া প্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইতালির একটি মডেল এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের বাজিমাতে ইউরোপ ভ্রমণ এবং সেসময়েই একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা। ২০০১ সালে তিনি আমেরিকা আসেন আর ২০০৬ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পান। দীর্ঘদিন সম্পর্কের পর ২০০৫ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ২০১১ সালে সন্তান হয়, যার নাম ব্যারন। ইতিমধ্যেই নিজস্ব ফ্যাশন ও অলঙ্কার ব্যবসা গুছিয়ে নিয়েছেন। স্বামীর পাশে দীর্ঘদিন ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন নারী বিষয়ক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। আর এ কারণেই তিনি যখন ট্রাম্পের পাশে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য এগিয়ে আসেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের মধ্য থেকে অনেকেই মেলানিয়াকে সমর্থন জানায়। সুতরাং ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে মেলানিয়া হবেন ফার্স্ট লেডি তা বলাই যায়।

 

 

হিলারি জিতলে ‘ফার্স্ট জেন্টেলম্যান’

বিল ক্লিনটন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার স্ত্রী হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফার্স্ট লেডির পরিচয় পেয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু বিল ক্লিনটন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, কাজেই সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের স্বামী হিসেবে ‘ফার্স্ট  জেন্টেলম্যান’ না ‘ফার্স্ট ম্যান’ হবেন, এমন জটিলতায় পড়তে হবে না তাকে। সাবেক  প্রেসিডেন্টের যথাযোগ্য মর্যাদাই থাকবে তার।

বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের শাসক হিসেবে বরাবরই পুরুষকে বেছে নিয়েছে। তাই ফার্স্ট জেন্টেলম্যান হিসেবে এ পর্যন্ত কারও নামই আসেনি। বিল ও হিলারির দাম্পত্য জীবন চার দশকেরও বেশি। আট বছর হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা থাকাকালে স্বামী ক্লিনটনের সংকটে স্ত্রী হিসেবে হিলারির ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বিশেষ করে বিল ক্লিনটন যখন হোয়াইট হাউসের শিক্ষানবিশ কর্মী মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তখন স্ত্রী হিসেবে হিলারি তাকে ছেড়ে যাননি। পাশে থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তা করেন। এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে চেলসি ক্লিনটন। হিলারি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হবেন এই দম্পতি। বিল ক্লিনটনকে আমেরিকার সমসাময়িক সময়ের সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্ট ধরা হয়। বিল ক্লিনটন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ছিলেন।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ‘ফার্স্ট লেডি’

মার্থা ওয়াশিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ‘ফার্স্ট লেডি’। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের স্ত্রী হিসেবে তিনি এই অনন্য সম্মান লাভ করেন। ফার্স্ট লেডি ছাড়াও তাকে অনেকে ‘লেডি ওয়াশিংটন’ নামেও ডেকে থাকেন। ২৫ বছর বয়সে তিনি বিধবা হন। তার প্রথম স্বামী ছিল ডেনিয়েল। ওয়াশিংটনকে বিয়ের পর তিনি বিপুল অর্থের মালিক হন। এই সম্পদ তিনি বিলাসী জীবনে ব্যয় না করে দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য ব্যয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি বহু দাস কিনে তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন। সারা জীবনে তিনি প্রায় ১০০ জন দাসী কিনেছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন ও মার্থা ওয়াশিংটনের কোনো সন্তান ছিল না। মার্থা ওয়াশিংটনের জন্ম ১৭৩১ সালে। ভার্জিনিয়াতেই তিনি বেড়ে ওঠেন। জর্জ ওয়াশিংটনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত থাকলেও পরবর্তীতে তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। ফিলাডেলফিয়া ও নিউইয়র্ক সিটিতে তিনি সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে সবার কাছেই জনপ্রিয় ছিলেন। মার্থা ওয়াশিংটন ৭০ বছর বয়সে মারা যান। প্রথম ফার্স্ট লেডি হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।

 

 

 

এখন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফার্স্ট লেডি’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা। মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি সারা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। আমেরিকায় তরুণদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশংসনীয়। মিশেল ওবামা শুধু বর্তমান মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিসেবেই পরিচিত নন। একজন আইনজীবী, লেখক হিসেবেও তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ফার্স্ট লেডি হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। মিশেল ওবামা শিকাগোতে বেড়ে উঠেছেন। আইনি সেবা প্রদান করে এমন প্রতিষ্ঠান সাইডলি অস্টিনে তিনি আইনজীবী হিসেবে যখন কাজ করেন তখন বারাক ওবামার সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে তিনি সহকারী ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯৯২ সালে বারাক ওবামার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের এখন দুই সন্তান রয়েছে। মার্কিন নির্বাচনে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে বারাক ওবামার পক্ষে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেন। এ বছর ফিলাডেলফিয়াতে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে তিনি বক্তৃতা করে বাজিমাত করেন। একজন ফ্যাশন সচেতন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও মিশেল ওবামার খ্যাতি রয়েছে।

 

 

দেশে দেশে ফার্স্ট লেডিদের কাণ্ড

ফার্স্ট লেডিদের প্রোফাইল স্বভাবতই ভারী। প্রেসিডেন্ট স্বামীর সান-শওকতে ভরা প্রেসিডেনশিয়াল ভবনের আভিজাত্যে জীবনযাত্রাই আলাদা হয়ে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই জড়িয়েছেন সমালোচনায়। যেমনটি করেছিলেন মিরাজিনা মার্কোভিক। যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লাবোদান মিলোসেভিকের সহধর্মিণী। দেশের বিভিন্ন কমিউনিটিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সমালোচিত হন প্রেসিডেন্ট। তখনই আলোচনায় আসেন ফার্স্ট লেডি মার্কোভিক। স্থানীয় এক ম্যাগাজিনে বিক্ষিপ্তভাবে তিনি বিতর্কিত লেখনীতে সমালোচনা করেন কমিউনিটির এই বিশৃঙ্খলার। এরই মাঝে কথা ওঠে তিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। ঠকবাজির অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়ে সমালোচিত হন।

পানামার ফার্স্ট লেডিকে ঘিরেও সমালোচনা রয়েছে। তার নাম আনা এন্দেরা। তিনি সব সময় খবরদারি করতেন যেন কেউ তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করতে না পারে। এক রাষ্ট্রীয় মরদেহ সৎকার অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। এতে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা হলে তিনি আইন ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে কার্যত সবার কাছে সমালোচনার পাত্রী হয়ে ওঠেন। শিক্ষিকাদের সমালোচনা সইতে না পেরে তাদের হুমকি দিয়ে বসেন, নির্বাচনে যেন তারা তার স্বামীকে ভোট দেন। এই হুমকির কথা জনসম্মুখে এলে তিনি সবার কাছে সমালোচিত হন।

ব্রিটেনের ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ারকে নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনা হয়েছে। তিনি টপলেস ছবি তুলে বিশ্ববাসীর কাছে বেশ সমালোচিত হন। ব্রিটেনজুড়ে  হৈচৈ পড়ে যায়। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তার এ ধরনের খোলামেলা ছবি প্রকাশে রাজপরিবারেও সমালোচনা হয়।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ডের স্ত্রী ন্যান্সি রিগ্যান। ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনিও সমালোচনায় জর্জরিত হয়েছেন। এক জ্যোতিষী তাকে অপছন্দনীয় ফার্স্ট লেডি বলে সম্বোধন করার পর থেকেই শুরু হয় এই সমালোচনা। এরপর থেকে তিনি জনসম্মুখে আসা কমিয়ে দেন। রাজনৈতিকভাবে তার গুরুত্ব থাকলেও তা পর্দার আড়ালেই থেকে যায়। ইরান-কন্ট্রা কেলেঙ্কারিতে রোনাল্ড রিগ্যান জড়ালে ন্যান্সি রিগানের নামও আসতে শুরু করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কেলেঙ্কারির পেছনে থাকা এই ফার্স্ট লেডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সমালোচনা জোরদার হয়।

সমালোচিত ফার্স্ট লেডি হিসেবে ইমেলদা মার্কোসের কথাও উঠে আসে। বলা হয় তিনি খুব বিলাসী ছিলেন। তিনি নাকি প্রতিদিন একজোড়া নতুন জুতো কিনতেন। আট বছর ধরে এই বিলাসিতা চলতে থাকে। কেউ কেউ বলেন, তার কালেকশনে তিন হাজারেরও বেশি জুতা রয়েছে। তার বিলাসিতা এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, বিলাসিতার আরেক নাম হয়ে ওঠে ইমেলদা।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু। এই ফার্স্ট লেডি রাজনৈতিক কারণে সমালোচিত হয়েছেন। তার কড়া মেজাজের কারণে প্রাসাদে তার ভয়ে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা ভয়ে কাবু থাকতেন বলে গুজব রয়েছে।

 

ট্রাম্পের তিন বিয়ে কাহিনী

মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কত জল ঘোলা হয়নি। আলোচনায় ছিল তার তিন বিয়ের কাহিনীও। প্রথম দুই স্ত্রী তার ঘর ছাড়লেও তৃতীয় স্ত্রী তার ঘর আগলে রেখেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভানা ট্রাম্প। এককালে ইভানা যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় মডেল ছিলেন। প্রেমের সূত্র ধরেই ধনকুবের ট্রাম্পকে বিয়ে করে সবাইকে বেশ অবাক করে দেন ইভানা। ১৯৪৯ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় জন্ম নেন ইভানা। তবে ইভানার এটি প্রথম বিয়ে ছিল না। এর আগে  আলফ্রেড উইঙ্কলমায়ার নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে তার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পেশাগত কারণে কানাডা চলে যান। কানাডা থেকে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৭৭ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে বিয়ের পর ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ভালোই কেটেছিল ইভানার সংসার। ১৫ বছরের সংসার জীবনে ট্রাম্প ও ইভানার ঘরে আসে তিন সন্তান। তারা হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, এরিক ট্রাম্প এবং কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। ১৯৯২ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প বিয়ে করেন মারলা ম্যাপলসকে। ইভানা যেমন সুন্দরী ছিল, মারলাও তাই। মার্কিন মিডিয়া কাঁপানো এই সুন্দরীও ট্রাম্পের খ্যাতি ও প্রেমে হাবুডুবু খান। হলিউড সুন্দরীকে বেশ জাঁকজমক আয়োজনে বিয়ে করেন ট্রাম্প। তার দ্বিতীয় স্ত্রী মারলা হলিউডের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিতে ছিল পরিচিত মুখ। আবেদনময়ী ম্যাপলস বেশ কিছু মুভিতে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। ম্যাপলসের সঙ্গে ট্রাম্প যখন প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তখনো প্রথম স্ত্রী ইভানার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়নি। ১৯৯০ সালের দিকে ট্রাম্পের প্রেমে পড়েন ম্যাপলস। ঘরে প্রথম স্ত্রী রেখে চুটিয়ে প্রেম করেন ট্রাম্প। তবে ইভানার সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রেমের পরিণতি দেন তিনি। ১৯৯৩ সালে ট্রাম্পকে বিয়ে করেন ম্যাপলস। তবে বেশি দিন টেকেনি তাদের সংসার। প্রায় ছয় বছর সংসার করার পর ১৯৯৯ সালে ট্রাম্পের ঘর ছাড়েন এই মডেল। এরই মাঝে তাদের ঘরে আসে এক সন্তান। ট্রাম্পের তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া নাউস স্লোভেনিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। ট্রাম্পের আগের দুই স্ত্রী ছিলেন নামকরা মডেল। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন না। ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়াও পেশায় মডেল। অলঙ্কার ও ঘড়ির নকশা করেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি। এখন তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ট্রাম্পের স্ত্রী। ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আলোচনায় আসেন মেলানিয়া। ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া মেলানিয়া ১৬ বছর বয়স থেকে মডেলিংয়ে আসেন। তারপর পাড়ি জমান ইতালি। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর শুরু হয় ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেমকাহিনী। ২০০৫ সালে ট্রাম্পকে বিয়ে করে এখনো সংসার করে যাচ্ছেন মেলানিয়া। ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামে তাদের বছর দশেকের এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর