শিরোনাম
রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো

তানভীর আহমেদ

বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো

ফিদেল কাস্ত্রো [জন্ম : ১৩ আগস্ট ১৯২৬-মৃত্যু : ২৫ নভেম্বর ২০১৬]

তাকে বলা হয় বিপ্লবের মহানায়ক। কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং কমিউনিস্ট নেতা, তিনি ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৫৩ সালে বাতিস্তা সরকার উত্খাতের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। এজন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫৬ সালে চে’ গুয়েভারাকে সঙ্গে নিয়ে বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে শুরু করেন গেরিলা যুদ্ধ। ১৯৫৯ সালে বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটলে তিনি কিউবার হাল ধরেন। এরপর ৫০ বছর কিউবা শাসন করেন তিনি। বারবার মুখোমুখি হয়েছেন হত্যাচেষ্টার, ক্ষমতাচ্যুতির ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ডিঙিয়েছেন অকুতোভয় এই বিপ্লবী। কেউ তাকে বলেছেন, কিউবার হৃদয়, কেউ বলেছেন, একনায়ক। ৯০ বছর বয়সে এই বিপ্লবীর মৃত্যু হয় কিউবার হাভানায়। তাকে নিয়ে আজকের রকমারি—

 

কিউবা বিপ্লব

কিউবা বিপ্লবের মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রো। কিউবার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাতিস্তা ও কিউবার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিপ্লবের ময়দানে সক্রিয় হোন কাস্ত্রো। অতর্কিত হামলায় বাতিস্তা সরকারকে শক্ত জবাব দিতে চেয়েছিলেন। তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল মেক্সিকো থেকে কিউবায় আক্রমণ চালানো। ১৯৫৬ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি ও তার বিপ্লবী সহযোগীরা কিউবার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাতিস্তার সেনাবাহিনীর আক্রমণে নাস্তানাবুদ হোন। তার ৮২ জন সহচরী মারা যান অথবা কারাবন্দী হন। শুরুর দিকেই তাকে কারাবন্দী করে বাতিস্তা সরকার। তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। দুই বছর পর মুক্তি পেয়ে তিনি মেক্সিকো চলে যান। এরপর কিউবার মানুষের মুক্তির জন্য গেরিলা যুদ্ধে নামেন তিনি। সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বতমালায় বিদ্রোহীদের ছোট একটা অংশ পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা পেতে শুরু করেন তিনি। তার গেরিলা বাহিনীর লড়াইকে সমর্থন দেয় সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে চে’ গুয়েভারার সঙ্গে ফিদেল কাস্ত্রোর গেরিলা যুদ্ধের পরিকল্পনা আরও বিস্তৃতি পায়। যুদ্ধচলাকালীন চে’ বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর অখণ্ড অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রো তাকে গ্রেনেড তৈরির কারখানা, রুটি বানানোর জন্য চুল্লি প্রস্তুত এবং নিরক্ষর সঙ্গীদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল তৈরির দায়িত্ব দেন। তা ছাড়াও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, সামরিক প্রশিক্ষণের কর্মশালা আয়োজন এবং তথ্য সরবরাহের জন্য পত্রিকা প্রচার করার দায়িত্ব প্রদান করেন। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তিন বছর পর চে’ গুয়েভারাকে ‘কাস্ত্রোর মস্তিষ্ক’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। সংগঠিত হয়ে কাস্ত্রোর বিপ্লবী বাহিনী গেরিলা যুদ্ধে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের হামলায় বাতিস্তা সরকার পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। সিয়েরা পর্বতমালা, শহর পেড়িয়ে তারা হাভানায় ঢুকে পড়লে বাতিস্তা সরকার পালিয়ে যায়। জয়ী হন কাস্ত্রো, জয় হয় বিপ্লবের।

 

কিউবার বিপ্লবী মহানায়ক

ফিদেল কাস্ত্রো বিংশ শতাব্দীর অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক। যিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একাধারে প্রায় চার যুগ বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এক সময়কার বিপ্লবী কাস্ত্রো সুদীর্ঘকাল কিউবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর অসুস্থতার কারণে ২০০৮ সালের শুরুতে ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কাস্ত্রো কিউবান বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্বতন একনায়ক রাষ্ট্রপতি ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে অপসারণ করেন এবং একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার পূর্বাঞ্চলে স্পেনীয় বংশোদ্ভূত এক অভিবাসী পরিবারে কাস্ত্রোর জন্ম। তার বাবা ছিলেন ছোট্ট আখের খামারি। আর তাই তার শৈশব মোটেও সচ্ছল ছিল না। আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর হাভানায় আইনজীবী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন তিনি। তার দরিদ্র মক্কেলদের পক্ষে লড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সুনাম এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেখান থেকেই সক্রিয় দলীয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর ১৯৪৭ সালে নবগঠিত কিউবান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন কাস্ত্রো। রাজনীতিতে যোগ দিয়েই তুখোড় বক্তা কাস্ত্রো তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি প্রথমবারের মতো দলীয় কংগ্রেসের সদস্য প্রার্থী হন। নির্বাচনে পিপলস পার্টি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই জাতীয় নির্বাচনের আগে জেনারেল বাতিস্তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতা দখল করেন। ফলে নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। রাজনৈতিক সুবিধাবঞ্চিত কাস্ত্রো তাই হাতে তুলে নিলেন অস্ত্র। শুরু হলো বিপ্লবী কাস্ত্রোর নতুন জীবন।

১৯৫৩ সালে সশস্ত্র দল নিয়ে মনকাডা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেন কাস্ত্রো। সংঘর্ষে কাস্ত্রোর দল পরাজিত হয়। সামরিক শাসক বাতিস্তার নির্দেশে কাস্ত্রোর ৮০ জন সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে বাস্তিতার হত্যার আদেশ থেকে বেঁচে বেসামরিক কারাগারে ঠাঁই পান কাস্ত্রো। কিন্তু কারাগারেও তাকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জনমতের কথা বিবেচনা করে কাস্ত্রোকে হত্যা না করে বিচারের মুখোমুখি করেন বাতিস্তা। মনকাডা হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ফিদেল যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার মধ্য দিয়ে কিউবার রাজনৈতিক সংকট এবং তার সমাধানের পথ নির্দেশ করেন তিনি। তার এ বক্তৃতা আলোড়ন তোলে গোটা কিউবায়, জননায়কে পরিণত হন ফিদেল। বিচারে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হলেও প্রবল জনমতের কাছে মাথা নত করে দুই বছরের মাথায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন বাতিস্তা।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিপ্লবী দল গড়ার লক্ষ্যে মেক্সিকোয় পাড়ি জমান কাস্ত্রো। সেখানে একটি গেরিলা দল গঠন এবং পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের পর চে’ গুয়েভারা, জুয়ান আলমেইডাসহ একটি বিপ্লবী দল নিয়ে ১৯৫৬ সালে কিউবায় ফিরে আসেন কাস্ত্রো। ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই মনকাডায় সেই হামলার নামানুসারে ফিদেল কাস্ত্রোদের এই গেরিলা দল ‘জুলাই টুয়েন্টি সিক্স মুভমেন্ট’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে জেনারেল বাতিস্তা গেরিলা নিধন অভিযান আরও জোরদার করেন। গেরিলারা সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বত ছেড়ে একের পর এক শহর দখল করতে থাকে। স্থানীয় জনতা গেরিলাদের অভ্যর্থনা জানায়। ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি বাতিস্তার প্রায় এক হাজার সেনা গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান, বোমা, জাহাজ ও ট্যাংক পাঠিয়ে গেরিলাদের হটানোর চেষ্টা চালায়। কাস্ত্রোর সেনারা চারদিক থেকে রাজধানী হাভানাকে ঘিরে ধরতে শুরু করলে ১৯৫৯ সালের পহেলা জানুয়ারি কিউবা ছেড়ে পালান জেনারেল বাতিস্তা।

১৯৫৯ সালে দক্ষিণপন্থি স্বৈরাচারী শাসক ফুলগেনাসিয়ো বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফিদেল কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনী। নতুন বিপ্লবী সরকারকে সর্বপ্রথম মান্যতা দিতে সেদিন যারা এগিয়ে এসেছিল, মার্কিন সরকার তাদের অন্যতম। কিন্তু মার্কিন মালিকদের জমি অধিগ্রহণ করে নেওয়া এবং কোনো ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা না করেই বাতিস্তা সরকারের সমর্থকদের গুলি করে হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক  দিন দিন অবনতির দিকে যায়। এছাড়াও মার্কিন গোয়েন্দা চক্রের বিরুদ্ধে কাস্ত্রোকে খুন করার বিভিন্ন প্রয়াসের অভিযোগ ওঠে। দুই দেশের তিক্ত সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ফিদেল কাস্ত্রোর মৈত্রী সম্পর্ককে ঘিরে, যার পরিণামে শীতল যুদ্ধ বিস্তৃত হয় পশ্চিম গোলার্ধেও।

২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে অসুস্থতার কারণে ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেন। ২০০৬ সালের জুলাইতে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ফিদেল কাস্ত্রো অনেকটাই নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। ওই সময় তার জরুরিকালীন অস্ত্রোপচারের পর বেশ কিছুদিন জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে থেকে ফিদেল কাস্ত্রো কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও জনসমক্ষে তার উপস্থিতি ক্রমশ কমে আসতে থাকে। সাম্যবাদের স্বপ্নচারীদের নায়ক ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। ৯০ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজতান্ত্রিক কিউবা প্রতিষ্ঠাকারী ফিদেল কাস্ত্রো সারাবিশ্বে সমাজতন্ত্রের আন্দোলনকারীদের চোখে ছিলেন সত্যিকারের বীর বিপ্লবী।

 

৬৩৮ বার হত্যাচেষ্টা!

ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা ও ক্ষমতাচুত্যির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ— বরাবরই অভিযুক্ত হয়েছে তার বিরুদ্ধে অপারেশন চালানোর জন্য। ৯০ বছরের জীবনে ফিদেল কাস্ত্রোকে ৬৩৮ বার হত্যার  চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র চরেরা এই চেষ্টা চালায়। ১৯৬০ সালে সিআইএ’র পরিকল্পনাটা ছিল আমেরিকানদের দিয়ে ইউএসের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হবে। হত্যা পরিকল্পনার মূলে থাকবে, আমেরিকায় সন্ত্রাস আর খুনের একটা মারাত্মক ছকে বিস্তার করা এবং এই অস্থিরতার দায়ভার দেওয়া হবে কিউবার শক্তিমান ফিদেল কাস্ত্রোর ওপর। সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলে পুরো বিশ্বের মনোযোগ  কেড়ে নিয়ে কিউবায় সামরিক হামলা এবং কাস্ত্রোর পতন নিশ্চিত করা। এ ভয়াবহ মাস্টার প্ল্যান শুধু জন এফ কেনেডির সম্মতির অভাবে বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সিআইএ’র এই মাস্টার প্ল্যান গোপন থলে  থেকে বেরিয়ে আসে।

এছাড়াও উল্লেখযোগ্য ছিল ‘অপারেশন জ্যাপাটা’ নামে  পরিচিত সিআইএ অপারেশনটিও। অপারেশন জ্যাপাটা যে শুধু সিআইএ’র জন্য একটি দুর্ধর্ষ অভিযান ছিল তা নয়, গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে সিআইএ কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে  সেটার একটি চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৬১ সালে কিউবায় প্রায় এক হাজার ৫০০ অত্যন্ত দক্ষ সিআইএ সেনা এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিল। ফিদেল কাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সিআইএ এই গোয়েন্দা হামলার নীলনকশা করেছিল। বাইরে থেকে পরিকল্পনার সব ঠিক  দেখালেও কিউবায় হামলা করতে নেমে পরিস্থিতি একেবারেই সিআইএ’র প্রতিকূলে চলে যায়। একে তো কাস্ত্রোর ব্রিগেড সিআইএ’র হামলা সম্পর্কে আগেই জেনে ফেলেছিল এবং কাস্ত্রোর সেনা ব্রিগেডের বিছানো ফাঁদেই সিআইএ পা ফেলেছিল। সব মিলিয়ে সিআইএ’র অপারেশন জ্যাপাটা ছিল একটা লম্বা দুঃস্বপ্ন। বোদ্ধারা বলেন, সেই অপারেশনের ক্ষয়ক্ষতি আজও পুষিয়ে উঠতে পারেনি তারা। এক হাজার ৫০০ জনের সিআইএ’র প্রশিক্ষিত বাহিনী কিউবার উপকূলে নামমাত্র হামলা করতে পেরেছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিউবার  সেনা ব্রিগেড তাদের ঘিরে ধরে এবং আটকে ফেলে। সামান্য এক তরফা লড়াইয়ের পর কিউবার ব্রিগেডের কাছে হাজারখানেক সিআইএ এজেন্ট ও  যোদ্ধা জবাই হয়ে যায়। এত বড় আকারের অপারেশনে সিআইএ’র এই হতাশাজনক পরিণতি ঘটলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ইতিহাসে এই হামলা একটি অনন্য ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

এছাড়া হত্যার ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিল কাস্ত্রোর চুরুটের মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা। কাস্ত্রোর চুরুটের মধ্যে  যে পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা হয়, তা তার মাথা উড়িয়ে দেওয়ার মতো। এ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। কাস্ত্রোকে দুর্বল করতে একবার তার জুতা ও চুরুটের মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য রাখা হয়। এর প্রভাবে তার শরীরের সব চুল পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। বিভিন্ন সময়ে তার খাবারে বিষ রেখে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তার ব্যবহৃত কলমে বিষযুক্ত সুচ রেখে ও পোশাকে জীবাণু ছড়িয়েও তাকে হত্যার  চেষ্টা চালায় সিআইএ। এছাড়াও প্রেসিডেন্ট হিসেবে শাসনামলের শেষের দিকে ২০০০ সালে পানামা সফরে যান কাস্ত্রো। সেখানে একটি মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল তার। সেই মঞ্চে ভাষণ ডেস্কে ৯০ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা হয়।

কাস্ত্রোর নিরাপত্তাকর্মীরা এই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। সিআইএ’র আরেকটি ষড়যন্ত্র ছিল, সাবেক স্ত্রী মিরতাকে হাত করে কাস্ত্রোকে হত্যার চেষ্টা। বিষযুক্ত ক্যাপসুল দিয়ে তাকে হত্যা করার ফন্দি আঁটা হয়। কোল্ডক্রিমের কৌটায় রাখা হয় এই ক্যাপসুল। কিন্তু এ ষড়যন্ত্রের কথা জেনে  ফেলেন কাস্ত্রো। তিনি মিরতার হাতে পিস্তল তুলে দিয়ে তাকে বিষ দিয়ে নয়, সরাসরি গুলি করে হত্যা করতে বলেন। মিরতা তা পারেননি। বারবার এ ধরনের চক্রান্ত হয়েছে ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে। কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছে। বলা যায়, আমেরিকার নাকের ডগায় বসে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে কিউবায় কমিউনিস্ট শাসন ধরে রেখেছিলেন ফিদেল। তার ৪৯ বছরের ক্ষমতায় ১০ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে শপথ নিয়েছেন। কিন্তু সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। ফিদেলের অবসরের পরও কিউবা শাসন করছে তার প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টি।

 

‘‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি...

ফিদেল কাস্ত্রো

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর দেখা হয় ১৯৭৩ সালে। আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) চতুর্থ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও কিউবা ছিল। তখন ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়েজ। বাট আই হ্যাভ সিন  শেখ মুজিব। ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইজ দ্য হিমালয়েজ। আই হ্যাভ দাজ হ্যাড দ্য এক্সপিরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়েজ।’ অর্থাৎ, ‘আমি হিমালয়  দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম।’

 

প্রেমিক কাস্ত্রো

১৯৫৭ সালে সেলিয়ার সঙ্গে দেখা হয় কাস্ত্রোর। বাতিস্তা যখন দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় যান তখনই বিপ্লবের আগুন জ্বলে ওঠে গোটা কিউবায়। সেলিয়া যোগ দেন কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনীতে। ১৯৫৭ সালের  মে মাসে উভেরোর যুদ্ধে প্রথম অংশ নেন সেলিয়া। রণাঙ্গনে লড়াই সূত্রে কাস্ত্রোর সান্নিধ্য পেতে শুরু করেন। যুদ্ধের সময় সঙ্গীদের খাবার, পানীয়, জামাকাপড় জোগাড় করে দেওয়ার দায়িত্বেও থেকেছেন তিনি। একসময় যুদ্ধজয় হলো। বাতিস্তা সরকারের পতন হলো। কাস্ত্রোর শাসনে এলো কিউবা। তখনো কিউবার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন সেলিয়া। গবেষকদের অনেকেই বলে থাকেন, কাস্ত্রোর  নেওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সেলিয়ার মতামতকে গুরুত্ব দিতেন কাস্ত্রো। তবে এতকিছুর পরও কাস্ত্রো কখনোই এই সম্পর্ককে প্রেম বলেননি। রণাঙ্গনের অভিযাত্রী হিসেবেই বরং বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন সেলিয়া। ফিদেল কাস্ট্রো বিয়ে করেছিলেন অন্য এক মহিলাকে।

 

ছবিতে কাস্ত্রো

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর