শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

২০১৬ সালের সেরা চমক

ডোনাল্ড ট্রাম্প

২০১৬ সালের  সেরা চমক

টাইম-এর প্রচ্ছদে ডোনাল্ড ট্রাম্প

টাইম ম্যাগাজিন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত করে লিখেছে, প্রেসিডেন্ট অব দ্য ডিভাইডেড আমেরিকা

গত বছরের ডিসেম্বরেও কেউ কি ভেবেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার? অনেকেই ভাবেননি। অনেকে তখনো জেনে উঠতে পারেননি, কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন ধনকুবের, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার অপেক্ষায়। জানুয়ারিতেই শপথের আনুষ্ঠানিকতা, তারপর যুক্তরাষ্ট্রের চালকের আসনে তিনি। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা থাকছেন সেটা ঠিক করছেন তিনি। রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে তিনি লড়াই করেন হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে সব ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করে জয় পান ট্রাম্প। নির্বাচন-পূর্ব প্রচারণার সময় থেকেই নানা সমালোচনায় ডুবে ছিলেন। তিন ধাপের বিতর্কেও পরাজিত হয়েছিলেন। ছিল না এ ধরনের পদে নির্বাচনে লড়াইয়ের কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। তবু সবাইকে চমকে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। এই চমককে অগ্রাহ্য করতে পারেনি টাইম ম্যাগাজিনও। তাই ২০১৬ সালের টাইম ম্যাগাজিনের ‘পার্সন অব দ্য ইয়ার’ বা সেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টাইমের সম্পাদক বলেন, ট্রাম্পকে সরাসরি নির্বাচিত করা হয়। পছন্দের তালিকায় হিলারি ক্লিনটন ছিলেন দ্বিতীয়। টাইম জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নিয়ম-কানুন নতুন করে এঁকেছেন ট্রাম্প। টাইম ম্যাগাজিন তাদের চলতি সংখ্যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বর্ষ সেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত করে লিখেছে, ‘প্রেসিডেন্ট অব দ্য ডিভাইডেড আমেরিকা।’ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায়, বিভক্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। শিরোনাম দেখেই  বোঝা যাচ্ছে, তাকে নির্বাচিত করে যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ দেখা দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেন বেছে নিল টাইম ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ সেটারও ব্যাখ্যা দিয়েছে। ২০১৬ সালে ট্রাম্পকেই সেরা ব্যক্তিত্ব ঘোষণার পেছনে শুধু তার প্রচারণাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি বরং তার রাজনৈতিক দর্শন ও তার রাজনীতিতে উত্থানকে সময়ের একটি বড় বিবর্তন হিসেবে দেখা হয়েছে। বাস্তবতাও তাই বলে। ট্রাম্প অবিশ্বাস্যভাবে এ অবস্থানে এসেছেন। টাইমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ইলেকট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন জনগণ তার নির্বাচনের দিন থেকে শপথ গ্রহণের দিন পর্যন্ত এরই মধ্যে যেসব পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে সেগুলো দিয়ে তাকে বিচার করবে। ট্রাম্প দাবি করছেন, তার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা তার জয়ে আবার কর্ম উদ্দীপনা ফিরে পেয়েছে। বিভক্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শিরোনাম দেওয়া হলেও ট্রাম্প বলছেন, অনেক জনসংখ্যা থাকলেই কেবল মহান দেশ হয় না, এই দেশের সবকিছুই অন্য সবার চেয়ে আলাদা, তাই সবার শীর্ষে আছে তার আমেরিকা প্রেম। অবশ্য টাইমের শিরোনাম নিয়ে ক্ষেপেছেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এনবিসি নিউজের সঙ্গে এক টেলিফোন প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, ‘বিভক্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে মনে করি না আমি, আমি মনে করি দেশকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে নেওয়ার পক্ষেই জনতা রায় দিয়েছে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম নিউইয়র্কে ১৯৪৬ সালে। তার বাবা ছিলেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। পৈতৃক ব্যবসাতেই মনোযোগ দেন তিনি। বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ ডলার ধার করে ব্যবসায় নামেন তিনি। পরে বাবার ব্যবসাও নিজের হাতে নেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সফলতার দেখা পান ম্যানহাটনে এসে। তারপর টাকার পাহাড় গড়ে তোলা শুরু। এই ধনকুবের ব্যবসায়ীর আরও পরিচয় আছে। ব্যবসায়ী ছাড়াও তিনি মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন দীর্ঘদিন। এখান থেকেই তার পরিচয় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এপ্রেনটিস্ট নামের একটি রিয়েলিটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। রেসলিং ম্যাচও উপস্থাপনা করেছেন। ব্যবসায়িক সংকটেও পড়েছেন তিনি। বেশ কয়েকবার নিজেকে  দেউলিয়াও ঘোষণা করেছেন। ব্যবসায়িক ঝামেলায় জড়িয়ে মামলা ঠুকেছেন এবং মামলা  খেয়েছেনও। সব মিলিয়ে তার ৯০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তার আছে  ৫৮ তলা একটি ভবন, স্পোর্টস ক্লাব, শেয়ার বাজারে পুঁজি। রাজনীতিতে তার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। গত বছর রিপাবলিকান পার্টিতে বিশাল অনুদান দিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আসেন। তারপর তো বিশ্বজয়ের গল্প!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর