বুধবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইউরোপ কাহিনী

আবদুল কাদের

ইউরোপ কাহিনী

৫০টি দেশ নিয়ে গঠিত ইউরোপের ইতিহাস সুপ্রাচীন। আর এই প্রাচীন ইউরোপ ইতিহাসে রচনা করেছিল অসংখ্য ঘটনার। অসংখ্য সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটেছিল এই মহাদেশে। বহু অদ্ভুত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ইউরোপকে করেছে চমকপ্রদ। ঘটনাবহুল ইউরোপের মজার সব ইতিহাস নিয়ে আজকের রকমারি—

 

ইউরোপ রহস্য

প্রাচীন গ্রিক থেকে ইউরোপ শব্দের উত্পত্তি। পৌরাণিক গ্রিকশাস্ত্রে, ইউরোপা নামে এক ফিনিশীয় সুন্দরী রাজকুমারী ছিলেন। তায়ের-এর রাজা অ্যাগেনর-এর কন্যা ছিলেন ইউরোপা। জিউস ইউরোপাকে ভালোবাসতেন। জিউস ইউরোপাকে একটি সাদা ষাঁড়ে চড়িয়ে ক্রিটদ্বীপে পালিয়ে যান। পৌরাণিক গ্রিকশাস্ত্রে জিউসকে দেবরাজ মনে করা হতো। দেবতাদের রাজা ও ইউরোপা; মিনস, রাদামান্থুস ও সার্পেদনের জন্ম দেন। বুত্পত্তিগত মতে, বিশ্বে ইউরোপ এসেছে প্রাচীন গ্রিক থেকে যার অর্থ প্রশস্ত, ব্যাপক দৃষ্টি এবং বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি। যদিও ইউরোপের বুত্পত্তি নিয়ে মতবাদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন ইউরোপ এসেছে ইউরেসা শব্দ থেকে যার অর্থ ব্যাপক বিস্তৃত। পৌরাণিক চরিত্রের নামের উত্পত্তি যাই হোক না কেন, প্রথম খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিক ভৌগোলিক বিদরা এই শব্দটি ব্যবহার করে আসছেন। মহাকাব্যিক হোমারের গল্পেও উঠে এসেছে ইউরোপার কথা। সে যুগের অনেক লেখক যেমন— পসেদনিয়াস, স্ট্রাবো এবং টলেমিও উইরোপের বৃত্পত্তি নিয়ে ইতিহাস রচনা করেন। আধুনিক ইউরোপিয়ানরা আরেক দাবি করে থাকেন যে, পাশ্চাত্যের সভ্যতা থেকে গ্রিক এসেছে। যদিও দাবির যৌক্তিকতাও যথার্থ; গণতন্ত্র, দর্শন, ইতিহাস, নাটক, শ্লোক, ওষুধ এবং বিজ্ঞানে ইউরোপ সেরা। যাই হোক, প্রাচীন গ্রিক শাস্ত্রীয় হলেও ১৯ শতকে আধুনিক ইউরোপের উন্নয়ন ঘটেছিল।

 

সংখ্যা তত্ত্বে ইউরোপ

ইউরোপ বৃহত্তর ইউরেশিয়া মহাদেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিমে অবস্থিত। প্রায় ৩৯,৩০,০০০ বর্গ মাইলের ইউরোপ বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। এটি বিশ্বের দুই ভাগ ভূপৃষ্ঠ এবং ৬.৮ ভাগ স্থলভাগজুড়ে রয়েছে। এর চারপাশ জুড়ে উত্তর, আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগর। ইউরাল ও ককেসাস পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাসপিয়ান এবং কৃষ্ণ ও এজিয়ান সাগরের জলপথ ইউরোপকে এশিয়া মহাদেশ থেকে আলাদা করেছে। প্রায় ৫০টি দেশ নিয়ে ইউরোপ গঠিত। বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১১ ভাগ নিয়ে ইউরোপ বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল মহাদেশ। গোটা ইউরোপে প্রাচীন গ্রিস ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির আধিক্য বেশি। ইউরোপ মহাদেশের ৫০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত দেশ হলো— স্পেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি। কাজাখস্তান, জর্জিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া ও তুরস্ক এই পাঁচটি দেশের বর্ডারজুড়ে আছে ইউরোপ-এশিয়া মহাদেশ। মহাদেশটিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা হলো ইউরো। মহাদেশটির সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া আর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। বলাবাহুল্য, অস্ট্রিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মহাদেশ এবং এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাদেশ।

 

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলস্বরূপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবির্ভাব। ১৯৪৮ সালের হেগ সম্মেলন ইউরোপীয় ফেডারেল ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইইউর দেশগুলো শুধু তাদের মহাদেশ ও দেশের সীমানাই ব্যবহার করে না, তারা নানা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেলবন্ধনও তৈরি করে। ইইউতে মোট ৪৭টি সদস্য দেশ রয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্য গেল বছর ইইউ থেকে বেরিয়ে আসে। গণতন্ত্র প্রতিস্থাপন ও মানবাধিকার সুরক্ষায় ইইউর মূল কাজ। ইইউর আইনি বাধা নেই, তথা সমগ্র ইইউর মানবাধিকার নিয়ে তারা একত্রে কাজ করে। বেলারুশ, কাজাখস্তান এবং ভ্যাটিকান সিটিকে ইইউর বাইরে রাখা হয়েছে। ২৮টি দেশ ইইউতে যোগ দেয়। ইইউ গোটা মহাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একে অপরকে সহায়তা করে। ইউরোপের প্রায় ২৯টি দেশ মুদ্রা হিসেবে ইউরো ব্যবহার করে। ১৯৪৯ সালের ৫ মে প্রথম ইউরোপ দিবস পালন করা হয়েছিল। এর পরের বছর ১৯৫০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৯ মে ইউরোপ দিবস পালন করা হয়।

 

সবচেয়ে ধনী মহাদেশ

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক ধন-সম্পদের স্থান ইউরোপ। আর গোটা বিশ্বই ইউরোপকে চিনে সবচেয়ে ধনী মহাদেশ হিসেবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল যেখানে ১৮টি দেশ একই মুদ্রা অর্থাৎ ইউরো ব্যবহার করে থাকে। ইউরোপিয়ান শহরগুলো ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। ইউরোপিয়ানদের ধনী ঐতিহ্য, খাবার এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা ও অঞ্চলগুলো বরাবরের মতো বিশ্বেবাসীকে বেশ আকৃষ্ট করে। ইউরোপের অর্থনীতির বিরাট অংশজুড়ে আছে এই দর্শনীয় স্থান। ইউরোপের সেরা ভ্রমণ শহর হলো— প্যারিস, বার্সেলোনা, রোম, লন্ডন ও বার্লিন। বিশ্বের ধনী দেশগুলো বেশির ভাগই এ মহাদেশে। সিইউএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এর তালিকায় ইউরোপ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মহাদেশ। এখানকার মানুষের মাথাপিছু আয় প্রায় ২৬ ডলার। যদিও বর্তমানে ধনী মহাদেশের তালিকায় নিচে নেমে গেলেও বিগত কয়েক বছরে ইউরোপের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৯ শতাংশ যা আরও বাড়বে বলে মনে করে ইউরোপিয়ান কমিশন।

 

সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন

পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটেছিল বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্র ইউরোপ মহাদেশে। অসংখ্য ছোট-বড় সাম্রাজ্যের ইতিহাসের রাজসাক্ষী এই ইউরোপ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল। প্রায় ৩৬ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ছিল বিশালাকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। সে সময় সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ৪৮০ থেকে ৫৭০ মিলিয়ন। এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ক্ষমতার উচ্চ শিখরে অবস্থান করেছিল। এটা বলা হয়ে থাকে, ‘সূর্য কখনো ডোবে না, এই সূর্য সাম্রাজ্য সব সময়ই জ্বলজ্বল করেছিল এবং এই সাম্রাজ্য বিশ্বের এক-চতুর্থাংশজুড়ে রাজত্ব করেছিল।’ ইউরোপের ইতিহাসে আরও অনেক সাম্রাজ্য আধিপত্য বিস্তার করেছিল যুগের পর যুগ। তেমনি ইতিহাস গড়া সাম্রাজ্য হলো- রাশিয়ান সাম্রাজ্য, ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য, পর্তুগিজ সাম্রাজ্য, ডাচ সাম্রাজ্য, সুইডিশ সাম্রাজ্য, বেলজিয়াম সাম্রাজ্য এবং সর্বোপরি সর্বাধিক পরিচিত অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস রচিত হয়েছিল ইউরোপ মহাদেশে। রয়েছে রোমান সাম্রাজ্যের উপনিবেশ সভ্যতার অসংখ্য নিদর্শন। রোমান এবং অটোমান সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং বেশি সাফল্যের সাম্রাজ্য।

 

চার সাম্রাজ্যের পতন

ইউরোপ তার গঠনকৃত মহাদেশের ভিতরের দেশগুলোর মধ্যে খুব বেশি যুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ মহাদেশে নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ তার প্রাচীন সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে চারটি সাম্রাজ্য হারিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সমগ্র বিশ্বের নজর ছিল ইউরোপের দিকে। এটি দুই পক্ষের যুদ্ধ হয়ে ওঠেছিল। প্রথমত, মিত্রশক্তির যুদ্ধ আর দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় ক্ষমতার যুদ্ধ। প্রাথমিকভাবে মিত্রশক্তির দেশগুলোর মধ্যে যুক্ত ছিল গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। আর কেন্দ্রীয় ক্ষমতার দেশের মধ্যে যুক্ত ছিল জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি। অবশেষে মিত্রশক্তির দেশের শক্তির আরও বাড়ে যখন আমেরিকা ও জাপান প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। অতীতের মহাবিশ্বে যত বড় যুদ্ধ হয়েছিল তার মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল অন্যতম। এই যুদ্ধে ইউরোপের মানচিত্র থেকে জার্মান, রাশিয়ান, অটোমান ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যগুলো চিরতরে হারিয়ে যায়। যুদ্ধের পর ইউরোপ দেখে এক নতুন মানচিত্র। প্রাচীন এসব সাম্রাজ্য ও তার অসংখ্য নিদর্শন বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই যুদ্ধ জাতিগতভাবে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। যার ফলস্বরূপ জাতিসংঘের উদ্ভব ঘটে।

 

বিশ্বযুদ্ধের জন্মভূমি

দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কিছু কিছু দেশে অশান্তি শুরু হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ২১ বছর পর বিশ্ববাসী দেখেছিল আরেকটি নতুন যুদ্ধ। যা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিশ্বযুদ্ধ। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটিই ছিল এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল, ছয় বছরের এই বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ববাসী পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। যার রেশ ইউরোপেও পড়েছিল ভয়াবহভাবে। বিশ্বের চারটি মহাদেশের মোট ৩০টি দেশ এই বিশ্বযুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। এটিও ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো মিত্রশক্তি ও কেন্দ্রীয় ক্ষমতার শক্তির লড়াই। এই যুদ্ধে মিত্রশক্তিতে ইউরোপের গ্রেট ব্রিটেন, রাশিয়া, গ্রিস, আমেরিকাসহ বেশ কিছু দেশ যুক্ত ছিল। ঠিক তার বিপরীতমুখী দলে যুক্ত ছিল ইতালি, জাপান এবং জার্মানি। এই যুদ্ধে গোটাবিশ্ব দেখেছিল ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। দুই পক্ষের যুদ্ধে জার্মানির অংশে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠেছিল জাতিসংঘ। ইউরোপ মহাদেশ অতীতে এর আগে কখনো এত বড় ধ্বংসযজ্ঞ দেখেনি।

 

এক সময় ছিল মরুভূমি

অনেক বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, ৬,০০,০০০ বছর আগে ভূমধ্যসাগর মরুভূমি ছিল। ৯,৬৫,০০০ বর্গমাইলের এই ভূমধ্যসাগরের গত ৪০ বছরের ইতিহাসে প্রায়ই সাগরের পানির স্তর কমে আসছিল। ইউরোপ মহাদেশের অতীতের ইতিহাসও এমন সাক্ষী দেয়। বেশ কিছু প্রাচীন সভ্যতা থেকে জানা যায়, ভূমধ্যের পাড়গুলো অতীতে কাছাকাছি ছিল। অনেক সম্প্রদায়ের মানুষ এখান থেকে সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে বাণিজ্য করত। কিন্তু এক সময় এই ভূমধ্যসাগর ছিল শুকনো মরুভূমি! আরও জানা যায়, অতীতে ভূমধ্যসাগরে লবণাক্ত সংকট ছিল ব্যাপক। অবিশ্বাস্য এই চাঞ্চল্যকর তথ্য আবিষ্কার করেন ভূতাত্ত্বিক গবেষক কেনেথ জে স্যু। তিনি বলেন, ‘অনেককাল আগে ভূমধ্যসাগর মরুভূমির মতো ছিল। সে সময় এই সাগরটি জলপ্রবাহ অনেক বাধার সম্মুখীন হতো।’ এ সম্পর্কে আরেক বিশেষজ্ঞ রব বাটলার বলেন, ‘এই ভূমধ্যসাগরের বরফের অঞ্চলের বাইরের লবণাক্ত সংকট সে সময়ের জলবায়ু পরিবর্তনের দারুণ উদাহরণ ছিল, যা ভূমধ্যসাগরের অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী ভূতাত্ত্বিক রেকর্ড থেকে এমনটি জানা যায়।’

 

জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি

ইতালির সিসিলি দ্বীপের আগ্নেয়গিরি মাইন্ট অ্যাতনা ইউরোপের সবচেয়ে বড় জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরির টিলার উচ্চতা সর্বোচ্চ ৩৩৫০ মিটার। জ্বলন্ত এই অগ্নিশিখাটি ইতালির উত্তরে অবস্থিত। এটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি বলা হয়ে থাকে। ২০১৬ সালের মে মাসের দিকে শেষবার লাভা ছড়ায় ইতালির মাউন্ট অ্যাতনা আগ্নেয়গিরি। মাঝে মাঝে ১০,৯২৬ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে ঠিকরে বেরোনো লাল লাভার দৃশ্যপট ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। যদিও ভয়ঙ্কর সুন্দর দৃশ্য দেখতে নিরাপদ দূরত্বে এসে ভিড় করেন অসংখ্য পর্যটক। এটি প্রাচীনকালের একটি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ বছর এর উত্পত্তি ঘটেছিল। আর খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে থেকে জীবন্ত ক্যাটালান প্রদেশের সিসিলির এই আগ্নেয়গিরি। স্ট্রম্বেলিও একই অঞ্চলের আরেকটি সবচেয়ে বেশি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। এটি ভূমধ্যসাগরীয় আলোকস্তম্ভ নামে পরিচিত। প্রাচীন গ্রিক শাস্ত্রে বলা হয়, এটি পবন দেবতার দ্বীপ। স্ট্রম্বেলি হলো ইউরোপের ভূখণ্ডের একমাত্র জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি যা সব সময়ই লাভা ছড়ায়। এ ছাড়াও ইউরোপে মাউন্ট ভেসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি ও ভেত্নাজকুল হিমনদী রয়েছে।

 

অদ্ভুত ইউরোপ

ইউরোপের প্রায় ২১টি দেশ ওয়াইন উৎপাদন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব সময় এসব ওয়াইন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখে। বিশ্বের সরবরাহকৃত ওয়াইনের প্রায় ৪৪ ভাগ আসে ইউরোপ থেকে। 

 

ইউরোপের জার্মানিতে বিয়ের আগের দিন রাতে বর-কনের পরিবার ও বন্ধুরা তাদের ঘরের বাইরে কাচের জিনিস ছুড়ে ফেলেন। নতুন দম্পতিরা সেই ভাঙা কাচের টুকরাগুলো ঝাড়ু দিয়ে নতুন ঘরে প্রবেশ করেন। তাদের বিশ্বাস, এতে নবদম্পতির দাম্পত্য মধুর হয়।

 

ইউরোপ মহাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া এবং রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটির আয়তন ০.২ বর্গ মাইল এবং সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ার আয়তন ৬,৬০২,০০০ বর্গ মাইল।   

 

ইউরোপে অনেক ছোট-বড় পর্বতমালা রয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় পর্বতমালা মাইন্ট এলবারাস, জনপ্রিয় পর্বত আল্পস, দ্য কার্পাথাইন্স, দ্য কসাস মাউন্টেইন এবং দ্য পিরেনাস পর্বতমালা হাইকিং ও স্কিয়িং-এর জন্য বিখ্যাত।  

 

ইউরোপের গ্রেট ব্রিটেনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সংরক্ষিত প্রাচীন নিদর্শনগুলোর ১০০ ভাগের মাত্র এক ভাগ প্রদর্শিত হয়। 

 

ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু শৌচাগার রয়েছে মাউন্ট ব্লাঙ্কে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪২০০ মিটার উচ্চতায় থাকা শৌচাগার।

 

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ইউরোপের বসনিয়ার পেরুকিকা রেইন ফরেস্টটি ইউরোপ মহাদেশের সর্বশেষ রেইন ফরেস্ট।

 

বুলগেরিয়া হলো ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন দেশ, যা খ্রিস্টপূর্ব ৬৮১ সালে তৈরি হওয়ার পর থেকে আজও অপরিবর্তিত।

 

আধুনিক রাশিয়ায় এখনো প্রায় ১৩ হাজারেও বেশি বসতিহীন গ্রাম রয়েছে।

 

সুইজারল্যান্ডে রাত ১০টার পর টয়লেটের ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কারণে যদি ফ্ল্যাশ করেও বসেন তাহলে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা।

 

স্পেনের আইন অনুযায়ী, অতিরিক্ত আরেক জোড়া চশমা আপনাকে সঙ্গে রাখতে হবে। দুই জোড়া চশমা ছাড়া গাড়িতে উঠলে জরিমানা গুনতে হবে।

 

ইতালির পিসা টাওয়ারটি ঘণ্টা বাজানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। টাওয়ারটি তৈরিতে ২০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। কিন্তু এখনো টাওয়ারটি একদিকে ঝুঁকে আছে। 

 

ইউরোপের ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ড হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ। যার দৈর্ঘ্য ২৭০০০ মাইল।

 

ফিনল্যান্ড একমাত্র দেশ যেখানে প্রতি বছর বৃদ্ধ স্ত্রীকে কাঁধে চড়ানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এবং এ জন্য জয়ী দম্পতিতে পুরস্কৃৃত করা হয়।

 

পিঁপড়াদের উপনিবেশ বা কলোনি, অবাক হওয়ার মতোই কথা! উত্তর ইতালি ও স্পেনের পাশে প্রায় ৬০০০ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে গঠিত আর্জেন্টাইন পিঁপড়াদের কলোনি।  

 

স্পেনের শহরে প্রতি বছর আগস্টে ঐতিহ্যবাহী লা টমাটিনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে ১ লাখ ৫০ হাজার টমেটো ছোড়া হয়।

 

Llanfairpwllgwyngyllgogerychwyrndrobwllllantysiliogogogoch ওয়েলসের অ্যাঙ্গেল্রির এই নামের গ্রামটি হলো ইউরোপের সবচেয়ে বড় গ্রাম্যদ্বীপ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাম যাতে ৫৮টি অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে।

 

 

দুই মহাদেশের শহর

প্রাচীনকাল থেকেই তুরস্কের শহর ইস্তাম্বুল দুই মহাদেশের শহর হিসেবে পরিচিত। এটি শুধু শহরই নয়, বরং বলা চলে একটি কিংবদন্তি। এশিয়া ও ইউরোপকে একত্রে বলা হয় ইউরেশিয়া, যার বিভাজন রেখা হলো বসফোরাস, আর এই বরফোরাস প্রণালির অবস্থান প্রাচীন এই শহরে। শহরটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর একটি শহর। ইস্তাম্বুল ইউনেস্কোর তালিকায় ইউরোপের রাজধানী শহরের মর্যাদা পেয়েছিল ২০১০ সালে। এটাই একমাত্র শহর যার ভৌগোলিক অবস্থান দুই মহাদেশে। পরিকল্পিত শহরটি দেখতে স্বপ্নের জগতের মতো। ইস্তাম্বুলের ইতিহাসে অসংখ্য সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ঘটেছিল। এক সময় এই ইস্তাম্বুল শহরই ছিল তুরস্কের রাজধানী। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শত্রুরা শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল বলে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়। তাই বলে প্রাচীন রাজধানী ইস্তাম্বুলের গুরুত্ব কোনো অংশে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। এক সময় ইস্তাম্বুলই ছিল পৃথিবী শাসনকারী বাইজানটাইন ও পরবর্তীতে অটোম্যান সাম্রাজ্যের রাজধানী। একবার বিখ্যাত নেপোলিয়ন বোনাপার্তি বলেন, ‘গোটা পৃথিবীকে যদি একটি রাজ্য ভাবা হয়, ইস্তাম্বুল হবে তার রাজধানী।’

 

রঙিন রোমানীয় সমাধি

সমাধি বা কবরস্থান মন খারাপের স্থান। কিন্তু সেটি যে মজাদার এবং বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে তা উত্তর রোমানিয়ার এই কবরস্থান না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। সাপান্তা, উত্তর রোমানিয়ার কবরস্থান, যা শুভ সমাধির জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এই কবরস্থানটিকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট হিসেবে সবাই চেনে। সাপান্তা এমনই এক কবরস্থান যা গোটা বিশ্বের ভ্রমণপিপাসু মানুষকে আকৃষ্ট করে। হয়তো ভাবছেন, এটা কী করে সম্ভব? সাপান্তার সমাধির পাথরগুলো বিরল নকশা করা হয়। প্রতিটি কবরের জন্য ওক গাছের কাঠ থেকে একটি বড় ক্রস স্ক্যাল্পাচারড তৈরি সমাধির পাথরে দাঁড় রাখা হয়। আর সেই কাঠের ওপরে করা হয় প্রাণবন্ত রঙের নকশা। রং হিসেবে দেওয়া হয় লাল, নীল, সবুজ, হলুদের ছোঁয়া। অনেকটা মজার ছলে হাস্যরসে স্ক্যাল্পাচারডে করা নকশায় তুলে ধরা হয় মৃত ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী। ১৯৩৫ সালে রোমানিয়ান হস্তশিল্পী লন স্টান পাত্রাস মানুষের মাঝে এ ধারণা দেন। ডাকিয়ানদের প্রাচীনতম ঐতিহ্য এটি। ডাকিয়ানরা রোমানিয়ানদের পূর্বপুরুষ। মৃত ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অমরত্বে এমনকি মৃত্যুতে শোক না করে হাসিমুখে থাকার জন্য এমনটি করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর