শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গুডবাই ওবামা

তানভীর আহমেদ

গুডবাই ওবামা

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ। আমেরিকার এই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী হনুলুলু। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল এক বালকের জীবনের গল্প। এক সময় হনুলুলু ছেড়ে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা চলে যায় সে। জাকার্তার কিন্ডার গার্টেন স্কুলপড়ুয়া সেই ছেলেটি ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ বিষয়ে রচনা লিখতে গিয়ে লিখেছে— ‘আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই’। ২০০৮ সালে এসে সেই ছাত্রটি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বারাক ওবামা। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়লেন। তারপর দ্বিতীয় মেয়াদেও নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়লেন ওবামা। বিদায়ী ভাষণে কাঁদলেন, কাঁদালেন বিশ্ববাসীকে। তার শাসনামলে যেমন অর্জন রয়েছে তেমনি রয়েছে সমালোচনাও। ওবামার উত্থান ও শাসনামলের নানা ঘটনা নিয়ে আজকের রকমারি—

 

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলুতে ওবামার জন্ম। বাবা-মা আদর করে ছেলের নাম রাখেন বারাক হোসেন ওবামা। ডাক নাম ব্যারি। বারাক অর্থ আশীর্বাদপ্রাপ্ত। ওবামার বাবা সিনিয়র বারাক ওবামা আর তার মা অ্যান ডানহাম। ওবামার দাদা ছিলেন ব্রিটিশদের কুক। ওবামার যখন দুই বছর বয়স তখন ওবামার বাবা ও মায়ের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পর ব্যারির মা এক ইন্দোনেশিয়ানকে বিয়ে করেন। ১৯৬৭ সালে এই দম্পতি হনুলুলু ছেড়ে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় চলে যান। সঙ্গে ছয় বছরের ব্যারি। এখানে এসে ব্যারির নাম বদলে বারাক ওবামার পরিবর্তে রাখা হয় ব্যারি সোয়েটরো। ব্যারির পরিবার যেখানে বাস করত সেটি ছিল প্রায় গ্রামের মতো এলাকা। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল জলাভূমি। প্রথম প্রথম ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নেন ব্যারি। আমেরিকা থেকে সোজা জাকার্তা। নতুন এক দেশ, নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতি সবই ব্যারির কাছে নতুন। নতুন এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে খুব বেশি সময় নেননি ছোট্ট ব্যারি। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ভাষা, সংস্কৃতি সবকিছুই শিখে ফেলেন। জাকার্তায় ব্যারির একটু সমস্যা হয়েছিল। গায়ের রং কালো হওয়ায় তার সমবয়সী ছেলেদের উত্ত্যক্ত সহ্য করতে হয়েছিল। ১০ বছর বয়সে হনুলুলুতে ফিরে আসেন ওবামা। হাইস্কুলের পাঠ শেষে ওবামা চলে আসেন লস অ্যাঞ্জেলসে। তারও দুই বছর পর নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে আসেন। বারাক ওবামার জীবনের মোড় পাল্টে যায় ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করার পর। কিছুদিন বিজনেস ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনে এবং নিউইয়র্ক পাবলিক ইন্টারেস্ট রিসার্চ গ্রুপ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ব্যারি। এই কাজে ভালো করলেও তিনি মানসিকভাবে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। অবশেষে মন না টেকায় সেখান থেকে চলে যান শিকাগোতে। শিকাগোতে এসে জীবনটাকে অন্যভাবে দেখতে শুরু করেন। সেখানে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে তিন বছর কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে শিকাগোতে এসে অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড ল’ কলেজে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য চলে এলেন ওবামা। হার্ভার্ডের দিনগুলোতে যদিও পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত সময় কেটেছে, কিন্তু মন পড়ে ছিল শিকাগোতে। হার্ভার্ডের পাঠ শেষ করে আবার চলে এলেন শিকাগোতে।

ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামার সঙ্গে তার পরিচয়ও সেই শিকাগোর সাউথ সাইডে। বিয়ে হয় তার সঙ্গেই। মিশেল ও ওবামা দম্পতি এখন দুটি কন্যাসন্তানের জনক-জননী। তাদের নাম মালিয়া ও সাশা। কিন্তু আজকের ওবামার পথচলা আরও পরে। রাজনীতির শুরুতেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েন। ১৯৯৬ সালে ইলিনয়ের সিনেটর নির্বাচিত হন ওবামা। এখান থেকেই তার যাত্রা শুরু। এরপর ২০০৪ সালে বোস্টনে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে এক বক্তৃতা দেন তিনি। সেই ভাষণে তিনি মার্কিন অর্থনীতি ও সামাজিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পাল্টানোর কথা এবং ইরাক যুদ্ধে বুশ প্রশাসনের ঘৃণ্য ভূমিকার কথা বলেছিলেন। তার এই যুগান্তকারী ভাষণের কারণেই সেদিন জাতীয় এক ব্যক্তিত্ব বনে যান ওবামা। ২০০৪ সালে আমেরিকার সিনেট নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওবামা ৭০% ভোট নিয়ে জিতে যান। এরপর ২০০৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান ডেমোক্রেটিক দল থেকে। তারপর এলো ২০০৮ সালের ঐতিহাসিক ৪ নভেম্বর। সেদিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপক্ষ রিপাবলিক দলের পদপ্রার্থী জন ম্যাককেইনকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে বিজয়ী হন বারাক ওবামা। বর্ণবিদ্বেষী সমাজের, মানুষের প্রেসিডেন্ট হয়ে বারাক ওবামা আরেকটি মাইলফলক ছুঁয়ে যান। দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বারাক ওবামা হয়ে ওঠেন বিশ্বের এক অনুপ্রেরণার নাম। ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’—নামে নিজের লেখা একটি বইয়ে বারাক ওবামা তার জীবনের অনেক না বলা কথা তুলে ধরেছেন। বইটিতে বারাক ওবামা তার ছেলেবেলা ও বাবার কথা লিখেছেন। বইটির এক অংশে লিখেছেন— একসময় লস অ্যাঞ্জেলসে থেকে পড়াশোনার জন্য নিউইয়র্ক চলে আসেন ওবামা। চারদিকে এত সম্পদের নষ্টামি তাকে বেশ ভাবাত। তখনো তার বয়স মাত্র ২২। যখন নিউইয়র্ক এলেন তখন সিঁড়িঘরে রাত কাটাতে হয়েছে ওবামাকে। ভাড়া না পাওয়ার কারণে বন্ধুর সস্তা অ্যাপার্টমেন্টে আশ্রয় নেওয়ার স্মৃতি মনে পড়লে চমকে না উঠে উপায় নেই। ওবামার একজন পাকিস্তানি বন্ধু তাকে আশ্রয় দেন। সেই বন্ধু তাকে একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলেন। যেমন নিউইয়র্ক হলো পা মাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার জায়গা। এখানে ভালো মানুষেরা টিকতে পারবে না। তবে ওবামার কিছু একটা করে দেখানোর ব্যাপারটা তিনি মর্যাদা দেন এবং পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন। বন্ধুটির ধারণা ছিল এই সিটি হয় তো ওবামাকে বদলে দেবে। কিন্তু বারাক ওবামা ছিলেন অন্য ধাঁচের মানুষ। পাকিস্তানি বন্ধুর কথাগুলো তার ভালো লাগে এবং মনে গেঁথে যায়। ওবামা একটা কোম্পানিতে রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। সেখানে এক ডোরম্যান তাকে বলেন, তার গলা এত দারুণ সে কেন অর্গানাইজিং সময় নষ্ট করবে? সময় থাকতেই ওবামার উচিত টিভি বা সেলসে চলে যাওয়া। ওবামা যাননি। তিনি বরং নিজের দেখা স্বপ্নের পথে হাঁটতে শুরু করেন। হয়ে ওঠেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

 

হোয়াইট হাউস ছেড়ে থাকবেন ৯ বেডরুমের বাড়িতে

নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসবেন, হোয়াইট হাউস ছাড়তে হবে ওবামাকে। নতুন বাড়ির খোঁজ পেয়েছেন তিনি। মেয়ের হাইস্কুল কাছেই বলে খুব বেশি দূরে যাচ্ছেন না তিনি। সরকারি বাসভবন  ছেড়ে ৯ বেডরুমের ফ্ল্যাটে উঠবেন ওবামা। আগে  যেখানে থাকতেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সচিব জো লোখার্ট। নতুন এই বাড়িতে উঠবেন ২০ জানুয়ারি। ইটের তৈরি ওই বাড়ির প্রতি মাসের ভাড়া বাবদ ওবামাকে গুনতে হবে ২২ হাজার ডলার। সাদা বাড়ির মতো বড় না হলেও নতুন ঠিকানার সামনেও রয়েছে একটি বড় বাগান।

হোয়াইট হাউস থেকে তার নতুন বাড়িটি প্রায় দুই মাইল দূরে। রিয়েল এস্টেট অ্যাজেন্সির হিসাব মতে, ৮ হাজার ২০০ স্কয়ার ফুটের এ বাড়িটি ১৯২০ সালে নির্মাণ করা হয়েছি। এরপর বড় ধরনের সংস্কার করা হয় ২০১১ সালে। চারতলা বাড়িটি বেশ খোলামেলা ও আলো-বাতাসে পূর্ণ। নয়টি শোবার ঘর ও আটটি গোসলখানা রয়েছে এই বাড়িতে। এ ছাড়া পুরো বাড়িতে রয়েছে তিনটি ফায়ার প্লেস, যা বাড়িকে গরম রাখবে কনকনে শীতে। একটি বার ও বিশাল ঝুল বারান্দাও রয়েছে। বাড়ির সামনের সবুজ বাগানটিতে রঙিন ফুলের সমাহার রয়েছে। বাড়ির উঠোনে ঢুকতে পারবে অতিথিদের একাধিক গাড়ি। নিরিবিলি পরিবেশের জন্য বাড়িটি পছন্দ হয়েছে ওবামা পরিবারের। মেয়ে সাশার পড়াশোনার সুবিধা হয় এমন বাড়ি খুঁজতে গিয়ে ওবামার নজরে পড়ে এটি। নেই কোলাহল। বেশ নির্জনেই থাকা যাবে।

 

উল্লেখযোগ্য যা কিছু

‘আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই’

পঞ্চাশ বছর আগের কথা। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল। সেখানকার একজন ছাত্র ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ বিষয়ে রচনা লিখতে গিয়ে লিখেছে— ‘আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই’। তার এই কাণ্ড দেখে শিক্ষকসহ সবাই তো হেসে খুন। তিন বছর পর আবার একই কাণ্ড ঘটাল ছেলেটি। আবারও নিজের লক্ষ্য কেবল প্রেসিডেন্ট হওয়া বলেই লিখল ছেলেটি। এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। সেই ছেলেটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে ওঠে। তখনো কেউ টের পায়নি সেই ছেলেটি ধীরে ধীরে তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮-এ এসে সেই ছেলেটিই আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর ২০১২-তে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ আবারও রাখল সেই ছেলেটি। এ ছেলেটি আর কেউ নন, তিনিই বারাক ওবামা।

 

হোয়াইট হাউসে প্রথম রাত

হোয়াইট হাউসে বারাক ওবামা কাটিয়েছেন ৮ বছর। সম্প্রতি নিজের প্রথম দিনটি হোয়াইট হাউসে কাটানোর অভিজ্ঞতার ভিডিওটি টুইট করেছেন ওবামা। এ ছাড়াও লিখেছেন, প্রত্যেকেই উদ্বেল থাকে প্রথম দিনের হোয়াইট হাউসে রাত কাটানোর ব্যাপারে। আনন্দ ও উত্তেজনা দুটিই ছিল তার। ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথম হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই হোয়াইট হাউসই তার বাসভবন ও কর্মস্থল।

 

‘হোয়াইট হাউস সিচুয়েশন রুম’- এ ওবামা কাটান তার শাসনামলের সবচেয়ে উত্তেজনাকর মুহূর্ত

টানটান উত্তেজনা ‘লাদেন হত্যা’

ওবামার শাসনামলে সবচেয়ে উত্তেজনাকর অভিজ্ঞতা ছিল ওসামা বিন লাদেন হত্যা মিশন। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলার প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে আল-কায়েদা প্রধান লাদেনকে হত্যা করতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে সিআইএর বিশেষ কমান্ডো দল অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করে। সে খবর নিতে ‘হোয়াইট হাউস সিচুয়েশন রুম’-এ প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন ওবামা।

 

সম্পদ বেড়েছে ৪৩৮ শতাংশ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ওবামার সম্পদের পরিমাণ ছিল এক মিলিয়ন ডলার। দুই দফা মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন ওবামা। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একটি হিসাব বলছে, ৮ বছরে তার সম্পদ বৃদ্ধির হার শতকরা ৪৩৮ ভাগ। এই সম্পদের বড় অংশই এসেছে ব্যক্তিগত আয় থেকে। এ ছাড়া স্ত্রী মিশেল ওবামার আয়ও এখানে যোগ হয়েছে।

 

ওবামাকে চাকরির প্রস্তাব

ওবামাকে কৌশলে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্ট্রিমিং সার্ভিস স্পটিফাই। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট অব প্লেলিস্ট’ পদের জন্য তারা এমন একজনকে খুঁজছেন যার রয়েছে বিশ্বের অত্যন্ত মর্যাদাবান কোনো জাতিকে আট বছর পরিচালনার অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া তাকে শান্তিতে নোবেল জয়ী হতে হবে। বলা বাহুল্য, এ দুটো গুণের একমাত্র অধিকারী ওবামা। স্পটিফাইয়ের সিইও ড্যানিয়েল এক টুইটে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিখ্যাত তারকাদের সঙ্গে পরিচিতি প্রার্থীর বাড়তি গুণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

আরও বলা হয়, প্রার্থীর জন্মদিনে যদি কেন্ড্রিক লামার গান পরিবেশন করে থাকেন এবং তিনি যদি সংবাদ সম্মেলনে তার শোনা গানের তালিকা নিয়ে আবেগঘন বক্তৃতা দিতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই।

 

 প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ওবামার বড় ভুল ছিল লিবিয়ায় হামলা

ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যুদ্ধ থেকে বিরত থাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ার চলমান সহিংসতায় ওবামা প্রশাসনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়াতেও মার্কিন আগ্রাসন চালিয়েছেন বিগত মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানরা। এতে লাখ লাখ নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়। সেই কথা স্মরণ করে বারাক ওবামা স্বীকার করে নেন, তার শাসনামলে লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর কী কী প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে সে সম্পর্কে তৈরি থাকার পরও সেই হামলা এবং তারপরের ব্যর্থতা ছিল তার প্রেসিডেন্ট থাকার সময়কালে সবচেয়ে বড় ভুল। আটলান্টিক ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লিবিয়া অভিযান তিনি যেমনটা ভেবেছেন, সে অনুযায়ীই এগিয়েছে। কিন্তু এরপর লিবিয়া এক বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি ফ্রান্স ও ব্রিটেনেরও সমালোচনা করেন। প্রচ্ছন্নভাবে এটাও স্বীকার করেন, ইরাক ও লিবিয়া হামলার কারণেই আইএসের উত্থান হয়েছে তাদের ভুল আগ্রাসন নীতির কারণে। যা তারা ভাবতেও পারেননি।

 

চুম্বকাংশ

 

 

প্রতিরক্ষায় বিশাল বাজেট

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যুদ্ধবাজ কুখ্যাতি রয়েছে। সেই অভিযোগ পিছু ছাড়েনি ওবামাকেও। তার শাসনামলের শেষ ভাগে এসে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন বিশাল প্রতিরক্ষা বাজেট দেওয়ার জন্য। ওবামার শেষ প্রতিরক্ষা বাজেট ৬১৮০০ কোটি ডলারের। ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ)-২০১৭ এ সই করেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেটে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সামরিক ব্যয় ৩২০  কোটি মার্কিন ডলার বাড়ানো হয়েছে। অথচ বেসামরিক খাতের ব্যয় ওই অনুপাতে বাড়ানো হয়নি।

 

হৃদয়জয়ী প্রেসিডেন্ট

যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে পারেননি তিনি। কিন্তু উগ্রবাদ ও আগ্রাসনের ব্যাপারে সংযত ছিলেন। মানুষের সঙ্গে মিশতে পারতেন বলেই ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন বিশ্বজুড়ে। ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল জয় করেন ওবামা। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের এক গির্জায় শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারীর হামলায় ৯ জন নিহত হন। এরপর ৫ হাজার মানুষের সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের সংকট নিয়ে এক আবেগঘন ভাষণ দেন। ওবামা বলেন, ‘একটি জাতি হিসেবে এই ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডিতে ঈশ্বর আমাদের অপার কৃপা করেছেন, কারণ আমরা কোথায় অন্ধ হয়ে আছি, তা আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন।’ ওবামা এতটাই আবেগপূর্ণ কণ্ঠে তার কথাগুলো উচ্চারণ করতে থাকেন যে উপস্থিত শ্রোতারা চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।

 

বিদায়ী ভাষণ

আট বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথমবার জিতে তিনি বিজয়ী ভাষণ দেন শিকাগোতে। আর বিদায় বেলাতেও সেই শিকাগোতেই শেষ ভাষণ দেন বারাক ওবামা। তিনি বলেন, আমাকে ভালো রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন আপনারাই, সঙ্গে ভালো মানুষও। আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই সমান। জীবন, স্বাধীনতা ও আনন্দে থাকার অধিকার সবার সমান। আমাদের এভাবে থাকাই আরও সুন্দর ঐক্য গড়ে তুলবে। গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে গেলে রাস্তা কঠিন হবে, রক্ত ঝরবে। দু-পা এগোতে গেলে এক পা পিছিয়ে আসতে হবে। তবে আমেরিকা থেমে থাকেনি। এগিয়ে গেছে।

 

মজার মানুষ

বরযাত্রী

ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্প্রতি নিজের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে চেপে ঘুরে এসেছেন ফ্লোরিডা থেকে। আর সেখানে তিনি গিয়েছিলেন দীর্ঘদিনের এক সহকর্মীর বিয়ের উৎসবে বরযাত্রী হিসেবে যোগ দিতে। যার বিয়েতে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত জীবনেও সময় বের করেছেন বারাক ওবামা তিনি হলেন, মারভিন নিকোলসন। হোয়াইট হাউসের সফরবিষয়ক পরিচালক।

 

মজুরি

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও সন্তানদের জন্য সাধারণ জীবন কামনা করছেন বারাক ওবামা। তার দুই মেয়ে মালিয়া ও সাশা ন্যূনতম মজুরির কাজে নিযুক্ত হোক, যেমনটি তিনি এবং তার স্ত্রী মিশেল ওবামা করেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেন, আমি আর মিশেল চাই তারা দুজনই সাধারণ কাজে নিযুক্ত হোক।

 

সপ্তাহে একবার চুল কাটানো

ওবামা সপ্তাহে একবার চুল কাটান। শিকাগোর বার্বার জারিফ নামের একটি সেলুনে চুল কাটায়ে নেন। তাতে প্রতিবার তাকে ২১ ডলার দিতে হয়।

 

রকস্টার!

ওবামা একজন রকস্টারও বটে। এই রকস্টার ইতিমধ্যে তার অডিও অ্যালবামের জন্য দুটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও পেয়ে গেছেন। উল্লেখ্য, রক অ্যালবামগুলো হলো তার স্বরচিত গ্রন্থ ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’ এবং ‘দ্য অডাসিটি অব হোপ’-এর অডিও ভার্সন।

 

 

অন্য এক ওবামা

 

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল যাবেন গ্রিস ও পেরু। একই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা দেখা করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ও ইইউর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। জি সেভেন সামিটের ফাঁকে, গুরুত্বপূর্ণ যাত্রার আগে একান্তে আলাপচারিতায় দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রপ্রধান।

 

 

ওয়াশিংটন ডিসির বলরুমে উদ্বোধনী বক্তৃতা দিতে ছুটছেন ওবামা। লিফটে উঠেই প্রেসিডেন্ট স্যুট খুলে ফেলেন। সঙ্গেই ছিলেন তার স্ত্রী মিশেল ওবামা। ব্যস্ততার ফাঁকে দুজনে মেতে ওঠেন খুনসুটিতে। প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার সে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে ভুল করলেন না।

 

 

হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের তাদের শিশু সন্তানদের প্রেসিডেন্ট অফিসে বেড়াতে নিয়ে আসতে বলতেন ওবামা। তাদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতেন শিশুদের মতোই। ছবিতে  প্রেসিডেন্টের কর্মপরিকল্পনা পরিচালকের সন্তান এভিলিনের সঙ্গে বল খেলায় ব্যস্ত ওবামা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর