রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার

জঙ্গিবাদ ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার

জঙ্গিবাদে অর্থায়ন নিয়ে নানা সময় দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। জঙ্গি অর্থায়ন দমনের জন্য সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে রিজিওনাল অ্যান্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজন করে ‘জঙ্গিবাদ ও ব্যাকিং খাতের সংস্কার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। এতে অংশ নেন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গোলটেবিল বৈঠকের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন— গোলাম রাব্বানী, আলী রিয়াজ, তানিয়া জামান ও আবদুল কাদেও ছবি তুলেছেন : রোহেত রাজীব ও রাফিয়া আহমেদ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে নিউজ টোয়েন্টিফোর

 

জঙ্গিবাদের শেকড় কেটে ফেলতে ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার সময়োপযোগী

ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী

ফার্মেসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী ব্যাংকে সংস্কার আনার প্রয়োজন ছিল। অনেকে এটাকে লোক দেখানো পরিবর্তন বলছেন। কেউ বলেছেন, এটা স্থায়ী হবে না। কিন্তু হুট করেই কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে পরিবর্তন ও জঙ্গিবাদের শেকড় কেটে ফেলতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। তবে আমূল সংস্কার সময় নিয়ে করতে হয়। বড় ধরনের সংস্কার হঠাৎ করেই গ্রহণ করতে পারে না সমাজ। ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গভেদে ইসলামী ব্যাংকে যেন সবাই সমান সুযোগ পান। ইসলামী নাম ব্যবহার করে কাউকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। শুধু ইসলামী ব্যাংকই নয়, যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান এ পথ অবলম্বন না করে— সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যাংকগুলো থেকে কোনো রাজনৈতিক ধ্বজাধারী কিংবা বিশেষ শ্রেণির মানুষ যাতে কোনো সুবিধা না পায়। এই ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ অন্য সব ব্যাংকের মুনাফার যোগফলের চেয়ে বেশি। তাই সংস্কার করতে হবে পরিকল্পিতভাবে। ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা সাধারণ মানুষ নয়, মওদুদীবাদী জামায়াতের লোকেরা পেয়েছে। শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন হলে হবে না। এটা মনস্তাত্ত্বিক আদর্শের যুদ্ধ।

 

জামায়াতপন্থি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ এসেছে

ওয়ালিউর রহমান

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব

সরকার অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়ার অভিযোগ জামায়াতপন্থি একাধিক সংগঠনের রয়েছে। এসব সংগঠনের নামে অবৈধ পন্থায় দেশে অর্থ আসে, যা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে ব্যবহূত হয়। বেশ কয়েক বছর আগে এমন একটি লেনদেন আমরা চিহ্নিত করলাম। তাতে দেখা গেল জামায়াতপন্থি একটি প্রতিষ্ঠানের নামে বেশকিছু অর্থ এসেছে। এভাবে নামে বেনামে অবৈধভাবে অর্থ আসছে। এখনো সারা দেশে তাদের বই, মওদুদীবাদী বইপত্র সাপ্লাই করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ। জঙ্গিবাদকে উসকে দিতেই এসব করছে। এটা বন্ধ করতে না পারলে জঙ্গি মুক্ত করা যাবে না। জামায়াতবিরোধী লোকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এত কিছু করা হলো এখনো কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না। জঙ্গিবাদ পৃথিবীতে যেমন মাথাচাড়া দিয়েছে বাংলাদেশেও এই হুমকি রয়েছে। তাই জামায়াতসহ তাদের সব ধরনের আর্থিক, সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করতে না পারলে কোনো পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হবে না।

 

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি  বন্ধ করতে হবে

 

মে. জে. (অব.) আব্দুর রশীদ

নিরাপত্তা বিশ্লেষক

ধর্ম কোনো সমস্যা নয়। তবে ধর্মের নামে রাজনীতি করলে সেটা সমস্যা। কারণ এই জঙ্গিবাদ ধর্মের আফিম দিয়েই তৈরি। আর অর্থ হচ্ছে জঙ্গিবাদের অক্সিজেন। কাজেই অক্সিজেন মুক্ত করা গেলে সে জঙ্গিবাদ মারা যাবেই। ধর্মের নামে চাপাতি আর বন্দুক হাতে ধরিয়ে দেওয়াটাই প্রধান সমস্যা। ইসলামী ব্যাংককে জামায়াত মুক্ত করা একটি চমৎকার উদ্যোগ। শুধু ইসলামী ব্যাংকেই নয়, পুরো ব্যাংক খাতেই এ ধরনের সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামী ব্যাংকের লাভের টাকা গোপনে কোথায় গেছে, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তা নাশকতার কাজে ব্যবহার হয়েছে কিনা-সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) ফান্ডের টাকা কোথায় ব্যয় করা হয়েছে। প্রকৃত ব্যক্তি বা শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফার ভাগ পেয়েছেন কিনা-সেসবও খতিয়ে দেখতে হবে। আর ব্যাংক খাতসহ পুরো আর্থিক খাতকে স্বচ্ছ রাখতে হলে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে হবে এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

 

আর একটি টাকাও জামায়াতের হাতে যাবে না

সামীম মোহাম্মদ আফজাল

পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক ও মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামী ব্যাংক করার একটি নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ওআইসিভুক্ত ২৬টি দেশের অর্থমন্ত্রীদের সমন্বয়ে ইসলামী ব্যাংক খুলতে চেয়েছিলেন। দেশবাসীর অনেকেই তা জানেন না। জামায়াতে ইসলামী চলে মওদুদী দর্শনের আলোকে। ফলে তাদের চিন্তা চেতনায় মওদুদীর দর্শন প্রতিফলিত হয়। কিন্তু বুঝতে হবে, ২০১৬ সালে এই ইসলামী ব্যাংকে দেশি-বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের হয়তো ১৬শ কোটি টাকা আছে। কিন্তু এ দেশের মানুষের প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা জমা আছে এখানে। এই টাকার আমানত গ্রহীতা ও আমানতকারীদের আমানত কীভাবে সুরক্ষা পাবে সে বিষয়ে এক বছর চিন্তা গবেষণা চালিয়েছি। সরকারের ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের উদ্যোগ অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। বর্তমানে পরিচালনা পরিষদে যারা আছেন তারা সবাই অভিজ্ঞ। শুধু বলব, পেশাদারিত্বের সঙ্গে চাকরি করেন। তারা আসলে মাদ্রাসা নাম ব্যবহার করে কোরআন ও হাদিসের ব্যানারে মওদুদী দর্শনের শিক্ষা দিয়েছে। যেসব দুষ্টচক্র রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছিল তারা আর পারবে না। আর একটি টাকাও জামায়াতের হাতে যাবে না।

 

জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে ইসলামী ব্যাংকের পূর্ণ সংস্কার সম্ভব নয়

শাহরিয়ার কবীর

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ’৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

জামায়াত ও মওদুদীবাদের দর্শনকে বাদ না দিলে এবং জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ না করে ইসলামী ব্যাংকের পূর্ণ সংস্কার সম্ভব নয়।  বিভিন্ন সময় জামায়াত নিজেদের প্রয়োজনে খোলস পাল্টিয়েছে। এখনো হয়তো পাল্টাবে। কিন্তু জামায়াতকে সংস্কার করলেই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবে না। ইসলামী ব্যাংকে সংস্কার চালালেই এ ব্যাংকের কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হয়ে যাবে না। বাংলাদেশের বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকায় জামায়াত নিজেদের মওদুদীবাদী হিসেবে পরিচয় না দিলেও আরবি ও উর্দু পত্রিকায় নিজেদের সেই পরিচয় দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশ, বিদেশ থেকে জঙ্গিবাদের ফান্ডিং হয়। আদর্শগতভাবে ইসলামী ব্যাংক জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এসব প্রমাণও পাওয়া যায়। ইসলামী ব্যাংক কৌশল হিসেবে এখন মুক্তিযুদ্ধের অনুষ্ঠানে আর্থিক অনুদান করলেই কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হয়ে যায় না। ফলে ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার চাইলেই হবে না। কসমেটিকস সার্জারি করলেই ইসলামী ব্যাংক ও জামায়াতে ইসলামী তার দর্শন থেকে সরে আসবে না। সুতরাং তাদের সংস্কারের ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

 

ইসলামী নামধারী সব ব্যাংক মনিটরিং করতে হবে

এয়ার কমোডর (অব.) ইসফাক ইলাহী চৌধুরী

নিরাপত্তা বিশ্লেষক

ইসলামী নামে যেসব ব্যাংক রয়েছে বাংলাদেশে ওইসব ব্যাংক জঙ্গিবাদকে চাঙ্গা করার জন্য অর্থের জোগান দিচ্ছে। এ ছাড়া ইসলামী যে ব্যাংকিং ও বীমা ব্যবস্থা বাংলাদেশে রয়েছে তারা শুধু ইসলামের নাম ব্যবহার করেছে। কতগুলো আরবি শব্দ ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। চাল-মরিচের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যবসা করছে। তারা অধিকাংশ গ্রাহকের সম্পত্তি নিলামে তুলছে। আমার কথা হলো ইসলামী ব্যাংক তো পার্টনারশিপে ব্যবসা করবে। তারা লাভ ও ক্ষতির অংশ ভাগাভাগি করবে। কেন সম্পত্তি নিলামে তুলবে। তাহলে অন্য ব্যাংকের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আপনার পার্থক্য কী? ইসলামের নিয়ম হলো, আপনি টাকা রাখবেন আমি সেটা ব্যবসায় খাটাব। লাভ বা লোকসান হলে আপনার প্রাপ্য আপনি বুঝে নেবেন। ইসলামী নাম নিয়ে যত ব্যাংক আছে সবগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের মনিটরিং করতে হবে।

 

জঙ্গিবাদের সঙ্গে জামায়াতের অর্থ সাম্রাজ্যের সম্পর্ক রয়েছে

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন

সাবেক ভিসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জঙ্গিবাদের সঙ্গে জামায়াতের অর্থ সাম্রাজ্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে এ কথাটি আমরা বার বার বলে এসেছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান জাতীয় সংসদে বলেছিলেন ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জঙ্গিবাদের অর্থায়নের যোগসূত্রের কথা। বর্তমানে আমরা শুধু শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই যে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে পারব তা কিন্তু নয়। একদিকে তাদের অর্থ সাম্রাজ্য অটুট থাকবে অন্যদিকে জঙ্গিবাদও নির্মূল হবে এমনটি ভাবারও কোনো কারণ নেই। তবে বহু বছর পরে হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে এবং তাতে বাদ পড়ছে না মীর কাসেম আলীর মতো যুদ্ধাপরাধীও। যে কিনা ছিল জামায়াতের অর্থ সাম্রাজ্যের মূল অধিপতি। সরকার ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এনে জঙ্গি অর্থায়নে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করতে সব খাতেই সংস্কার দরকার

অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান

ভিসি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শুধু ব্যাংক নয়, রাষ্ট্রের সব খাতেই সংস্কার দরকার। সামরিক শাসকরা এ দেশে মৌলবাদকে প্ররোচনা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে জামায়াতকে ফিরিয়ে এনেছে। যার ফল এখন আমরা পাচ্ছি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাম্প্রদায়িক ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করে মৌলবাদের উত্থান করেছেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানো হয়। ব্যাংকিং খাতে যে সংস্কার হচ্ছে বা হয়েছে সেটা অর্থবহ হতে হবে। কোনো আপস করলে চলবে না। ইসলামী ব্যাংক এতদিন ধরে যারা পরিচালনা করেছেন, যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের দিয়ে সংস্কার ধরে রাখা খুব সহজ হবে না। এখনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় অনেকে স্বপদে রয়েছেন। তাই সংস্কার খুবই সহজ হবে বলে আমি মনে করি না। শালশা মার্কা কোনো পরিবর্তনে কাজ হবে না।

 

ইসলামী ব্যাংক সুদ আর মুনাফাকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে

অধ্যাপক মীজানুর রহমান

ভিসি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। আমি কথাটির বিরোধিতা করি। কারণ কোনো ধর্মভীরু লোক যদি আলোকিত না হয় তবে ধর্মান্ধ হতে বাধ্য। ইসলামী ব্যাংক সুদ আর মুনাফাকে ভিন্ন-অর্থে ব্যবহার করে। তারা সুদ ও মুনাফার বাংলা তরজমা করে। তারা আরবি বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট সৃৃষ্টি করে। এগুলোর সঠিক অর্থ আমরা বুঝি না। আমাদের দেশে এই শব্দগুলো কেন? ব্যাংকিং খাতে এই পরিবর্তন এনেই শুধু জঙ্গিবাদ বাদ দেওয়া যাবে না।  শোনা যাচ্ছে কোনো এক মেজর অবসরকালীন যে অর্থ পেয়েছেন তাও জঙ্গিদের দান করেছেন। অনেকে তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে জঙ্গি তৎপরতায় দান করে ইরাকে বা    মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন। শুধু ব্যাংকিং নয়, আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক সংঘ, আছে এটা একটি মতাদর্শ। সেগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের জঙ্গিবাদ দূর করা সম্ভব।

 

যোগ্যতা অনুসারে নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে

আবুল কালাম আজাদ

এমডি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা

ইসলামী ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যে পরিবর্তন এসেছে তা অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। জঙ্গিবাদ বিস্তারে পরোক্ষ বলব না, প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে জামায়াত-শিবিরের। জঙ্গি সব সংগঠনের হিসাব ছিল ইসলামী ব্যাংকের কাছে। সেজন্য মৌলিক পরিবর্তন ঘটানো দরকার। এতদিন ইসলামী ব্যাংকে সংখ্যালঘু নিয়োগ হতো না। কিন্তু বর্তমানে সে ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি, সাহস, বুদ্ধিমত্তা বিশ্বে সমাদৃত। সারা বিশ্বের মানুষ তার সরকার পরিচালনার প্রশংসা করেন। তার দক্ষতা, যোগ্যতা ও প্রজ্ঞা বাংলাদেশকে একটি ভালো পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাই যেভাবে কাজ করছে তাতে আশাবাদী। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা নারীর ক্ষমতায়নে বিরোধিতা করেন। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। যোগ্যতা অনুসারে নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে।

 

প্রকৃত ধর্মের আদর্শ প্রচার না হওয়ায় জঙ্গিবাদের সৃষ্টি

মাওলানা জিয়াউল হাসান

সভাপতি, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এ দুটি শব্দকে আমরা এক করে ফেলি। তারা জনগণকে হত্যা করে। একটি ভ্রান্ত ধারণার মধ্য দিয়ে তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। ইসলামী ব্যাংক সম্পর্কে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারা স্পন্সর করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের লোকজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তাদের মোটিভেশন করার চেষ্টা করছে। আমার প্রস্তাব, যেহেতু ইসলামী ব্যাংক স্পন্সর করে, রাজাকারদের তালিকা প্রতিটি ইউনিয়নে করবে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে স্পন্সর করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে স্পন্সর করবে। আমি মনে করি, আমাদের মাঝে সহ্য ক্ষমতা কমে গেছে। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোককে সহ্য করতে পারছে না। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয় প্রকৃত ধর্মের আদর্শ প্রচার ও প্রসার না হওয়ার কারণে। বাংলাদেশে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন প্রজন্মকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা জরুরি।

 

ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়

অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ

প্রো-ভিসি, ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস

ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মের নামে রাজনীতি করা যাবে না বা রাজনীতির স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। জঙ্গি অর্থায়নের যোগসূত্রতার কারণে সরকার সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার করেছে। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা অবশ্যই ভালো। এতে জামায়াতের আর্থিক জোগান কমে যাবে। তবে জামায়াতের ঘাপটি মেরে থাকা অংশ পরবর্তীতে রূপ বদল করে নতুন কোনো রূপে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সেজন্য আমাদের সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। শুধু ইসলামী ব্যাংকেই নয়, এ ধরনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের জামায়াতের লোকদের অর্থায়ন এবং কর্মসংস্থান হয়েছে। সে সব প্রতিষ্ঠানেও সংস্কার আনতে হবে। মীর কাসেম আলী ছিলেন তাদের আর্থিক খাতের মূল উদ্যোক্তা। তার অনুসারীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, এসবেও সংস্কার আনতে হবে। এখন প্রয়োজন নিয়মিত মনিটরিং।

 

নানামুখী বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা দুষ্ট অর্থচক্র গড়ে তুলেছে

অধ্যাপক জিনাত হুদা

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী সারা দেশে বিস্তার লাভ করে। এই ব্যাংকের নানামুখী বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা সারা দেশে দুষ্ট অর্থচক্র গড়ে তুলেছিল। শুধু ব্যাংক নয়, জামায়াত বীমা ও ইন্স্যুরেন্স খাতে আর্থিক প্রভাব বিস্তার করেছে। তারা যৌতুকবিহীন বিয়ে ও নানামুখী সামাজিক কাজের মাধ্যমে একটি দুষ্ট অর্থনৈতিক বিস্তার লাভ করেছিল। তাদের এই বিস্তৃতি ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগকে ভুলে যাওয়ার। ব্যাংকটি তাদের নীতিমালায় নারী ও ভিন্নধর্মাবলম্বী যোগ্য কর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। শুরু থেকেই ব্যাংকের কর্মী হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছিল। সুতরাং বোঝাই যায় কী বিশাল উদ্দেশ্য নিয়ে এই ইসলামী ব্যাংক এতদিন ধরে কাজ করে আসছিল। আধুনিকায়নের যুগ বলে ইসলামী ব্যাংক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নজর দেয়। এটা সংস্কার হলে কিছুটা হলেও জামায়াত-শিবির দুর্বল হবে বলে আমি মনে করি।

 

অন্য ধর্মের মানুষকে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে

অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন

আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামী ব্যাংকের কসমেটিক পরিবর্তন আনলে হবে না। মূলে পরিবর্তন আনতে হবে। এজন্য নারীসহ বিভিন্ন ধর্মের লোকও নিয়োগ দিতে হবে ব্যাংকটিতে। এ ব্যাংকে অন্য ধর্মের মানুষেরও কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। ইসলামী ব্যাংকে ৮০ হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। আমানতকারীর আস্থা ব্যাংকটি অর্জন করতে পেরেছে। এটা অটুট রাখতে হবে। এ ছাড়া করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআর কর্মসূচি বাড়াতে হবে। শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক খাতে অনুদান বাড়াতে হবে। তাই কসমেটিক পরিবর্তন আনলে হবে না। সমূলে পরিবর্তন আনতে হবে। ইসলামী ব্যাংকে কোনো নারী নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য ধর্মের লোকবল নেই। সুতরাং কাজের ক্ষেত্রে যদি নারী-পুরুষ এবং ধর্মীয় বৈষম্য থাকে তাহলে কাজের সমতা থাকবে না। কাজেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া প্রগতিশীল যে আন্দোলন ছিল, ৭৫-এর পর সেটা ধ্বংস হয়ে গেছে। এটাও পুনরুদ্ধার করতে হবে।

 

ইসলামী ব্যাংকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান

সাবেক সংসদ সদস্য

একপেশেভাবে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে না বলে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালক বলেছেন— বঙ্গবন্ধু ইসলামী ব্যাংক বানিয়েছেন। এটা ঠিক নয়। বঙ্গবন্ধু যে ইসলামী ব্যাংক বানাতে চেয়েছিলেন সেই ইসলামী ব্যাংক এই ইসলামী ব্যাংক নয়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি ইসলামী ফান্ড তৈরি করার জন্য। তিনি চেয়েছিলেন ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটা ব্যাংক তৈরি করতে। পরবর্তীতে যেটা ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে হয়েছে। আজকের ইসলামী ব্যাংকের চিন্তা করেছিলেন এরশাদ। তিনি ঘন ঘন স্বপ্ন দেখতেন। আগামীতে আমরা প্রমাণ করে দেব কখন, কে কার পক্ষে কথা বলেন। আজকে আমরা সবাই বলছি, ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলারিজমের কথা। সেকুলারিজমে যদি হিন্দু, বৌদ্ধ, এমনকি যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না তারা যদি আসতে পারে, তবে ধর্মের যারা মৌলবাদী তারা কেন নয়? আসেন আমরা নিয়ন্ত্রণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করি।

 

কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রেখে সব ধরনের পরিবর্তন করতে হবে

প্রণব সাহা

সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা একই সঙ্গে মিছিল করেছেন আবার মুনাফাও করেছেন। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট আমানতের পরিমাণ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যাংকের কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের মিছিলে অংশ নিয়েছেন। ব্যাংকটি সর্বোচ্চ মুনাফাও করেছে। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদে সংস্কার আনার পর যদি আগামী বছর মুনাফার পরিমাণ কমে যায় তাহলে সংস্কারের উদ্যোগ হাসিল হবে না। এ জন্য কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রেখে সব ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধনের কাজ করতে হবে। আর একটা বিষয় হলো, এই মুনাফার টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছে। কারা এটা ভোগ করেছেন। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা-সেটাও খুঁজে বের করতে হবে। আগে এই ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন ৯ জন এখন পরিচালক করা হয়েছে ১৬ জনকে। এর মধ্যে ছয়জনই ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর। যাদের কোনো বিনিয়োগ নেই। ফলে এই পর্ষদের কাছে প্রত্যাশাও অনেক বেশি।

 

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে

ড. অ্যাড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদী

আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

জঙ্গিবাদ ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার সময় উপযোগী, বাস্তবসম্মত আয়োজন। বর্তমানে আমাদের যে অর্জন, যে সফলতা, এসব কিছুর মূলে হলো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সরকার। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা যুক্তিযুক্ত, বাস্তবসম্মত। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন, জঙ্গি অর্থায়নসহ এসব বিষয়কে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। একটি পজেটিভ দিকে ব্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। পরিচালনা পরিষদে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেখানে আরও একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা হলো— আমাদের রাষ্ট্র যেহেতু সেকুলার রাষ্ট্র, আমাদের সরকার যেহেতু সেকুলারিজমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই রকম ইসলামী ব্যাংকের মধ্যেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সেখানে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে কোনো ধর্ম বা লিঙ্গের ভেদাভেদ থাকতে পারবে না।

 

জঙ্গিবাদ ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে

অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস

বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শুধু ইসলামী ব্যাংকই নয় জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। জঙ্গিবাদ ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। পুরোহিত হত্যার ঘটনার আগে আমার কাছে তথ্য এসেছিল। আমি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলেছিলাম যে, এ ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু পুলিশ সেটাকে কোনো গুরুত্ব দিল না। তার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু পুরোহিত এবং খ্রিস্টান পাদ্রিকে হত্যা করা হয়েছে। আর এসবের পেছনে কারা কাজ করেছে সেটা তো সবারই জানা। এসব ঘটনায় কারা অর্থায়ন করেছে সেটাও দেশবাসী জানতে পেরেছে। ফলে জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধ করতে হলে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সর্বস্তরের মানুষের আরও সচেতনতা প্রয়োজন। আর আর্থিক খাতে সংস্কার আনার ক্ষেত্রে শুধু ইসলামী ব্যাংকই নয়, জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনা এখন সময়ের দাবি।

 

তাদের প্রতিটি কাজ মনিটরিং করতে হবে

রাশেদা রওনক খান

শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারা দুনিয়ায় জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশেও আদর্শগত ভাবে ঘরের ছেলেরা জড়িয়ে পড়ছে। আমরা দেখেছি এমন সব পরিবার এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে তা খুবই উদ্বেগের। তাই জঙ্গিবাদের এই আদর্শগত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কার আনার পর এবার ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ইসলামী ব্যাংকে সংস্কার আনা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, এখনই ব্যাংকের হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে। সেটা বাস্তবসম্মত নয়। আবার তারা যে রাতারাতি নিজেদের আদর্শের জায়গাটি পরিবর্তন করে ফেলবে সেটা আশা করাও ঠিক হবে না। এখন যেটা করতে হবে সেটা হলো, তাদের কার্যক্রম মনিটর করা। তারা কোথায়, কী উদ্দেশ্যে ঋণ/অনুদান দিচ্ছে, সেটা দেখা। তারা করপোরেট দায়িত্ব থেকে এটা দিচ্ছে নাকি আদর্শের জায়গা থেকে দিচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

 

ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার সময়োপযোগী পদক্ষেপ

শাবান মাহমুদ

সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন

ব্যাংকিং খাতের সংস্কার যেন শুধু ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার না হয়, ইসলামী ব্যাংকটি আলোচিত হওয়ার কারণটিও ভিন্ন। কারণ, নানা অভিযোগ আর তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে এসেছে যে, ইসলামী ব্যাংক জঙ্গি তৎপরতা ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধূলিসাৎ করার জন্য তাদের অর্থ ব্যবহার করে আসছিল। মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে অর্থ সরবরাহের জন্য ব্যাংকটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও কীভাবে ইসলামী ব্যাংক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালাল? এটা পর্যালোচনা করা দরকার। তবে দেরিতে হলেও ইসলামী ব্যাংকের সংস্কার একটি সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি। ইসলামী ব্যাংকে নারী ও হিন্দুদের কেন নিয়োগ দেওয়া হলো না তা পর্যালোচনা করার সময় এসেছে। শুধু ইসলামী ব্যাংক নয়, রাজনীতি ও প্রশাসনিক খাতে সংস্কার করতে হবে।

 

যারা অংশ নিলেন

ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী

সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান ও ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ওয়ালিউর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র সচিব

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক

সামীম মোহাম্মদ আফজাল, পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক

শাহরিয়ার কবীর, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ’৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

এয়ার কমোডর (অব.) ইসফাক ইলাহী চৌধুরী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সাবেক ভিসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান, ভিসি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ভিসি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আবুল কালাম আজাদ, এমডি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা

মাওলানা জিয়াউল হাসান, ইসলামী চিন্তাবিদ

অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, প্রো-ভিসি, ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য

প্রণব সাহা, সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

অ্যাড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রাশেদা রওনক খান, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শাবান মাহমুদ, সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন

সঞ্চালক : আনোয়ার সাদী

সর্বশেষ খবর